Powered By Blogger

Saturday, September 13, 2025

উপলব্ধিঃ মহাভারতের ভীষ্ম ও ধর্ম্মাশোক।

বিনাশকালে যেমন হরির নাম, যেমন সব ধ্বংসের নায়ক হওয়ার পর মানবতা, প্রেম-ভালোবাসা, মিলনের জ্ঞান, সৃষ্টির গান, ঠিক তেমনি দুর্দশাতে কাবু যখন তখন মহাভারতের ভীষ্মের বৃত্তি কাবু হয়েছে আর তখন তাঁর মুখে বিধি পালনের কথা মনে উদয় হয়েছে। মাত্র ১৮দিনের নহাভারতেরর যুদ্ধে ভারতকে ধ্বংস করার পর যখন ব্যষ্টি, সমষ্টি, পরিবার, পরিজন, সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, যখন সব শ্মশান আর শ্মশান, যখন মৃতদেহের ওপর শকুন, শেয়াল, কুকুরেরা মহাভোজ করছে মহানন্দে তখন নীতিকথার সাগর জেগে উঠেছে হিংসার ভয়ংকর ভুমিকম্পে ফেটে চৌচির হ'য়ে ধ্বংসের বীভৎস লাভার স্রোতে ভেসে যাওয়া রুখোশুকো প্রাণহীন মাটির বুকে ফল্গুধারার মত মহামতি ভীষ্মের মুখে।

যেমন নাকি মহামতি অশোক অর্থাৎ মহান মানবতাবাদী অশোক, অত্যন্ত বুদ্ধিমান, মহানুভব, বা উদারহৃদয় অশোক। চন্ডাশোক থেকে ধর্মাশোক। রাজত্বের প্রথম আট বছর, অশোকের নৃশংসতার দরুন তার প্রচলিত নাম ছিল চন্ডাশোক, যার অর্থ হলো 'নৃশংস অশোক'। তিনি তাঁর নিম্ন স্বভাব, উচ্চ মেধা, বা বিরাট প্রজ্ঞাকে কলিঙ্গের নৃশংস যুদ্ধে কাজে লাগিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের পর সেই বীভৎস মারণ যজ্ঞের দৃশ্য দেখে শোকে অনুতাপে সহনশীল মনোভাব নিয়ে পরিবর্তিত হৃদয়ে তাঁর উন্নত স্বভাব, মেধা ও প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে অশোক যখন রাজ্য পরিচালনা শুরু করেন, তার নাম তখন চন্দাশোক থেকে পাল্টে প্রচলিত হয় ধর্মাশোক,যার অর্থ হলো 'ধার্মিক অশোক'। হায় নিয়তি!!!!!!! প্রবি।
( লেখা ১৩ই সেপ্টেম্বর'২০২৪)

বিচিত্রা ১৮০

Ganesha you nice! 
your Bahon is mice.
See! How mahenga har chizo ki price! 
Your mice ko milta nehi rice!! 
You GOD lie!!!

মাছ চুরির মিথ্যা অপবাদে
বাবাকে মার, মেয়ে আত্মঘাতী!!!
৯ হাজার কোটি টাকা হেরাফেরির অপরাধে 
হবে মালিয়ার শাস্তি!?

যা ইচ্ছা তাই করো, যা ইচ্ছা হয় তাই বলো, তাই খাও!
শুধু করা, বলা আর খাওয়ার শেষে 
অমূর্ত ভগবানে মাথা ঠেকাও আর 
পুজো দিয়ে দাও!!

Don't Expect & Do not believe anybody 
Except GOD, i.e. Living God.
( লেখা ১৩ই সেপ্টেম্বর' ২০১৮)

I think i am at sea beach with my Supreme Beloved I am dragging all quicksand of deceit within me with the help of my Mighty Father. There is no begining, no ending; Only YOU
(SUPREME BEING) & Me on a wide sea beach of the milky way.

আমার মনে হয় আমি আমার পরম প্রিয়তমের সাথে সমুদ্র সৈকতে আছি, আমার পরাক্রমশালী পিতার সাহায্যে আমি আমার ভেতরের সমস্ত ছলনার বালি টেনে বের করছি। কোন শুরু নেই, কোন শেষ নেই; কেবল তুমি (সর্বশক্তিমান সত্তা) এবং আমি মিল্কিওয়ের বিস্তৃত সমুদ্র সৈকতে।
( লেখা ১৩ই সেপ্টেম্বর' ২০১৭)









প্রবন্ধঃ ছবি আঁকা প্রসঙ্গে।

চলো নিজেকে পাল্টাই।

এই জন্যেই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "গুরুর তিরােধান যদি হয় তখন তিনি মূৰ্ত্তি গ্রহণ করেন আচার্য্যের ভিতর। আচাৰ্য্যদেবাে ভব’ না কী কয়! আচাৰ্য—যাঁর আচরণকে অনুসরণ করে আমরা সমৃদ্ধ হয়ে উঠি। (দীপরক্ষী ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২২)।

আচাৰ্য্যদেবাে ভব’ মানে হ'লো আচার্যদেবই সত্তা, স্থিতি; উৎপত্তি; জন্ম; ইহলোকম সংসার; ঈশ্বর; শিব; মঙ্গল।

