Powered By Blogger

Sunday, April 13, 2025

বিচিত্রা ১২২

ঈশ্বর এক ও একমাত্র গণতন্ত্র প্রেমী গণদেবতা।
তিনি মানুষকে স্বাধীন ও স্বরাট ক'রে পাঠিয়েছেন
আর সেই মহৎ সুযোগের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ
করছে অকৃতজ্ঞ, নেমকহারাম, বেইমান ও বিশ্বাসঘাতক মানুষ।


'সৎসঙ্গ' জ্ঞানের গোলাঘর আর
সৎসঙ্গীরা বিশ্বের সেরা ধনী;
তবুও আজ ঘরে ঘরে সৎসঙ্গীরা 
মূর্খ ও গরীব! কেন?
\
সৎসঙ্গ সত্যযুগ আনয়নের পথিকৃৎ
আর, সৎসঙ্গীরা 'সৎসঙ্গ'-এর সৈনিক।
তবু সৎসঙ্গীরা পড়ে রয়েছে ,
বুঁদ হ'য়ে দিন কাটাচ্ছে মিথ্যা যুগে দৈনিক।

অনেক জনম পরে ভাগ্যক্রমে 
যদিও পেলে ঠাঁই তাঁর চরণ তলে 
তবুও অভাগা তুমি রইলে মেতে 
অমূর্ত ভগবানে, মূর্ত পিছনে ফেলে!

ইষ্টপূজার নামে করছো ইষ্ট বিরোধীতা
বুঝেও না বুঝে আছো তুমি,
দেখছে বিধাতা।
এমন অভাগা তুমি!?
দিন কেটে আসছে রাত
সামনে দেখবে শ্মশান ভূমি।

"রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর";
বাবাইদাদা রূপে প্রভু লীলা করেন কি সুন্দর!!
( লেখা ১৩ই ডিসেম্বর'২০১৮)


























































 

























বিচিত্রা ১২১

ঈশ্বরের সাথে বেইমানি করেছে কে?
তুমি নাস্তিক নাকি যে আস্তিক!

যেদিকে তাকাই শুধু জুডাসের চুমু!
তুমিও কি জুডাস? নাকি আমি?

জুডাস কি মীরজাফর নাকি নাস্তিক!?

আস্তিকের আস্তিনে আস্তানা গেড়েছ লুকিয়ে! 
কে তুমি? তুমি কি জুডাস নাকি মীরজাফর?

কবি, শিল্পী, লেখক, বিজ্ঞানী
ঈশ্বরের চেয়েও মহান, জ্ঞানী!!
( লেখা ১৩ই এপ্রিল' ২০১৭)

প্রভু! জানি তুমি চাও
তোমার কাজ আমি করি;
কিন্তু
রিপু তাড়িত আমি বৃত্তি-প্রবৃত্তির চরণ ধ'রে মরি! 
বাঁচার নেই কোনও আর উপায়।

তুমিও করছো ঠাকুর পূজা,
আমিও করছি তাই;
দু'জনের মাঝে তবে কেন উঠছে দেওয়াল?
ফাটল ধরছে কেন ভাই!?
গলদ কোথায়!!

গলদ পুষে রেখে মনে
করছো প্রভুর পূজা!
শয়তান মুচকি হেসে বলছে,
ওরে নরক যাবি সোজা, 
তুই প্রভুর যতই ওড়া ধ্বজা!

আমার কোনও কাজ নয়,
আমার নিজের জীবনে নিজের কাজে
সারা জীবন করেছি ভুল, প্রভু! 
তোমার কোনও কাজে যেন কোনও ভুল না হয়।

মানব সেবার নামে
তুমি করছো ধনের সেবা?
ঝাঁকি মেরে তুই দ্যাখ একবার 
'শয়তান না ভগবান'
অন্তরেতে আছে বসে কেবা!?

লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে ছোটাচ্ছো তাঁর মিশন রথ?
গোলকধাঁধায় মরছো ঘুরে,
মরছো খুঁজে পথ!!

দোষ ধরে কারা?
কোনও কাজ করে না, আর
সেজেগুজে এসে
মঞ্চে বসে যারা।


সাজানো বাগানে ফুল তোলে কারা?
মুখে মারিতং জগৎ, আর
সেজে গুজে বাগানে
বেড়াতে আসে যারা।

ঈশ্বরের কাজে ভুল
আর
নিজের ব্যক্তিগত কাজে ভুল
আকাশ পাতাল তফাৎ ভাই;
মনে রেখে এই তফাৎ
সতর্ক থেকো তাই।

ঘরে ঝগড়া, বাইরে ঝগড়া
টিভির চ্যানেলে চ্যানেলেও তাই! 
ঝগরা মারামারি এখন অক্সিজেন, 
প্রেম ভালোবাসা কার্বনডাইঅক্সাইড!!

কাল তো দু'মুঠো ভাত জুটতো না, 
চোখের জল দেখেছি তোমার
আর আজ এত অহংকার!
কাঞ্চন টঙ্কারে দিগ্বিদিক অন্ধকার!!
( লেখা ১৩ই এপ্রিল'২০১৮)





































Saturday, April 12, 2025

বিচিত্রাঃ ১২০

ঠাকুর আছেন, তিনি সব দেখছেন।
তুমি আছো, তুমি কি তাঁকে দেখছো?
যদি দেখে থাকো তবে ভয় পেয়ো নাকো।
তিনি সব কিছুর সমাধান দেবেন।

শয়তানের বন্ধু কে? কপট ঈশ্বর বিশ্বাসী যে!
অধর্মের সাথী কে?
ধর্মের ধ্বজাধারী যে!

শয়তানের শয়তানির প্রধান পৃষ্ঠপোষক তিনি;
ধর্মের নামে ঈশ্বরের সংগে বেইমানী করেন যিনি।

মাঝে মাঝে ভাবি,
ঠাকুর কি হবে এসব ক'রে;
হতাশায় বুক ভাঙে
যখন ঘর শত্রু রাবণ ধ্বজা ধরে।

এ এক ভয়ঙ্কর সময়! কি করি,
কি যে উপায় ভেবে ভয় হয়!ভুল করিনি, করিনা;
তবুও হে ঈশ্বর!
ক্ষমা ক'রো তোমার বিচারে
যদি কোনও ভুল হয়।

জানি প্রভু তুমি আছো আমার সাথে!
কিসের ভয়! কাকে ভয়!
ঘোর অমাবস্যার রাতে!

সবাইকে নিয়ে চলতে চাই,
করতে চাই তোমার কাজ;
আজ যাকে ভাবি বন্ধু
প্রভু! কাল সে মাথায় পড়ে হ'য়ে বাজ!
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০১৮)

ক্ষমতাসীন অসৎ লোকের কাছে 
ক্ষমতাহীন সৎ লোকের 
হাত পেতে সাহায্য নেওয়ার চেয়ে 
আত্মহত্যা করা বা করোনার হাতে মরা ঢের সম্মানের!

কপট সাধুর হাতে অমৃত খাওয়ার চেয়ে 
অকপট অসাধুর হাতে বিশ্বাস ক'রে 
অমৃত মনে ক'রে বিষ খেয়ে মরা বা 
করোনায় মরা অনেক গর্বের!
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০২০)

ভাবছি,
নিজের মাথার ঘায়ে কুকুর নিজেই পাগল!
অন্যকে কামড়ে কি আর পাগল করবে!?
অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। 
এসো পাশে দাঁড়াও,
ঈশ্বর রক্ষা করবে।

সুর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে! 
অস্ত যাওয়ার সময় হয়েছে 
তবুও ঘুম ভাঙছে না!? 
বন্ধু! কাল সকাল যদি আর না আসে 
তবে দয়ালের কাজ করার
আর সুযোগ পাবে না।

নিজেকে পাল্টাও!
কথার জাগলারিতে অন্যকে পাল্টাতে যেও না।
আপশোষের শেষ থাকবে না।
শেষের সেদিনে কেউ পাশে থাকবে না।

দয়ালের জন্য বাঁচি, বেঁচে আছি।
কারও জন্য বাঁচি না, বাঁচতে চাই না।
দয়ালের জন্য বাঁচি তাই সবার জন্য বাঁচতে চাই।
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০২১)

দয়াল! পথ চেয়ে আছি বসে 
কবে আবার আসবে তুমি এ আশায়! 
আজ বুঝি সেদিন কত দুঃখ কষ্ট, ব্যথা, যন্ত্রণা 
লেখা ছিল শবরীর শরীরে মনে আর 
পরতে পরতে তার বাসায়।
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০২২)
































Thursday, April 10, 2025

কবিতাঃ সবার প্রাণে।

চা শেষ হ'য়ে যায় তবু শেষ হয় না কথা
বুকের ভেতরেই ঝ'রে ঝ'রে পড়ে
কথার বুকে জমে থাকা পাঁজর ভাঙ্গা ব্যথা।
দৃষ্টি আমার হারিয়ে যায় কোন সুদূর পানে
মধু ঝরা কথা 
তোমার পৌঁছে যায়
আমার হৃদয় মাঝে, পৌঁছে যায় 
কানে কানে সবার প্রাণে

কবিতাঃ সুর ও ঈশ্বর সাধনা।

সুর সাধনায় মগ্ন তুমি
হে ধ্যানমগ্ন ঋষি!
ঈশ্বর সাধনায় হবে উত্তরণ!!
জীবন্ত ঈশ্বর মাঝে আছে সুরের খনি,
করো তাঁর অন্বেষণ।
সুরের খনির সন্ধান পেলে
তুমি পাবে ঈশ্বর!
ঈশ্বর লাভ হ'লে পরে
ভাসবে সুর সাগরে নিরন্তর!!

Wednesday, April 9, 2025

পেঁপের লুচি। পর্ব ১

দুর্দান্ত খেতে এই পেপের লুচি। এই পেপের লুচি তৈরির পিছনে একটা কাহানী আছে। আর কাহানীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দয়াল ঠাকুরের অপরিসীম দয়ার কথা। যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এইখানে একমাত্র প্রযোজ্য শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের একটা ডায়লগ যা ঠাকুর প্রায় সময়ই উচ্চারণ করতেন। ঠাকুরের প্রিয় কিছু কোটেশানের অন্যতম প্রিয় কোটেশন এটা। "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." এর ভাবার্থ হ'লো, "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"

আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ২৪-২৫ বছর হবে। আজ থেকে ৪৫ বছর আগের (১৯৭৭-৭৮) কথা। পেটের ডানদিকে একটা ব্যাথা হ'তো। ডানদিকের লিভারের ওপরের দিকে একটা সূচের মতো ব্যাথা খোঁচা মারতো লাংসের উপরের দিকে। হোমিওপ্যাথি ডাক্তারকে যখন দেখালাম তখন তিনি বলেছিলেন, এটা গল ব্লাডারের ব্যাথা। তারপর তিনি ওষুধ দিয়েছিলেন। পরে অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। তিনিও একই কথা বলেছিলেন। সঙ্গে ব্যাথার ওষুধ দিয়েছিলেন ব্যারালগন। এইভাবে চলছিল। খাওয়াদাওয়ার উল্টোপালা হ'লেই ব্যাথা চরমে পৌঁছত। হাতের সামনে থাকতো ব্যারালগন। তাৎক্ষনিক উপশমের জন্য ব্যারালগন চালান ক'রে দিতাম পেটে। এইভাবে বছরের পর বছর কেটে চললো। ধীরে ধীরে পেটের হজম শক্তি একেবারে নষ্ট হ'য়ে গেল। হাতের সামনে মেট্রোজিল ৪০০, র‍্যানটেক বা জিনটেক ৩০০, ইউনিয়ামজাইম বা ভিটাজাইম ইত্যাদি পেটের আমাশা, অম্বল দূর করার জন্য এবং খাবার হজম হওয়ার জন্য যা পেতাম তাই পেটে চালান ক'রে দিতাম। 

এমনিভাবেই কেটে গেল বহু বছর। দীর্ঘ বহু বছর প্রায় ২৫-২৬ বছর পর সালটা (২০০৩ সাল হবে) একদিন সকালে একেবারে সর্ষের তেলের মতো বমি করলাম। এই দীর্ঘ সময়ে শেষের দিকে অনেক বছর বাইরের কিছু তো খেতে পারতাম না এমনকি ঘরের রান্নাও হজম হ'তো না। চপ, সিঙারা, কচুরি, লুচি, পরোটা ইত্যাদি খাবার ছিল আমার ফেবারিট।দুপুরে রাত্রে বেশিরভাগ সময়ে ঘি ডালডা দিয়ে ভাজা লুচি, পরোটা সঙ্গে আলুরদম বা অন্যকিছু মুখোরোচক রান্না দিয়ে হ'লেই আমার হ'য়ে যেত। ভাত, মাছ, মাংস না হ'লেও চলতো। কিন্তু পেটের বদহজম আর ব্যাথার কারণে সব বন্ধ হ'য়ে গেছিল। তারপর ঐ সর্ষের তেলের মতো বমি করাতে ডাক্তারের কাছে গেলাম,-সালটা ছিল ২০০৩ সাল, ডাক্তার আল্টাসোনোগ্রাফি করতে লিখে দিল। আলট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে ধরা পড়লো গল ব্লাডারের ভয়ংকর অবস্থা। গল ব্লাডার বাস্ট করার আগেই ইমিডিয়েট অপারেশন প্রয়োজন। আমার ভাইরা ভাই সবসময় আমাকে অপারেশন করিয়ে নেওয়ার কথা বলতো। নইলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা আছে সেই কথা ব'লে আমাকে অনেকবার সাবধান করেছিল।

যাই হ'ক, আল্টাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে অ্যাকিউট গল ব্লাডার ধরা পড়ায় আমাকে সার্জেন ডঃ ------ কাছে রেফার করলেন। ডঃ------- পরীক্ষা ক'রে আমাকে ইমিডিয়েট হস্পিটালে ভর্তি হ'য়ে যাওয়ার কথা বললেন এবং কিছ পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা লিখে দিলেন। তখন আর একমাস পর ছিল দূর্গাপুজা। মনে মনে ভাবলাম এখন যদি অপারেশন করি তাহ'লে পুজোর সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। এ কথা ভেবে ডাক্তারকে পুজোর পর অপারেশন করার কথা বলায় তিনি প্রচন্ড বিরক্ত হ'লেন। রেগে গিয়ে আমায় আমার যা ইচ্ছা তাই করতে বললেন। ডাক্তারবাবু ছিলেন প্রচন্ড বেরসিক। মুখে তার কখনোই কেউ হাসি দেখেনি। কথাবার্তা একেবারে চাঁচাছোলা। নকশাল মাইন্ডের। কিন্তু অপারেশনের হাত যেন ভগবানের হাত। কিন্তু তাঁর সেই কথায় আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডাক্তারবাবুকে ঠিক আছে ব'লে বেরিয়ে এলাম। তারপর কোনও পরীক্ষা না করিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলাম। বাড়িতে কিছু বললাম না। রাতে ঠাকুরের সামনে বসে ঠাকুরকে সব বললাম। অনেক কথা বললাম। মনের সব কথা ব'লে ঠাকুরকে প্রণাম ক'রে নাম করতে করতে শুয়ে পড়লাম। শুরু হ'লো আমার নোতুন যাত্রা। তখন রামদেবজীর যোগ ব্যায়াম-এর ঘোড়া জোর কদমে ছুটে চলেছে দেশ তথা বিদেশ জুড়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে। শুরু হ'লো ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সাতটা আর সন্ধ্যে ৬টা থেকে আটটা পর্যন্ত মরণপণ কপাল্ভাতি আর অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম। আর সঙ্গে চব্বিশঘন্টা শয়নে স্বপনে জাগরণে নাম জপ। রামদেবজীর প্রাণায়াম আর দয়াল প্রভুর নাম প্রাণায়াম চলতে লাগলো অপ্রতিরোধ্যগতিতে।

