এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুকৃতি কি এমন মন্তব্য করেছিল যার জন্য এমন শোরগোল পড়ে গেল!? তার বক্তব্যের বিষয় ছিল 'রক্তের খেলা ও পশু হত্যার আনন্দ বন্ধ হ'ক'। তাই এই বিষয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী মনে হওয়ায় সুকৃতি সুন্দরদার পোষ্ট শেয়ার করলাম ও নিজের মত জানালাম।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুকৃতি সুন্দর কিসের বিরোধিতা করেছেন? কুরবানির নাকি কুরবানির নামে পশু হত্যার? সুকৃতির বক্তব্য বিষয় পড়ে এটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে সুকৃতি সমস্ত রকম রক্তের খেলা বন্ধ করার কথা বলেছেন এবং বলেছেন এই খেলার মাধ্যমে আনন্দ লাভ বন্ধ হ'ক সমস্ত দেশেই মায় পৃথিবীতে। এটা থেকে পরিস্কার বোঝা যায় যে সুকৃতি শুধু মুসলিম ধর্মের এই প্রথার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন তাই নয় তিনি সমস্ত পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে আর সেই ধর্মের নামে পশু হত্যার বিরুদ্ধে বলেছেন; আর এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই তার হিন্দু ধর্মও এসে পড়েছে এবং তাকে তিনি এড়িয়ে যাননি।। কুরবানির পশু হত্যার মধ্যে দিয়ে যদি নৃশংসতা, ভয়ংকরতা, অমানবিকতা ফুটে ওঠে তাহ'লে একথা কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় না যে সুকৃতির হিন্দু ধর্মে এই পশু হত্যার ভয়াবহতা, নির্মমতা, নৃশংসতা, বর্বরতা, অসভ্য জংলী সভ্যতা কোনও অংশে তো কম নয়ই বরং আরও বহুল পরিমাণে উৎকট ও বীভৎসভাবে প্রতীয়মান যা কিনা মানব সভ্যতার পক্ষে চরম পাপ এবং বিধাতার বিধানে ঘোরতর ক্ষমাহীন অপরাধ। আর এই বিধাতার বিধান শুধু হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ বা আর যেই ধর্মের হ'ক না কেন আলাদা আলাদা নয়। তিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং তাঁর বিধানও এক ও অদ্বিতীয়; একথা যেন আমরা ভুলে না যাই কিম্বা বৃত্তি-প্রবৃত্তির স্বার্থে, চুলকানিতে, সুড়সুড়িতে নানারকম কথার মারপ্যাঁচে ধর্মীয় আইন-কানুন কিম্বা বিধান দেখিয়ে এবং বিধাতাকে সাক্ষী রেখে যেন কোনও শক্তিশালী অজুহাতের সৃষ্টি ক'রে অজুহাতের সৃষ্টিকর্তা হ'য়ে না বসি। এরকম নতুন নতুন নিজের নিজের বিশৃঙ্খল, উচ্ছৃঙ্খল, অদূরদর্শী, অল্প ও আধাজ্ঞানী ধান্দাবাজি জন্ম বিকৃত বৃত্তি-প্রবৃত্তির স্বার্থে উন্মাদ স্বঘোষিত সৃষ্টিকর্তারা নিজের নিজের সম্প্রদায়, নিজের নিজের জাত ও নিজের নিজের ধর্ম ইত্যাদির মধ্যে সাম্প্রদায়িক, বজ্জাতি ও অধর্মীয় আচরণের সৃষ্টি ক'রে নিজেরাই স্বঘোষিত সৃষ্টিকর্তা হ'য়ে বসে গেছে। স্বয়ং ঈশ্বর মানুষের রূপ ধ'রে মানুষের মাঝে বারবার নেবে আসা সত্তেও এইসমস্ত ভন্ড ও কপট ইশ্বরপ্রেমী মানুষেরা ঈশ্বরের সঙ্গে বেইমানি ক'রে চলেছেন চার অক্ষর মানুষদের সাহায্যে। এছাড়া স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে, স্বার্থ পোষণ পায় তেমনি বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আপাদমস্তক ডুবে থাকা সীমাহীন ভাঙাচোরা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের দ্বারা ঈশ্বর প্রেরিত অবতারের ধর্ম্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ ও মূল গ্রন্থের অনুবাদ সমস্যাকে আরও জটিল ও রহস্যঘন ক'রে তুলে ধর্মকে, সম্প্রদায়কে, জাতকে ঘেঁটে ঘ ক'রে দিয়েছে। প্রায় সময় অনেককে বলতে শুনি, 'ধর্ম যার যার দেশ সবার'। এটা যে কত বড় ভুল আজও আমরা তা ভেবে দেখিনি। আমরা আজও দেখি ধর্ম নিয়ে মারামারি, কাটাকাটি, খুনোখুনি। এইখানে এই কমেন্টের মধ্যেও অনেককে বলতে দেখলাম----সে হিন্দু, মুসলমান যে সম্প্রদায়ের হ'ক না কেন----অন্য ধর্মের ব্যাপারে নাক না গলাতে। যেন ধর্ম এবং ঐ ধর্মের প্রবক্তা ঐ ধর্মের লোকেদের একচেটিয়া পৈতৃক সম্পত্তি আর ঐ একই কথারই পুনরাবৃত্তি, 'ধর্ম যার যার দেশ সবার'। মনে হয় যেন রামায়ণ, মহাভারত, কোরান, বাইবেল, ত্রিপিটক, চৈতন্য চরিতামৃত, কথামৃত, সত্যানুসরণ এই সমস্ত গ্রন্থ সেই সেই ধর্মের অনুগামীদের পৈতৃক সম্পত্তি!
