পুরুষোত্তম আর দেবদেবী কি একই হ'লো? অন্যান্য পুরুষোত্তমের সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের সম্পর্কটা কি?
কিছু সৎসঙ্গী নিজেই জানে না কখন কি লিখছে, পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করছে আর কখন কোথায় কার কথায় কি সমর্থন করছে ও বিতর্কের সৃষ্টি করছে। একেই বলে ব্যভিচারী ভক্তি।
যারা পুরুষোত্তমদের নিয়েও বহুনৈষ্ঠিকতার কথা তোলেন তারা দেখাতে পারবেন পূর্ব রূপের পুরুষোত্তমদের নিয়ে বহুনৈষ্ঠিকতার উদাহরণ স্বরূপ শ্রীশ্রীঠাকুরের কোনও বাণী আছে?
কিছু সৎসঙ্গী কি যে বলতে চাইছে আর কিছু পাঠক কি বুঝতে পারছে সেটা আজ দুর্ভাগ্যের বিষয় হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ তারা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে দেবদেবতার সঙ্গে একই আসনে বসানোর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখাকে সমর্থন করছে এবং ঠাকুরঘরেও শ্রীশ্রীঠাকুরের পাশে পূর্ব পূর্ব পুরুষোত্তমের ছবি রাখা মানেই শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি ভক্তির গাঢ়ত্ব কমে যায় ও বহুনৈষ্ঠিকতার চর্চা হয় এ বক্তব্যকে স্বীকার করছেন, প্রতিষ্ঠা করছেন জোরালোভাবে। শ্রীশ্রীঠাকুরকে নিয়ে কিছু কিছু সৎসঙ্গীদের অদ্ভুত এক উগ্র ভক্তি।
পুরুষোত্তম আর দেবদেবীদের অবস্থান নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন তাদের উদ্দেশ্যে আরও সহজভাবে যদি বলা যায় তাহ'লে বলা যেতে পারে পরম প্রেমময় পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যদি হন সূর্য তাহ'লে সূর্যের যেমন কিরণ আছে ঠিক তেমনি সূর্যের কিরণ স্বরূপ দেবদেবীরা হ'লো জীবন্ত ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণাবলীর বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিফলন। তাই পুরুষোত্তম আর দেবদেবীদের একই আসনে বসানোর ব্যাপারে এই সূক্ষ্ম সতর্কতা জরুরী। সূর্যের মধ্যে কিরণের যেমন অবস্থান ঠিক তেমনি পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বরের মধ্যে মুনি ঋষিদের তপস্যাসঞ্জাত উপলব্ধি থেকে উদ্ভূত এক ও অদ্বিতীয়ের শক্তি ও গুণাবলী সমৃদ্ধ বিভিন্ন দেবদেবীর অবস্থান।
আর, পুরুষোত্তমদের নিয়ে বহুনৈষ্ঠিকতার বিষয়ে যারা যে পোষ্ট করেছেন ও করছেন সেটার ওপর আমার যে বক্তব্য ছিল সেই বক্তব্যের মধ্যে আমার বোঝার ভুল আছে ব'লে সৎসঙ্গী কেউ কেউ আমার বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ ছিল ও আছে যে, কোনওরকম অপ্রাসঙ্গিক কথা না টেনে আমার বক্তব্যের মধ্যে বোঝার ভুল আছে শুধু একথা না ব'লে বক্তব্যের মধ্যে ভুলটা কোথায় আছে সেই ভুলটা যুক্তি দিয়ে ধরিয়ে দিন। আর, যিনি বা যারা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের পাশে পূর্ব পূর্ব পুরুষোত্তমদের ফটো রাখা নিয়ে বহুনৈষ্ঠিকতার প্রশ্ন তুলে অকারণ বিতর্ক সৃষ্টি করছেন ও এই লেখার বিষয় নিয়ে পোষ্ট করেছেন তার বা তাদের যদি বোঝার ও বোঝানোর ভুল হ'য়ে থাকে ব'লে মনে করেন পাঠক, যিনি আমার বক্তব্যের বিরুদ্ধতা ক'রে তাদের পক্ষে মন্তব্য করেছেন, তাহ'লে তার দায় পোষ্টদাতার পক্ষ অবলম্বনকারী পাঠক কি অন্যের ঘাড়ে চাপাতে পারেন? যিনি পুরুষোত্তমদের নিয়েও বহুনৈষ্ঠিকতার কথা তুলে পোষ্ট করতে পারেন সেই তিনি বোঝাতে যদি ভুল করেন তাহ'লে অনেকেই তাঁর মতো বুঝতে ভুল শিক্ষা পাবে, আবার অনেকে তার ভুলটাকে ভুল ব'লে ধরিয়ে দেবে এটাই তো স্বাভাবিক; তাই নয় কি? নাকি উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে দেবো সৎসঙ্গীরা?