এমনিভাবে কেটে গেল টানা একমাস। এসে গেল দুর্গাপুজা। এই একমাসের টানা প্রাণায়ামে নিজেকে অনেক সুস্থ অনুভব হচ্ছিলো। খাওয়া দাওয়া একেবারে পেট পচা রোগীর পথ্য যেমন হয় তেমন। আমাদের বাড়িতে তখন পুজোর সময় জয়েন্টলি খাওয়া হ'তো পুজোর একেবারে ষষ্টি থেকে শুরু ক'রে একাদসী পর্যন্ত। রান্নার লোক থাকতো। সকাল থেকে একেবারে সারাদিনের রান্না করার দায়িত্ব থাকতো তার উপর। এই ছয় দিনই সকালে গরম গরম লুচি কখনো বা কচুরি আর আলুরদম, আলু কুমরোর তরকারি, কিম্বা ছোলার ডাল পরিবেশন হ'তো। এই প্রথম আমি এগুলি থেকে বঞ্চিত হবো। এইভেবে মনটা খুব খারাপ হ'য়ে থাকতো। যত পুজোর দিন এগিয়ে আসতে লাগলো তত মনটা বিষন্ন হ'তে লাগলো। পুজোর মজা আর আমার নেই। কিন্তু শরীরটা বেশ চাঙা হ'য়ে উঠেছে দিনের পর দিন। এই একমাস ধ'রে পেটের কোনও গোলমাল নেই, নেই বিন্দুমাত্র বদহজম, অম্বল, কোনও পেট ব্যাথা। পায়খানা পরিস্কার। মনটা চনমনে হ'য়ে উঠতে লাগলো ক্রমশঃ। পুজো যত এগিয়ে আসছে তত জোর কদমে চলতে লাগলো প্রাণায়াম। তার থেকেও তীব্রগতিতে ২৪ঘন্টা চলতে লাগলো নাম প্রাণায়াম আর ধ্যান। যেন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। মরণপণ সংগ্রাম চলছে নিজের সঙ্গে নিজের। আজ্ঞাচক্রে ঠাকুরকে স্মরণ ক'রে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলছি সকাল থেকে রাত। ঠাকুরের কাছে বসে কাঁদতাম আর বলতাম ঠাকুর আমায় সুস্থ ক'রে দাও। এইভাবে দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। পঞ্চমীর ষষ্টি থেকে একাদশী পর্যন্ত ছয়দিনের জিনিসপত্র এসে গেল। পরেরদিন ষষ্টি। ষষ্টির সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু হ'য়ে গেল রান্নাবান্নার। একটা ছুটির আমেজ অনুভব করতে লাগলাম সকাল থেকে। জয়েন্ট ফ্যামিলি। বাড়িতে একটা কোলাহল চলছে। ভালোই লাগছে। ফুরফুরে সকাল। সকালের ইষ্টভৃতি, প্রার্থনা, প্রাণায়াম সেরে স্নান ক'রে টিভি চালিয়ে বিছানায় বসে খবরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের পুজো আয়োজনের খবর শুনছি। নাকে ভেসে আসছে ডালডা দিয়ে ভাজা লুচির গন্ধ। বুঝলাম সকালের নাস্তা তৈরী শুরু গেছে। এইসময় বৌ এসে জিজ্ঞেস করলো আমি কি খাবো। আমি ভাবলাম কি আর খাবো। লুচি তো আমার পেটে সহ্য হবে না। তাই বললাম, প্রতিদিন যা আমার জন্য বরাদ্দ তাই দাও। মুড়ি আর চা দাও। এইকথা বলে আমি ঘরের বাইরে বাগানে এসে দাঁড়ালাম। সকালের আবহাওয়া বেশ মনোরম। বাগানে চারপাশে প্রচুর গাছপালা। পেপে, কলা, কাঁঠাল, বাতাবি লেবু, গন্ধরাজ লেবু, পেয়ারা, বেল, নারকেল, আম ইত্যাদি গাছ এবং জবা, গন্ধরাজ, শিউলি, নীলকণ্ঠ, কাঠমালতী, টগর ইত্যাদি নানা ফুলের গাছগাছালিতে ভরা বাগান। খুব বিরাট যে বাগান তা নয়। কিন্তু বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গা জুড়ে নানা ফুলফলের গাছ যেন একটা স্বগীয় পরিবেশ রচনা ক'রে রেখেছে। একটা চেয়ার নিয়ে বসে একাকী চুপচাপ চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম ঠাকুরের কথা। চোখ ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়লো পেপে গাছের দিকে। দেখলাম গোল গোল পেপেতে ভরে আছে গাছ। চেয়ে রইলাম গাছের দিকে। কি অপূর্ব নিখুঁত গোল ফুটবলের মতো এক একটা পেপে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনের মধ্যে কে যেন বলে উঠলো পেপের তরকারির মতো পেপে দিয়ে লুচি তৈরি ক'রে খেলে কেমন হয়? জানি না এটাকে সাড়া পাওয়া বলে কিনা। মনের মধ্যে কথাটা জেগে উঠতেই মনে হ'লো স্বস্ত্যয়নীর তৃতীয় নীতির কথা। আমি তন্ময় হ'য়ে ছড়াটা ভাবছিলাম। শ্রীশ্রীঠাকুর স্বস্ত্যয়নীর তৃতীয় নীতি সম্পর্কে ছড়া আকারে বললেন,
"যে-কাজে যা' ভাল ব'লে
আসবে মনে তৎক্ষণাৎ
হাতে-কলমে করবি রে তা'
রোধ ক'রে তা'র সব ব্যাঘাত।"

ইতিমধ্যে বৌ মুড়ি আর চা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। 'এই নাও চা' কথাটায় সম্বিৎ ফিরে এলো, মুখ ঘুরিয়ে আমি চায়ের কাপ্ হাতে নিয়ে বললাম, লুচি ভাজা হ'য়ে গেছে? বউ বললো, না, এখনো ভাজা হচ্ছে। বাচ্চাদের আগে দেওয়া হচ্ছে তারপরে বড়দের দেওয়া হবে। তারপরে বউ উৎসুক হ'য়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি লুচি খাবে? আমি বললাম, আমার পেটে সহ্য হবে? বউ বললো, তোমার তো এখন পেটের কন্ডিশান আগের থেকে অনেক ভালো, পেটে কোনও ব্যাথা নেই, নেই কোনও অম্বল, গ্যাস, বদহজম। পায়খানাও ভালো হচ্ছে, তা বেশী না। একটা লুচি খেয়ে দেখবে নাকি? আমি বুঝতে পারলাম আমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরেই আমাকে এই কথা বলছে। আমি তখন পেপের বিষয়ে সাড়া পাওয়ার কথা বৌকে বললাম।বললাম, পেপে দিয়ে লুচি ক'রে দেবে? বউ কথাটা শুনে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি গাছের দিকে দেখিয়ে বললাম, দেখো কি সুন্দর গোল গোল পেপে হয়েছে গাছে। তা পেপের তরকারীর মতো পেপে দিয়ে লুচি করা যায় না? বউ বললো, তোমাকে এই পেপে দিয়ে লুচির কথা কে বললো? আমি বললাম, কেউ না। আমি বসে বসে মনে মনে ভাবছিলাম নানা কথা। বাইরে সুন্দর বাতাস। ঘরের ভিতর থেকে ভেসে আসছে ডালডা দিয়ে ভাজা লুচির প্রাণমাতানো গন্ধ। মনে মনে ঠাকুরকে বলছিলাম পেট ভালো ক'রে দেওয়ার কথা। গাছের দিকে তাকাতে তাকাতে পেপে গাছের দিকে গিয়ে নজর আটকে গেল, গোল গোল পেপের দিকে তাকিয়েছিলাম অনেকক্ষণ আর তখনি কে যেন ব'লে উঠলো, পেপের লুচি খা। আমি স্পষ্ট যেন শুনতে পেলাম কথাটা। আর তখনি তুমি এসে বললে চায়ের কথা। তাই তোমাকে বললাম। বউ আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ ভাবলো তারপরে দেওয়ালের কোনায় রাখা বাঁশের লগাটা হাতে পেঁপে গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর লগার খোঁচা দিয়ে একটা বড় দেখে পেঁপে পেড়ে সেটা হাতে নিয়ে চুপচাপ চলে গেল। আমি বললাম, কি গো পেঁপে পাড়লে? বউ বললো, দেখি কি করা যায়। আর দুপুরে তোমার খাবার জন্য পেঁপের তরকারী করবো। এইকথা ব'লে বউ চলে গেল। আমি চুপচাপ বসে প্রকৃতির শোভা দেখছি।

অনেকক্ষণ কেটে গেছে। বাড়ির ভেতরে বেশ জমে উঠেছে পুজোর ছুটির পরিবেশ। ডালডা ভাজা গরম গরম লুচির মজা নিচ্ছে সবাই। মনে হচ্ছে, চারপাশে আকাশে বাতাসে সত্যিই যেন আনন্দধারা বইছে। বাড়ির সামনে রাস্তা দিয়ে যারাই যাচ্ছে তাদেরই চোখেমুখে যেন একটা অনাবিল আনন্দের রেশ ফুটে উঠছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তা। ইতিমধ্যে স্থানীয় ক্লাবের কয়েকজন সদস্য ক্লাবের দুর্গা পুজো সংক্রান্ত কিছু কাজের জন্য দেখা ক'রে গেল বড়দার সঙ্গে। আমার বড়দা ক্লাবের ও পুজোরও ক্যাসিয়ার। পাড়ায় বিভিন্ন সংগঠন যেমন নাগরিক সমিতি, বাড়ির সামনে মহাপ্রভুর মন্দির, নাম সংকীর্তন সমিতি ইত্যাদির প্রতিটি সংগঠনের অনুষ্ঠানের অবিসংবাদিত ক্যাসিয়ার। হিসাব পেশের সময় দেখতাম এক বান্ডিল বিড়ির ও একটা দেশলাই বাক্সের হিসাব দিতে দেখে সবাই হো হো ক'রে হেসে উঠেছিল। আজ লিখতে বসে মনে পড়ে যাচ্ছে কত কথা। চোখ ঝাপসা হ'য়ে আসছে। এই লেখা যখন লিখছি তখন ঘরে কেউ নেই। স্মৃতি বেদনায় বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠছে। তাই তাড়াতাড়ি ফিরে গেলাম মূল ঘটনায়।

এইভাবে কেটে গেল অনেক্ষণ। হঠাৎ বউ-এর গলা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই চোখ ছানাবড়া হ'য়ে গেল! হাঁ ক'রে তাকিয়ে আছি বঊ-এর হাতের দিকে। দেখলাম প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে বউ। প্লেটের উপর বড় বড় দু'টো গরম গরম ফুলকো লুচি আর পাশে মাখা তরকারি। আমি অবাক হ'য়ে তাকিয়ে আছি বউ-এর দিকে। একবার তার মুখের দিকে তাকাচ্ছি পর মুহূর্তে হাতের দিকে। আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না নিজের চোখে যা দেখছি তা। আমি কি যা দেখছি তা সত্যি সত্যিই দেখছি!? বিস্ময়ে মনে মনে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম। বউ বললো, এই নাও দু'টো লুচি খেয়ে নাও। আমি অবাক হ'য়ে বললাম, আমি লুচি খাবো? বউ দৃঢ় স্বরে বললো, খেয়ে নাও। কিছু হবে না। ঠাকুর আছে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, যদি খাওয়ার পর কষ্ট হয়? ডালডা দিয়ে ভাজা লুচি আমার সহ্য হবে? আবার যদি পেট ব্যাথা শুরু হয়? বহু বছর খাইনি লুচি, কচুরি, চপ, সিঙ্গারা, ঘুগনি, ভাজাভুজি ইত্যাদি। এখন যদি আবার পেটের গন্ডগোল শুরু হয়? বউ বললো, দু'টোর বেশী খেও না। সেরকম যদি মনে হয় দুপুরে কিছু খেও না।

যাই হ'ক, আমি তখনো জানি না এ কিসের লুচি। তরকারির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটা স্বাভাবিক সবার জন্য যে তরকারি হয়েছে সেই তরকারি। পেঁপের চিহ্নমাত্র নেই। ভাবলাম এক তো আটা বা ময়দার লুচি, সঙ্গে ডালডা দিয়ে ভাজা তার উপর আলু দিয়ে তৈরি মাখা তরকারি। কি জানি কি হবে। একদিকে ভয় অন্যদিকে প্রচন্ড লোভ হচ্ছে। বহুদিন পর লুচি সামনে দেখে জিভে জল এসে গেল। বহু চেষ্টা ক'রেও আটকাতে পারলাম না জিভের জল। মুখটা ভরে উঠেছে সেই জলে। প্লেটটা হাতে নিয়ে মনে মনে ঠাকুরকে বললাম, হে দয়াল! খাবো লুচি? যদি আবার পেট ব্যাথা হয়? বউ-এর দিকে তাকাতে বউ আবার বললো, খেয়ে নাও। কিচ্ছু হবে না। ঠাকুর আছে। কথাটা বলেই চলে গেল। আর আমিও কালবিলম্ব না ক'রে একটা লুচি হাতে নিয়ে ছিঁড়ে একটু তরকারি দিয়ে মুখে দিলাম। আঃ! কি অপূর্ব টেস্ট! তাড়িয়ে তাড়িয়ে লুচি দু'টো তরকারি দিয়ে চেটেপুটে একটু একটু ক'রে পুরোটা খেয়ে নিলাম। তারপর হাত ধুয়ে ঘরে এসে বসলাম। ঘড়িতে সময় এগিয়ে চলেছে আর ভাবছি এইবুঝি পেটে ব্যাথা শুরু হ'লো, এইবুঝি বদহজম, অম্বল, গ্যাস শুরু হ'য়ে গেল। কিন্তু কিছুই হ'লো না। সময় এগিয়ে চললো। মাঝে কয়েকবার বউ এসে দেখে গেল লুচি খাওয়ার পর আমার প্রতিক্রিয়া কি। জিজ্ঞেস করলো, আমার কোনও কষ্ট হচ্ছে কিনা। আমি আমার ভালো থাকার কথা জানালাম। এমনিভাবে সকাল কেটে গেল। দুপুরের খাবার সময় এসে গেল। আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি কিছু খাবোও কিনা। আমি বললাম, আমার পেট একদম ঠিক আছে। কোনও রকম অসুবিধা হচ্ছে না। পেট একদম হালকা। খিদেও আছে পেটে। এইকথা শুনে বউ দুপুরের খাবার নিয়ে এলো অল্প ক'রে ডাল ভাত আর আলুসেদ্ধ। আমি তাই খেয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করার পর শুয়ে পড়লাম।

এমনি ক'রে সময় এগিয়ে গেল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হ'লো। সন্ধ্যাবেলায় দেখলাম পেট একদম স্বাভাবিক। সামান্য চা বিস্কুট খেয়ে বসে গেলাম প্রাণায়ামে। সন্ধ্যে ৬টা থেকে ৮টা দুঘন্টা টানা প্রাণায়াম করলাম। শরীর একেবারে ঝরঝরে ফুলের মতো হালকা বোধ হ'লো।

এমনিভাবে সময় গড়িয়ে চললো আর নিশ্চিন্তে রাত কেটে এলো পরের দিন। পরের দিন সকালে ভয়ে ভয়ে পায়খানায় গেলাম। পরিস্কার স্বাস্থ্যকর পায়খানা হওয়ায় শরীরটা একেবারে তরতাজা সুস্থ মনে হ'লো। লুচি খাওয়ার কোনও রকম উল্টো প্রতিক্রিয়া হ'লো না। স্নান ক'রে পুজো পাঠ সেরে এসে বসলাম কিছু লেখালেখির কাজ করতে। যথারীতি টিফিন এলো। দেখলাম প্লেটে দু'টো লুচি আর তরকারি আর গরম চা। আজ আর মুড়ি এলো না। গরম গরম লুচি তরকারি দিয়ে খেয়ে ফেললাম ফটাফট। দু'টো লুচি খেয়ে মনটা ভরলো না। সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো বউ আমার লুচি খাওয়া। তারপর প্লেটটা নেওয়ার সময় বললাম, আর একটা হবে না?
ক্রমশঃ
( লেখা ৯ই এপ্রিল ২০২৩)

বিচিত্রা ১১৯

জীবন নষ্টের জন্য কে দায়ী? 
মা? বাবা?জ্যোতিষী? 
আপনি নিজে নাকি ঈশ্বর? 
আর কোনটার শিকার হওয়া ভালো?
সু না কুসংস্কার?
( লেখা ৯ই এপ্রিল' ২০১৯)

অন্যের কটু কথায়, সমালোচনায় নড়ে যাই; 
কেন? মন এককেন্দ্রিক নয়, কপট ভক্তি তাই।

ইষ্টসেবা বা ইষ্টকাজে যদি সত্যিই 
থাকো তুমি ব্যস্ত, তবে বন্ধু আমার
তার প্রমাণ দিতে হবে কেন? 
কপট ভক্তি আর লোকদেখানো সেবা 
প্রমাণ দিতে চায় এ কথা জেনো।

সৎসঙ্গী করে ইষ্টসেবা আর 
রাজনৈতিক বা সমাজকর্মী করে মানবসেবা। 
মানবসেবায় আছে সূক্ষ্ম অহংকার 
আর ইষ্টসেবায় আছে বৈরাগ্য।
এ কথা ভেবেছে কবে কেই বা!!

ইষ্টসেবায় যদি বৈরাগ্য থাকে 
তবে মন থাকে নিয়ন্ত্রণে,
কারও সমালোচনায় মন চঞ্চল হয় না। 
ইষ্টসেবা নীরবে প্রচার বিহীন করতে হয়,
যা করতে হয় তা' থাকুক মনের কোনে।

'সৎসঙ্গ'-এর বিরুদ্ধে দীক্ষিত-অদীক্ষিতদের 
যাবতীয় বালখিল্য কথা আর বিরোধীতা 
তিন নম্বর ছাগল ছানার মায়ের বাঁটের 
দু'পাশে লম্ফঝম্প করা সমার্থক কথা।

ইষ্টসেবা নেই কিন্তু মানবসেবা আছে 
এ কথার অর্থ,
আস্তিনের তলায় খঞ্জর লুকানো আছে।

ধর্ম্ম মানে অথচ ধর্ম্ম মূর্ত হয়েছে যে আদর্শে 
সেই আদর্শকে মানে না, স্বীকার করে না, 
এ কথার অর্থ,
সে ধর্ম্ম মানে না, ধর্ম্মের অর্থও জানে না, সে কপট।
( লেখা ৯ই এপ্রিল' ২০২৪)















Monday, April 7, 2025

প্রবন্ধঃ আচ্ছা এমন কেন হয়না?

দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি যে দলেরই হ'ন তিনি যখন দেশের জন্য, দেশের স্বার্থে, দেশের কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান, দেশের দুঃসময়ে বিশ্বের কাছে একজোট থাকার নিদর্শন স্বরূপ কোন উদাহরণ স্থাপনের প্রচেষ্টা চালান, আবেদন করেন তখন সেই আবেদন বা আহ্বান আমরা কি রাজ্যে রাজ্যে যে দল যেখানে ক্ষমতাসীন, যে দল বা দলের মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যের প্রধান থাকুক না কেন একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সাথে মিলিতভাবে সবার আহ্বানে পরিণত করতে পারি না!? এমন সুরাজ কবে দেখতে পাবো আমরা যেদিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একসঙ্গে দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছে!? এই যে দেশের ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দের পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার ছবি এই সহযোগিতার ছবি ছড়িয়ে পড়ে দেশবাসীর মধ্যে। তখন প্রত্যেকেই আমরা অনুভব করার শিক্ষা লাভ করতে পারি একে আমরা অপরের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া বাঁচতে পারি না, পারি না বাড়তে! আজ আমরা সমাজের সর্বস্তরে এক নিদারুণ নির্ম্মম অসহযোগিতার ছবি দেখতে পায়! এই অসহযোগিতার মনোভাব নিষ্ঠুরভাবে ঢুকে গেছে ঘরে ঘরে অন্দরমহলে! আজ দেশে যখনই দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী সেই স্বাধীনতার সময় থেকেই কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সে যতই যুক্তিযুক্ত হ'ক না কেন রাজ্যগুলি কোনও না কোনোভাবে তার বিরোধিতা করেছে, করেছে অসহযোগিতা! আর দেশের নেতৃবৃন্দের নেওয়া সেই অসহযোগিতার হিংস্র মনোভাব দেশ কাল পাত্রভেদে ছড়িয়ে পড়েছে ক্রমেক্রমে আম জনতার মধ্যে, ছড়িয়ে পড়ছে বংশপরম্পরায় কালে কালে যুগে যুগে দেশে-বিদেশে! এর জন্য ফল ভোগ করছে যেমন আম আদমী ঠিক তেমনি আরও প্রকট হ'য়ে তা ফিরে যাচ্ছে দেশের নেতৃবৃন্দের দিকে! দেশনেতাদের তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আরও কঠিন! যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ সেই কাজে বাধা হ'য়ে দাঁড়াচ্ছে দলের ভিতরে ও বাইরের অসহযোগিতা! আমরা এই অসহযোগিতার মনোভাব দেখেছি রাজ্যে, দেশে ও সমাজের সর্বস্তরে! যার পরিণতিতে আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে, প্রতিটি সংসারে অবস্থিত প্রতিটি জীবনের আকাশ এই অসহযোগিতার বিষ বাষ্প ঢেকে ফেলেছে! ভয়ঙ্কর এক দম বন্ধ করা পরিবেশে বেঁচে আছে মানুষ! আজ যেমন লক ডাউনের কারণে মানুষ বন্দি হ'য়ে আছে ঘরে ঘরে ঠিক তেমনি বন্দি হ'য়ে আছে আজ মানুষ অসহযোগিতার অদৃশ্য এক মরণ কারাগারে! কবে মুক্তি পাবে মানুষ এই কারাগার থেকে!? পাবে না! কারণ সেই মুক্তির চেতনা জাগাতে পারে এমন নেতৃত্ব নেই বর্তমান ভারতে! থাকলেও সে অসহায়, বন্দী নিজের ধ্যান ধারণার কাছে, আদর্শহীনতার কাছে, অজ্ঞানতা ও অসততার কাছে, কপটতার কাছে। বন্দি দলের মানুষদের কাছে, নীতির কাছে। জনসাধারণের মানসিকতার কাছে! এর উদাহরন নতুনভাবে নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো পুরোনো ভাইরাস আরও শক্তিশালী হ'য়ে নতুন রূপে করোনার উত্থান!


করোনা আমাদের আর একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমরা কতটা অসহায় আমাদের অসহযোগিতার মনোভাবের কাছে! দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন করোনা থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে আর সেই সিদ্ধান্ত দেশবাসীর কাছে খিল্লি হ'য়ে ফিরে আসছে, উপেক্ষার বিষয় হ'য়ে উঠছে! নিজের দলের কাছেই অসহযোগিতার উদাহরণ হ'য়ে উঠছে দলীয় কার্যক্রম! সবাই যে যার মত পক্ষে বিপক্ষে জান্তে-অজান্তে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলদাস হ'য়ে অসহযোগিতার বলিষ্ঠ মুষ্টিবদ্ধ হাত উর্দ্ধে তুলে হুঙ্কার দিচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে! কেউ কেউ খিল্লি করতে, উপহাস করতে, নিচা দেখাতে কিংবা অতি উৎসাহে পথে নেবে পড়ছে আবেদন বা আহ্বানকে ব্যর্থ করতে বা সফল করতে! কোথায় যাবে আজ মানুষ!? কার কাছে যাবে আজ মানুষ!? সহযোগিতা আজ নিরুদ্দেশ! নিরুদ্দেশ হ'য়ে গেছে সহযোগিতা সেইদিন যেদিন দেশকে স্বাধীন করার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল! আর সেদিন সেই সময় থেকে অসহযোগিতা বোন ম্যারোর মধ্যে ঢুকে পড়েছে, ঢুকে পড়েছে বংশপরম্পরায় জৈবি সংস্থিতিতে! আর আজ তার বিষময় ফল ভোগ করছে অবিভক্ত ভারতবর্ষের তিন টুকরো হওয়া দেশের প্রায় ১৬০-১৭০কোটি জনগণ! কে বা কারা দায়ী!? কার দোষ!?

কে বা কারা দায়ী আর কার দোষ এই আলোচনায় কাকে ছেড়ে কাকে ধরবো বলতে গেলে ঠগ বাঁচতে গাঁ উজাড় হ'য়ে যাবার মত অবস্থা হ'য়ে যাবে। শুধু এটুকু বলতে পারি পরিবারে সদ্য জন্ম হওয়া সন্তানটির জন্মবিজ্ঞানে কোনও ত্রুটি আছে কিনা সে বিষয়ে আলাদা ক'রে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক গভীর তথ্য ও তত্ত্বপূর্ণ আলোচনা করা যেতে পারে প্রকৃত সমস্যা ও ত্রুটিমুক্ত ভবিষ্যৎ শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার জন্যে কিন্তু বর্তমান জটিল সময়ে পরিবারের গার্জিয়ানের উপর নির্ভর করছে জন্মে যাওয়া শিশু কোন পরিবেশে বড় হবে, কোন শিক্ষাব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে কোমর শক্ত ক'রে উঠে দাঁড়াবে! ঠিক তেমনি, দেশের সমস্ত দলের সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশের ও সমস্ত রাজ্যের প্রধানদের আজ সময় এসেছে যদিও অনেক অনেক দেরী হ'য়ে গেছে, তবুও একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হ'লেও ভালো এই প্রবাদের উপর দাঁড়াবার! সময় ডাক দিয়ে বলছে, অনেক ভুলের উপর দাঁড়িয়ে দেশ ব্রিটিশদের শাসন মুক্ত হয়েছে অর্থাৎ দেশ দ্বিখন্ডিত হ'য়ে স্বাধীন হয়েছে! সেই পূর্বসূরীদের ক্ষমতার ভয়ঙ্কর লোভ ও মোহের ফলে দেশভাগের মত মারাত্মক ক্ষমাহীন ভুল আজ পর্যন্ত কোনও দল, কোনও নেতা স্বীকার ক'রে পুনরায় মিলনের কোনও উদ্যোগ নেয়নি! দুই জার্মানির মিলনের মত সেই পবিত্র মহাউদ্যোগ জানি না কবে গৃহীত হবে, আদৌ আর কোনোদিন হবে কিনা! তবে এখনই পরিবারের প্রধানের মত দলের, রাজ্যের, দেশের প্রধান তোমরা তোমাদের নিজ নিজ দেশের প্রতি প্রকৃত গৃহকর্তার কর্তব্য পালন করো! হে দেশের নেতৃবৃন্দ! পালন করো তোমাদের প্রতিশ্রুতি, তোমাদের শপথ! সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দাও পরস্পর পরস্পরের প্রতি! পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও! শ্রদ্ধা আজ ক্ষতবিক্ষত! শ্রদ্ধার মাথায় পরাও শিরস্ত্রাণ! ভালোবাসার করো চাষ! নতুবা ভয়ঙ্কর এক অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার সংক্রামক ব্যাধি অতি চুপিসারে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলেছে সমগ্র সমাজকে, ঢুকে পড়েছে ঘরে ঘরে একেবারে অন্দরমহলে! দেশ, সমাজ, মানুষকে ভালোবেসে দেশনেতারা একটু নিরপেক্ষতার উপর দাঁড়ালে শ্রদ্ধা, ভালোবাসাকে হাতিয়ার করে তাহ'লে অমৃত ছড়াতে পারে মানুষের প্রাণে, মানুষের হৃদয়ে। এই অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতা আক্রমণ করছে জৈবি সংস্থিতিতে যা চিরকালীন এক মহামারীতে পরিণত হবে অদূর ভবিষ্যতে! যার কাছে আজকের করোনা, অতীতের প্লেগ, কলেরা, স্প্যানিশ ফ্লু-এর মত মহামারী তুচ্ছ! অতি তুচ্ছ!! এখনও যদি দেশের নেতারা অনুভব করতে না পারে এর ভয়াবহ পরিণতির কথা তাহ'লে ধরে নিতে হবে নিশ্চিত ধ্বংস অনিবার্য! আর তা শুধু সময়ের অপেক্ষা! শুধু সেদিনের পৃথিবীতে যারা থাকবে----- হয়তো আমিও থাকবো-----তাদের সেদিনের চরম যন্ত্রণাদায়ক অসহায় অবস্থার কথা ভেবে নিজেকে বড় একা নিঃসঙ্গ অসহায় লাগে!

এই অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতা সম্পর্কে সত্যদ্রষ্টা পরমপুরুষ যুগপুরুষোত্তম জীবন্ত নররূপী রক্তমাংসের ঈশ্বর পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আজ থেকে বহু বছর আগে অশ্রদ্ধার করুণ ভয়াবহ ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখে শ্রদ্ধাকে বাঁচাবার জন্য বলেছিলেন,
'শ্রদ্ধার মাথায় শিরস্ত্রাণ দাও! শ্রদ্ধাকে ক্ষতবিক্ষত ও ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে তোমরা রক্ষা করো।'

আর অসহযোগ আন্দোলনের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে বলেছিলেন,

'ব্রিটিশ চলে গেলেও এই অসহযোগ কিন্তু রাজপথ থেকে একেবারে রান্নাঘরে পৌঁছে যাবিনি!'

ক্ষমতা দখলের লোভে, দেশের প্রধান হওয়ার লোভে সাধারণ মানুষকে ধর্ম্মের ভিত্তিতে ভাগ ক'রে দিয়ে সেদিন যারা অশ্রদ্ধা আর অসহযোগিতার উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার নামে তামাশা ভিক্ষা নিয়েছিলেন ব্রিটিশদের হাত থেকে আজ তাঁদের পুঁতে যাওয়া অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার বিষবৃক্ষ ডালপালা ছাড়িয়ে বি-শা-ল মহীরুহে পরিণত হয়েছে তিন টুকরো হওয়া ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ মাটিতে! যার শাখায় শাখায় বসে আছে শকুনের দল মানুষের ভাগারে মরা মানুষ পড়লেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাংস খাবে বলে!

আজ ভয়ঙ্কর করোনা ছোবলে যখন নীল হ'য়ে যাচ্ছে গোটা দেশ তথা পৃথিবী ঠিক সেই সময়েও অশ্রদ্ধা আর অসহযোগিতার পাশা খেলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ!

সত্য নেতৃবৃন্দ! কি বিচিত্র এই নেতৃত্বের ভয়াবহ নেশা!
( লেখা ৭ই এপ্রিল' ২০২০)

উপলব্ধিঃ দিগন্তে উঠেছে ঐ ঝড়!

প্রকাশ, দিগন্তে উঠেছে ঐ ঝড়! কোথা আমি, কোথা তুমি! কে আছো আপনপর?
প্রকাশ! নৌকো যে টলোমলো! ব্যষ্টি জীবন, সমষ্টি জীবনের উত্তাল সমুদ্রে ব্যক্তি আমি থেকে সমষ্টি আমি নৌকো যে ভয়ংকর ভাবে দুলছে! হাল ধরার কেউ নেই! পারে দাঁড়িয়ে, নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সবাই সাঁতার কাঁটার পদ্ধতি শেখাচ্ছে! চারিদিকে সবাই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে ভোকাল হয়ে উঠেছে! সমস্যার পর সমস্যা তুলে ধরছে! নিজে চালুনি হয়ে সূচের ফুটো খুঁজে বেড়াচ্ছে!

প্রকাশ, সমস্যা বহু এ-কথা সত্যি কিন্তু সমাধান কউ(কোথায়)? সুযোগ সন্ধানীরা বলছে, ‘দে মা লন্ডভন্ড করে লুটেপুটে খায়’!! কায়েমি স্বার্থ বলছে, ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার’! ফেলো কড়ি মাখো তেলের মত ফেলো তুলি, মারো গরম বুলি, বাংলা, বাঙ্গালী চুলোয় যাক; এসো সবাই, যে আছো যেথায়, একতায় বিচ্ছেদের পতাকা তুলি!’

প্রকাশ, বড়লোক চিরকাল বড়লোক আর গরীব চিরকাল গরীব, বোকা চিরকাল বোকা আর চালাক চিরকাল চালাক! এটা আর কিছু নয়! এ শুধু হাঁদা আর ভোঁদাদের লড়াই! হাঁদাকে মারে ভোঁদা চিরকাল, চিরদিন। আর প্রকাশ, ভোঁদাকে মারে কিন্তু খোদা! এ কথাটা কিন্তু মনে রেখো।

প্রকাশ, সৎসঙ্গের প্রধান আচার্য্যদেব শ্রী শ্রী বড়দার কথাটা মনে আছে তো? একটা ফুটোও ফুটো, দশটা ফুটোও ফুটো। জল কিন্তু বেরিয়ে যাবে। দশটা ফুটো দিয়ে তাড়াতাড়ি আর একটা ফুটো দিয়ে দেরিতে বেরোবে। কিন্তু বেরিয়ে যাবে। এই যা! একদিন আগে আর পরে! বেরোবেই!! তাই সাধু সাবধান!!!