ঠাকুরের ছবি আঁকার কি আছে? এতই যদি ঠাকুরের প্রতি প্রেম ভালোবাসা ভক্তি জেগে ওঠে তবে তা 'চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম হ'ক' না। অসুবিধা কোথায়? হাতে খড়িটা বাবা-মাকে দিয়েই প্রথম হ'ক না। এক লাফে পরমাত্মার ছবিতে হাত পাকাবার জন্য প্র্যাকটিস না ক'রে প্রথমে প্রাকৃতিক দৃশ্য ছেড়ে যদি মানুষের ছবির ওপর হাত পাকাতেই হয় তবে তা' প্রথমে নিজের বাবা-মার ওপরেই হ'ক না। তা'তে দেখা যাক বাবা-মায়েরা সন্তানের হাতে কতটা নিজের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা পেত্নি-শাকচুন্নি, ডাকিনি যোগীনি, নন্দীভৃঙ্গী ইত্যাদিদের রূপ দেখতে পারে। এটাও তো মহাভাগ্য নিজের সন্তানের হাতে নিজের আসল রূপ দেখতে পাওয়া। সন্তানেরাও দেখুক তাদের বাবা-মায়ের আসল রূপ। একটা আবিস্কারের মতন ব্যাপার। মহা ইটারেস্টিং ব্যাপার। আর এরে সঙ্গে 'চলো নিজেকে পাল্টাই'-এর অনুশীলনের সুযোগও থাকে তা'তে। তারপর হাত পাকা হ'লে নাহয় অন্য কিছু ভাবা যেতে পারে। তাই বাবা-মায়েদের উচিৎ সন্তানকে রাইট ডিরেকশানে ছবি আঁকার হাত পাকানো। আর তার থেকেও বড় কথা, প্রথম ও প্রধান বড় দায়িত্ব হওয়া উচিৎ সর্বপ্রথম সন্তানের মনকে তৈরী করার জন্য, পারফেক্ট করার জন্য অনুশীলনের শিক্ষা দেওয়া।

এই প্রফেট যারা তাঁদের যাতে অমর্যাদা না হয়, তাঁদের প্রতি অমর্যাদায় দারিদ্যব্যাধিগ্রস্ত না হ'য়ে ওঠে তাই মহানবী হজরত মহম্মদ তথাগতদের ছবি বা ফটো রাখা বারণ করেছেন। কারণ ভাঙাচোরা মানুষ, রিপুতাড়িত মানুষ, বৃত্তিপ্রবৃত্তিতে আকন্ঠ ডুবে থাকা মানুষ, কুসংস্কারাছন্ন মানুষ যাতে তাঁদের অমর্যাদাকর ছবিগুলি দেখে দেখে আপাদমস্তক নিজের জীবনে চরিত্রে অমর্যাদার বিষে বিষাক্ত হ'তে হ'তে, বিষাক্ত বিষে নীল হ'য়ে রাঙিয়ে উঠে প্রফেটদের প্রতি তাচ্ছিল্য বুদ্ধিযুক্ত হ'য়ে প্রফেটদের বলাগুলিকে আর জীবনে মেনে চলবে না। তাই পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ কঠোরভাবে ছবি বা মূর্তির বিরুদ্ধে ব'লে গেছেন। তিনি প্রফেটদের ছবি বা মূর্তির বিরুদ্ধে ব'লে গেছেন তা' নয়। এটা ভুল প্রচার। বোঝার ভুল। প্রভু মহম্মদের ব'লে যাওয়া বাণীগুলিকে বোঝার ভুল ও ভুল interpretation বা ব্যাখ্যা। এ ব্যাপারে পরবর্তী সময়ে কোনোদিন আমি ব্যাখ্যায় আসবো।

এ জন্যেই বলে জীবনে শ্রীশ্রীআচার্য্যের প্রয়োজন। আগে তো নিজেকে রাইট ডিরেকশানে পরিচালিত করি তারপর তো সন্তানকে তার জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে রাইট ডিরেকশান দিতে পারবো। নতুবা সব দীক্ষা শিক্ষা ইত্যাদি বকোয়াস। যে বকোয়াস শিক্ষা আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের দীক্ষিতরা আমাদের শ্রীশ্রীআচার্য্যদেব থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন জীবনে গ্রহণ করে চলেছি এবং ঘরে বাইরে অন্যকেও ইঞ্জেক্ট ক'রে চলেছি।

আর, যারা আচার্য প্রথা ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে মানে না, প্রতিদিন বিরুদ্ধতার রোলার চালিয়ে পোঙ্গাপন্ডিত সেজে বালখিল্য বস্তাপচা দুর্গন্ধযুক্ত ইষ্টপ্রাণতা, ইষ্টস্বার্থ, ইষ্টস্বার্থপ্রতিষ্ঠার কথা ব'লে বিভ্রান্তির কূট বিষ ছড়িয়ে চলেছে সজ্ঞানে ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের কথা আর কি বলবো, সেটা সৎসঙ্গীদের সচেতনতার অভাব। সৎসঙ্গীদের নিজেদের চিনে নিতে প্রকৃত ইষ্টপ্রাণ ভক্তপ্রাণকে। পরম দয়ালের দরবারে বেকুবির কোনও জায়গা নেই। তা সে যতই সরলতা কপচাও।

আর যারা না জেনে, না বুঝে, না প'ড়ে, ঠাকুরের বিধি কিছু মাত্র পালন না ক'রে, নিজ চরিত্রে ফুটিয়ে না তুলে কেবলমাত্র মুখে মারিতং জগত ভন্ডামির ওপর দাঁড়িয়ে কথার স্রোতে ভেসে হাতে কলমে বিন্দুমাত্র কিছু না ক'রে শুধুমাত্র প্রশ্ন করার সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হ'য়ে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রশ্ন থেকে প্রশ্নে দৌড়ে দৌড়ে বেড়ায় বকনা বাছুরের মত, কান নিয়ে গেছে শুনে কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছনে ছুটে যাওয়ার মত শুধু আচার্যপ্রথা ও আচার্যদেবের বিরুদ্ধে ব'লে চলেছেন তাদের শুধু বলবো যদি সত্যি সত্যিই আপনারা ঠাকুরকে ভালোবাসেন তাহ'লে আগে ঠাকুরের বলা মতো নিখুঁত চলায় চলার চেষ্টা করুন, তারপর শ্রদ্ধাকে জীবনের মূল কেন্দ্রে বসিয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে আসুন, তাঁর সঙ্গে খোলামেলা প্রেম-ভালোবাসা, শ্রদ্ধা-সম্মান পূর্ণ অন্তরে কথা বলুন, আলোচনা করুন। তারপর আপনাদের যার যেটা ভালো লাগে করুন যে যেমন বুঝেছেন ঠাকুরকে সেই বোধ নিয়ে। কারণ কথায় আছে, শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্।