The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra-এর কাছে এসে জানলাম, "ধর্ম কখনও বহু হয় না, ধর্ম্ম একই আর তার কোন প্রকার নেই। মত বহু হ'তে পারে, এমনকি যত মানুষ তত মত হ'তে পারে, কিন্তু তাই ব'লে ধর্ম্ম বহু হ'তে
পারে না। হিন্দুধর্ম, মুসলমানধর্ম্ম, খৃস্টানধর্ম্ম, বৌদ্ধধর্ম্ম ইত্যাদি কথা আমার মতে ভুল, বরং ও-সবগুলি মত। কোনও মতের সঙ্গে কোনও মতের প্রকৃতপক্ষে বিরোধ নেই, ভাবের বিভিন্নতা, রকমফের-----একটাকেই নানাপ্রকারে একরকম অনুভব। সব মতই সাধনা বিস্তারের জন্য, তবে তা' নানাপ্রকারে হ'তে পারে। আর, যতটুকু বিস্তারে যা' হয় তাই অনুভতি, জ্ঞান। তাই ধর্ম্ম অনুভুতির উপর।"
পারে না। হিন্দুধর্ম, মুসলমানধর্ম্ম, খৃস্টানধর্ম্ম, বৌদ্ধধর্ম্ম ইত্যাদি কথা আমার মতে ভুল, বরং ও-সবগুলি মত। কোনও মতের সঙ্গে কোনও মতের প্রকৃতপক্ষে বিরোধ নেই, ভাবের বিভিন্নতা, রকমফের-----একটাকেই নানাপ্রকারে একরকম অনুভব। সব মতই সাধনা বিস্তারের জন্য, তবে তা' নানাপ্রকারে হ'তে পারে। আর, যতটুকু বিস্তারে যা' হয় তাই অনুভতি, জ্ঞান। তাই ধর্ম্ম অনুভুতির উপর।"
এবার আমরা যদি এই অনুভূতির উপর দাঁড়ায় তাহ'লে কি দেখতে পাবো? দেখতে পাবো এই ধর্মের নামে পশু হত্যা সম্পর্কে সুকৃতি সুন্দর যা বলেছেন এবং তার উত্তরে যে বা যারা যারা পক্ষে ও বিপক্ষে যে মত প্রকাশ করেছেন তাতে এই 'অনুভূতির' ব্যাপারটাই তীব্রভাবে স্পষ্ট হ'য়ে উঠেছে। সুকৃতি সুন্দর তাঁর মন্তব্যে এই 'অনুভুতি'কেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং আরো কয়েকজন এই একইভাবে তাদের মন্তব্যে 'অনুভূতি'র পক্ষেই জোরালো সওয়াল করেছেন। কিন্তু যারা এর বিরোধিতা করেছে তারা প্রকৃত পক্ষে ঐ অন্ধকার বস্তাপচা হাজার হাজার বছরের পুরোনো ট্রাডিশান 'বলি বা কুরবানি'র ভুল অর্থের পূজারী। মিথ্যাকেই তারা সত্য ব'লেই জেনেছে। 'কি 'বলি', কেন 'বলি' বা কুরবানি কি?' এই সমস্ত অর্থের গভীরে যাওয়ার ক্ষমতাই নেই। এই ধর্ম্মের নামে পশু হত্যা সম্পর্কে ও পশু হত্যার বিরুদ্ধে সমস্ত মনিষীরাই জোরালো প্রতিবাদ ক'রে গেছেন; কিন্তু ধর্মীয় কুসংস্কার ও কপট মানুষেরা দুর্বল মানুষকে, ভীরু মানুষকে, অজ্ঞ ও মূর্খ মানুষকে, লোভী মানুষকে আচ্ছন্ন ও ভীত, সন্ত্রস্ত ক'রে রেখেছে। সমস্ত সম্প্রদায়ের এই আছন্ন ও ভীত সন্ত্রস্ত মানুষেরা মনে ক'রে তাদের ধর্ম্মের (?) ঈশ্বর প্রেরিত পুরুষ ও তাঁদের মুখ নিঃসৃত বাণী উভয়ই তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি; তাঁদের ধর্ম্মের (?) মানুষেরা ছাড়া আর কারও কোনও অধিকার নেই এই সম্পত্তিতে। আর এদের জন্যই ঈশ্বর প্রেরিত পুরুষ স্বদেশে কলঙ্কিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হন এবং শয়তান পুজা পান ও মানুষ সীমাহীন দুঃখকষ্ট ভোগ করে। প্রবি।
( লেখা ৪ই সেপ্টেম্বর'২০১৭)
Adv Sukriti Sundar Mondal
September 3, 2017 ·
চলছে রক্তের খেলা। সারা দেশ জুড়ে পশু হত্যার আনন্দ। আর, এ পশু হত্যা হচ্ছে, হত্যাকারীদের সৃষ্টকারীর সন্তুষ্ট লাভের জন্য।
অন্যকে হত্যা করে কি করে আনন্দ করা যায়?
একটা দীর্ঘ নীঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই বলার নাই!
বন্ধ হোক সব রক্তের খেলা, তা মায়ানমার, বাংলাদেশ, আফগানিস্থান, সিরিয়া, ভারত, ইরাক সব খানে।
No comments:
Post a Comment