প্রকাশ, মনের আয়নায় দাঁড়িয়ে একবার নিজেকে আপাদমস্তক দেখে নাও আর কান পেতে একবার শুনে নাও, বিবেক তোমায় কি বলছে। জীবনের সফরটা বড় অল্প দিনের! সবটাই ‘dam care and don’t bother’ বলে উড়িয়ে দিও না। Minimum একটা মুল্যবোধের মুল্য দিও। তোমার কছে তোমার দেশ, তোমার সমাজ, তোমার পরিবার, তোমার জীবন minimum values আশা করে।

প্রকাশ, মনে রেখো The greatest phenomenon of the world present living Supreme Being Sri Sri Thakur Anukulchandra-এর সাবধান বাণী, “ তুমি যদি সৎ হও, তোমার দেখা-দেখি হাজার-হাজার লোক সৎ হ’য়ে পড়বে। আর, যদি অসৎ হও, তোমার দুর্দ্দশার জন্য সমবেদনা প্রকাশের কেউ থাকবে না; কারণ, তুমি অসৎ হ’য়ে তোমার চারিদিকই অসৎ ক’রে ফেলেছ। তুমি ঠিক-ঠিক জেনো যে, তুমি তোমার, তোমার নিজ পরিবারের, দশের এবং দেশের বর্ত্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দায়ী”।
( লেখা ৭ই এপ্রিল'২০১৭)


Saturday, April 5, 2025

বিচিত্রা ১১৮

শিষ্টেরা গড়ে দুষ্টেরা ভাঙে;
শিষ্টেরা করে ভালো আর দুষ্টেরা ভোগ করে।
হে প্রভু! তুমি ছাড়া কি উপায়!!
(লেখা ৫ই এপ্রিল' ২০১৮)

আমি কি প্রকৃতির আর তুমি কি প্রকৃতির
সেটা আমারটা আমি জানি
আর তোমারটা জানো তুমি;
কিন্তু উভয়েরটা জানেন ঈশ্বর।
তাই শেষ বিচার ঈশ্বরেরই হাতে।

নিজেকে বুদ্ধিমান মানুষ ভাবা সবচেয়ে বড় মূর্খামি।
আর আমি চালাক বাকিরা সব নালায়েক
এই ভাবনা হারামি।।
( লেখা ৫ই এপ্রিল' ২০২১)

অনুভূতিহীন মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো
আর মৃতদেহের সঙ্গে থাকা একই।

Spending time with unfeeling people is the same
as being with dead bodies.
( লেখা ৫ই এপ্রিল' ২০২৪)






































Tuesday, April 1, 2025

প্রবন্ধঃ বাংলদেশ ও আমি (৩য় পর্ব)

২০২৪এর জুলাই মাসের এই পট পরিবর্তন সমস্তটাই রচনা হয়েছিল ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনকে সামনে রেখে বৈদেশিক শক্তির নিয়ন্ত্রণে, অঙ্গুলী হেলনে। তাই একাত্তর আর চব্বিশ সমান নয়। ১৯৭১ এর মুক্তির লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই ছিল স্বতস্ফুর্ত লড়াই, ইজ্জতের লড়াই, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার লড়াই, মা-বোনেদের ইজ্জৎ রক্ষার লড়াই, মা-বোনেদের ইজ্জৎ লুন্ঠনের, ৩০লক্ষ বাঙালী হত্যার প্রতিশোধের লড়াই।

আর ২০২৪ এর জুলাই মাসের ছাত্র নাগরিক আন্দোলন, অভ্যুত্থান ছিল বিদেশী শক্তির রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত ছদ্ম ছাত্র নাগরিক আন্দোলন, অভ্যুত্থান।

বৈদেশিক শক্তির সাহায্যের কথা বললাম এইজন্যে যে, যখন দেশের সেনাবাহিনী এই জুলাই আন্দোলনে চুপ থেকে একই সঙ্গে দু'দিকে ব্যালান্স রক্ষা ক'রে চলে তখন বোঝা যায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ছিল ভয়ংকর চাপে। সেনাবাহিনী একই সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরাপদে দেশের বাইরে চলে যেতে সাহায্য করে এবং একই সঙ্গে হঠাৎ উড়ে এসে দেশের প্রধান চেয়ারটাতে জুড়ে বসতে মহম্মদ ইউনুসকে সাহায্য ও সমর্থন করে। কিন্তু আশ্চর্য, সেনা অভ্যুত্থান হয় না! কেন হয়নি? কার চাপে?

মহম্মদ ইউনুসের হঠাৎ দেশের প্রধান চেয়ারে এসে বসা সাময়িকভাবে উপরসা আশ্চর্য্যের ব্যাপার ছিল। কিন্তু সমস্তটাই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। হাসিনার দেশত্যাগের পর ছাত্র নেতারা যখন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করছিলেন তখন ছাত্র নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সেই মিটিং-এ উপদেষ্টা প্রধান হিসেবে প্রস্তাব আসে দেশের বাইরে অবস্থানরত মহম্মদ ইউনুসের নাম। কেন তাঁর নাম হঠাৎ উঠে এলো? এই ছাত্র আন্দোলনে বা ছাত্র নাগরিক যৌথ আন্দোলনে মহম্মদ ইউনুসের কি ভূমিকা ছিল? তিনি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে দেশের অভ্যন্তরে ছিলেন? যারা যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে থেকে কেন কারও নাম, কোনও নাম বিবেচ্য ও গ্রহণযোগ্য হ'লো না? কি কারণ? ১৮কোটি নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থানরত, আন্দোলনরত, বা আন্দোলন সমর্থনরত নেতা কর্মীদের মধ্যে দেশ চালানোর মতো কোনও যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক বা রাজনীতিবিদ ছিলেন না? কেন একজনেরও নাম গ্রহণযোগ্য হ'য়ে ওঠেনি? যারা লড়াই, আন্দোলন করলো ভয়ংকর বিপদকে মাথায় নিয়ে তারা কেন কেউ বিবেচ্য হ'লো না? কার বা কাদের অঙ্গুলী হেলনে দেশের বাইরে অবস্থানরত, লড়াই অভ্যুত্থানের ময়দান বাংলাদেশ থেকে 12,840 km দূরে অবস্থিত আমেরিকায় শান্তির নোবেল হাতে শান্তিতে অবস্থানরত একজনই ছিলেন বিবেচ্য ও উপযুক্ত? যিনি ৭১ এর ভয়াবহ যুদ্ধের সময়ও দেশে ছিলেন না, দেশের বাইরে আমেরিকায় ছিলেন, ঠিক তেমনি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে দেশের মধ্যে ছিলেন না, ছিলেন আমেরিকায়। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না থাকা, আন্দোলনের সময়ে দেশের বাইরে থাকা একজনকে দেশের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করার পিছনে নির্বাচিত ব্যক্তির যে এই ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের নেপথ্যে যোগাযোগ ছিল তা' স্পষ্টতই দেশের নানা ঘটনাবলী প্রমাণ করে।

আশ্চর্য ও দুঃখের বিষয় মহম্মদ ইউনুসের মত শিক্ষিত, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মানুষ পেছনের দরজা দিয়ে চোরের মত অগণতান্ত্রিক উপায়ে অবৈধভাবে দেশের প্রধানের চেয়ারে ব'সে ক্ষমতা দখলের পর পরই ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন। তিনি এক ইন্টারভিউতে স্বীকার করেন শেখ হাসিনা তাঁকে অনেক অত্যাচার করেছে। শেখ হাসিনার প্রতি যে তাঁর ব্যক্তিগত রাগ রয়েছে তা' তিনি প্রকাশ ক'রে দিয়েছেন তাঁর বক্তব্যে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মপদ্ধতি ও অন্যান্য নানা বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতির কারণ। তিনি এক ইন্টারভিউতে রি-সেট বাটন টিপে অতীত ইতিহাস মুছে দেওয়ার কথাও বলেন। চব্বিশের জুলাই মাসের ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া ছদ্ম গণ অভ্যুত্থানের পর দেশের ৭১এর সমস্ত ইতিহাস ভাংচুরের সময় অনৈতিকভাবে দেশের প্রধানের চেয়ারে বসে থাকা সত্ত্বেও মহম্মদ ইউনুস বাধা দেননি, কোনও কথা বলেননি। তাঁর নীরব উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছিল ধ্বংসলীলা। তাঁর নীরবতা প্রমাণ করে তিনি রি-সেট বাটন টিপে সত্যি সত্যিই ৭১এর সব অতীত মুছে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ৭১সালে ভারতের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সাহায্য, সেই All out সাহায্যকে স্বীকার করেন না, স্বীকৃতি দিতে চান না। সত্যিকে তিনি পা দিয়ে দাবিয়ে রাখতে চান। মিথ্যেকে মালা পড়িয়ে গলায় বুকে জড়িয়ে ধরতে চান গভীর মমতায়। দিবানিদ্রায় নিজে মিথ্যে স্বপ্ন দেখেন ও দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখান ২০২৪শের জুলাই গণ আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রকৃত গণ আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থান।

তাই বলি, একাত্তর আর চব্বিশ এক নয়। সত্যের জামা কাপড় চুরি ক'রে সত্যকে উলঙ্গ ক'রে ফেলে রেখে মিথ্যে আজ সত্যের পোশাক পড়ে আজ জনসমক্ষে হাজির। আর, সত্য সবার পিছনে উলঙ্গ হ'য়ে দাঁড়িয়ে বলছে আমি সত্য, আমি সত্য, আমি সত্য। উলংগ সত্যকে দেখে জনগণ যতই হাসাহাসি করুক আর কাকের পিছনে ময়ুরের পুচ্ছ লাগানোর মত মিথ্যা যতই সত্যের পোশাক পড়ে সাজগোজ ক'রে মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়াক সত্য সত্যই, আর মিথ্যা মিথ্যা। সত্য কখনও মিথ্যা হ'তে পারে না, আর মিথ্যা কখনও সত্য হয় না। সত্য চিরন্তন, আর মিথ্যা প্রতিদিন প্রতিনিয়তই ক্ষণে ক্ষণে তার ভোল পালটায়। সময় সবসে বড়া বলবান। সময় তার হিসাব নিকাশ করবে সময় মত। আজ নয়তো কাল। কপট ব্যক্তিত্ব, কপট চরিত্র ও কপট কর্ম দিয়ে দেশের ও দেশবাসীর কখনও মঙ্গল ও উন্নতি করা যায় না।
তাই বলা হ'য়ে থাকে সত্য উলঙ্গ ও অপ্রিয়। সত্য উলঙ্গ ও অপ্রিয় হ'লেও সত্য সত্যই, সূর্যের মত চিরন্তন। সত্য প্রকাশ হ'তে দেরী হলেও সত প্রকাশ হয়ই হয়। কথায় আছে, ভগবান কে ঘর দের হ্যায়, পার আন্ধের না'।
( লেঝা ২৮শে মার্চ'২০২৫)

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশ ও আমি (২য় পর্ব)

একাত্তর ও চব্বিশ যে সমান নয় এই কথাটা মহম্মদ ইউনুসও জানে। সত্য সত্যই, সত্য কখনও মিথ্যা হ'তে পারে না, মিথ্যা কখনও সত্য হ'তে পারে না। এ চিরন্তন সত্য। সূর্যকে অস্বীকার ক'রে রাতের আঁধারে একটা জিরো পাওয়ারের নাইট ল্যাম্প জ্বালিয়ে যারা সূর্যের উপস্থিতি ঘোষণা করে তাদের মস্তিষ্কের ভারসাম্যহীনতা কোনও চিকিৎসায় ঠিক হবার নয়। ওটা বায়োলজিক্যালি ডিফেক্টের ফল। তাই একাত্তর ও চব্বিশ সমান এই কথাটা যারা বলে তারা ভারসাম্যহীন ও ঐ প্রবাদের মতন, 'পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায়।'
একাত্তর ও চব্বিশ যে সমান নয় এটা বাংলাদেশের প্রতিটি দলই জানে, তা' তারা স্বীকার করুক আর না করুক। সত্যকে যারা অস্বীকার করে, অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অমর্যাদা করে তারা ঈশ্বর, আল্লা বা গডের অস্তিত্বকে অস্বীকার, অসম্মান, অশ্রদ্ধা ও অমর্যাদা করে। আর তাদের পরিণতি হয় ভয়ংকর, ভয়াবহ। কারণ ঈশ্বর, আল্লা বা গড অকৃতজ্ঞ, বেইমান আর নেমকহারামকে কখনই কোনোদিনই ক্ষমা করেনি ও করেনা। সত্যকে অস্বীকার করা মানে স্বয়ং ঈশ্বর, আল্লা বা গডকে অস্বীকার করা।

আর, মিথ্যাকে মান্যতা দেওয়া মানে শয়তানের পৃষ্টপোষকতা করা।
মহম্মদ ইউনুস একাত্তরের সত্যকে রি-সেট বাটন টিপে মুছে দিতে চেয়েছিলেন। আর, চব্বিশের মিথ্যাকে করতে চেয়েছেন জোর ক'রে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তিনি জানতেন বাঙালী জাতির বুক থেকে উদ্ভুত, আত্মা থেকে জাগ্রত একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম, অবাঙ্গালীদের বাংলা ও বাঙ্গালীর ওপর অত্যাচার, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, বলাৎকার থেকে মুক্তি, শিরায় শিরায়, কোষে কোষে, রক্ত কণিকার অভ্যন্তরে স্বাধীনতার যে বিস্ফোরণ সেই সংগ্রাম, সেই মুক্তি, সেই বিস্ফোরণ ছিল বাঙ্গালীর স্বতস্ফুর্ত সংগ্রাম, মুক্তি ও বিস্ফোরণ। তা' ছিল স্বতঃ উৎসারিত। সেই স্বতঃ উৎসারিত সংগ্রাম, মুক্তি ও বিস্ফোরণের ভাগীদার ছিল না মহম্মদ ইউনুস। তিনি সেই ৭১এর স্বাধীনতা, মুক্তি ও বিস্ফোরণের লড়াইয়ে দেশের অভ্যন্তরে পাক সৈন্যদের দ্বারা সৃষ্ট শ্বশানভূমির ওপর ছিলেন না। তিনি সেই সময় ছিলেন আমেরিকার স্বর্গদ্যানে। তার শরীরে সেই ৭১-এর অগ্নিদগ্ধ বাংলার তাপ লাগেনি, ফোস্কার চিহ্ন নেই। তিনি সেই সময় ছিলেন ভরা যৌবনের অধিকারী তিরিশের টগবগে যুবক। তাঁর একবারও মনে হয়নি তাঁর মাতৃভূমির ওপর পাক সেনাদের দ্বারা বলাৎকারের সময় তাঁর মাতৃভূমি তাঁকে পাশে পেতে চেয়েছিল। তখন তিনি অগ্নিদগ্ধ রোমের নিরোর বেহালা বাজানোর মত নিজের ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে ছিলেন মগ্ন। তাঁর মাতৃভূমি বাংলার ক্যারিয়ার যে ধর্ষিত হচ্ছে পাক সেনাবাহিনীর দ্বারা সে সম্পর্কে তাঁর ছিল না বিন্দুমাত্র অনুভূতি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেতে চেয়েছিলেন পূর্ণ মর্যাদা। কিন্তু সেই পূর্ণ মর্যাদা না পাওয়ার কারণে তাঁর মনে জন্মেছিল অতৃপ্তি, ক্ষোভ। স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ তাঁকে দেয়নি তাঁর পান্ডিত্যের যোগ্য সম্মান। ফলে মহম্মদ ইউনুসের মনে জন্মেছিল ক্ষোভ। আওয়ামী লীগ প্রধান যদি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতেন, তাঁর জ্ঞান, তাঁর পান্ডিত্যকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারতেন কৌশলী দক্ষতায়, আর মহম্মদ ইউনুস, তিনি নিজে যদি তাঁর পান্ডিত্য, তাঁর জ্ঞানকে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারতেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাহ'লে কতটা উপকৃত হ'তো বাংলাদেশ তা' জানিনা, কিন্তু নিঃসন্দেহে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হ'তো না। বাংলাদেশের আজকের অস্থির পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ প্রধান, বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস ও দেশের জনগণ সবার জন্যই ক্ষতিকর ও বিষাক্ত মারণ বিষ বহনকারী।

আর, চব্বিশের যে জুলাই অভ্যুত্থানকে যে জনগণের অভ্যুত্থান, জনগণের বিপ্লব ব'লে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন মহম্মদ ইউনুস ও কোটা আন্দোলন ও বৈষম্য বিরৈধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তা' সর্বৈব মিথ্যা, একথা জনগণ জানে কিন্তু পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকের চাপে তা গুলিয়ে যায়। এই আন্দোলন যে মিথ্যা ছিল তার কারণ,
১) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল শুধু ছাত্রদের আন্দোলন।
২) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
৩) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন।
৪) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন।
ছাত্রদের এই আন্দোলনের দাবী মেনে নিয়েছিলেন হাসিনা সরকার। কোটা সংস্কার নয় কোটা সিস্টেমটাকেই উঠিয়ে দিয়েছিলেন, তুলে নিয়েছিলেন, বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অংশ হাসিনা সরকারের কোটা সিস্টেম তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টিকে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের ওপরে ন্যস্ত করেন।

ঠিক এই সময়, এই মাহেন্দ্রক্ষণে ঘুরতে থাকে চাকা। পরিস্থিতির বদল হ'তে থাকে। এই যে মুক্তি যোদ্ধারা বা তাঁদের উত্তরসূরীরা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোর্টে গেল এইটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এর মধ্যেই চক্রান্তের বীজ হয়তো নিহিত ছিল নতুবা নোতুন ক'রে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চক্রান্তের বীজ জন্ম নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সরকারের যথাসময়ে এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক হওয়া ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ ছিল। উচিৎ ছিল হাইকোর্টের কোটা পুনর্বহাল করার রায়কে সুপ্রীম কোর্টে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষা করা এবং আলোচনা চালানো। এছাড়া হাসিনা সরকারের উচিৎ ছিল ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও হাইকোর্টে যাওয়া কোটা সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং দ্রুত ভারসাম্যরক্ষাকারী একটা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো। উচিৎ ছিল দেশের প্রচার মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে সরকারের সদিচ্ছাকে তুলে ধরা, পৌঁছে দেওয়া।