আর আমরা? আমরা নিজেরাই ঠিক না। আমরা নিজেরাই এক একজন পোঙ্গাপন্ডিত।
( লেখা ১৩ই সেপ্টেম্বর'২০২৫ )


Wednesday, September 10, 2025

প্রবন্ধঃ পাহারাদার।

আমাদের পূজা আমরাই পাহারা দিবো। রাষ্ট্রীয় নিরপত্তার জন্য যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আসেন তাহলে সাধুবাদ জানাবো, এছাড়া কোন অহিন্দু পূজার আঙ্গিনায় দেখতে চাই না।

এটা কি ধরণের কথা বললেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট-কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক মহাশয়? বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট-কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদক হ'য়ে এই ধরণের আলটপকা বিতর্কিত মন্তব্য ক'রে মহাজোটকে মহাঘোটে পরিণত করা হ'লো না কি? সব সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধরণের আলটপকা আবেগ তাড়িত খোঁচা মারা অর্থহীন হালকা কথাবার্তার জন্য সমস্যা জর্জরিত আজ সব সম্প্রদায়ের মানুষ। কেন অহিন্দু পূজার আঙিনায় দেখতে চান না এই প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাই না? অহিন্দু বলতে কাদের কাদের বুঝিয়েছেন তিনি? এই ধরণের অসুস্থ কথাবার্তার জন্য কি প্রভাব পড়তে পারে আদৌ তা' জানা আছে? তার ওপর আবার বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট-কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়ে বালখিল্য ছেলেখেলা চলে না। একজনের একটা ভুল, অন্যায়, অগোছালো, ভিত্তিহীন, অপমানজনক মন্তব্যের জন্য অহিন্দুদের প্রতিক্রিয়া হ'তে পারে এবং তার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে গোটা হিন্দু জাতটার ওপর। হিন্দুদের পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট-কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব যখন কেউ নেবে তখন মুখে লাগাম লাগাতে হবে ও নিজের ধর্মের ও অন্য ধর্মের সবাইকে লাগাম লাগাতে অনুরোধ করতে হবে। কথায় আছে, আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখায়। নিজে আচরণ ক'রে অন্য সব সম্প্রদায়ের মানুষকে শেখাতে হবে কেমনভাবে আচরণ করতে হবে, কেমনভাবে কথা বলতে হবে। যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে স্পষ্টবাদী হন কিন্তু মিষ্টভাষী হন। তবেই সাধারণ মানুষ তা' সে হিন্দু হ'ক, মুসলমান হ'ক বা খ্রীষ্টান-বৌদ্ধ যে সম্প্রদায়েরই হ'ক না কেন মানুষ আপনাকে মানবে, শ্রদ্ধা, সম্মান করবে। তবেই সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি অটুট থাকবে। নতুবা সব বকোয়াস।

এই কথা বলার জন্য আমাকে বলা হ'লো আমি যেন বেশী মাতব্বরি না দেখায়, তা' না হ'লে আমাকেও ওরা অ্যাটাক করবে, ওদের থেকে সাবধান থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কমেন্ট বক্সে।

এই হ'লো তথাকথিত হিন্দুদের সমস্যা। এখানে 'মাতব্বরি' শব্দ ব্যবহার ক'রে আমাকে অকারণ অপমান করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা হ'লো না এবং হিন্দুদের মধ্যে যে ঐক্য নেই সেটা প্রকাশ্যে প্রমাণ হ'লো। শুধু মুখে মারিতং জগত। কেউ ভুল কথা ব'লে সমস্যার সৃষ্টি করলে সেই ভুল তাকে ধরিয়ে দিয়ে সঠিক পথে শুধরে দেওয়ার যে শিক্ষা সেই শিক্ষা যে দেয় সে পরম হিতাকাঙ্ক্ষী। বর্তমানে সেই হিতাকাঙ্ক্ষী তো নেই শুধু সমস্যাকে আরও জটিল ক'রে আগুন জ্বালানোতে ওস্তাদ সবাই। আমার মাতব্বরি কি দেখলেন? আমি হিন্দু হ'য়ে আমার একজন হিন্দু ভাই যদি ভুল কথা বলে, ভুল পদক্ষেপ নেয় আর তার ফল যদি সমগ্র হিন্দু সমাজকে বইতে হয় সে ক্ষেত্রে সচেতন হিন্দু হিসেবে আমার আপনার সবার একটা গুরুদায়িত্ব আছে তাকে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু এখানে উল্টোটা করা হ'লো। আমাকেই খামোকা কথার খোঁচা দিয়ে অপমান করা হ'লো যা সবাই ফেসবুকে দেখেছে।

আর, অ্যাটাক যদি করে কারা করবে? অ্যাটাকের পাল্টা অ্যাটাক করার ক্ষমতা যদি না থাকে তাহ'লে আলটপকা কথা ব'লে সমস্যা সৃষ্টি করা কেন? আর, যদি পাল্টা অ্যাটাক করার ক্ষমতা থাকেও তাহ'লেও সমস্যার জন্ম দিতে পারে এমন আলটপকা অনুচিত, অন্যায়, ভুল কথা দায়িত্বশীল পদে বসে বলবো কেন? কেন সতর্ক থাকবো না? আমি যে পদের দায়িত্ব নিয়েছি সেই দায়িত্ব কথাবার্তা, চালচলনে কেন সঠিকভাবে পালন করবো না। আমার মাথার ওপর যদি সমাজের কোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে থাকে মানুষ তাহ'লে তাদের রক্ষা করার সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব আমার।

