দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি যে দলেরই হ'ন তিনি যখন দেশের জন্য, দেশের স্বার্থে, দেশের কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান, দেশের দুঃসময়ে বিশ্বের কাছে একজোট থাকার নিদর্শন স্বরূপ কোন উদাহরণ স্থাপনের প্রচেষ্টা চালান, আবেদন করেন তখন সেই আবেদন বা আহ্বান আমরা কি রাজ্যে রাজ্যে যে দল যেখানে ক্ষমতাসীন, যে দল বা দলের মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যের প্রধান থাকুক না কেন একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সাথে মিলিতভাবে সবার আহ্বানে পরিণত করতে পারি না!? এমন সুরাজ কবে দেখতে পাবো আমরা যেদিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একসঙ্গে দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছে!? এই যে দেশের ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দের পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার ছবি এই সহযোগিতার ছবি ছড়িয়ে পড়ে দেশবাসীর মধ্যে। তখন প্রত্যেকেই আমরা অনুভব করার শিক্ষা লাভ করতে পারি একে আমরা অপরের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া বাঁচতে পারি না, পারি না বাড়তে! আজ আমরা সমাজের সর্বস্তরে এক নিদারুণ নির্ম্মম অসহযোগিতার ছবি দেখতে পায়! এই অসহযোগিতার মনোভাব নিষ্ঠুরভাবে ঢুকে গেছে ঘরে ঘরে অন্দরমহলে! আজ দেশে যখনই দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী সেই স্বাধীনতার সময় থেকেই কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সে যতই যুক্তিযুক্ত হ'ক না কেন রাজ্যগুলি কোনও না কোনোভাবে তার বিরোধিতা করেছে, করেছে অসহযোগিতা! আর দেশের নেতৃবৃন্দের নেওয়া সেই অসহযোগিতার হিংস্র মনোভাব দেশ কাল পাত্রভেদে ছড়িয়ে পড়েছে ক্রমেক্রমে আম জনতার মধ্যে, ছড়িয়ে পড়ছে বংশপরম্পরায় কালে কালে যুগে যুগে দেশে-বিদেশে! এর জন্য ফল ভোগ করছে যেমন আম আদমী ঠিক তেমনি আরও প্রকট হ'য়ে তা ফিরে যাচ্ছে দেশের নেতৃবৃন্দের দিকে! দেশনেতাদের তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আরও কঠিন! যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ সেই কাজে বাধা হ'য়ে দাঁড়াচ্ছে দলের ভিতরে ও বাইরের অসহযোগিতা! আমরা এই অসহযোগিতার মনোভাব দেখেছি রাজ্যে, দেশে ও সমাজের সর্বস্তরে! যার পরিণতিতে আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে, প্রতিটি সংসারে অবস্থিত প্রতিটি জীবনের আকাশ এই অসহযোগিতার বিষ বাষ্প ঢেকে ফেলেছে! ভয়ঙ্কর এক দম বন্ধ করা পরিবেশে বেঁচে আছে মানুষ! আজ যেমন লক ডাউনের কারণে মানুষ বন্দি হ'য়ে আছে ঘরে ঘরে ঠিক তেমনি বন্দি হ'য়ে আছে আজ মানুষ অসহযোগিতার অদৃশ্য এক মরণ কারাগারে! কবে মুক্তি পাবে মানুষ এই কারাগার থেকে!? পাবে না! কারণ সেই মুক্তির চেতনা জাগাতে পারে এমন নেতৃত্ব নেই বর্তমান ভারতে! থাকলেও সে অসহায়, বন্দী নিজের ধ্যান ধারণার কাছে, আদর্শহীনতার কাছে, অজ্ঞানতা ও অসততার কাছে, কপটতার কাছে। বন্দি দলের মানুষদের কাছে, নীতির কাছে। জনসাধারণের মানসিকতার কাছে! এর উদাহরন নতুনভাবে নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো পুরোনো ভাইরাস আরও শক্তিশালী হ'য়ে নতুন রূপে করোনার উত্থান!