কিন্তু এইগুলির কোনওটাই হয়নি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাৎ ক'রে বেড়িয়ে যায় ছাত্র আন্দোলনকারী নেতারা। হয় তাদের আন্দোলনের পট পরিবর্তন। এই পট পরিবর্তন হয়তো বা পূর্বপরিকল্পিত ছিল নতুবা উদ্ভূত সুযোগ বা অবস্থাকে দ্রুত কাজে লাগিয়েছিল হাসিনা বিরোধীরা ছাত্রদের আন্দোলনকে মূল্ধন ক'রে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপ্রীম কোর্টের রায়ের ওপর নির্ভর ক'রে অপেক্ষা করা, কালক্ষেপ করা ছিল তাঁর মারাত্মক রকমের ভুল ও আত্মহত্যার সামিল। দেশের আইন ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সঠিক সময়ে সঠিক ও উপযুক্ত রূপে সাহায্য করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আর, তা' হয়েছিল হয় সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবেই নতুবা অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি আগাম বুঝতে না পেরে।
দেশের আগুন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই বিলম্বিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র আন্দোলন দ্রুত তার আসল রূপে বা ভূমিকায় ফিরে আসে। ,
প্রথমে,
১) এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন ছিল না, ছিল ছাত্র আন্দোলন।
২) এই আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোল্ন ছিল না, ছিল ছাত্রদের দাবী দাওয়ার আন্দোলন।
৩) এই আন্দোলন ছাত্রদের সরকার উৎখাতের আন্দোলন ছিল না, কোটা সংস্কার আন্দোলন।
পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে,
১) এই আন্দোলন ঘুরে গেল ছাত্র-নাগরিক যৌথ আন্দোলনে।
২) এই আন্দোলন ঘুরে গেল সরকার বিরোধী আন্দোলনে।
৩) এই আন্দোলন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেল সরকার উৎখাতের আন্দোলনে।

ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলন পরিণত হ'লো ছদ্ম রাজনীতি ও ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনে। Pseudo politics, Pseudo student movement কি জিনিস দেখতে পেল গোটা দূনিয়া ও দুনিয়ার ছাত্র সমাজ। সমগ্র বিশ্বের সাধারণ ছাত্র সমাজ কিছু বুঝতে বা শিখতে পারলো কি বাংলাদেশের এই ছাত্র আন্দোলন থেকে? যদিও সাধারণ ছাত্রছাত্রী এত খবর পায় না, রাখেও না। রাখার প্রয়োজন মনে করে না। আর, সেই সুযোগকে কাজে লাগায় ভবিষ্যতের ছদ্ম ছাত্র রাজনীতি ও ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র সমাজ।

ঠিক এইরকম ছদ্ম ছাত্র রাজনীতির জুতোয় পা গলিয়ে রাতারাতি কোটা আন্দোলন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পাট চুকিয়ে 'হাসিনা হঠাও, দেশ বাঁচাও' আন্দোলনে মেতে উঠলো ছাত্র আন্দোলনকারীরা। দ্রুত সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে স্কুল চত্বরে সমস্ত স্তরের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। ছড়িয়ে পড়লো ছাত্র আন্দোলন ছাত্র ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে মাঠে ময়দানে, গ্রামে গঞ্জে, শহরে নগরে আম জনতা মাঝে। হাসিনা ও তাঁর সরকার বুঝতেও পারেনি দেশের ছাত্র, যুব, শ্রমিক, আম জনতার দ্রুত মানসিক পরিবর্তন। এই প্রথম দেশের প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত স্তরের ছাত্রদের মধ্যে সফলভাবে ছড়িয়ে পড়লো ছাত্র আন্দোলন অদৃশ্য হাতের রিমোট কন্ট্রোলে।
ক্রমশ
( ২৮শে মার্চ'২০১৫)


প্রবন্ধ" বাংলাদেশ ও আমি। ( ১ম পর্ব )

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ ও ২০২৪ সালের বাংলাদেশ স্বর্গ নরক তফাৎ।
১৯৭১ সাল ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল পটভূমি, পবিত্র ও শুদ্ধতার প্রতীক।
২০২৪ সাল ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন ও ছদ্ম রাজনীতির প্রতীক।
বাংলাদেশ নিয়ে একটা আলাদা সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে আছে পশ্চিমবাংলার বাঙালীদের মধ্যে বিশেষ ক'রে বাঙ্গাল হিন্দু বাঙালীদের মধ্যে। আমারও তাই। আমার মায়ের, আমার বাপদাদাদের জন্মভূমি মাতৃভূমি অখন্ড ভারতের পূর্ববঙ্গ বর্তমানে বাংলাদেশ আমারও ভূমি।

তাই, আমি বাংলাদেশ নিয়ে বারবার আমার মতামত প্রকাশ করি। এছাড়া ৭১-এর যৌবনের প্রথম দিনগুলি জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে। বাংলাদেশে মানুষের ওপর পাকিস্তানী সেনাদের নারকীয় বর্ব্বরোচিত অত্যাচার, হত্যাযজ্ঞ, মা-বোনেদের ওপর পাশবিক নির্ম্মম বলাৎকার ও হত্যা, ধ্বংস যজ্ঞ প্রথম যৌবনের দিনগুলিতে আমার জীবনকে করেছিল উত্তাল।

সেদিন ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ পাকিস্তানের দানবীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে হয়েছিল সোচ্চার। বিধানসভা ও লোকসভা উত্তাল হ'য়ে থাকতো বাংলাদেশ ইস্যুতে।

আর, বিশেষ ক'রে একসময় অখন্ড ভারতের একই ভূমি অখন্ড বাংলা পরবর্তীতে ব্রিটিশের ঘৃণ্য চক্রান্তে ভাগ হ'য়ে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হ'য়ে পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিমবাংলা হওয়ার কারণে পশ্চিমবাংলার ঘটি, বাঙ্গাল, হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ইত্যাদি সমস্ত বাঙালি পূর্ববাংলার ১৯৭১ এর ভয়াবহ ঘটনায় হয়েছিল সমব্যাথী ও আন্দোলিত এবং প্রতিবাদে শামিল।

১৯৭১ সালে পশ্চিমবাংলার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল পূর্ববাংলার মানুষের যন্ত্রণা, পূর্ববাংলার মানুষের অসহায় নির্বিচার মৃত্যু, মা-বোনেদের নারকীয় যৌন অত্যাচারের সঙ্গে পশ্চিবাংলার মানুষ একাত্ম হ'য়ে গিয়েছিল সেদিন। সেদিন পশ্চিমবাংলার হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নারীপুরুষ, ছাত্র, যুব, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ বাঙালী হয়েছিল প্রতিবাদের সাথী, নেমেছিল পথে। আওয়াজ তুলেছিল বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবার জন্য। সেই আওয়াজ শুনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক বিদেশী শক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা ক'রে ভারত সেদিন দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের পাশে। আমিও সেদিন ছিলাম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একজন ১৬বছরের তাজা টাটকা টগবগে রক্তের পথে নামা প্রতিবাদী।

আর, সেইজন্যই আজও জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিকভাবেই একাত্ম অনুভব করি আমি বাংলাদেশ ইস্যুতে। আর তাই আমার প্রাণের কথা তুলে ধরি বারবার। সেদিনের ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক ৩০লক্ষ বাঙ্গালীর রক্তে ধোয়া ৭১সাল, মা-বোনেদের ইজ্জৎ লুন্ঠনের কলঙ্কিত ৭১ সাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গিত প্রাণের ইতিহাস লেখা ৭১ সাল এবং পাকিস্তানের নারকীয় নৃশংস আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক অল আউট সহযোগীতা আজও ভুলতে পারি না। যে ইতিহাস রি-সেট বাটন টিপে মুছে দিতে সচেষ্ট বর্তমান বাংলাদেশের জবরদখল সরকারের অবৈধ প্রধান মহম্মদ ইউনুস; যিনি কোনোদিনই বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের পট পরিবর্তন ও ২০২৪ সালের ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের মাটিতে ছিলেন না। আমেরিকায় আয়েসে কাটিয়েছিলেন জীবন নিজ ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে। যিনি বাংলাদেশের মানুষকে ভারত বিদ্বেষী ক'রে তুলতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২০২৪ এর ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারতকে শত্রু দেশ হিসেবে চিহ্নিত ক'রেছিলেন এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিলেন।

যাই হ'ক বাংলাদেশের ২০২৪ এর জুলাই ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল পটভূমি যে এক নয় তা' নিয়ে আমি পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।
 ক্রমশ
( লেখা ২৮শে মার্চ'২০২৫)


Saturday, March 29, 2025

বিচিত্রা ১১৭

শুধু ভুল ধরালেই বন্ধু দায়িত্ব হয় না শেষ;
ঠিকটা দেখিয়ে দিয়ে ভুলকে বলতে হবে, বেশ!
ভুল এবার যা।
( লেখা ৩০শে মার্চ'২০১৮)

নেগেটিভ কথা, নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা, আলোচনা, 
নেগেটিভ লেখা সর্বোপরি নেগেটিভ সংগ সঞ্চালনা
শরীর ও মনকে ক'রে তোলে বিষাক্ত। 
সাবধান! এই সমস্ত বিষাক্ত ছোঁয়াছে রোগ থেকে 
নিজেকে রাখো দূরে, হ'য়ো না আসক্ত।

ভাবছি বাঙালি কয় প্রকার?
১) হিন্দু বাঙালি, ২) মুসলিম বাঙালি, ৩) খ্রিস্টান বাঙালি ইত্যাদি নানা ধর্মের (?) বাঙালি। আবার ১) ঘটি বাঙালি ও ২) বাঙাল বাঙালি। 
আর এক নতুন প্রজাতির এক বাঙালির সন্ধান পাওয়া গেছে যা সুপ্তভাবে ফল্গুধারার মত ব'য়ে চলেছে বাঙালির মননে ও চিন্তনে!
তা হ'লো বহিরাগত বাঙালি!

শয়তান ভগবানের চেয়েও দেখতে সুন্দর 
আর শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি 
আর কথা তার বড়ই মধুর মেয়েলী! 
সেই অলীক মোহিনি মায়ায় ফেঁসে 
জীবন ক'রো না ধ্বংস। সাবধান!
( লেখা ৩০শে মার্চ'২০২১)

যেমন চলছে চলুক; স্রোত যেদিকে বইছে বইতে দাও। 
স্রোতের বিপরীতে যেও না। 
গেলেই বই পড়ে বই হ'য়ে যাওয়া লোকেরাই 
তোমার বিরুদ্ধে যাবে।

আমি স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটবো 
নাকি স্রোতের অনুকূলে গা ভাসাবো? 
নাকি নিরাপদ দূরত্বে নিরপেক্ষ সেজে দাঁড়িয়ে থাকবো?
কোনটা? কোনদিকে যাবো?

আমরা সৎসঙ্গীরা ঠাকুরের বাণীকে হাতিয়ার ক'রে নিয়েছি,
আর, 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' 
মানসিকতায় চালাকির আশ্রয় নিয়েছি।

নিজেও কিছু করিনি অন্যকেও করতে দিইনি। 
বিচারের ভার আপন হাতে তুলে নিও না ব'লে 
ঘাই মেরে বিন্দাস গাছেরও খেয়েছি তলারও কুড়িয়েছি।
( লেখা ৩০শে' মার্চ'২০২৪)































































কবিতাঃ রাগ অনুরাগ।

যত গণ্ডগোল মত প্রকাশের ভঙ্গীতে।
সংযম নিরুদ্দেশ! তোমরা দেখেছো কেউ তাকে?
একই কথা একটু অন্যভাবে, অন্যভঙ্গিতে বলা যেতে পারে?
লাশ না, পলাশ....................."
মন্দাক্রান্তা শাবাশ! এমনিভাবেই.........
কলম! ঝরুক ঝরঝর ঝর্ণা, প্রেমবৃষ্টি!
চাই না এই অসহ্য গরমে
তোমার অগ্নিবৃষ্টি।
কবি! আবার মনে পড়ে গেল,
'তুমি অধম বলিয়া আমি ইবো না কেন উত্তম ??
বন্ধু! তেজ ভালো, ভালো রাগ।
যদি থাকে সাথে সোহাগ!
কবি! কেন প্রতিবাদ? কেন প্রতিরোধ?
যদি অসুরক্ষিতই হয় ঐ নিরোধ!?
কবি! এত অভিমান! এত রাগ!
অভিমানের চেয়ে রাগ ভালো,
রাগের চেয়ে অনুরাগ!
কবি শ্রীজাত! কবি মন্দাক্রান্ত!
প্রতিক্রিয়ায় থাকো ধীর, থাকো স্থির,
হ'য়ো না অশান্ত।
( লেখা ৩০শে মার্চ'২০১৭)



















Thursday, March 27, 2025

গানঃ যা খুশী ওরা বলে বলুক।

যা খুশী ওরা বলে বলুক
ওদের কথায় কি আসে যায়,
ওরাই দিনের শেষে এসে
প্রভুর দয়ায় পড়বে যে পায়।
যা খুশী ওরা বলে বলুক।

ওরা দিনে যাদের কুৎসা ক’রে
বুকের জ্বালা মেটায়
আবার রাতে তাদের বন্ধু ক’রে
বিপদে ভিক্ষে চায়।
ওদের যেমন বুদ্ধি তেমন সিদ্ধি
প্রাপ্তিও ঘটে তাদের যে তায়
ওরাই দিনের শেষে এসে
প্রভুর দয়ায় পড়বে যে পায়।
যা খুশী ওরা বলে বলুক।

তোমরা নামপেয়ালা
হাতে পেয়েও যাদের বাপ বাপান্ত করো
তাদের কাছে কি পেলে তার
হিসাব কেন করো?
ওরা হলেও নগন্য নয় অমান্য
দয়াল জেনো ওদেরও চায়!
ওরাই দিনের শেষে এসে
প্রভুর দয়ায় পড়বে যে পায়।
যা খুশী ওরা বলে বলুক। প্রবি।

Wednesday, March 26, 2025

প্রবন্ধঃ সুনীতা উইলিয়ামসের পৃথিবীতে ফিরে আসা ও ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের উল্লাস। ( ২য় পর্ব্ব)

সুনীতা উইলিয়ামসের ঈশ্বর বিশ্বাস, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও শ্রীশ্রীআচার্যদেব।

সোশ্যাল মিডিয়ার মারফত দেখলাম ও জানতে পারলাম সুনীতা উইলিয়ামস শ্রীমদভগবদগীতার উপর আস্থা রাখেন, সনাতন ধর্মের উপর তাঁর বিশ্বাস আছে।
শ্রীমদভগবদগীতার উপর প্রকৃত আস্থা কা'কে বলে তা' সুনিতা উইলিয়ামসের সামগ্রিক কর্মজীবন ও তাঁর পূর্বনির্দিষ্ট ৮ দিনের মহাকাশ সফর যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে অনির্দিষ্ট সময়ে দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে তাঁর অটুট মনোবল, লড়াই করার তীব্র অদম্য মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা ইত্যাদি প্রমাণ করে।

আমরা সংবাদ মাধ্যম দ্বারা জানতে পারলাম,
২০২৪ সালের ৫ জুন মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন মহাকাশ্চারীরা। মাত্র আট দিনের অভিযানের পরিকল্পনা থাকলেও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দীর্ঘ ৯ মাস মহাকাশে আটকে ছিলেন সুনীতা উইলিয়ামস ও বুশ উইলমার। তবে কঠিন এই সময়ে সুনীতা উইলিয়ামসের ধৈর্য, মানসিক দৃঢ়তা এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাসই তাঁকে শক্তি যুগিয়েছিল।
খবরে আরও জানা যায়,
প্রথম মহাকাশ অভিযানে (২০০৬ সালে) সুনীতা উইলিয়ামস জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী ভগবদ গীতার একটি কপি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের ভগবদ গীতার বার্তা ও আধ্যাত্মিক শক্তি সুনীতা উইলিয়ামসের আশ্রয় ছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, পরমপিতা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের গীতার কর্মযোগের বার্তা জীবনের প্রতিটি সংগ্রামে তাঁকে জয়ী হতে সাহায্য করে। মহাশূন্যের নিঃসঙ্গতা ও চাপের পরিস্থিতিতেও গীতার শিক্ষা তাঁকে মানসিকভাবে শক্তিশালী রেখেছিল।
২০১২ সালে দ্বিতীয়বার মহাকাশ ভ্রমণের সময় তিনি দেবাদিদেব মহাদেব, পরমেশ্বর স্বয়ম্ভূ শিবের একটি ছবি এবং ওঁকার প্রতীক সঙ্গে রেখেছিলেন। মহাশূন্যে এই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সংস্পর্শে থাকায় তিনি আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধরে রাখতে পেরেছিলেন। এই অচ্যুত, অস্খলিত, অদম্য আধ্যাত্মিক মহাশক্তি সুনিতা ইউলিয়ামসকে মহাকাশ জয়ে শারীরিক-মানসিক ও আত্মিক শক্তি যোগান দিয়েছিল।
এছাড়া ২০২৪ সালের অভিযানে যাওয়ার সময়ও সুনীতা উইলিয়ামস বিঘ্ননাশকারী, শিল্প ও বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক এবং বুদ্ধি ও জ্ঞানের দেবতা গণেশের একটি মূর্তি তাঁর সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, বিঘ্নহর্তা গণেশের আশীর্বাদ তাঁকে সমস্ত বাধা থেকে বিপত্তি থেকে রক্ষা করে। বিঘ্নহর্তা হলো সেই ব্যক্তি বা শক্তি যা সমস্ত বাধা দূর করেন। এবং সত্যি সত্যিই বিঘ্নহর্তা গণেশ মহাকাশে সুনীতা উইলিয়ামসদের দীর্ঘ ৯ মাসের সমস্ত বাধা, প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যা হরণ করেছিলেন, দূর করেছিলেন। আর, গণেশকে সিদ্ধিদাতাও বলা হয়। বলা হয় সিদ্ধিদাতা গণেশ। অর্থাৎ সিদ্ধিদাতা শব্দের অর্থ হলো যিনি বা যা সফল করে বা desired ফল দেয়। সিদ্ধিদাতা মানে হ'লো যিনি বা যা অভীষ্ট পূরণকারী। তাই 'সিদ্ধিদাতা গণেশ' অর্থ হলো যিনি সিদ্ধি বা সাফল্য প্রদানকারী, বা যিনি সব কাজে বাধা দূর করেন এবং সাফল্যের পথ খুলে দেন। সুনীতা উইলিয়ামস মহাশূন্যে যাওয়ার সময় বিশ্বব্রহ্মান্ডের মালিক সিদ্ধিদাতা গণেশকে মাথায় ক'রে নিয়ে গিয়েছিলেন বলেই তাঁর ৮ দিনের মহাকাশ সফর যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে দীর্ঘ ৯ মাসে দীর্ঘায়িত হওয়ার সময়ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাঁকে শান্ত, ধীর ও স্থির রেখেছিল এবং সব বাধা দূর ক'রে সাফল্যের পথ খুলে দিয়েছিল। মহাকাশযানের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ৯ মাস মহাকাশে আটকে থাকলেও গণেশের প্রতি তার বিশ্বাস অটুট ছিল। তিনি মনে করেন, বিঘ্নহর্তা ও সিদ্ধিদাতা গণেশ তাঁর জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক এবং সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের শক্তি।

