আর ২০২৪ এর জুলাই মাসের ছাত্র নাগরিক আন্দোলন, অভ্যুত্থান ছিল বিদেশী শক্তির রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত ছদ্ম ছাত্র নাগরিক আন্দোলন, অভ্যুত্থান।
বৈদেশিক শক্তির সাহায্যের কথা বললাম এইজন্যে যে, যখন দেশের সেনাবাহিনী এই জুলাই আন্দোলনে চুপ থেকে একই সঙ্গে দু'দিকে ব্যালান্স রক্ষা ক'রে চলে তখন বোঝা যায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ছিল ভয়ংকর চাপে। সেনাবাহিনী একই সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরাপদে দেশের বাইরে চলে যেতে সাহায্য করে এবং একই সঙ্গে হঠাৎ উড়ে এসে দেশের প্রধান চেয়ারটাতে জুড়ে বসতে মহম্মদ ইউনুসকে সাহায্য ও সমর্থন করে। কিন্তু আশ্চর্য, সেনা অভ্যুত্থান হয় না! কেন হয়নি? কার চাপে?
মহম্মদ ইউনুসের হঠাৎ দেশের প্রধান চেয়ারে এসে বসা সাময়িকভাবে উপরসা আশ্চর্য্যের ব্যাপার ছিল। কিন্তু সমস্তটাই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। হাসিনার দেশত্যাগের পর ছাত্র নেতারা যখন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করছিলেন তখন ছাত্র নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সেই মিটিং-এ উপদেষ্টা প্রধান হিসেবে প্রস্তাব আসে দেশের বাইরে অবস্থানরত মহম্মদ ইউনুসের নাম। কেন তাঁর নাম হঠাৎ উঠে এলো? এই ছাত্র আন্দোলনে বা ছাত্র নাগরিক যৌথ আন্দোলনে মহম্মদ ইউনুসের কি ভূমিকা ছিল? তিনি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে দেশের অভ্যন্তরে ছিলেন? যারা যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে থেকে কেন কারও নাম, কোনও নাম বিবেচ্য ও গ্রহণযোগ্য হ'লো না? কি কারণ? ১৮কোটি নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থানরত, আন্দোলনরত, বা আন্দোলন সমর্থনরত নেতা কর্মীদের মধ্যে দেশ চালানোর মতো কোনও যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক বা রাজনীতিবিদ ছিলেন না? কেন একজনেরও নাম গ্রহণযোগ্য হ'য়ে ওঠেনি? যারা লড়াই, আন্দোলন করলো ভয়ংকর বিপদকে মাথায় নিয়ে তারা কেন কেউ বিবেচ্য হ'লো না? কার বা কাদের অঙ্গুলী হেলনে দেশের বাইরে অবস্থানরত, লড়াই অভ্যুত্থানের ময়দান বাংলাদেশ থেকে 12,840 km দূরে অবস্থিত আমেরিকায় শান্তির নোবেল হাতে শান্তিতে অবস্থানরত একজনই ছিলেন বিবেচ্য ও উপযুক্ত? যিনি ৭১ এর ভয়াবহ যুদ্ধের সময়ও দেশে ছিলেন না, দেশের বাইরে আমেরিকায় ছিলেন, ঠিক তেমনি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে দেশের মধ্যে ছিলেন না, ছিলেন আমেরিকায়। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না থাকা, আন্দোলনের সময়ে দেশের বাইরে থাকা একজনকে দেশের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করার পিছনে নির্বাচিত ব্যক্তির যে এই ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের নেপথ্যে যোগাযোগ ছিল তা' স্পষ্টতই দেশের নানা ঘটনাবলী প্রমাণ করে।