করোনা আমাদের আর একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমরা কতটা অসহায় আমাদের অসহযোগিতার মনোভাবের কাছে! দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন করোনা থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে আর সেই সিদ্ধান্ত দেশবাসীর কাছে খিল্লি হ'য়ে ফিরে আসছে, উপেক্ষার বিষয় হ'য়ে উঠছে! নিজের দলের কাছেই অসহযোগিতার উদাহরণ হ'য়ে উঠছে দলীয় কার্যক্রম! সবাই যে যার মত পক্ষে বিপক্ষে জান্তে-অজান্তে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলদাস হ'য়ে অসহযোগিতার বলিষ্ঠ মুষ্টিবদ্ধ হাত উর্দ্ধে তুলে হুঙ্কার দিচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে! কেউ কেউ খিল্লি করতে, উপহাস করতে, নিচা দেখাতে কিংবা অতি উৎসাহে পথে নেবে পড়ছে আবেদন বা আহ্বানকে ব্যর্থ করতে বা সফল করতে! কোথায় যাবে আজ মানুষ!? কার কাছে যাবে আজ মানুষ!? সহযোগিতা আজ নিরুদ্দেশ! নিরুদ্দেশ হ'য়ে গেছে সহযোগিতা সেইদিন যেদিন দেশকে স্বাধীন করার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল! আর সেদিন সেই সময় থেকে অসহযোগিতা বোন ম্যারোর মধ্যে ঢুকে পড়েছে, ঢুকে পড়েছে বংশপরম্পরায় জৈবি সংস্থিতিতে! আর আজ তার বিষময় ফল ভোগ করছে অবিভক্ত ভারতবর্ষের তিন টুকরো হওয়া দেশের প্রায় ১৬০-১৭০কোটি জনগণ! কে বা কারা দায়ী!? কার দোষ!?
কে বা কারা দায়ী আর কার দোষ এই আলোচনায় কাকে ছেড়ে কাকে ধরবো বলতে গেলে ঠগ বাঁচতে গাঁ উজাড় হ'য়ে যাবার মত অবস্থা হ'য়ে যাবে। শুধু এটুকু বলতে পারি পরিবারে সদ্য জন্ম হওয়া সন্তানটির জন্মবিজ্ঞানে কোনও ত্রুটি আছে কিনা সে বিষয়ে আলাদা ক'রে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক গভীর তথ্য ও তত্ত্বপূর্ণ আলোচনা করা যেতে পারে প্রকৃত সমস্যা ও ত্রুটিমুক্ত ভবিষ্যৎ শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার জন্যে কিন্তু বর্তমান জটিল সময়ে পরিবারের গার্জিয়ানের উপর নির্ভর করছে জন্মে যাওয়া শিশু কোন পরিবেশে বড় হবে, কোন শিক্ষাব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে কোমর শক্ত ক'রে উঠে দাঁড়াবে! ঠিক তেমনি, দেশের সমস্ত দলের সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশের ও সমস্ত রাজ্যের প্রধানদের আজ সময় এসেছে যদিও অনেক অনেক দেরী হ'য়ে গেছে, তবুও একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হ'লেও ভালো এই প্রবাদের উপর দাঁড়াবার! সময় ডাক দিয়ে বলছে, অনেক ভুলের উপর দাঁড়িয়ে দেশ ব্রিটিশদের শাসন মুক্ত হয়েছে অর্থাৎ দেশ দ্বিখন্ডিত হ'য়ে স্বাধীন হয়েছে! সেই পূর্বসূরীদের ক্ষমতার ভয়ঙ্কর লোভ ও মোহের ফলে দেশভাগের মত মারাত্মক ক্ষমাহীন ভুল আজ পর্যন্ত কোনও দল, কোনও নেতা স্বীকার ক'রে পুনরায় মিলনের কোনও উদ্যোগ নেয়নি! দুই জার্মানির মিলনের মত সেই পবিত্র মহাউদ্যোগ জানি না কবে গৃহীত হবে, আদৌ আর কোনোদিন হবে কিনা! তবে এখনই পরিবারের প্রধানের মত দলের, রাজ্যের, দেশের প্রধান তোমরা তোমাদের নিজ নিজ দেশের প্রতি প্রকৃত গৃহকর্তার কর্তব্য পালন করো! হে দেশের নেতৃবৃন্দ! পালন করো