কথায় আছে, বকনা বাছুর পেছন তুলে তুলে লাফায় বেশী। গাভী হ'লে আর লাফায় না, ধীর ও স্থির হয়ে যায়। অজ্ঞানী বা অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করীরা বকনা বাছুরের মত অর্থাৎ জ্ঞানের অভাবে ঈশ্বরের বিরোধীতা করে লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরে। গরম তেলে কাঁচা লুচির মত আওয়াজ ক'রে বেশী। যখন লুচির দু'পিঠের জল গরম তেলের সংস্পর্শে আসে তখন তা' বাস্প হ'য়ে উড়ে যাওয়ার আগে আওয়াজ করে। ঠিক তেমনি অজ্ঞানী বা অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী ঈশ্বরঅবিশ্বাসীদের অবস্থাও তেমনি। তারাও জ্ঞানীদের সামনে অজ্ঞানতার বোমা ফাটায় বেশী।
কথায় আছে, Knowledge rules the world. যার অর্থ জ্ঞান বিশ্বকে শাসন করে। আবার শেক্সপিয়ারের কিং হেনরি ষষ্ঠ, দ্বিতীয় খণ্ড" (King Henry VI, Part 2) নাটকের একটি উক্তি আছে তা' হ'লো, Knowledge is the wing wherewith fly to heaven. যার অর্থ, জ্ঞান হলো একটি ডানা যার সাহায্যে আমরা স্বর্গে উড়ে যেতে পারি। অর্থাৎ জ্ঞান এমন এক শক্তি যা আমাদের উন্নতি ও সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

আর, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হ'লো সেই সমস্ত জ্ঞানের আধার, তাই তাঁকে সর্ব্বজ্ঞ বলা হয়। যে সর্ব্বজ্ঞের শক্তি সুনীতা উইলিয়ামসকে উন্নতি ও সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। সর্ব্বজ্ঞের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, নির্ভরতা এই যে মহাশক্তি জ্ঞান, মহাকাশের বুকে তাঁকে সফল হ'তে সাহায্য করেছিল।

জীবনে সফল সুনীতা উইলিয়ামস আপাদমস্তক ঈশ্বরবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি যে মহাকাশে বিশাল বিস্তৃতির বুকে গিয়েছিলেন সেই বিশাল বিস্তৃতি সম্পর্কে পরম বিজ্ঞানী সর্ব্বজ্ঞ জীবন্ত ঈশ্বর পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছিলেন, "মহাকাশের বিশাল বিস্তৃতির যে মধ্যবিন্দু বা কেন্দ্রবিন্দু---বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে 'নিউট্রাল জোন' বলে, যাকে কেন্দ্র ক'রে 'পজিটিভ ও নেগেটিভ' পরস্পর মিলিত হবার আবেগে বারবার আবর্তিত হ'য়ে চলেছে। আর, সেই সম বিপরীত সত্ত্বার মিলন আবেগ যেখানে ঘনীভূত হ'য়ে ওঠে, সৃষ্টির সূচনা তো সেখান থেকেই হয়। মহাকাশের সেই বিশাল বিস্তৃতি হ'লো নারায়ণ আর সেই বিশাল বিস্তৃতির মধ্যবিন্দু বা কেন্দ্রবিন্দু---বিজ্ঞানের ভাষায় যা 'নিউট্রাল জোন' নিউট্রাল জোনই হ'লো নারায়ণের নাভিমূল।"
সেই এক ও অদ্বিতীয় নারায়ণের স্বরূপ জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, সেই দেবাদিদেব মহাদেব পরমেশ্বর স্বয়ম্ভূ শিব এবং ওঁকার প্রতীক, এবং সেই বিঘ্নহর্তা ও সিদ্ধিদাতা গণেশ, এই এক ও অদ্বিতীয়ের সঙ্গে ছিল সুনীতা উইলিয়ামসের যোগ। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মা মার্জ ক'রে গেছিল। তাই সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর সঙ্গীরা ছিল স্বয়ং মালিকের কোলে। তাই মহাকাশে বিপদ তাঁদের কেশও স্পর্শ করতে পারেনি।
জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণের গীতার বাণী ছিল তাঁর আধ্যাত্মিক আশ্রয়। পুরুষোত্তম পরমপিতা প্রভু শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত পবিত্র বাণী সম্বলিত গ্রন্থ গীতার কর্মযোগ অধ্যায় ছিল তাঁর কর্মের মূল প্রেরণা।
দেবাদিদেব মহাদেব, পরমেশ্বর স্বয়ম্ভূ শিব এবং ওঁকার প্রতীক ছিল তাঁর শারিরিক-মানসিক ও আত্মিক শক্তির মূল।
আর, বিঘ্নহর্তা ও সিদ্ধিদাতা গণেশ ছিল তাঁর জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক এবং সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের মূল শক্তি।

অথচ মূর্খ ঈশ্বর অবিশ্বাসীর দল মানুষকে ঈশ্বর বিশ্বাস থেকে দূরে থাকার জন্য, ঈশ্বর নামক কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকার জন্য মানুষকে জ্ঞান দিল নাসা নভোচারী ঘোর ঈশ্বরবিশ্বাসী সুনীতা উইলিয়ামসকে দেখিয়ে, তাঁর ঈশ্বরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা ও গভীর নির্ভরতা না জেনেই। এরাই অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করীর জ্বলন্ত উদাহরণ। এদের থেকে মানুষ সাবধান।

কথাটা বললাম এইজন্যে যে, মহাকাশ্চারী সুনিতা উইলিয়ামসের মাথার ওপর ছিলেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের সর্ব্বশক্তিমান মালিক। কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে? এই কথার অর্থ হরিকে অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টির মালিক ঈশ্বরকে যে ধ'রে রাখে, মাথায় ক'রে রাখে, বুকে ক'রে ধ'রে রাখে, তাঁকে মারে কার সাধ্য? সুনীতা উইলিয়ামস নভোচারী হিসেবে মহাকাশে যাত্রা করলেও এই মহাকাশের সৃষ্টিকর্তা মালিক জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীকৃষ্ণ, দেবাদিদেব মহাদেব, পরমেশ্বর স্বয়ম্ভূ শিব এবং ওঁকার প্রতীক, আর বিঘ্নহর্তা ও সিদ্ধিদাতা গণেশ ছিল তাঁর সাথে সবসময়, ছিল তাঁর মাথায়।
আর, এইসব অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করীর দল সাক্ষাৎ শয়তান স্বরূপ। তারা ঈশ্বর থেকে, মালিক থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায় মানুষকে তাদের বালখিল্য বিষাক্ত জ্ঞান দিয়ে।

মাথার ওপর মালিক থাকলে কি হয়? শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার বলা সেই কাহিনী বলে আমি এই লেখা শেষ করবো।
এক জঙ্গলের ধারে গ্রামের একটা গরু ঘাস খেতে গেছিল। ঘাস খেতে খেতে সে তন্ময় হ'য়ে গিয়েছিল। কখন সন্ধ্যা নেমে এসেছিল সে জানে না। সাথীরা তার চলে গেছিল। তাঁর খেয়াল নেই। বাঘ বেরোলো শিকারে। বাঘ গরুকে দেখতে পেয়ে করলো তাড়া। বাঘের তাড়া খেয়ে গরুটি পড়লো দৌড়ে গিয়ে কাদার পাঁকে। বাঘও লাফ দিয়ে পড়লো ঐ কাদায়। এই যে আটকে পড়লো কাদায়, এই অবস্থাতেই বাঘ চেষ্টা করে গরুকে খাওয়ার জন্য আর গরু চেষ্টা করে পালাবার জন্য। এই উভয় জানোয়ারের চেষ্টা ব্যর্থ হ'লো। তখন বাঘ বললো, যখন এই কাদাটা শুখাবে তখন উঠে আমি তোকে খাবো। তখন গরুটি হাসতে শুরু করেছে। বলছে, তুই আমাকে কি খাবি রে? আমার কান খাঁড়া আছে। আমি কাঁসরের আওয়াজ পাচ্ছি, ঘন্টার আওয়াজ পাচ্ছি, আমি লোকজনের আওয়াজ পাচ্ছি। আমার লোকজন আসছে আমাকে বাঁচাবার জন্য, আমার লোকজন আসছে। আমার জীবনে একটা মালিক আছে। তিনি উদ্ধার ক'রে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তোর তো মালিক নেই। আমার মালিকের সঙ্গী সাথীরা সবাই লাঠি, বল্লম সব নিয়ে আসছে, তোর কি হবে? আমাকে তো উদ্ধার ক'রে নিয়ে যাবে তোর কি অবস্থা হবে?
এই যে ব্যাপারটা, এই যে অবস্থাটা এর জন্যেই আমার একজন মালিক প্রয়োজন। জীবনে একজন মালিক দরকার, যিনি আমাকে রক্ষা করবেন, যিনি আমাকে বাঁচাবেন। সুনীতা উইলিয়ামসের মাথার ওপর সৃষ্টিকর্তা মালিক ছিলেন তাই শয়তান তাঁকে তাঁর সাথীদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি ঐ শয়তান বাঘের মত ঐ মহাকাশের বুকে। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মালিক তাঁর সন্তানদের পাঠিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল নির্বিঘ্নে সুনীতা উইলিয়ামসদের তাঁর কাছে পৃথিবীর বুকে।
তাই আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একজন মালিক দরকার। সেই মালিকই হলেন জীবন্ত ঈশ্বর মানুষের রূপ ধ'রে মানুষ মায়ের গর্ভে মানুষের পৃথিবীতে মাটির বুকে নেমে আসেন, বারবার নেমে আসেন। নেমে এসেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র হ'য়ে, শ্রীকৃষ্ণ হ'য়ে, বুদ্ধ, যীশু, হজরত মহম্মদ, চৈতন্য মহাপ্রভু, ঠাকুর রামকৃষ্ণ হ'য়ে। এবং সর্বশেষ তিনি নেমে এসেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'য়ে। সেই এক ও অদ্বিতীয় একজনই সেই যিনি ব্রহ্মা, তিনিই বিষ্ণু, আর তিনিই মহেশ্বর। সেই একজনই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর মানুষের রূপ ধ'রে মানুষের মাঝে নেমে এসেছিলেন আট আটবার লীলা করতে, আমাদের বাঁচাতে। আমরা সেই আমাদের মালিককে ভুলে গিয়ে আমাদের জ্ঞানের অহঙ্কারে আমাদের নিজেদের শেষ করেছি, শেষ করছি, গোটা মানবজাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী হ'য়ে আমরা বিষাক্ত মানুষেরা।
( লেখা ২৪শে মার্চ'২০২৫)

প্রবন্ধঃ সুনীতা ইউলিয়ামসের পৃথিবীতে ফিরে আসা ও ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের উল্লাস। (১ম পর্ব্ব)।

৯ মাস পর ঘরে ফিরলেন সুনিতা উইলিয়ামস। ৮ দিনের জন্য গিয়ে ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে এলেন সুনিতা উইলিয়ামস ও বুশ উইলমোর।
তাঁদের পৃথিবীর বুকে নিরাপদে সুস্থভাবে ফিরে আসার জন্য সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের চরণে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।
সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে মহাকাশে ৮ দিনের জন্য গিয়ে ৯ মাস বন্দী অবস্থায় কাটানোর অতিমানবীয় শারীরিকি-মানসিক কৃতিত্বের জন্য স্যালুট, ধন্যবাদ, গভীর ভালোবাসা ও নমস্কার জানাই।
আমেরিকার অন্যতম শিল্পপতি ইলন মাস্কের স্পেস এক্স নাসার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দীর্ঘ ৯ মাসের পর গত বুধবার সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর মাটিতে ফিরিয়ে আনার জন্য ইলন মাস্ককে ও নাসার বিজ্ঞানীদের জানাই ধন্যবাদ, গভীর ভালোবাসা ও নমস্কার।
ধন্যবাদ, ভালোবাসা ও নমস্কার জানাই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। কারণ তিনি তার রাষ্ট্রপতিত্বের সময় এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন এবং তাদের ফিরে আসার সুবিধার্থে কাজ করেছিলেন ও স্পেস এক্সের সিইও এলন মাস্ককে অনুরোধ করেছিলেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।

এদের সকলের জন্য ঈশ্বরের চরণে মঙ্গল প্রার্থনা করি।
আটলান্টিক মহাসাগরে সফল অবতরণ করলেন চারজন মহাকাশ্চারী। গত ২০২৪ সালের জুন মাসে মহাকাশ যাত্রা করেন এই দুই মহাকাশ্চারী। কথা ছিল থাকবেন শুধু ৮ দিন। সেই ৮ দিন দীর্ঘ হ'তে হ'তে হ'য়ে গেল ৯ মাস। অবশেষে দীর্ঘ উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, ব্যাকুলতা, ভয় কাটিয়ে তাঁদের সকলের সফল অবতরণের জন্য আমরা আনন্দিত ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশ্চারিনী সুনিতা উইলিয়ামসের জন্য আমরা ভারতীয়রা আরও আনন্দিত। দীর্ঘ ৯ মাস মহাকাশে কাটিয়ে ১৯শে মার্চ'২৫ বুধবার ভারতীয় সময় ৩টে ২৪মিঃ এলন মাস্কের Space X Capsule এ ক'রে মহাকাশ্চারীদের পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তাঁদের হাসি মুখ ও হাত নাড়া দেখে কিছুক্ষণের জন্য অভিভূত হ'য়ে গিয়েছিলাম! ৮ দিনের জায়গায় ২৮৬ দিন মহাকাশে যান্ত্রিক গোলোযোগের কারণে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে আটকে থাকার জন্য মহাকাশচারীদের নিজের সঙ্গে নিজের কি ভয়ংকর মানসিক লড়াই করতে হয়েছে প্রতিটি দিন ভাবলেই হতভম্ব হ'য়ে যাই। মহাকাশ্চারীদের ফিরে আসার খবরে গোটা বিশ্ববাসী আজ খুশী। সুনীতা উইলিয়ামস সহ অন্য মহাকাশ্চারীদের সেফ ল্যান্ডিং দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল গোটা বিশ্ব, অপেক্ষা করছিল তাঁরাও। ভারতবাসী আজ গর্বিত ভারতীয় বংশোদ্ভুত সুনিতা উইলিয়ামসের জন্য। ভারতের গুজরাতের কা ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসার জন্য বরণ অনুষ্ঠান পালন করে মায়েরা। গুজরাটের মেহসানা জেলার ঝুলাসন গ্রামে নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামসের বাবা দীপক পান্ড্যের পৈতৃক বাড়ি। গ্রামের স্থানীয় মন্দিরে উইলিয়ামসের মহাকাশে যাওয়ার পর থেকে একটি 'অখণ্ড জ্যোতি' (চিরন্তন শিখা) জ্বলছিল। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিল গুজরাত রাজ্য তথা দেশবাসী এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসায় আনন্দে ফেটে পড়ে।
মহাকাশ্চারীদের চোখমুখের খুশী, উজ্জ্বল হাসি মুখ প্রমাণ ক'রে দিয়েছে এই মিশন সফল ক'রে পৃথিবীতে ফিরে আটলান্টিক মহাসাগরে সফল অবতরণের জন্য তাঁরা কতটা খুশী।
আর একদল খুশী হয়ে নেমে পড়েছিল এটা প্রচার করতে যে সুনিতা উইলিয়ামসদের ৯ মাস পর পৃথিবীতে ফিরে আসার সঙ্গে ঈশ্বরের দয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
সুনীতা উইলিয়ামসের দীর্ঘ ৯মাস মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীর বুকে সফল অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই ঈশ্বর, আল্লা, ভগবানের কোনও অস্তিত্ব নেই তা' প্রমাণের জন্য ঈশ্বর অবিশ্বাসীর দল তৎক্ষণাৎ কোমর বেঁধে ফেসবুকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবতরণ করেছিল। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের অসীম ক্ষমতা প্রমাণে তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা ও মন্তব্যের ঝড় তুলে দিয়েছিল তৃপ্তির অম্ল ঢেঁকুর তুলে তুলে।
ফেসবুকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সুনীতার সফল অবতরণের সঙ্গে ঈশ্বরের কোনও সম্পর্ক নেই এই বিতর্ক টেনে আনা কেন? কেন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার? যত দোষ নন্দ ঘোষের মত সব কিছুতেই ঈশ্বরকে টেনে আনতে হবে? কাটগড়ায় দাঁড় করাতে হবে তাঁকে?
নিজেকে সব কিছুর উর্ধ্বে ভাবা স্বঘোষিত সবজান্তা অহংকারী ও হতাশা অবসাদগ্রস্থ মানুষের এইটা একটা গুরুতর মানসিক ব্যাধি ।
কেন এই কথা বললাম? বললাম, তার কারণ, সুনিতা উইলিয়ামসের দীর্ঘ ৯ মাস পর পৃথিবীর বুকে সফল অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের বকনা বাছুরের মত লম্ফঝম্প দেখে। তারা সুনিতা উইলিয়ামস থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন ঈশ্বরবিশ্বাসীদের। বলেছেন জ্ঞানের সঠিক শিক্ষা নিতে। বলেছেন স্বর্গ নরক ব'লে যে কিছুই নেই, নেই কোনও ঐশ্বরিক শক্তি নেই, এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে। ঈশ্বর অবিশ্বাসীরা বলেছেন, সুনিতা উইলিয়ামস ও বুশ উইলমোর মহাকাশে ৮ দিনের পরিবর্তে দীর্ঘ ৯ মাস কাটিয়ে আসার মধ্যে দিয়ে বিশেষ দৃষ্টিভংগী লাভ করেছেন। মহাকাশে যে সমস্যার মুখোমুখী হয়েছিলেন তাঁরা সেই সমস্ত সমস্যা, সমস্ত যান্ত্রিক গোলযোগের মোকাবিলা করেছেন মানুষেরই উদ্ভাবন শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করেই, মানুষের তৈরী খাবার, মানুষের তৈরী পোশাক পরিচ্ছদ ও প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার ক'রেই।