আর এখানে চোখে আঙ্গুল দাদা হওয়ার বিষয়টা কি প্রাসঙ্গিক? পাঠক যদি একজন সমাজ সচেতন শিক্ষিত মানুষ হন তাহ'লে তিনি কি তাঁর চারপাশে যদি ভুল কিছু দেখেন তাহ'লে তার গঠনমূলক প্রতিবাদ করবেন না? ঠাকুর কি আমাদের ভুল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে গঠনমূলক প্রতিবাদ না করার শিক্ষা দিয়েছিলেন নাকি? তার উপর যদি সে আমার গুরুভাই হয়, একজন সৎসঙ্গী হয় তখন কি আমার কোনও দায়দায়িত্ব থাকে না তাকে যাজন করার? ঠাকুর কি এরকম 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতার অধিকারী হ'তে শিখিয়েছিলেন দীক্ষা নেওয়ার সময়? কারও ভুল ধরিয়ে দিলেই নিজেকে কি মহাপন্ডিত ভাবা হয়? তাঁকে মহাপন্ডিত ব'লে ব্যাঙ্গ করতে হবে সৎসঙ্গীদের? আমার ভুল কথার জন্য যদি ঠাকুরের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, ঠাকুরের দর্শন বিকৃত হয়, সর্বোপরি আমার ক্ষতি হয় আর পাঠক যদি ঠাকুরের দীক্ষিত হন, সৎসঙ্গী পাঠক যদি বুঝতে পারেন আমার ভুলটা কোথায়, তাহ'লে সেটা যদি পাঠক আমায় ধরিয়ে দেয় আমি পাঠককে মহাপন্ডিত ভাববো? আমার যদি কোনও ভুল সত্যি সত্যিই থাকে আর তা যদি পাঠক ধরিয়ে দেন তাহ'লে তো পাঠক আমার হিতাকাঙ্খী। পাঠক আমার পরম বন্ধু। কেন 'ভুল শোধরাতে ব্যস্ত ব'লে' পাঠককে ব্যঙ্গ করবো? পাঠক যদি আমার তাঁর জ্ঞানের আলো দিয়ে আমার অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর ক'রে দেন তাহ'লে কেন তাঁকে খোঁচা মেরে বলবো, প্রদীপের নীচে অন্ধকার? এটা তো সত্যকে অস্বীকার করা। সচেতন ইষ্টপ্রাণ পাঠকের প্রতি ইর্ষা করা। এটা তো স্ট্রং ইগোর ব্যাপার। আর প্রদীপ যে আলো দেখায় সেই আলোতে তো সামনের অন্ধকার দূর হয় আর মানুষ সামনে এগিয়ে যায়; তার নীচে অন্ধকার তো প্রদীপের শিখার নয়, সেই অন্ধকার তো প্রদীপের। একথা শ্রীশ্রীআচার্যদেব পরিষ্কার ক'রে ব'লে বুঝিয়ে আমাদের অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর ক'রে দিয়েছেন। এটা অনেকের জানা নাই থাকতে পারে। আর, একটা বাজে লোকও তো কখনো কখনো ভালো কথা বলে। তাই ব'লে কি তার ভালো কথাটা বাজে হ'য়ে যায় বাজে লোকটার মতো?