তোমাদের প্রতিশ্রুতি, তোমাদের শপথ! সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দাও পরস্পর পরস্পরের প্রতি! পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও! শ্রদ্ধা আজ ক্ষতবিক্ষত! শ্রদ্ধার মাথায় পরাও শিরস্ত্রাণ! ভালোবাসার করো চাষ! নতুবা ভয়ঙ্কর এক অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার সংক্রামক ব্যাধি অতি চুপিসারে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলেছে সমগ্র সমাজকে, ঢুকে পড়েছে ঘরে ঘরে একেবারে অন্দরমহলে! দেশ, সমাজ, মানুষকে ভালোবেসে দেশনেতারা একটু নিরপেক্ষতার উপর দাঁড়ালে শ্রদ্ধা, ভালোবাসাকে হাতিয়ার করে তাহ'লে অমৃত ছড়াতে পারে মানুষের প্রাণে, মানুষের হৃদয়ে। এই অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতা আক্রমণ করছে জৈবি সংস্থিতিতে যা চিরকালীন এক মহামারীতে পরিণত হবে অদূর ভবিষ্যতে! যার কাছে আজকের করোনা, অতীতের প্লেগ, কলেরা, স্প্যানিশ ফ্লু-এর মত মহামারী তুচ্ছ! অতি তুচ্ছ!! এখনও যদি দেশের নেতারা অনুভব করতে না পারে এর ভয়াবহ পরিণতির কথা তাহ'লে ধরে নিতে হবে নিশ্চিত ধ্বংস অনিবার্য! আর তা শুধু সময়ের অপেক্ষা! শুধু সেদিনের পৃথিবীতে যারা থাকবে----- হয়তো আমিও থাকবো-----তাদের সেদিনের চরম যন্ত্রণাদায়ক অসহায় অবস্থার কথা ভেবে নিজেকে বড় একা নিঃসঙ্গ অসহায় লাগে!
এই অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতা সম্পর্কে সত্যদ্রষ্টা পরমপুরুষ যুগপুরুষোত্তম জীবন্ত নররূপী রক্তমাংসের ঈশ্বর পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আজ থেকে বহু বছর আগে অশ্রদ্ধার করুণ ভয়াবহ ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখে শ্রদ্ধাকে বাঁচাবার জন্য বলেছিলেন,
'শ্রদ্ধার মাথায় শিরস্ত্রাণ দাও! শ্রদ্ধাকে ক্ষতবিক্ষত ও ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে তোমরা রক্ষা করো।'
আর অসহযোগ আন্দোলনের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে বলেছিলেন,
'ব্রিটিশ চলে গেলেও এই অসহযোগ কিন্তু রাজপথ থেকে একেবারে রান্নাঘরে পৌঁছে যাবিনি!'
ক্ষমতা দখলের লোভে, দেশের প্রধান হওয়ার লোভে সাধারণ মানুষকে ধর্ম্মের ভিত্তিতে ভাগ ক'রে দিয়ে সেদিন যারা অশ্রদ্ধা আর অসহযোগিতার উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার নামে তামাশা ভিক্ষা নিয়েছিলেন ব্রিটিশদের হাত থেকে আজ তাঁদের পুঁতে যাওয়া অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার বিষবৃক্ষ ডালপালা ছাড়িয়ে বি-শা-ল মহীরুহে পরিণত হয়েছে তিন টুকরো হওয়া ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ মাটিতে! যার শাখায় শাখায় বসে আছে শকুনের দল মানুষের ভাগারে মরা মানুষ পড়লেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাংস খাবে বলে!
আজ ভয়ঙ্কর করোনা ছোবলে যখন নীল হ'য়ে যাচ্ছে গোটা দেশ তথা পৃথিবী ঠিক সেই সময়েও অশ্রদ্ধা আর অসহযোগিতার পাশা খেলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ!
সত্য নেতৃবৃন্দ! কি বিচিত্র এই নেতৃত্বের ভয়াবহ নেশা!
No comments:
Post a Comment