Powered By Blogger

Thursday, February 17, 2022

উত্তরপাড়ায় পোষ্টার!

গত বছর ২০২১-এর ঘটনা।

উত্তরপাড়ায় পোষ্টার! বজরং দলের পোষ্টার! সরস্বতী পুজোয় যুবক যুবতীদের একত্রে ঘোরাঘুরি করার বিরুদ্ধে পোষ্টার!


খবরটা জি২৪ ঘন্টা চ্যানেলে দেখলাম। এবং শুনলাম দুজন সাংবাদিক ও একজন নাট্যকার অভিনেতার কথা। আর দেখলাম ও শুনলাম জি২৪ঘন্টার খবর সম্প্রচারের ধরণ। 


প্রথমেই এই ধরণের প্রচার এবং সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র ক'রে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া বা যৌবনে বিচরণরত যুবকযুবতীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি ক'রে তাদের সরল সবুজ মনে উগ্র মানসিকতার বীজ বপন করার ঘৃণ্য সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, যে সংস্কৃতি এইধরণের প্রচারকারীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে ঘরেবাইরে আপামর ইয়ং জেনারেশনের ভয়ংকর নিশ্চিত ক্ষতি ডেকে আনবে আর তার নির্মম ধাক্কা গিয়ে পড়বে ভবিষ্যৎ সমাজ ব্যবস্থার উপর সেই ভয়ংকর সংস্কৃতি প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আমি উত্তরপাড়ার একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।


আর এর সঙ্গে সঙ্গে উত্তরপাড়ার একজন অত্যন্ত সাধারণ মানুষ হিসেবে এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই চ্যানেলে প্রতিবাদে সরব হওয়া দুজন সাংবাদিক কুণাল ঘোষ ও প্রবীর ঘোষাল এবং অভিনেতা-নাট্যকার কৌশিক সেন মহাশয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ ক'রে কিছু বলার জন্য কলম ধরলাম। আমি এই তিনজনকে একেবারেই তাঁদের রাজনৈতিক আঙিনা ও ব্যক্তিত্বের পরিচয়ের বাইরে রেখেই বাংলার সংস্কৃতি জগতের মানুষ হিসেবে গণ্য ক'রেই এই আলোচনায় আগ্রহী। 


একজন সাধারণ শ্রোতা হিসেবে তাঁদের তিনজনের বক্তব্য শুনলাম এবং দেখলাম জি২৪ ঘন্টা চ্যানেল সঞ্চালকের ভুমিকা।


কুণালবাবু এই ঘৃণ্য পোষ্টারের জন্য সরাসরি বিজেপি ও তার সহযোগী উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সমাজকে বারোটা বাজানোর জন্য দায়ী করলেন। তিনি বাংলাকে ও সমাজকে নিজেদের দলের ভুলত্রুটি সংশোধন ক'রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেন।


প্রবীরবাবু এই পোষ্টারের মালিক হিসেবে বজরং দলকে সরাসরি দায়ী করতে রাজি নন। তিনি এই বিষয়ে নিশ্চিত নন যে কারা এই পোষ্টার মেরেছে তাই আলটপকা কোনও মন্তব্য করতে রাজী নন। এবারের নির্বাচনে নামে-বেনামে-অনামে পোষ্টার একটা নিউ ফিচার। তাই এইসব আলোচনা অবান্তর ও অমূলক। তবে তিনি পোষ্টারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন।


কৌশিকবাবু সরস্বতী পুজোয় একসঙ্গে ঘুরেফেরা, মেলামেশা, হালকা প্রেম ইত্যাদি এটা নতুন কিছু নয় বললেন এবং এই অদ্ভুত রোমান্টিসিজমের স্মৃতির কথা তুলে ধরলেন। তিনি এর জন্য সরাসরি বিজেপি দলকে দায়ী করলেন এবং এই পার্টিটাকে কুৎসিত দল ব'লে উল্লেখ ক'রে এই দলটাকে ক্ষমতায় না আনার জন্য আবেদন করলেন। তিনি বাংলার সমাজকে যথেষ্ট শক্তপোক্ত বললেন, বললেন বাড়ির বাবামা, আত্মীয়স্বজন এবং ছেলেমেয়েরা নিজেদের সামলানোর জন্য যথেষ্ট তাই এই ধরণের প্ররোচনামূলক হিন্দু সংগঠনের দাদাগিরির দরকার নেই। তিনি বললেন, বাঙালি সমাজ যথেষ্ট খোলামেলা শক্তপোক্ত এবং কতদূর যেতে হয় আর কতদূর যেতে হয় না সেই সম্পর্কে সেলফ সেন্সারশিপ আছে।