এবার আসি অকারণ দোষারোপ করা প্রসঙ্গে। পুরুষোত্তমদের নিয়েও বহুনৈষ্ঠিকতার কথা তোলা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমার উত্তেজিত হওয়া কোথায় দেখতে পেলেন আমার বিরুদ্ধ সমালোচক? আলোচনা বিস্তার লাভ করলেই তার মধ্যে উত্তেজনা দেখতে পান? কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমি যদি নাক গলায় সেখানে সেই ব্যক্তি আমাকে বলতে পারেন আমায়, 'আপনি বিচার করার কে, আপনি বলার কে?' কিন্তু যখন শ্রীশ্রীঠাকুর নিয়ে কেউ কথা বলবেন তখন আমার ঠাকুর নিয়ে যদি কোনও কথার মধ্যে দিয়ে ভুল বার্তা যায়, যে কথায় আমার ঠাকুরের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় তখন আমার অধিকার থাকে সেখানে ভুল বক্তব্যকে খন্ডন ক'রে আমার ঠাকুরকে ডিফেন্ড করার। এটা আমার নৈতিক দায় ও কর্তব্য।
আবেগ থাকা ভালো, নিশ্চয়ই ভালো। কিন্তু আবেগের বশে ভেসে গিয়ে ভুল বলা ভালো নয়। আবেগের বশে ঠাকুরকে ভুল ভাবে তুলে ধরা, পরিবেশন করা ঠিক নয়। মহাপন্ডিত, মহাযোগী, মহাজ্ঞানী, ঈশ্বরকোটি পুরুষরা শ্রীশ্রীঠাকুরকে, শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া কথাকে বুঝতে পারেনি ও পারছে না, বুঝতে হিমশিম খেয়েছে ও খাচ্ছে সেখানে আমাদের মতন সাধারণ, অতি সাধারণ জীবকোটি মানুষের তাঁর সম্পর্কে কোনও কথা বলার আগে হাজারবার ভাবা উচিত, হাজারবার জন্ম নিতে হবে।
আমি যদি জানি আমার ঠাকুরই শ্রীশ্রীরাম, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ তাহ'লে কেন আমার মন বিচলিত হবে, কেন আমি সত্যের মার্গ থেকে সরবো? সত্য যদি শ্রীশ্রীঠাকুর হন তাহ'লে সত্য তো শ্রীশ্রীরাম, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর অন্যান্য রূপও। তাহ'লে কেন আমি বিভ্রান্ত হবো? তিনি তো একজনই আর একজনই তো বারেবারে এসেছেন। শ্রীশ্রীঠাকুর যদি আবার মানুষ রূপে আসেন তখন আমি ঠাকুরকে ছেড়ে দেবো, নাকি তাঁকে ভুলে যাবো? নাকি অতি ভক্তিতে তাঁর নোতুন রূপকে নিয়ে মেতে উঠে ভক্তির আবেগে কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরকে জীবন থেকে সরিয়ে দেবো? যদি জীবন থেকে সরিয়ে দিই তবে প্রকৃত ভক্ত হবো? আর যদি নোতুন রূপকে নিয়ে পুরোনো রূপের কাছে বসে থাকি সেটা বহুনৈষ্ঠিকতা হবে? তাহ'লে পরমভক্ত শ্রীহনুমান কি বহুনৈষ্ঠিক ছিলেন? তিনি তো শ্রীকৃষ্ণকে পেয়েছিলেন, বলেছিলেন,
শ্রীনাথে জানকীনাথে অভেদঃ পরমাত্মনি |
তথাপি মম সর্বস্বঃ রামঃ কমললোচনঃ ||
আর যদি বিভ্রান্ত হ'ই, আমার পদস্খলন হয় তাহ'লে বুঝতে হবে আমার পুরুষোত্তমকে বোঝার ঘরে অসম্পূর্ণতা আছে, আছে অজ্ঞানতা, আছে ভক্তিতে গলদ।