আর, আমার পরিবার আমার ভুল কথা, ভুল চলনের জন্য যেমন ধ্বংস হ'য়ে যায় ঠিক তেমনি আমি যদি সমাজে কোনও দায়িত্বশীল পদে বসে থাকি তখন আমার সমাজের মঙ্গলের কথা, সমাজের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই কথা বলতে হবে, নিজের জীবনকে পরিচালনা করতে হবে। নইলে ব্যক্তি, সমষ্টি, সমাজ, দেশ ধ্বংস হ'য়ে যাবে। যা আজ চলছে গোটা বিশ্ব জুড়ে শুধুমাত্র দূরদৃষ্টির অভাবে আলটপকা বেহিসেবি কথা বলার জন্যে। তাহ'লে এ আমি কেমন পাহারাদার!

তাই হে পারারাদার, কাউকেই কারও থেকে সাবধান হ'তে হবে না। আমি নিজেই নিজের ভয়ের কারণ, নিজেই নিজের যম। আমার নিজের থেকে আমাকেই সাবধানে থাকতে হবে। নতুবা ধ্বংস অনিবার্য।

আমার মতামত জানালাম গ্রহণ করতে পারে কিংবা বর্জনও করতে পারে পাঠকবর্গ। সবাই ভালো থাকবেন।
( লেখা ১১ই সেপ্টেম্বর' ২০২৪ )

প্রবন্ধঃ গোলামীর সম্পর্ক!?

যদি এইটা স্বামী বিবেকানন্দের বাণী হয় তাহ'লে কি বিবেকানন্দ ভুল কথা বলেছিলেন? ভুল বার্তা ছড়িয়েছিলেন?

যে জব করে সে তার বসের গোলাম হবে কেন? সে তার বসের সাহায্যকারী। বিয়ে করা মানে একে অপরের গোলাম হওয়া? একে অপরের গোলামী করা? স্ত্রী স্বামীর গোলাম? স্বামী স্ত্রীর গোলাম? তাহ'লে স্বামী স্ত্রী যদি একে অপরের চাকর হয় তাহ'লে তাদের সন্তান কি হবে? চাকরের চাকর? গোলামের গোলাম। স্বামীস্ত্রী বা পিতামাতার পরস্পরের প্রতি পরস্পরের সম্পর্ক চাকর আর চাকরানীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে তাহ'লে সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক কি হবে? সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার কোনও পবিত্র সম্পর্কই তাহ'লে নেই?

এই মনোভাব, এই অশিক্ষা, কুশিক্ষার জন্যই আজ পৃথিবীটা নরকে পরিণত হয়েছে আর এই জন্যেই বলে কলিযুগ। এই শিক্ষা কলিযুগের শিক্ষা, চেতনা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি।

এই কারণেই বিয়ে বা বিবাহের মধ্যে যখন একজন নারী বা একজন পুরুষ স্বামীস্ত্রী সম্পর্কে জড়িত হয় তখন তাদের উভয়ের জীবনে, চরিত্রের মধ্যে যখন সেই বিয়ে বা স্বামীস্ত্রী শব্দের অন্তর্নিহিত শব্দের প্রতিফলন দেখা যায় না, কোনও স্মেল পাওয়া যায় না তখন নারীপুরুষ নামমাত্র লোকদেখানো তথাকথিত বিবাহ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পরস্পর পরস্পরের গোলাম হয় ও সারাজীবন যন্ত্রণাদায়ক অসম্মানজনক গোলামীর বোঝা ব'য়ে বেড়ায়।

বিয়ে বা বিবাহ মানে বিশেষ ভাবে বহন করা অর্থাৎ নারীপুরুষ স্বাধীনভাবে উভয়ে উভয়কেই নিজের নিজের বৈশিষ্ট্যের ওপর দাঁড়িয়ে একে অপরের প্রয়োজন বুঝে বিশেষভাবে বহন করবে। এখানেই নিহিত আছে প্রকৃত স্বাধীনতা। তখন সেখানে গোলাম বা গোলামী থাকে না। আর যেখানে তা' হয় না, সেখানে তা সে ঘরে-বাইরে যেখানেই হ'ক গোলামীর সম্পর্কই ডেভালাপ করে।

অতীতে সেই জন্যই ছিল বর্ণাশ্রম প্রথা যেখান থেকে নারীপুরুষ উভয়েই জীবনের চারটে ধাপ একে একে প্রশিক্ষিত হ'তে হ'তে পার হয়। প্রতিটি ধাপে পরের ধাপে প্রবেশের ও চলার শিক্ষা লাভ করে। তখন গোলাম বা গোলামী ব্যাপারটা আর থাকে না। নারীপুরুষ উভয়ের পরস্পরের মধ্যে একটা সম্মানজনক পবিত্র দূরত্ব ও সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকে।

গোলাম মানে দাস বা চাকর আর গোলামী মানে দাসত্ব বা চাকরত্ব। আমরা নারীপুরুষ সবাই একমাত্র দয়াল প্রভুর দাস, দয়াল প্রভুর গোলাম বা চাকর। দয়াল প্রভু যা বলবেন তাই-ই আমরা করবো মুখ বুজে, বিনা আপত্তিতে, বিনা ওজরে বরং পরম আনন্দে। কারণ একমাত্র তিনিই জানেন আমার কি দরকার আর কি দরকার না, কিসে আমার মঙ্গল আর কিসে আমার মঙ্গল না। একেই বলে প্রকৃত গোলাম ও গোলামির চরিত্র।

এই কথাটাই পরমপুরুষ পরমপ্রেময় শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের পরম শিষ্য শ্রীশ্রীস্বামী বিবেকানন্দ বলতে চেয়েছিলেন।
( লেখা ১১ই সেপ্টেম্বর' ২০২৪ )।