আর চ্যানেল সঞ্চালকের পরিচালনায় দেখলাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সঞ্চালনা।

           

সাংবাদিক কুণালবাবু ও প্রবীরবাবু এবং অভিনেতা কৌশিকবাবু আমরা সাধারণ মানুষ কি আপনাদের থেকে সমাজের সার্বিক ও বৃহত্তর স্বার্থে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি আশা করতে পারি না? আপনাদের রাজনৈতিক সত্তা ছাড়া আলাদা একটা স ত্তা ছিল। অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মত আপনাদের তো প্রথম থেকে শুধু রাজনৈতিক সত্তা ছিল না।  আপনাদের রাজনৈতিক সত্তা পরবর্তীতে যোগ হয়েছে। প্রথমে তো নিরপেক্ষ সাংবাদিক সত্তা ও নাট্যকার-অভিনেতার সত্তা ছিল, পরে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক সত্তা। তা আপনাদের বক্তব্যে আচ্ছা কুণালবাবু, প্রবীরবাবু এবং নাট্যকার ও অভিনেতা কৌশিকবাবু আমরা সাধারণ মানুষ কি আপনাদের থেকে সমাজের সার্বিক ও বৃহত্তর স্বার্থে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি আশা করতে পারি না? এটা সত্যি কি সত্যি না যে আপনাদের রাজনৈতিক সত্তা ছাড়া আলাদা একটা স ত্তা ছিল। এটা কি আমার ভুল ধারণা আপনাদের সম্পর্কে যে অন্য রাজনৈতিক নেতাদের মত আপনাদের তো প্রথম থেকে শুধু রাজনৈতিক সত্তা ছিল না? আপনাদের সক্রিয় রাজনৈতিক সত্তা পরবর্তীতে যোগ হয়েছে। প্রথমে তো নিরপেক্ষ সাংবাদিক সত্তা ও নাট্যকার-অভিনেতার সত্তা পরে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক সত্তা এটা কি সম্পূর্ণ অবান্তর ও অমূলক ধারণা? হয়তো মনের কোণে বিশেষ রাজনৈতিক দল বা মতবাদের রঙের ছাপ ছিল আর তা প্রকাশ পেয়েছে আপনাদের লেখায় কিন্তু সরাসরি কোনও দলের সক্রিয় সদস্য বা কর্মী ছিলেন না। তাই না? পরবর্তীতে সরাসরি দলের ছাপ পড়ে, ছাপ পড়ে দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার বা মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে। আর তা তখন একচক্ষু হরিণের মত হ'য়ে যায়। আপনাদের কাছে তো আম জনতার অনেক আশা ছিল, ছিল প্রত্যাশা। কারণ আপনারা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক অনেক বেশী দূরের জিনিস দেখতে পান, বুঝতে পারেন ভবিতব্য কি হ'তে পারে আর না পারে। তা আপনাদের বক্তব্যে কেন আমরা মানুষকে, সমাজ-সংস্কৃতিকে রক্ষা করার, বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবার মেসেজ বা দিশা পায় না!? কেন আপনাদের কাছে একটা নির্দিষ্ট দলের হ'য়ে অন্য একটি দলের বিরুদ্ধে মত প্রকাশে একচক্ষু হরিণের মত ভুমিকা পালন করতে দেখি!? যারা সরস্বতী পুজোয় এইধরণের ঘৃণ্য পোষ্টার দেওয়ালে লাগিয়ে নতুন প্রজন্মকে, নবীন যুবসম্প্রদায়কে ক্ষেপিয়ে তোলার এবং সহজ সরল মনের অভ্যন্তরে, মস্তিষ্কের গভীরে ব্রেন সেলে তীব্র ঘৃণার, সঙ্ঘাতের কুটিল বিষ ঢেলে দিয়ে নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ জীবনকে, ভবিষ্যৎ সমাজ ব্যবস্থাকে বিষাক্ত ক'রে দিতে পারে, ভেঙ্গে চুড়মার ক'রে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে তারা যেই হ'ক, যেই দলের হ'য়েই ক'রে থাকুক তার বিরুদ্ধে আপনাদের সোচ্চার হওয়ার কি এখনও সময় আসেনি। সময় আসেনি প্রকৃত কে বা কারা এই সমাজ জীবনকে, ব্যক্তি জীবন ও সমষ্টি জীবনকে ধ্বংস করার জন্য গুপ্ত ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তা কি তদন্ত ক'রে দেখার, সতর্ক হওয়ার এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় কি এখনও আসেনি!? যদিও প্রবীরবাবু সরাসরি এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য কাউকে দায়ী করেননি বা যুক্ত থাকার কথা বলেননি। তবে আমার মনে হয় এই ধরণের পোষ্টারের বিরুদ্ধে আলোচনা অমূলক বা অবান্তর নয়। আপনারা যদি আপনাদের বিদ্যাবুদ্ধি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আপনাদের জ্ঞান, বিচার শক্তি, আপনাদের দূরদর্শিতাকে দু'চোখ খোলা বুদ্ধিমান হরিণের মত সমাজ সভ্যতা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেঁচে থাকে ও বেড়ে ওঠার কাজে না লাগান তাহ'লে কি আপনাদের মহতী প্রতিষ্ঠিত জীবন কি মসিলিপ্ত ও কলঙ্কিত হ'লো না!? আপনারা কেন আমাদের মত চূড়ান্ত ভাঙাচোরা অজ্ঞানী অদূরদর্শী আম জনতার মতন চটজলদি আলটপকা ভিত্তিহীন উদ্দেশ্যপ্রোণোদিত মন্তব্য করবেন!? কেন আপনারা নিশ্চিত না হ'য়ে সরাসরি কোনও দলের তকমা লাগিয়ে দিয়ে এই ঘটনার জন্য সেই দলকে দায়ী ক'রে পরিবেশ পরিস্থিতিকে আরও জটিল ক'রে তুলবেন? এইধরণের ভুমিকা পালন কি এই ধরণের মস্তিষ্ক বিকৃত পোষ্টারের চেয়েও ভবিষ্যৎ বাংলার জন্য ভয়াবহ নয়? 