পূর্বতন বিগ্রহ দিয়ে কি করবেন এই কথা সৎসঙ্গীদের মুখে? এ কথার মানে? এই কথা আমার সমালোচক ও তার সমর্থনকারীরা কোথায় পেলেন? শ্রীশ্রীঠাকুর কোথাও বলেছেন নাকি এই ধরণের কথা? নাকি নিজেদের অপরিপক্ক অজ্ঞানতা অন্যের ওপর চাপিয়ে দেবেন? শ্রীশ্রীঠাকুরের পূর্ব পূর্ব রূপকে ঘরে রাখার জায়গার অভাবের কারণে অনেকে শ্রীশ্রীঠাকুরের পুর্ব পূর্ব রূপকে ঘরে রাখতে পারেন না আর শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রতি ভক্তির গাঢ়ত্বের কারণে পূর্ব রূপের আর প্রয়োজন নেই কিংবা পূর্ব রূপের প্রতি অবিশ্বাসের কারণে পূর্ব পূর্ব রূপের ফটো রাখেন না, এই প্রশ্ন কি এক? আমরা সমস্ত সৎসঙ্গীরা কি জানি ঠাকুর বাড়িতে পূর্ব পূর্ব পুরুষোত্তমের জন্মদিন পালন হ'তো? শ্রীশ্রীঠাকুরই যদি শ্রীশ্রীকৃষ্ণ হ'য়ে থাকেন তাহ'লে তাঁর প্রতি তো আমার ভালোবাসা আরও গভীর হবে। সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকে এত গভীর ভালোবাসতে শিখেছে শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এসেই। এরকম নিখুঁত অটুট অস্খলিত ভালোবাসা সৎসঙ্গ শিখিয়েছে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষকে; যার ফলে গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে এক মহামিলন ক্ষেত্র। পুরুষোত্তমদের সম্পর্কে অজ্ঞানতার কারণে এবং মিথ্যে, ভুল ও বিকৃত প্রচারের কারণে ভয়ংকর এক সর্বনাশা ভাঙ্গার খেলার যে বিষাক্ত হিংস্র নেশা পুরুষোত্তমদের অনুগামীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে সংক্রামিত হয়েছে সেই নেশার ঘোর অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠে নোতুন পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের প্রতিটি সম্প্রদায়ের প্রতিটি অস্তিত্বের সঙ্গে অস্তিত্বের যে মহামিলনের ডাক দিয়েছেন শ্রীশ্রীঠাকুর, এটা গভীর বোঝার ব্যাপার।
তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাঁর পূর্ব পূর্ব রূপ শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু ও শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণকে অধিকার করেই নোতুন রূপে এসেছেন কলিযুগে আমাদের যুগের মত ক'রে পরিচালনা করবার জন্য, আমাদের আগামী ঘোর কলিযুগের ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য। তাই তাঁর পূর্ব পুর্ব রূপ ও তিনি, তাঁর অতীত ও বর্তমান রূপ এক ও অদ্বিতীয়। আমরা সবাই পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষ সেই একেরই অনুগামী যিনি মানুষের মাঝে মানুষ রূপে বারবার নেমে এসেছেন। কিন্তু আমরা মানুষেরা, বিশেষ ক'রে সৎসঙ্গীরা সেই মহামিলনের আহ্বান বুঝতে চাইছি না, শুনতে চাইছি না। আমরা ঘুমিয়ে আছি প্রায় ১০কোটি লক্ষ্যে ছুটে চলা সৎসঙ্গীরা! ভেসে চলেছি ভয়ংকর সর্বনাশা ভাঙনের দিকে, ধ্বংসের দিকে। এটাই বোধহয় ভবিতব্য।
( লেখা ১০ইসেপ্টেম্বর'২০২৩)
No comments:
Post a Comment