তারা বলছেন, মহাশূন্যে কোনও ঈশ্বর, কোনও আল্লা বা কোনও ভগবান কেউ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি সেইসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে। যা করতে হয়েছে মানুষকেই করতে হয়েছে তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি ও মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে। অতিমানবের মত ধৈর্য ও সহ্য শক্তি, অসীম মনোবল, আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা, আত্মশক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা বিপদকে অতিক্রম ক'রে সফল হয়েছে। এখানে কোনও ঐশ্বরিক শক্তি ব'লে কিছু নেই, সবই কাল্পনিক, কুসংস্কার। সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে কিছুই নাই।

ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের এরকম নানা মন্তব্যের পর মন্তব্য সুনিতা উইলিয়ামসের পক্ষে ও ঈশ্বরের বিপক্ষে আছ্ড়ে পড়েছে ও পড়ছে অকারণে ফেসবুকে। একজনের যোগ্যতা, দক্ষতা, কর্মকুশলতা, জ্ঞান, বুদ্ধি, শারীরিক ও মানসিক মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, ঋজু, কঠিন, অনমনীয় ও দৃঢ় মনোভাব ইত্যাদি মানবীয় গুণকে তুলে ধরতে গিয়ে ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করতে, তুলোধনা করতে ঈশ্বর অবিশ্বাসীরা মাঠে নেবে পড়েছেন 'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে' গান গাইতে গাইতে।
বিজ্ঞানের কোনও সাফল্য হলেই জীবনে ব্যর্থ, অসফল একশ্রেণীর মানুষ মানুষকে মাথায় তুলে নাচতে নাচতে ঈশ্বরের বাপ বাপান্ত করা শুরু ক'রে দেবে।
এরকমটা কাদের হয়? ঈশ্বর আছে কি নেই, সত্যি কি মিথ্যে তা' নিয়ে বালখিল্য জ্ঞানের অধিকারী মানুষেরাই মনের অপূর্ণ ইচ্ছের অবদমিত রাগ মেটায় কথায় কথায় উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাবার মত ঈশ্বরের উপস্থিতিকে টেনে এনে অকারণ তর্ক ক'রে।

এই সমস্ত নেগেটিভ চিন্তার মানুষ পজিটিভ কোনও কাজে অংশীদার হ'তে পারেনি ও পারে না কোনওদিনও কোনও জন্মেই।

যারা জীবনে ব্যর্থ, অসফল এবং একসময় ঈশ্বরের কাছে কিছু না ক'রে ফোকটে আয়েশি ক'রে যাদু টোনার মত সফলতা পাওয়ার আশা করেছিল, আলাদিনের প্রদীপের মত কিছু অলৌকিক কর্মকান্ডের মত বাপের চাকর ঈশ্বরকে হুকুম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল বাপ-দাদাদের দেখাদেখি এবং সেই ফাঁকিবাজি আশা, সেই ঠুনকো স্বপ্ন পূরণ হয়নি বিন্দুমাত্র যাদের, তারাই কথায় কথায় অকারণে জান্তে অজান্তে, চেতন ও অবচেতন মনে ঈশ্বরের কাছে কিছু না পাওয়ার জ্বালা স্বরূপ ঈশ্বরের উপস্থিতির বাপ বাপান্ত করে। এগুলি অন্যের সফলতায় ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অবচেতন মনে নিজের ব্যর্থতার রাগের বহির্প্রকাশ। কিছু না করা অভিজ্ঞতাহীন, অনুভূতিহীন, উপলব্ধিহীন শুধু কথার স্রোতে ভাসা কিছু মানুষ ঈশ্বরের কাছে কিছু না পেয়ে জীবনে ব্যর্থ হ'য়ে ঈশ্বরকেই গালাগালি ও বিরোধীতা করে।

এই ধরণের সমস্ত গিরিগিটি মানুষের পাল্লায় পড়ে সাধারণ সহজ সরল বোকা, মূর্খ, বেকুব, অসহায় ভীরু, দুর্বল, অজ্ঞ, অজ্ঞানী, আর্ত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ আজ বিভ্রান্ত ও দিশাহীন।

কিন্তু আমরা ঈশ্বরবিশ্বাসীরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামসের ক্ষেত্রে কি দেখলাম? কি জানতে পারলাম? তিনি ঈশ্বর বিরোধী? তিনি কি ঈশ্বর অবিশ্বাসী? তিনি কি ঈশ্বর বিদ্বেষী? তিনি কি ঘোরতর নাস্তিক? সোশ্যাল মিডিয়ার মারফত আমরা কি দেখলাম ও কি জানতে পারলাম তা' পরবর্তী ভিডিওতে আলোচনা করবো। ( লেখা ২২শে মার্চ'২০২৫)

প্রবন্ধঃ দেওঘরে দোল উৎসবে অগণিত মানুষের ঢল। কেন?' (২য় পর্ব)

আজও দেওঘরে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে।
কেন? কিসের জন্য? কার জন্য? কার টানে?

'দেওঘরে দোল উৎসবে অগণিত মানুষের ঢল। কেন?' (১ম পর্ব) এই টাইটেলে একটা লেখা আমি এর আগে প্রকাশ করেছিলাম। সেই লেখাতে আমি বলেছিলাম, দেওঘর 'সৎসঙ্গ' ঠাকুরবাড়িতে বিভিন্ন বড় বড় উৎসবের দিনগুলি ছাড়াও সারা বছর প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কেন আসে? কি জন্যে আসে? কার কাছে বা কার টানে আসে? আমি বলেছিলাম এই নিয়ে পরবর্তী লেখাতে আলোচনা করবো। আসুন আলোচনা করি। আপনাদের সুচিন্তিত মতামতের অপেক্ষায় আমি থাকবো। দর্শক, শ্রোতা ও সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেরা আপনারা আমার এই বিশ্লেষণমূলক আলোচনার প্রেরণা।