প্রবন্ধঃ জানতে চাই।

১) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের "এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি" গানে কোন দেশের কথা বলা হয়েছে? বাংলাদেশের? নাকি ভারতের? যদি ভারতের হ'য়ে থাকে তাহ'লে বিবেচিত হয় কি ক'রে? কোন যুক্তিতে? আর, বিবেচিত হয়েছে বলেই মেনে নিতে হবে এটা মান্যতা পাবে বা এখানে হিন্দু-মুসলমানের গন্ধ নাই?
২) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানে ভায়ের মায়ের মিষ্টি মধুর স্নেহের কথা বলা হয়েছে তা' আমরা কি সেই মিষ্টি মধুর স্নেহের গন্ধ আর পাই দুই দেশের ভায়ের আর মায়েদের মধ্যে?

৩) আমরা গত কয়েকদিন ধ'রে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙ্গার মধ্যে দিয়ে প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুকের নানা বিকৃত পোষ্টে, কমেন্ট বক্সে যে অপমান, অশ্রদ্ধা, অপবাদ, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, গালাগালি, কুৎসা, চরিত্রহনন, সাম্প্রদায়িক মন্তব্য ইত্যাদি করার মধ্যে দিয়ে যে ঘৃণা ঝ'রে পড়তে দেখলাম বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থানকারী, সাম্প্রতিক পট পরিবর্তনের সমর্থক তামাম ছাত্রছাত্রী, আম নাগরিকের মধ্যে তা' থেকে কি প্রমাণ হয় না রবীন্দ্রনাথ হিন্দু বলেই তার বিরুদ্ধে এত জনরোষ?

৪) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের 'আমার সোনার বাংলা' গানটি অখন্ড বাংলাকে নিয়ে লেখা হয়েছে ব'লে সেই গানটি একটি সম্পূর্ণ বাংলাভাষী দেশের জাতীয় সঙ্গীত হ'তে পারবে না? এ তো অদ্ভুত যুক্তি? জোর ক'রে বলপ্রয়োগে হাঁ-কে না করানো আর না-কে হাঁ করানোর মত সমতুল্য ব্যাপার হ'য়ে দাঁড়ালো?

৫) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ আর বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিয়েও কথা উঠে গেল? এ তো অদ্ভুত এক ভাঙনের সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের শরীরে-মনে-আত্মায় যে নোংরা দূষিত মনের বিষ ছড়িয়ে গেছিল ব্রিটিশ ডিভাইড এন্ড রুল ভাঙ্গন তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষকে। আর, তার ট্রাডিশান ব'য়ে চলেছে দেশভাগের ৭৮ বছর পরেও দেশ ভাগ ক'রে। ব্রিটিশ ও তৎকালীন দেশনেতৃবৃন্দ বুঝিয়েছিল দেশ ভাগ করার মধ্যে দিয়ে হিন্দু-মুসলমান সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু তা যে হবে না বরং উল্টো হবে, দেশ ভাগ করার মধ্যে দিয়ে তা দিয়ে দিয়ে শত্রুতার যে ডিম ফোটানোই হবে তা আজ সত্য হ'লো। আজ বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি আবারো আরও একবার এই সত্য প্রমাণ করলো।

৬) একটা মিষ্টি সুন্দর গান যে গানের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইনের মধ্যে বাংলাদেশের মাটি, জল, বায়ু, ফল, ঘর, হাট, বন, মাঠ এবং বাঙ্গালীর পণ, আশা, কাজ, ভাষা, প্রাণ, মন, ভাইবোন ইত্যাদির নিবিড় গন্ধ পাওয়া যায়, যে বাংলাদেশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বজুড়ে আকাশে বাতাসে সেই গানের মধ্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ফুটে ওঠে না!? এই গান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করছে? সত্য তায়েব উর রহমান! কি অদ্ভুত এক যুক্তি! কি বিচিত্র এই বাঙালি!!

৭) রবীন্দ্রনাথ ভারতভাগের বিরোধীতা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় তিনি বাংলাভাগের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন। কেন করেছিলেন? কারণ তিনি বাঙালীদের মধ্যে ভাঙ্গন হ'ক চাননি। তিনি চেয়েছিলেন বাঙালীর ঐক্য, বাঙ্গালীর সম্প্রীতি অটুট থাকুক, বাঙালী মিলেমিশে থাকুক, সেখানে তিনি হিন্দু মুসলমান দেখেননি, তিনি দেখেছিলেন বাঙালি, বাঙালি, বাঙালি। তাই তিনি বাংলা ভাগকে আটকাতে পথে নেমেছিলেন। সেটা অন্যায় করেছিলেন? তখন তো আপনারা, আপনাদের পূর্বপুরুষ পাকিস্তানের অংশ হ'তে চেয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশ কোথায় ছিল? জোর ক'রে অযৌক্তিকভাবে ভুলকে ঠিক, মিথ্যেকে সত্যি প্রমাণ করতে সব গুলিয়ে ফেলছেন? ১৯০৫ সালে বাংলাদেশ কোথায় ছিল? তখন তো আপনি, আপনারা জন্মাননি। তখন ভাঙনের বিষ তো এত তীব্র ছিল না। তাই হিন্দু মুসলমান বাঙালি মানুষ নির্বিশেষে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে। আর, আজ সেই ভাঙ্গনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মানুষটাকে শয়তান রূপে বাংলাদেশ বিরোধী ব'লে তুলে ধরছেন? ঐক্যের পক্ষে, মিলনের পক্ষে, গড়ার লক্ষ্যে, সর্বনাশা ভাঙনের হাত থেকে ঐক্যবদ্ধ বাংলাকে অটুট রাখাটা রবীন্দ্রনাথের অপরাধ ছিল? এর পরেও ভাঙ্গনের মন্ত্রে দীক্ষিত হ'য়ে আবার অখন্ড বাংলার স্বপ্ন দেখেন?

