১৯৭১ সাল ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল পটভূমি, পবিত্র ও শুদ্ধতার প্রতীক।
২০২৪ সাল ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন ও ছদ্ম রাজনীতির প্রতীক।
বাংলাদেশ নিয়ে একটা আলাদা সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে আছে পশ্চিমবাংলার বাঙালীদের মধ্যে বিশেষ ক'রে বাঙ্গাল হিন্দু বাঙালীদের মধ্যে। আমারও তাই। আমার মায়ের, আমার বাপদাদাদের জন্মভূমি মাতৃভূমি অখন্ড ভারতের পূর্ববঙ্গ বর্তমানে বাংলাদেশ আমারও ভূমি।
তাই, আমি বাংলাদেশ নিয়ে বারবার আমার মতামত প্রকাশ করি। এছাড়া ৭১-এর যৌবনের প্রথম দিনগুলি জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে। বাংলাদেশে মানুষের ওপর পাকিস্তানী সেনাদের নারকীয় বর্ব্বরোচিত অত্যাচার, হত্যাযজ্ঞ, মা-বোনেদের ওপর পাশবিক নির্ম্মম বলাৎকার ও হত্যা, ধ্বংস যজ্ঞ প্রথম যৌবনের দিনগুলিতে আমার জীবনকে করেছিল উত্তাল।
সেদিন ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ পাকিস্তানের দানবীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে হয়েছিল সোচ্চার। বিধানসভা ও লোকসভা উত্তাল হ'য়ে থাকতো বাংলাদেশ ইস্যুতে।
আর, বিশেষ ক'রে একসময় অখন্ড ভারতের একই ভূমি অখন্ড বাংলা পরবর্তীতে ব্রিটিশের ঘৃণ্য চক্রান্তে ভাগ হ'য়ে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হ'য়ে পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিমবাংলা হওয়ার কারণে পশ্চিমবাংলার ঘটি, বাঙ্গাল, হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ইত্যাদি সমস্ত বাঙালি পূর্ববাংলার ১৯৭১ এর ভয়াবহ ঘটনায় হয়েছিল সমব্যাথী ও আন্দোলিত এবং প্রতিবাদে শামিল।
১৯৭১ সালে পশ্চিমবাংলার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল পূর্ববাংলার মানুষের যন্ত্রণা, পূর্ববাংলার মানুষের অসহায় নির্বিচার মৃত্যু, মা-বোনেদের নারকীয় যৌন অত্যাচারের সঙ্গে পশ্চিবাংলার মানুষ একাত্ম হ'য়ে গিয়েছিল সেদিন। সেদিন পশ্চিমবাংলার হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নারীপুরুষ, ছাত্র, যুব, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ বাঙালী হয়েছিল প্রতিবাদের সাথী, নেমেছিল পথে। আওয়াজ তুলেছিল বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবার জন্য। সেই আওয়াজ শুনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক বিদেশী শক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা ক'রে ভারত সেদিন দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের পাশে। আমিও সেদিন ছিলাম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একজন ১৬বছরের তাজা টাটকা টগবগে রক্তের পথে নামা প্রতিবাদী।
আর, সেইজন্যই আজও জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিকভাবেই একাত্ম অনুভব করি আমি বাংলাদেশ ইস্যুতে। আর তাই আমার প্রাণের কথা তুলে ধরি বারবার। সেদিনের ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক ৩০লক্ষ বাঙ্গালীর রক্তে ধোয়া ৭১সাল, মা-বোনেদের ইজ্জৎ লুন্ঠনের কলঙ্কিত ৭১ সাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গিত প্রাণের ইতিহাস লেখা ৭১ সাল এবং পাকিস্তানের নারকীয় নৃশংস আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক অল আউট সহযোগীতা আজও ভুলতে পারি না। যে ইতিহাস রি-সেট বাটন টিপে মুছে দিতে সচেষ্ট বর্তমান বাংলাদেশের জবরদখল সরকারের অবৈধ প্রধান মহম্মদ ইউনুস; যিনি কোনোদিনই বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের পট পরিবর্তন ও ২০২৪ সালের ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের মাটিতে ছিলেন না। আমেরিকায় আয়েসে কাটিয়েছিলেন জীবন নিজ ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে। যিনি বাংলাদেশের মানুষকে ভারত বিদ্বেষী ক'রে তুলতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২০২৪ এর ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারতকে শত্রু দেশ হিসেবে চিহ্নিত ক'রেছিলেন এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিলেন।
যাই হ'ক বাংলাদেশের ২০২৪ এর জুলাই ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল পটভূমি যে এক নয় তা' নিয়ে আমি পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।
ক্রমশ
( লেখা ২৮শে মার্চ'২০২৫)
No comments:
Post a Comment