আপনার একটা লেখা পড়লাম। আপনি যেহেতু প্রকাশ্যে ফেসবুকে লিখেছেন তাই একজন সৎসঙ্গী ও পাঠক হিসেবে প্রকাশ্যেই খোলা চিঠি লিখলাম। আপনার লেখায় আপনি বর্তমানে সৎসঙ্গে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গাওয়া গানের বিরোধিতা তথা তীব্র সমালোচনা করেছেন। করেছেন ভিতরে চাপা একটা বিরক্তিকে সাথী ক'রে। যা আপনার লেখায় প্রকাশ পেয়েছে পুরাতনী সঙ্গীতের পক্ষে প্রশংসাসূচক ওকালতির মাধ্যমে।
আপনার লেখা পড়ে মনে হ'লো আপনি দ্বিচারিতায় ভুগছেন। কিছু একটা বলতে চাইছেন কিন্তু খোলাখুলি বলতে পারছেন না। কোথায় যেন সততায় বাধছে। একদিকে বলছেন আধুনিকতার আপনি পূজারী আবার অন্যদিকে আধুনিকতার বিরোধিতা করছেন প্রাচীনকে স্মরণ ক'রে। আপনার লেখা পড়ে মনে হ'লো ঈশ্বর আরাধনা, ঈশ্বর আরাধনার সৌন্দর্য, মধুরতা, ভক্তিভাব ইত্যাদি নির্ভর করে একমাত্র সেই পুরাতন হরি বোল ঢঙে খোল করতাল বাজিয়ে। আধুনিক মানেই যে হৈ হট্টগোল নয়, শ্রুতি কটু নয়, উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল নয় সেটা আমরা অতি ভাবের আবেগে হারিয়ে ফেলি। বহু আধুনিক যন্ত্র সহযোগে ঈশ্বর আরাধনার বহু বিখ্যাত গান আমরা ইউ টিউব খুললেই শুনতে পাই। শুনতে পাই ইদানিং নতুন প্রজন্মের গাওয়া শ্রীশ্রীদাদা, শ্রীশ্রীবাবাইদাদা, শ্রীশ্রীবিংকিদাদা, শ্রীশ্রীসিপাইদাদা, শ্রীশ্রীঅবিনদাদা ও ঠাকুরবাড়ির দাদাদের লেখা ও সুর দেওয়া একের পর এক অসাধারণ মাধুর্যপূর্ণ গানগুলি। আপনাদের ধারণা ঈশ্বর বা ঈশ্বর আরাধনা মানেই আধুনিকতা বর্জিত মান্দাতার আমলের যখন নতুন কোনও কিছুর আবিস্কার হয়নি সেই পুরাতন স্টাইলকে জড়িয়ে ধ'রে রাখা। যেমন ঠাকুর হাজার হাজার বছরের ঈশ্বর আরাধনা বা পূজার অর্থ ও পদ্ধতির খোলনলচে আমূল-পরিবর্তন ক'রে চলন পূজার পথ দেখিয়েছেন সেই দেখানো পথেও বিতর্ক তুলেছে তুলছে পুরাণের আরাধনা বা পুজার নানা উদাহরণকে সামনে রেখে কূটকচালকে তোল্লা দিয়ে একশ্রেণীর অতি সনাতনী ভক্তের দল। বিতর্ক তুলেছে তুলে চলেছে তথাকথিত সৎসঙ্গীর দল।এ কথা সত্য যে সবার সব ভালো নাই লাগতে পারে তাই ব'লে বিতর্ক তৈরী ক'রে আধুনিকতার সমালোচনা ক'রে বাহবা লাভ করা যায় না। সৎসঙ্গে বর্তমানে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে যে অসাধারণ গানগুলি গাওয়া হয় সেগুলিতে কি ঈশ্বর আরাধনার ভক্তিভাব চটকে গেছে? আধুনিক মানেই যেমন মনোজ্ঞ নয় ঠিক তেমনি হাজার বছরের বিকৃত গলায় 'হরে-এ-এ-এ' ব'লে চিৎকারও মনোজ্ঞ নয়। এক একজায়গায় উদোম খোল ঢোল করতাল সহযোগে পুরাতনকে আঁকড়ে ধ'রে বিকৃত সুরে আসুরিক ভঙ্গিতে যখন 'হরে কৃষ্ণ' ব'লে চেচিয়ে ওঠে তালজ্ঞানহীন ভক্তির আতিশয্যে একদল মানুষ মন্দিরে মন্দিরে তখন যে মানুষের শুধু বিরক্ত লাগে তা নয় তখন তা শব্দদূষণের আওতায় প'ড়ে স্বয়ং ঈশ্বর দ্বারকানাথ, বৈকুন্ঠনাথ, আমার প্রাণনাথ, প্রাণবল্লভ প্রাণ বাচাতে কাছা খুলে হাতের বাশী ফেলে দৌড়ে পালান উন্মাদের মত। লুকোনোর মত জায়গা খুঁজে পান না।