৮) বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা মানেই বাংলাদেশের বিরোধীতা তাও আজ থেকে ১১৯ বছর আগে? বাংলাদেশ তো দূরের কথা পাকিস্তান রাষ্ট্রের কোনও সম্ভবনা ছিল না তখন। এর থেকে প্রমাণ হয়, তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ ও আসামের লেফটেনান্ট গভর্নর ব্যাম্পফিল্ড ফুলার বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে নির্যাতন শুরু করেন এবং সাম্প্রদায়িকতার যে ভয়ংকর বিষ বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করেন সেটা সঠিক ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা শুনে পূর্ব বঙ্গের মুসলিমরা, বিশেষ করে অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় হতাশ হয়ে পড়ে ও প্রচন্ড ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
যা আজও আপনারা ব'য়ে চলেছেন। আর, এই জাতীয় সঙ্গীত বিরোধীতাকে আপনারা স্বাভাবিক ঘটনা বলছেন। বাঃ! চমৎকার মানসিকতা। তাহ'লে সরাসরি হিন্দু বিরোধীতার তাস খেললেই হয়। সরাসরি হিন্দু-মুসলমান আলাদা হওয়ার দাবী তুললেই সব সমস্যার সমাধান হওয়ার একটা রাস্তা খুলে যায়। তাই-ই হ'ক আর রবীন্দ্রনাথ হ'ক বাতিল।

৯) আপনি জাতীয় সঙ্গীতের ভূমিকা নিয়ে কথা তুলেছেন। সঙ্গে বলেছেন, এই গানে স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনও কথা নেই। এই গান সংকট বা দূর্দিনে আপনাদের জাগিয়ে রাখতে অক্ষম। আরো বলেছেন, এই গানের পরিবর্তে "এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি" কিংবা "মুক্তির মন্দির সোপান তলে" গানগুলো আপনাদের দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করে।
আপনাকে আমার জিজ্ঞাস্যঃ
**এবার বলি,
**"মুক্তির মন্দির সোপান তলে" গানের কথাগুলি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ের সময়ের গান। 'আমার সোনার বাংলা' অখন্ড ভারতের অখন্ড বাংলায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধ সময়ের গান ছিল ব'লে জাতীয় সঙ্গীত হ'তে পারবে না তাহ'লে কোন যুক্তিতে অখন্ড ভারতের সময়ের গান "মুক্তির মন্দির সোপান তলে" আপনাদের জাতীয় সঙ্গীত ব'লে গ্রহণযোগ্য হবে?

*** যে গানগুলো আপনাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়াতে সাহায্য করে সেই দেশটা সম্পর্কে আপনার জানা আছে? সেই দেশটা সম্পর্কে তীব্র ভালোবাসা জন্মালে পরে তবেই কোনও গান দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়াতে সাহায্য করে নতুবা করে না। আপনার দেশের ভৌগলিক অবস্থান, আয়তন, গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক পরিবেশ, আবহাওয়া, আকাশ, বাতাস, মাঠ, ঘাট, পুকুর, নদনদী, লোকসংখ্যা, বাংলাদেশের মাটি, জল, বায়ু, ফল, বাংলাদেশের ঘর, হাট, বন, মাঠ এবং বাঙ্গালীর পণ, আশা, কাজ, ভাষা, বাঙ্গালীর প্রাণ, মন, ভাইবোন ইত্যাদি সমস্ত কিছুর সঙ্গে আত্মিক একটা যোগসূত্র রচিত হয়, তীব্র ভালোবাসা জন্মায় এমন গান আগে শুনুন তারপর না হয় দেশপ্রেম জাগাবেন, তারপর নাহয় মাথা উঁচু ক'রে দাঁড়াবেন।

১০) প্রতিদিন প্রতিনিয়তই আপনাদের একেকজন এক একরকমভাবে ধর্মীয় বাণীর ব্যাখ্যা করছে সেটা আপনি ভালোভাবেই জানেন, তাই আজ সারা পৃথিবী জুড়ে ধর্ম নিয়ে হানাহানি।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করতেই পারেন কিন্তু তার জন্য এত বাহানা, এত অজুহাত, এত সমালোচনা, এত নিন্দা, এত অপবাদ, অপমান, অশ্রদ্ধা, কুৎসা, গালাগালি, তাঁর মূর্তি ভাঙ্গা, তাঁকে চোর আখ্যা দেওয়া, অত্যাচারী জমিদার বলা, তাঁর ছবির চারপাশে আরও নানারকম মিথ্যা, ঘৃণ্য অপবাদের মালা সাজিয়ে তাঁর ছবি পোষ্ট করা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন করার কি কোনও প্রয়োজন ছিল। এতে কাদের মাথা নীচু হ'লো বিশ্বে ইতিহাসের বুকে যা সাক্ষী হ'য়ে থাকবে?

আমার কথা জানালাম। গ্রহণ করতে পারেন ও বর্জনও করতে পারেন। ( লেখা ১১ই সেপ্টেম্বর' ২০২৪ )

প্রবন্ধঃ মনুষ্যত্ব আজ তলানিতে।

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত 'আমার সোনার বাংলা তোমায় ভালোবাসি' নিয়ে এবং গানের রচয়িতাকে নিয়ে এতটা নীচে নামতে পারে বাংলাদেশের সম্প্রতি অবৈধ উপায়ে পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনকারী ছাত্র, নাগরিক সমাজ তা ভাবলে অবাক হ'য়ে যাই, মনে প্রশ্ন জাগে, এ আমরা কোন পৃথিবীতে আছি?

রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দুজনেই ভারতীয়। ১৯৭১ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের সম্পত্তি হ'য়ে যায়। যা আজও আছে। আর, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হ'য়ে যান তাদের কাছে সমালোচনা, নিন্দা, কুৎসার বস্তু। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এত কুৎসা, এত গালাগালি, এত নিন্দা, এত অপমান, এত অপবাদ, এত লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, এত ঘৃণা, এত চরিত্র হনন সোশ্যাল মিডিয়ায়, ফেসবুকে যে মাটির নীচে ঘুমিয়ে থাকা দুই কবিরই আত্মা কেঁপে কেঁপে উঠছে। আজ দিনের পর দিন স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হ'য়ে উঠছে বাংলাদেশের বাঙালিদের একজন বাঙালির প্রতি ঘৃণা ও আরেকজন বাঙালির প্রতি ভালোবাসার কারণ। গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আন্দোলনে জড়িত বাঙ্গালীরা বাঙ্গালীর মুখের ভাষা, আচার, আচরণ, সভ্যতা, ভদ্রতা কোন স্তরের। এর সঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিল, তারা অর্থাৎ বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পক্ষ অবলম্বনকারীরা বাঙালী না, তারা মুসলমান।

"বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে আনা হয় ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়।"----- কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ শাসক ও আপামর বাংলাদেশীদের কাছে পেলে ভালো লাগবে।

১) কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে কেন নিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ?

২) ভারতের প্রতি এত ঘৃণা অথচ ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া, ভারতের মাটি যার কর্মভূমি, ভারতীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি যার চেতনায়, যিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যিনি ভারতীয় হিন্দু নারীকে বিবাহ করেছিলেন, যিনি তাঁর চার সন্তানের নাম রেখেছিলেন যথা: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ। সেই আপাদমস্তক ভারতীয় ঘরানার নাগরিককে কেন তাঁর শেষ বয়সে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছিল তদানীন্তন সরকার?

৩) প্রমিলা দেবীর শেষ ইচ্ছা ছিল তার স্বামীকে যেন তার কবরের পাশে (চুরুলিয়ায় নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে) সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু প্রমিলার শেষ ইচ্ছাটি আর পূরণ হয়ে উঠে নি। কেন কবিকে কবি পত্নী প্রমিলা দেবীর শেষ ইচ্ছামত তাঁর স্বামী নজরুল ইসলামকে তাঁর কবরের পাশে (চুরুলিয়ায় নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে) সমাধিস্থ করা হয়নি?

৪) যখন তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি সুস্থ ও চেতনায় ছিলেন? ১৯৭২ সালে বাকশক্তিহীন ও মানসিক ভারসাম্যহীন পিক্‌স ডিজিজ নামক একটি নিউরনঘটিত ভয়ংকর সমস্যায় ভুগতে থাকা কবিকে কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শেষ জীবনে তাঁর দেশ থেকে অন্য দেশে? কি ছিল সেই ঘৃণ্য রাজনীতি? তিনি যদি সুস্থ থাকতেন তাহ'লে কি তিনি নিজের জন্মভুমি, নিজের মাতৃভূমি, নিজের কর্মভূমি ত্যাগ ক'রে জাতীয় কবি হওয়ার লোভে অন্য দেশে যেতেন?

৫) তখন মনে হয়নি ভারতের কাছে হাত পেতে ধার করতে হচ্ছে একজন বিদেশীকে, তাও তাঁর অজান্তে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায়, নিজের দেশের জাতীয় কবি ঘোষণা ক'রে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করবেন?

৬) যে মানুষটি মুসলিম হয়েও কালী ও কৃষ্ণ প্রেমে মেতেছিলেন, প্রচুর শ্যামা ও কৃষ্ণ সঙ্গীত লিখেছিলেন তখন তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয়নি এই মানুষটি বিধর্মী ও কাফের?

৭) ১৯৭১ সালের রাষ্ট্রনায়ক, দেশ স্বাধীন করার রূপকার মুজিবর রহমান আজ যে বর্তমান ছাত্র আন্দোলনকারী, সাম্প্রতিক পটপরিবর্তনকারী জনগণ ও উপদেষ্টামন্ডলীদের কাছে চরম অপমানিত, অবহেলিত, লাঞ্ছিত, কলঙ্কিত এবং সম্পূর্ণ্রূপে ব্রাত্য সেই মানুষটির আনা কাজী নজরুল ইসলাম এখন রবীন্দ্র বিরোধীদের কাছে 'বাংলাদেশের কবি' ও তাঁর অর্জনগুলি এখন বাংলাদেশের অর্জন!? কি অদ্ভ্যুত নীচ, ঘৃণ্য, নোংরা মানসিকতা। এ তো নেপোয় মারে দই-এর মানসিকতা! আর, যে আনলো কবিকে দেশে দেশের অলংকার করবে ব'লে তাঁকেই পিছনে লাথি মেরে কবিকে এখন মাথায় নিয়ে নাচানাচি? এতটা ধূর্ততা!?

৮) বর্তমান আন্দোলনকারীদের কাছে ভারতের কাছে ধার করা জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের গানগুলি কি হারাম? কারণ তাঁর গানগুলি তো বাদ্যযন্ত্র সহযোগে তাহ'লে তাঁর গানগুলি কি ক'রে জায়েজ হবে?

৯) বর্তমান ভারত বিরোধী বাংলাদেশের শাসক ও জনগণের কথামত "আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত একজন "ভারতীয় কবি"র লেখা" যদি হয় তাহ'লে আপনাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম তো আপাদমস্তক শরীরে, মনে, আত্মায় ভারতীয় নাগরিক, এই কথায় আপনাদের ঈমানে ঝাঁকি লাগবে না? আপনাদের ক্ষেত্রে এটা সত্য ও বাস্তব নয়?