আশ্চর্য ও দুঃখের বিষয় মহম্মদ ইউনুসের মত শিক্ষিত, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মানুষ পেছনের দরজা দিয়ে চোরের মত অগণতান্ত্রিক উপায়ে অবৈধভাবে দেশের প্রধানের চেয়ারে ব'সে ক্ষমতা দখলের পর পরই ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন। তিনি এক ইন্টারভিউতে স্বীকার করেন শেখ হাসিনা তাঁকে অনেক অত্যাচার করেছে। শেখ হাসিনার প্রতি যে তাঁর ব্যক্তিগত রাগ রয়েছে তা' তিনি প্রকাশ ক'রে দিয়েছেন তাঁর বক্তব্যে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মপদ্ধতি ও অন্যান্য নানা বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতির কারণ। তিনি এক ইন্টারভিউতে রি-সেট বাটন টিপে অতীত ইতিহাস মুছে দেওয়ার কথাও বলেন। চব্বিশের জুলাই মাসের ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া ছদ্ম গণ অভ্যুত্থানের পর দেশের ৭১এর সমস্ত ইতিহাস ভাংচুরের সময় অনৈতিকভাবে দেশের প্রধানের চেয়ারে বসে থাকা সত্ত্বেও মহম্মদ ইউনুস বাধা দেননি, কোনও কথা বলেননি। তাঁর নীরব উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছিল ধ্বংসলীলা। তাঁর নীরবতা প্রমাণ করে তিনি রি-সেট বাটন টিপে সত্যি সত্যিই ৭১এর সব অতীত মুছে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ৭১সালে ভারতের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সাহায্য, সেই All out সাহায্যকে স্বীকার করেন না, স্বীকৃতি দিতে চান না। সত্যিকে তিনি পা দিয়ে দাবিয়ে রাখতে চান। মিথ্যেকে মালা পড়িয়ে গলায় বুকে জড়িয়ে ধরতে চান গভীর মমতায়। দিবানিদ্রায় নিজে মিথ্যে স্বপ্ন দেখেন ও দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখান ২০২৪শের জুলাই গণ আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রকৃত গণ আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থান।
তাই বলি, একাত্তর আর চব্বিশ এক নয়। সত্যের জামা কাপড় চুরি ক'রে সত্যকে উলঙ্গ ক'রে ফেলে রেখে মিথ্যে আজ সত্যের পোশাক পড়ে আজ জনসমক্ষে হাজির। আর, সত্য সবার পিছনে উলঙ্গ হ'য়ে দাঁড়িয়ে বলছে আমি সত্য, আমি সত্য, আমি সত্য। উলংগ সত্যকে দেখে জনগণ যতই হাসাহাসি করুক আর কাকের পিছনে ময়ুরের পুচ্ছ লাগানোর মত মিথ্যা যতই সত্যের পোশাক পড়ে সাজগোজ ক'রে মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়াক সত্য সত্যই, আর মিথ্যা মিথ্যা। সত্য কখনও মিথ্যা হ'তে পারে না, আর মিথ্যা কখনও সত্য হয় না। সত্য চিরন্তন, আর মিথ্যা প্রতিদিন প্রতিনিয়তই ক্ষণে ক্ষণে তার ভোল পালটায়। সময় সবসে বড়া বলবান। সময় তার হিসাব নিকাশ করবে সময় মত। আজ নয়তো কাল। কপট ব্যক্তিত্ব, কপট চরিত্র ও কপট কর্ম দিয়ে দেশের ও দেশবাসীর কখনও মঙ্গল ও উন্নতি করা যায় না।
তাই বলা হ'য়ে থাকে সত্য উলঙ্গ ও অপ্রিয়। সত্য উলঙ্গ ও অপ্রিয় হ'লেও সত্য সত্যই, সূর্যের মত চিরন্তন। সত্য প্রকাশ হ'তে দেরী হলেও সত প্রকাশ হয়ই হয়। কথায় আছে, ভগবান কে ঘর দের হ্যায়, পার আন্ধের না'।
( লেঝা ২৮শে মার্চ'২০২৫)
No comments:
Post a Comment