আর, এখন সৎসঙ্গে যে নতুন নতুন অপূর্ব প্রাণ জুড়ানো কথার সঙ্গে প্রাণ মাতানো সুরে যে গানগুলি হয় সেগুলি তো আধুনিক যন্ত্র সহযোগেই হয়; তাই নয় কি? তা সেগুলি তো সৎসঙ্গে প্রকাশ্যেই হয় সেগুলির সুরকার কারা? আপনি সেখানে কি বলবেন? সব কুরুচীকর সুরে ভরা আধুনিকতার বিকৃত ডামাডোলের বহির্প্রকাশ? যা বলবার খোলামেলা বলুন। ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা ব'লে নতুন বিতর্ক তৈরী করবেন না। বিতর্ক তৈরী করা সহজ, আগুন জ্বালানো সহজ, ঘৃণা জন্মানো সহজ, দোষ ধরা, ত্রুটি খুঁজে বের করা সহজ, ভালো না লাগার আবহাওয়া, পরিবেশ রচনা করা সহজ; এতে আপনি অনেক আপনার মতের অনুগামী পেয়ে যাবেন কিন্তু অহেতুক একটা দু'টো আধুনিক হল্লা গানের দোহাই দিয়ে বাজার গরম করা ভালো না। কারণ আপনি যা বোঝেন তা অন্য হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি ভক্ত বৃন্দের কথা না হয় ছেড়ে দিলাম ঠাকুর বাড়ির পূজ্যপাদ দাদারা বোঝেন না ব'লে কি আপনার মনে হয়? তখন প্রশ্ন উঠতে পারে ঈশ্বর আরাধনার নামে হরি নামের জোয়ার তুলে গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় হাটে মাঠে ঘাটে সূর তালহীন বিকৃত গলায় যখন আসুরিক হিক্কারে আকাশ বাতাস গরম করা হয় তখন আপনার সুর মাধুর্যে ভরা মস্তিষ্ক কি বলে? সেগুলি ঠিক? যখন গগনভেদী বিকট ঢাক ঢোল পিটিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা শব্দদূষণের তোয়াক্কা না ক'রে আকাশ ভেদ ক'রে ঈশ্বরকে টেনে হিচড়ে নীচে নাবিয়ে আনার তীব্র প্রতিযোগিতা চলে রাতভোর তখন আপনার কলম নেটের বুকে বিদ্রোহ ঘোষণা করে? করে না। সৎসঙ্গের বিরোধিতা করাটা একটা সহজ স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা হ'য়ে আসছে ঠাকুর পরবর্তী সময় থেকে যখনই প্রচলিত নিয়ম থেকে নতুন কিছুকে সৎসঙ্গে আহবান জানানো হয়েছে তখন থেকে। আপনাকে কে বললো শুধু খোল করতালেই ভক্তি ভাব থাকে? এটা আপনার ব্যক্তিগত মতামত হ'তে পারে। কিন্তু সমগ্রের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস না চালানোয় ভালো। এতে সামগ্রিক ক্ষতি হয়, লাভের লাভ কিছুই হয় না। এই দু'দিন আগে আমারও আধুনিক যন্ত্র সহযোগে হওয়া একটা সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান ভালো লাগেনি। তাই ব'লে আধুনিকতার ছোয়াকে সমূলে উৎখাত করতে নেবে পড়িনি ফেসবুকে। আপনি চূড়ান্ত আধুনিকতার ছোয়ায় তৈরী অবিনদাদার কম্পোজিশনে তৈরী ঠাকুরের ইংরেজি বাণীর গানটা শুনেছেন? যে গানটা বিদেশী ভক্তদের মাঝে এমনকি বিদেশী ইয়ং জেনারেশনের মাঝে ঝড় তুলেছে। তাই বলি, কলম ধরার আগে, কিছু বলার আগে, কিছু লেখার আগে একবার ভাবুন। হাত থেকে তীর বেরিয়ে গেলে তা আর ফিরে আসে না। সেই তীর বিরোধীদের বিরোধকে শক্তিশালী ক'রে তোলে আর ঠাকুরবাড়ি ও ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের ভাবমূর্তিতে অহেতুক ভয়ংকর আঘাত হানে; যা আমাদের কাম্য নয়। আপনার লেখা বেরোতে না বেরোতেই দেখুন কমেন্টের ঝড় বইছে। এতে হয়তো আপনার ভালো লাগতে পারে কিন্ত আম ভক্ত বললেই তা সত্য হয় না। মন্তব্য পড়ে মনে হচ্ছে সবাই গানের জগতের বিশেষজ্ঞ পি এইচ ডি। যেমন, জনগণের কথা ঈশ্বরের কথা; এটা ভুল প্রবাদ। জনগণের কথা ঈশ্বরের কথা নয়। কোন জনগণ? বৃত্তি প্রবৃত্তির রসে টই টম্বুর রিপু তাড়িত জনগণের কথা ঈশ্বরের কথা? না; তা নয়। পূরণপুরুষ পরমপিতার কথা ঈশ্বরের কথা। ঠিক তেমনি কারা গানের বিশেষজ্ঞ? -----------------------?
কথায় আছে যার যেমন ভাব তার তেমন লাভ। আমার ভালোবাসা ও জয়গুরু জানবেন।
ইতি, প্রবি।
( লেখা ৩রা সেপ্টেম্বর'২০২২)
No comments:
Post a Comment