যাই হ'ক, দেওঘরের বড় বড় উৎসব ছাড়াও এই যে বছরের প্রতিটি দিন ঠাকুরবাড়িতে মানুষের ঢল নামে এর একটাই কারণ তা হ'লো,
চৈতন্য ভাগবতে বলা আছে,
“অদ্যাপিহ সেই লীলা করে গোরা রায়, কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।”
বর্তমানে সেই গোরা রায় লীলা করেন দেওঘরের মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' ও বিশ্বের ১০কোটি সৎসঙ্গীর প্রাণের আরাম, নয়নের বিরাম, হৃদয়ে অবিরাম ব'য়ে চলা আনন্দ ধারার উৎস, মনের প্রশান্তি, বাঁচার অক্সিজেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে।
অবতারী শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হলেন সেই গোরা রায়। যিনি যুগে যুগে লীলা করেছেন প্রভু রামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু ও ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে এবং অবশেষে আবার শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে আবির্ভূত হ'য়ে লীলা ক'রেছিলেন। এই লীলার কথা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথাপ্রসঙ্গে প্রায় সময়ই তুলে ধরতেন, ইঙ্গিত দিতেন ভক্তমন্ডলীদের মাঝে চৈতন্য ভাগবতে বলা “অদ্যাপিহ সেই লীলা করে গোরা রায়, কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়" আবৃত্তি ক'রে।
প্রতিদিন দেশ বিদেশের আর্ত মানুষেরা অর্থাৎ পীড়িত, দুঃখিত, কাতর, বা বিপন্ন মানুষেরা ছুটে আসেন দেওঘর সৎসঙ্গে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে। তারা ছুটে আসে অসুস্থতা থেকে, কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, ছুটে আসে মন খারাপ থেকে, ব্যথা বেদনা থেকে রেহাই পেতে, ছুটে আসে দূর্বল ও অসহায় অবস্থা থেকে ত্রান পেতে, ছুটে আসে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে। ছুটে আসে সমস্যা জর্জরিত ব্যক্তি জীবন ও সংসার জীবন থেকে মুক্তির সমাধান পেতে।
এই ছুটে আসার ঘটনা অবিরাম ঘটেছিল শ্রীশ্রীঠাকুর থাকাকালীন সময়ে এবং ১৯৬৯ সালে দেহ রাখার পর থেকে আজ ২০২৫সালে ৫৫বছর ধ'রে ঘটে চলেছে বিরামহীনভাবে। আর এই আসা ক্রমবর্দ্ধমান। যা' কিনা গত ১৪ই মার্চ' বৃহস্পতিবার দোল উৎসবে প্রমাণিত।
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত এক ও একমাত্র সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-এর বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রকট! শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর খুব স্পষ্টভাবে বা বিশেষভাবে প্রকাশিত। তিনি বাকসিদ্ধ পুরুষ। তিনি যা বলেন, যাকে যা বলেছেন, তা' নিখুঁত, অভ্রান্ত। যারা তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি কথা, প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দ ভালো ক'রে মন দিয়ে শুনেছেন, মনে রেখেছেন এবং অর্থ বুঝে হুবহু পালন করেছেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মত তা' ফলেছে!
এখানে কোনও পক্ষপাতিত্ব বা দালালি, চামচাগিরির কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, আমি শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিত অতি শৈশবে এ কথা ঠিক। শ্রীশ্রীঠাকুরের নিয়ম অনুযায়ী ৫ বছর বয়সে নাম পেয়েছি, ১২ বছর বয়সে দীক্ষা হয়েছে, স্বস্ত্যয়নী হয়েছে ভরা যৌবনে, এ কথাও ঠিক। ১২ বছর বয়সে দীক্ষা দিয়েছেন আমার মা-বাবা। কিন্তু স্বস্ত্যয়নী নিয়েছি আমি নিজে আমার ইচ্ছাতেই আমার ভরা যৌবনে। ব্যস এই পর্যন্ত। আমি কোনও ঋত্বিক, যাজক বা কোন অধ্বর্য্যুও নই। হওয়ার ইচ্ছেও কোনোদিন ছিল না, এখনও নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। আমি সৎসঙ্গ জগতের কোনও পরিচিত বিশিষ্ট ভক্ত বা বিশিষ্ট বক্তাও নই। আমি সাধারণ একজন সৎসঙ্গী। ঠাকুরকে ভালোবাসি, আরও গভীর ভালোবাসতে চেষ্টা করি। কারণ তিনি বিশ্বের সমস্ত বিস্ময়ের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়, তিনি জাগতিক ও মহাজাগতিক সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত, সর্বজ্ঞ। ShreeShree Thakur Anukulchandra is the greatest wonder of all the wonders of the world. He is omniscient, aware of all things, both mundane and cosmic. তাই তাঁকে ভালোবাসি।
বিশ্বজুড়ে ১০কোটি সৎসঙ্গীদের আদরের বড় ভাই, নয়নের মণি পরমপূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবড়দাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদাকে। ঠাকুর পরিবারের সবাইকে ভালোবাসি। শ্রীশ্রীঠাকুরের মধ্যে খাঁটি রক্ত ব'য়ে যাচ্ছে রক্ত তাই সেই রক্ত ব'য়ে যাচ্ছে যাদের যাদের শরীরে, রেত ধারার মধ্যে সুপ্ত হ'য়ে আছে শ্রীশ্রীঠাকুর যার যার মধ্যে তাঁদের প্রত্যেককেই ভালোবাসি, তাঁরা প্রত্যেকেই আমার পূজনীয়। প্রত্যেকের মধ্যেই শ্রীশ্রীঠাকুর কম বেশী প্রকট। তাই তাঁরা আমার পূজার যোগ্য, আরাধ্য, শ্রদ্ধেয়, গুরুস্থানীয় বা সম্মানিত।
আর, শ্রীশ্রীঠাকুর নিজের হাতে এক ও একমাত্র যে সংগঠন তৈরী ক'রে গেছেন তা' হ'ল 'সৎসঙ্গ'। এই 'সৎসঙ্গ' সংগঠনের মধ্যে দিয়ে তিনি তাঁর সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি এই 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠা ক'রেছিলেন।
কলিযুগে ভয়ংকর পাপ থেকে, অভিশপ্ত জীবন থেকে, মহাপ্রলয় থেকে, ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানুষকে বাঁচাবার জন্য, কলিযুগ থেকে সত্যযুগে মানবজাতিকে নিয়ে যাবার জন্য তার যে মিশন, তিনি যে Blue print রচনা করেছিলেন সেগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান তৈরী করেছিলেন। আর, সেই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর পরম ভরসার, পরম নির্ভরতার কেন্দ্র তাঁর আত্মজ, প্রথম সন্তান পরম আদরের বড়খোকার ওপর। যিনি বিশ্বজুড়ে ১০কোটি সৎসঙ্গীদের বড়ভাই ও শ্রীশ্রীঠাকুরের পরম ভক্ত এ যুগের হনূমান শ্রীশ্রীবড়দা।
শ্রীশ্রীঠাকুর ছিলেন নিখুঁত, অভ্রান্ত, সত্যদ্রষ্টা, সর্ব্বদর্শী, সর্ব্বজ্ঞ, সর্ব্বশক্তিমান; তার প্রমাণ তিনি তাঁর সৃষ্ট সংগঠনের দায়িত্ব কার হাতে তুলে দিয়ে যেতে হবে এই ভয়ংকর ধান্দাবাজ ভন্ড ভক্তদের যুগে, ঘোর অন্ধকারের যুগে, সীমাহীন অপকর্ম ও দুঃখের যুগে এবং কলহ ও কপটতার যুগে তা' তিনি জানতেন। তিনি জানতেন তাঁর চলে যাবার পর তাঁর সৃষ্ট সংগঠন 'সৎসঙ্গ'-এর দখলদারী নিয়ে চলবে তথাকথিত প্রতিষ্ঠিত ভক্তমন্ডলীদের মধ্যে হিংস্র কামড়াকামড়ি। তিনি জানতেন, তাঁর ভক্তমন্ডলীরা তাঁকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ক'রে নেবে। তিনি এও জানতেন সংখ্যাগরিষ্ঠ তথাকথিত কথার স্রোতে ভাসা, বক্তৃতায় যাত্রার ঢঙে ঝড় তোলা বক্তা ও বহুনৈষ্ঠিক ভক্তমন্ডলী আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে, ক্ষমতা দখল ও অর্থের লোভে ভুলে যাবে শ্রীশ্রীঠাকুর যে সৃষ্টিকর্তা। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র যে সর্ব্বদর্শী, তিনি যে সর্ব্বজ্ঞ, তিনি যে সর্ব্বশক্তিমান তা' ভুলে যাবে সেইসমস্ত সাজা সৎসঙ্গীর দল, কপট ভক্তমন্ডলী। তিনি জানতেন তাঁকে আয়ের উপকরণ ক'রে নেওয়া এই সমস্ত ছোটো বড়, অখ্যাত ও বিখ্যাত ভক্তমন্ডলী ঘরে-বাইরে উভয়দিক থেকেই পিছন থেকে ছুরি চালাবে। তিনি জানতেন তাঁর সুযোগসন্ধানী ধান্দাবাজ, কপট, ভন্ড, ক্ষমতালোভী, আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী, ছোটো-বড়, প্রতিষ্ঠিত ও অপ্রতিষ্ঠিত, অখ্যাত-বিখ্যাত দীক্ষিত সৎসঙ্গীরা তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ'-এর পতাকার তলায় এক হ'য়ে থাকবে না, ভেঙে দেবে তাঁর সৃষ্ট এক ও একমাত্র সংগঠন 'সৎসঙ্গ'। তাঁর ভক্তমন্ডলী তাঁর সৃষ্ট 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থেকে, ভিতর থেকে প্রতিনিয়ত চক্রান্ত চালিয়ে যাবে এবং কেউ কেউ সৎসঙ্গের বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে যার যার ইচ্ছামত শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নাম দিয়ে সংগঠন তৈরী ক'রে বাইরে থেকে তাঁর স্বপ্ন, তাঁর মিশন, তাঁর রচিত যে Blue print তা' সমস্ত ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হবে তাঁকে, তাঁর বলাগুলিকে, তাঁর উপস্থিতিকে অস্বীকার ক'রে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করার বাহানায়। তিনি যে তাঁর ভালোবাসার, তাঁর প্রাণের যে সংগঠন 'সৎসঙ্গ' তৈরী ক'রে গেলেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানকে তাঁর অবর্তমানে রক্ষা করা ও সেই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাঁর মিশনকে একে একে ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত ক'রে তোলার জন্য তিনি যে তাঁর চোখের মণি, তাঁর প্রাণ, তাঁর পরম আদরের, পরম ভালোবাসার আধার বড় খোকাকে দিয়ে গেলেন তাঁকে মানতে পারবে না, অস্বীকার করবে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রথমসারীর পরম ভক্তমন্ডলীরা এবং তা' সংক্রামক ব্যাধির মত যে ছড়িয়ে পড়বে সাধারণ আপামর সীমাহীন ভাঙাচোরা সৎসঙ্গীদের মধ্যে এবং সেই সুযোগে যে যার মত গড়ে তুলতে লাগবে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও অর্থের লোভে শ্রীশ্রীঠাকুরের নাম দিয়ে নানা প্রতিষ্ঠান সাধারণ সহজ, সরল, বোকা, মূর্খ, বেকুব, অজ্ঞ, ভীরু, দূর্বল, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সীমাহীন ভাঙাচোরা মানুষকে বিভ্রান্ত ক'রে মূল কেন্দ্র থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে রাখার জন্য, এ-সবই তিনি আগাম জানতেন।
এর মধ্যে এমনও লোকজন ও সংগঠন আছে ও আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে যারা বাইরের আর্থিক সহযোগীতায় মূল কেন্দ্র 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে তুলবে শ্রীশ্রীঠাকুরের নাম দিয়ে নানা নামে এ কথাও তিনি জানতেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি সর্ব্বজ্ঞ, তিনি সর্ব্বদর্শী, তিনি সর্ব্বব্যাপী, তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি সত্যদ্রষ্টা, তিনি পরম পুরুষ, তিনি পরম কারণ, তিনি পরম অস্তিত্ব, তিনি পরম উৎস, তিনি পুরুষোত্তম, তিনি পরমপিতা। তাই তিনি এই সমস্ত কিছু জানতেন।
আর, জানতেন বলেই তিনি এবারে একেবারে একইসঙ্গে তাঁর ঔরসজাত ও কৃষ্টিজাত সন্তান ক'রে নামিয়ে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর পরম ভক্ত হনুমানকে তাঁর বড়খোকা রূপে। যা' এর আগে তিনি যতবার এসেছেন, কখনও হয়নি।
এই কথা ধর্ম ও ঈশ্বরবিশ্বাসী বালখিল্য মানুষদের মধ্যে, তাঁর ১০কোটি দীক্ষিত সৎসঙ্গীদের মধ্যে কে মানলো, আর না-মানলো, কে বিশ্বাস করলো আর অবিশ্বাস করলো, কে পালন করলো আর না-করলো তা'তে তাঁর কিচ্ছু আসে যায় না। মহাপ্রলয়ের আগে ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ পেয়ে নোয়া যেমন নৌকা তৈরী ক'রে মহাপ্লাবণ থেকে বাঁচিয়েছিলো বিশ্বাসীদেরকে তেমনি কলিযুগের শেষে মহাপ্রলয়ের হাত থেকে বাঁচবে বিশ্বাসী সৎসঙ্গীরা। তাই পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীদাদা বলেছিলেন, তাঁর রথ চলে যাচ্ছে যেমন ক'রে পারো টেনে হেঁচড়ে রথে উঠে পড়ো, তারপর নিশ্চিন্ত হ'য়ে যাও।
আর, ভয়ংকর কঠোর, কঠিন, দৃঢ়, শক্ত, অনমনীয়, এবং নিয়ম বা কাজের ক্ষেত্রে খুবই কড়া ও নির্ভুল অথচ কোমল, নরম, মৃদু, ললিত, মধুর, সুকুমার, স্নিগ্ধ ও সুন্দর অন্তর, মন, প্রাণের অধিকারী বিশ্বজুড়ে ১০কোটি সৎসঙ্গীদের নয়নের মণি শ্রীশ্রীবড়দার হাতে শ্রীশ্রীঠাকুর দেহ ত্যাগ করার আগে তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন 'সৎসঙ্গ'-এর দায়িত্বভার নিশ্চিন্তে নির্ভাবনায়।
শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার পরে পরেই সত্য হয়েছিল ও প্রকট হ'য়ে উঠেছিল শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুরের আগাম জানাগুলি। ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক প্রতিকূল পরিবেশের চড়াই উৎরাই সমস্যা জর্জরিত কণ্টকিত পথ পেরিয়ে, সীমাহীন বাধা, অপমান, কুৎসা, নিন্দা, সমালোচনার ঝড় জলকে উপেক্ষা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকে মাথায় নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের নিজের হাতে গড়া 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানকে কড়া হাতে, কঠোর, কঠিন, অনমনীয় ও কোমল মনে বুক দিয়ে আগলে রেখে রক্ষা করেছিলেন শ্রীশ্রীবড়দা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। প্রকৃতির বুকে তাঁর চরিত্রের মোক্ষম নিখুঁত উদাহরণ যেমন নারকেল। উপরে শক্ত, কঠিন, রুক্ষ ভিতরে নরম, কোমল, রসময়!
সেই শ্রীশ্রীবড়দার কঠোর ও কোমল হাত ধ'রে ছুটে চলা 'সৎসঙ্গ' -এর ব্যাটন শ্রীশ্রীবড়দার উপযুক্ত, যোগ্য, দক্ষ ইষ্টপ্রাণ উত্তরসূরী শ্রীশ্রীদাদার হাত ধ'রে আজ শ্রীশ্রীঠাকুরের ৪র্থ পুরুষ বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার হাতে।
শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র প্রকট। শ্রীশ্রীবাবাইদাদার জীবনে শ্রীশ্রীঠাকুর সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান, বিশেষভাবে ব্যক্ত। বৃষ্টি শেষে আকাশের কালো মেঘ সরে গিয়ে মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়া সূর্য যেমন চতুর্দিকে আলো ছড়িয়ে প্রকাশিত হয় ও তার আলোয় ঝিকমিক ক'রে ওঠে বৃষ্টির পরে বৃষ্টির জলে স্নাত সমস্ত গাছপালা এবং গাছের পাতায় জমে থাকা ছোট্ট জলকণার মধ্যে, জমে থাকা স্ফটিকের মত স্বচ্ছ জলকণার মধ্যে যেমন ঐ বিশাল সূর্য তার সমস্ত রূপ নিয়ে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয় আর সেখান থেকে ছিটকে পরে আলো আর সেই আলোতে ধাঁদিয়ে যায় চোখ ঠিক সেইরকম পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র জলকণার মধ্যে প্রস্ফুটিত সূর্যের মত, অন্ধকার আকাশের বুকে পূর্ণিমার চাঁদের মত সম্পূর্ণ রূপে শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে প্রস্ফুটিত। এ বোঝে সে, প্রাণ বোঝেও যার।
তাই, এক্ষেত্রেও বলা যায়, “অদ্যাপিহ সেই লীলা করে গোরা রায়, কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।”
এ কথার অর্থ সেই গোরা রায় অর্থাৎ সেই শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, সেই শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, সেই শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ সেই একজনই ত্রেতা যুগ থেকে, দ্বাপর যুগ পার হ'য়ে কলি যুগে লীলা ক'রেছেন এবং শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রূপে এসে লীলা ক'রে গেলেন আর ব'লে গেলেন, "ইষ্টগুরু পুরুষোত্তম, প্রতীক গুরু বংশধর, রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত তিনি নিরন্তর।" ব'লে গেলেন এবার এলাম সব ডিসক্লোজ ক'রে দিয়ে গেলাম, এবার হাঠে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে গেলাম। আর, যা দিয়ে গেলাম আগামী দশ হাজার বছর কিছু লাগবে না।"
এই কথার অর্থ এবার শ্রীশ্রীঠাকুর রেত শরীরে সুপ্ত থেকে প্রকট হ'য়ে উঠবেন তার বংশধরদের কারও মধ্যে আর তাঁর মাধ্যমেই তাঁর ব'লে যাওয়া কথাগুলি ধীরে ধীরে ইমপ্লিমেন্ট ক'রে তুলবেন বংশপরম্পরায় দশ হাজার বছর। আর যদি এর মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরের স্মেল উবে যাওয়ার মত হয়, ম্লান হ'য়ে যায় তখন তিনি আবার আসবেন ঈশী স্পর্শে মানুষকে সঞ্জীবিত ক'রে তুলতে।
আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরকে শ্রীশ্রীআচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে লীলা করতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। শ্রীশ্রীঠাকুর ভয়ঙ্করভাবে মধ্যগগণের সূর্যের মত সূর্যের দীপ্তি নিয়ে, রাতের আকাশে্র পূর্ণিমার চাঁদের মত প্রকট হ'য়ে উঠেছেন শ্রীশ্রীবাবাইদাদার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে! শ্রীশ্রীবাবাইদাদার দীর্ঘ দেহ, আজানুলম্বিত বাহু, ঋজু শরীর ও মন, তাঁর হাঁটাচলা, বসা, কথা বলা, আচার, আচরণ, কথাবার্তা, শরীরী ভাষা, তাঁর চোখ, চোখের চাউনি, হাবভাব, তাঁর মুখমণ্ডল, মুখের হাসি, অঙ্গুলি হেলন, তাঁর অসীম ভালোবাসা, অগাধ জ্ঞান, নিখুঁত নির্ভূল মুখনিঃসৃত কথা, গভীর ও কঠিন কঠিন বিষয়ের সহজ সরল বিশ্লেষণ, সমস্ত হালকা ও গূঢ় কঠিন প্রশ্নের ও সমস্যার তৎক্ষণাৎ উত্তর ও সমাধান প্রতিমুহুর্তে বিস্ময়ের চরমে নিয়ে যায়, ভাবতে বাধ্য করে কে ইনি? ইনি কে? কে তুমি?
আর্তরা ছুটে আসছেন তাঁর কাছে প্রতিদিন দেশ বিদেশ থেকে দুঃখ থেকে,
কষ্ট থেকে, মন খারাপ হওয়া থেকে, অসুস্থতা থেকে, ব্যথা বেদনা থেকে, বিপদ থেকে, দূর্বল ও অসহায় অবস্থা থেকে, হতাশা, অবসাদগ্রস্থতা থেকে মুক্তি পেতে।
অর্থার্থীরা ছুটে আসে অর্থ বা সম্পদের প্রতি আগ্রহী বা প্রত্যাশী হয়ে, বিষয় সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্যের জট খুলতে।
জ্ঞানীরা ছুটে আসছেন জ্ঞানের পিপাসা মেটানোর জন্য। নিখুঁত জ্ঞান লাভের জন্য আগ্রহী হয়ে।
জিজ্ঞাসুরা ছুটে আসছেন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে কৌতূহলী হ'য়ে একটি অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে জাগতিক ও মহাজাগতিক নানা বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য, গবেষণা করার জন্য অথবা নানাবিধ জটিল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ক'রে উত্তর জেনে নেবার জন্য।
তাই বছরের প্রতিদিন ভিড় লেগে রয়েছে নাটমন্ডপে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সামনে। হাজার হাজার নারীপুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে নিবেদন ক'রে চলেছে সকাল ও সন্ধ্যে। দেশ বিদেশের ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, চিকিৎসা ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ের বিশিষ্টরা ছুটে আসছেন তাঁর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে।
আর, ক্লান্তিহীন ভাবে প্রতিদিন শ্রীশ্রীআচার্যদেব সবার মুখোমুখী হচ্ছেন যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে অপেক্ষারত আর্ত, অর্থার্থী মানুষের লাইন। জ্ঞানী, জিজ্ঞাসু বিশিষ্টদের আলাপ আলোচনা। হাসিমুখে স্পষ্টভাবে মিষ্টিভাষায় আর্ত, অর্থার্থী, জ্ঞানী ও জিজ্ঞাসু সবার সব সমস্যার ও সব প্রশ্নের সহজ সরল নিখুঁত নির্ভূল সমাধান ও উত্তর দিয়ে চলেছেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব! একদৃষ্টে তাঁর দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে ও তাঁর কথা, তাঁর সমাধানবাণী, তাঁর উত্তর শুনতে শুনতে মনে হয় যেন শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং তাঁর সমস্ত জ্যোতি চারপাশে ছড়িয়ে বসে আছেন সামনে!! শ্রীশ্রীআচার্যদেব যখন সমস্ত হাজারো নানারকম বিভিন্ন বিষয়ের উপর কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেন, বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান দেন তখন সেই উত্তর ও সমাধানবাণী শুনে মনে হয় তিনি যে একনাগাড়ে বলে যাচ্ছেন, সেই মুখনিঃসৃত কথা অদ্ভুত অভাবনীয় নিখুঁত নির্ভূল এক উচ্চমার্গের অমৃতময় সাহিত্য! সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, কবি, প্রাবন্ধিক যখন কোনও কিছু রচনা করেন তখন তার ওপর তারা বারবার কলম চালান, কাঁটা ছেঁড়া করেন। কিন্তু শ্রীশ্রীআচার্যদেব যেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের হুবহু প্রতিমূর্তি! একইরকমভাবে সারাটা বছর মানুষের আগমন ও প্রশ্নোত্তরের, কথোপকথনের ট্রাডিশান ব'য়ে চলেছে প্রকাশ্যে হাজারো লোকের সামনে! কোনও কথার কাঁটাছেঁড়া নেই, নেই কথার পরিবর্তন! শ্রীশ্রীআচার্যদেবের শ্রীমুখ দিয়ে যা বেড়িয়ে যাচ্ছে তাই-ই বেদবাক্য! শ্রীশ্রীঠাকুর একবার বলেছিলেন, "When you speak i stand in front of your tongue." যার অর্থ যখন তুমি কথা বলো তখন আমি তোমার জিভের অগ্রে দাঁড়িয়ে কথা বলি। যা' সূর্যের মত সত্য হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিন সকাল বিকাল দেওঘর ঠাকুরবাড়ির নাটমন্ডপে। সেই সূর্যকে, সেই গোরা রায়ের লীলাকে, সেই রেত শরীরে সুপ্ত থেকে জ্যান্ত থাকা শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভাগ্যবানেরা দেখতে পাচ্ছে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের মধ্যে বছরের প্রতিটি দিন! এই অদ্ভুত লীলা চাক্ষুস করছে প্রতিদিন হাজার হাজার আর্ত, অর্থার্থী, জ্ঞানী ও জিজ্ঞাসু মানুষ। তাই দেশ বিদেশ থেকে প্রতিদিন মানুষ ছুটে ছুটে আসছে দেওঘরে ঠাকুরবাড়িতে আজও শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে শ্রীশ্রীঠাকুরকে অনুভব করার জন্য, উপভোগ করার জন্য। গমগম করছে বছরের ৩৬৫ দিন দেওঘর ঠাকুরবাড়ি।
আসুন এই রস আস্বাদন করি, চক্ষু কর্ণের বিবাদ দূর করি, শ্রীশ্রীআচার্যদেবের সান্নিধ্যে এসে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দারিদ্রতা মুক্ত হ'ই। আমরা ভাগ্যবান হ'ই।
( লেখা ২১শে মার্চ'২০২৫)