১০) বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ভারত থেকে ধার করা জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের যদি লেখা হ'তো তখন কি বলতেন, অকপটভাবে স্বীকার করতেন, মেনে নিতেন এই সত্য ও বাস্তব যে কবি নজরুল ইসলাম আদপেই ভারতীয়? তখন তাঁর গান পরিবর্তন করতেন?
১১) বাংলাদেশে বলা হচ্ছে, "বাংলাদেশ একটা আধুনিক জাতিরাষ্ট্র"। তা এই জাতিরাষ্ট্রটা কি? জাতিরাষ্ট বলতে কি বোঝাচ্ছে? রবীন্দ্রনাথ যেহেতু হিন্দু সেইহেতু তাঁকে সমূলে উৎখাত করতে হবে কারণ তিনি বিধর্মী। আর নজরুল ইসলাম যতই অন্য দেশে জন্মাক ও ভারতীয় হ'ক, যতই সে আপাদমস্তক খাঁটি বাঙালী ও যতই সে পশ্চিবংগের বাঙালি হ'ক, যতই সে হিন্দু ভারতীয় নারীকে বিবাহ করুক, যতই সে মা কালী ও কৃষ্ণপ্রেমী হ'ক আর মা কালী ও কৃষ্ণের গান রচনা করুক, যতই ছেলেদের নাম বাংলা তথা হিন্দু নামের সঙ্গে মিলিয়ে আরবি/ফার্সিতে রাখুক কাজি নজরুল ইসলাম বিধর্মী নন তিনি খাঁটি মুসলিম ও ইসলামপন্থী। আর, রবীন্রনাথের বেলায় দুনিয়ার গাত্রদাহ, দুনিয়ার তকমা?

১২) যে দেশের নাগরিক কোনো দেশে বিদেশে যখন কোনও সম্মানে পুরস্কৃত হন তা সে হিন্দু হ'ক, মুসলমান হ'ক, খ্রীষ্টান বা বৌদ্ধ হ'ক আর যে ধর্ম সম্প্রদায়ের হ'ক তা'কে সেই দেশের নাগরিক হিসেবেই উল্লেখ করা হয়। এটা তো আন্ডারস্টুড! এই নিয়ে আবার কমেন্ট হয় নাকি? এটাই তো বাস্তব। আর, বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদের এর উল্টো কথা বা যুক্তিটা তো ১০০ ভাগ অবাস্তব, যাকে জোর ক'রে বাস্তব করতে চাইছেন কথার জাগলারিতে। তাই নয় কি?

১৩) ২০০৬ সালে ডাঃ মহম্মদ ইউনুস শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে পুরস্কৃত হন তা'তে তিনি বাংলাদেশী নাগরিক হ'লেও ১৯৪০-১৯৪৭ ব্রিটিশ ভারতের নাগরিক ছিলেন তাই ভারতীয়রা ও বিশেষ ক'রে পশ্চিমবাংলার বাঙ্গালীরা ডাঃ ইউনুসকে নিজেদের লোক বলেই মনে ক'রে নোবেল প্রাপ্তির আনন্দ উপভোগ করেছিল। এবং ভারত বিভিন্ন বিষয়ে মহম্মদ ইউনুসকে ১০ বার পুরস্কৃত করেছিল। একথা ইউনুস সাহেব ভুলে গেছেন। তাই তিনি সেই ভারতের এখন সবচেয়ে বড় শত্রু, ভারত ভাঙ্গার কারিগর। আপনাদের মত নিম্ন রুচির পরিচয় দিয়ে ইউনুসের গায়ে বাংলাদেশী স্ট্যাম্প ফেলে দিয়ে ও নোবেল পুরস্কারকে ও মহম্মদ ইউনুসকে বাংলাদেশের নোবেল ও বাংলাদেশের নাগরিক ব'লে দূরে ঠেলে দেয়নি সেদিন ভারত। আপনারা সেই নিকৃষ্ট পথ দেখালেন, নিম্ন রুচির কৃষ্টি-সংস্কৃতি, শিক্ষার পরিচয় দিলেন।

আর, ভারত চিরকাল জগত সভায় শ্রেষ্ঠ ছিল, আছে ও থাকবে। আপনারা ও পাকিস্তানও ছিল সেই গৌরবের অংশীদার একদিন ভারতের অংশ হ'য়ে কিন্তু নোংরা রাজনীতির নোংরা খেলা, ক্ষমতা দখলের ও নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণের জন্য নিজেদের মধ্যে ভাঙ্গার খেলা, বিদেশী শক্তির ডিভাইড এন্ড রুল প্রয়োগ করার ঘৃণ্য মানসিকতার খেলা আজ ভারতকে তিন টুকরো করেছে আরো আগামীতে ভারতকে হয়তো বা আরও টুকরো করার চেষ্টা করবে।
যাই হ'ক, যদিও জানি সেই চেষ্টা হ'লে আগামী ভয়ংকর পৃথিবীতে কেউ ভালো থাকবো না, শুধু ভারত সেদিন একা শ্ত্রুদের দ্বারা টুকরো বা ধ্বংস হবে না সেইসংগে যারা যারা এই টুকরো করার বা ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত থাকবে তারাও টুকরো টুকরো হয়ে ধ্বংস হ'য়ে যাবে।

তবুও প্রার্থনা করি হে ঈশ্বর সবাইকে সুমতি দাও, সবাই তোমার আশীর্বাদে মিলেমিশে ভালো থাকুক। আর যদি তা' না হয় তোমার অঙ্গুলিহেলনে আবার মহাভারত নয়, এবার হ'ক মহাবিশ্ব। শেষ হ'য়ে যাক, লুপ্ত হ'য়ে যাক মানবজাতি, মানব সভ্যতা। কারণ মানুষের মনুষ্যত্ব আজ তলানিতে। 
( লেখা ১০ই সেপ্টেম্বর' ২০২৪ )