আর, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আপনাদের কি কোনও দায়বদ্ধতা নেই সমাজ গঠনের? আপনারা কি সমাজের বাইরে পরিযায়ী পাখির মত বাংলার বুকে অবস্থান করছেন? "আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা" ভাবছেন? সে গুড়ে বালি। আগুন যখন লাগে তখন সেই আগুন আপন পর ভেবে তার দাহ্য কাজ করে না। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।  


তাই আসুন এই ঘৃণ্য ভয়ংকর আগুন নিয়ে খেলার কাজ কে করেছে বা না করেছে সেটা যতটা বড় কথা নয় তার চেয়েও বড় কথা ও গুরুত্বপূর্ণ হ'লো সম্মিলিতভাবে দল মত সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে উঠে এই ধরণের ভবিষ্যৎ অশনি সঙ্কেতের বিরুদ্ধে সচেতন হ'ই। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রুখে দিই এই ছোবলকে, রক্ষা করি আজকের ও ভবিষ্যতের নবীন প্রজন্মকে নিশ্চিত বিষাক্ত ছোবলের হাত থেকে। কারণ এইধরণের ভয়ংকর সংস্কৃতির যারা আমদানি করছে তাদের এই আমদানিকৃত জঞ্জালপূর্ণ সভ্যতায় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেই ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে আমাদের বংশধরদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বংশধরদের প্রজন্মও থাকবে; এই কথা যেন আমরা কেউ ভুলে না যায়। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra-এর বাণীঃ


"পড়শিরা তোর নিপাত যাবে 

তুই বেঁচে সুখ খাবি বুঝি

যা ছুটে যা তাদের বাঁচা

তাঁরাই যে তোর বাঁচার পূঁজি।"

No comments:

Post a Comment