Powered By Blogger

Sunday, August 24, 2025

প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঅবিবদাদা উবাচ ( পর্ব ২ )

কে এই দিব্যকান্তি রহস্যময় পুরুষ!?

গত ২৫শে জুন'২০২৫ বৃহস্পতিবার পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা কলকাতা অমরধামে অবস্থানকালে কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার সময় সারা মুখে মিষ্টি হাসির ফুলঝুরি ছিটিয়ে শান্ত স্নিগ্ধ স্বরে কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন,
"এই অমরধামে শুধু কি একটা রাস্তা দিয়েই আসা যায়? কেউ সেন্ট্রাল এভিনিউ দিয়ে আসে, কেউ আসে আহিরিটোলা দিয়ে, কেউ অন্য কোন দিক দিয়ে। কিন্তু সবাই শেষ পর্যন্ত আসছে এই অমরধামে। মত নানা থাকতে পারে কিন্তু সব মত যেন একটা পয়েন্টে এসে মিলে যায়। সব মত যখন এক জায়গায় এসে মিলে যায় সেটাই ধর্ম। অন্যের কথা শুনুন। সবার মতামতকে শ্রদ্ধা করুন। কোন একটাই নিয়ম বলে কিছু হয়না। ঠাকুরকে ভালবাসুন। ঠাকুরকে ভালবেসে যা করনীয় মনে হবে করুন।"

শ্রীশ্রীঅবিনদাদা যখন কথাগুলি বলছিলেন তখন কথাগুলি কাদের বলছিলেন? সেইসময় যারা ছিলেন সেখানে সেই প্রত্যক্ষদর্শীরাই বলতে পারবেন এবং যিনি বা যারা কথাগুলি লিপিবদ্ধ করেছিলেন তারাই বলতে পারবেন একজন ২৫বছরের সদাহাস্যময় মিষ্টি অপূর্ব আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বপূর্ণ যুবক কাদের বলছিলেন কথাগুলি। কথাগুলি যে সৎসঙ্গীদেরই বলছিলেন সেটা Understood. কিন্তু মাত্র ২৫বছরের যুবক কথাগুলি যাদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন তাদের বয়স কত সেটা প্রত্যক্ষদর্শীরাই বলতে পারবেন। সেখানে কি শুধু দাদারাই ছিলেন নাকি মায়েরাও ছিলেন?

যাই হ'ক, শ্রীশ্রীঅবিনদাদা যাদের উদ্দেশ্যে কথাগুলি বলছিলেন তাঁরা যদিও বর্তমান যুবসমাজ, যুবসমাজের উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু আজকের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় জটিল অন্ধকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি মাঝে আধ্যাত্মিক জগতের এক অল্পবয়সী যুবকের অমোঘ টানে ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যের যৌবনের আত্মসমর্পণ মনে পড়িয়ে সেক্সপিয়ারের সেই হ্যামলেট নাটকের সংলাপঃ "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." "যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"

এটি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রিয় কোটেশানগুলির মধ্যে অন্যতম। শ্রীশ্রীঠাকুর উপস্থিত জ্ঞানী জিজ্ঞাসু ব্যক্তিদের সঙ্গে সৃষ্টিতত্ত্বের আলোচনা চলাকালীন মাঝে মাঝে গভীর অতীন্দ্রিয় মহাজাগতিক ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে শেক্সপিয়ারের এই কথাটি আউড়াতেন।

এককথায় শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্য সব বয়সের সৎসঙ্গীরা জড়ো হয়েছিলেন সেদিনের সেই আনন্দমেলায় অমরধামে ২৫ বছরের এক যুবকের অলৌকিক অমোঘ টানে! যেমনটা দেখা যায় দেওঘর ঠাকুরবাড়িতে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কত হাজার হাজার মানুষ যে আসে তাঁকে একটু শুধু দু'চোখ ভরে দেখার জন্য তা' অভূতপূর্ব! সে দৃশ্য যারা দেখেছে তারা জানে। আর কত সমস্যা জর্জরিত মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে থেকে, তাঁর সঙ্গে কথা ব'লে তৃপ্তি নিয়ে ফিরে যায় প্রতিদিনের সাংসারিক জীবনে তা' ভাষায় বর্ণনা অসম্ভব। এই তৃপ্তি বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার!

তিনি সেদিন উপরোক্ত কথায় যা' বলতে চেয়েছিলেন তার সার কথা সব মতের অর্থাৎ হিন্দু মত, মুসলমান মত, খ্রীষ্টান মত, বৌদ্ধ মত শিখ মত ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪,৩০০টি ধর্ম নয়, যে ৪৩০০টি ঈশ্বর আরাধনার মত প্রচলিত আছে সেই বিভিন্ন মতানুসরণের ভিত্তিতে অস্তিত্বকে রক্ষা করে, স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচা ও বেড়ে ওঠার পথে মানুষ এগিয়ে চলে তাই ধর্ম এবং যেখানে এসে মিলিত হয় সেটাই অর্থাৎ বেঁচে থাকার ও বেড়ে ওঠার জায়গায় মিলিত হয় সমবেত ভাবে সেটাই ধর্মক্ষেত্র। সবাই, সব মতই পারিপার্শ্বিক সহ নিজের বাঁচা ও বাড়ার কথায় বলে। যেখানে যে মতে অস্তিত্ব রক্ষার কথা নেই, পারিপার্শ্বিকের সবাইকে নিয়ে বাঁচার কথা নেই, বেড়ে ওঠার কথা নেই সেখানে ধর্ম নেই।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার কথায় এটা স্পষ্ট হ'য়ে ওঠে আজকের যুবসমাজের কাছে যে, ঈশ্বর আরাধনার কোনও মতবাদে অন্য মতবাদের প্রতি কোনও ঘৃণা, বিদ্ধেষ নেই। পুরুষোত্তমদের কারও কথার সঙ্গে কারও কথার কোনও বিরোধ নেই। যে মতবাদে অন্য মতবাদের মানুষের প্রতি হিংসার কথা আছে, মারামারি, কাটাকাটি, খুনোখুনির কথা আছে, আছে অন্যের ঈশ্বর আরাধনার মতকে অস্বীকার করা, ঘৃণা করা, নিন্দা, কুৎসা, গালাগালি করা, আছে ধর্মের অজুহাতে ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে অন্য ধর্মের ঘরবাড়ি, ধর্মস্থান ভাঙচুর, লুটপাট ও মাতৃজাতীর প্রতি অবমাননা করার কথা, আছে ঈশ্বরের নামে বলি প্রথার মাধ্যমে হত্যাকে স্বীকৃতি, মৃত্যুকে আবাহন, আছে নিজের মতকে সর্বশ্রষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা ও অন্যের মতকে ছোটো করা ও নীচা দেখানো সেখানে ঈশ্বর নেই, নেই কোনও বাঁচা ও বাড়ার কথা, নেই কোনও জীবনবাদ বা অস্তিত্ববাদের কথা, নেই কোনও কিছুকে বা কাউকে ধ'রে রাখার ব্যাপার অর্থাৎ এককথায় সেখানে ধর্ম নেই, সেটা ধর্ম নয়, সেটা জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তমের মতবাদ নয়। সেটা মৃত্যু বা অবলুপ্তির মত, ধ্বংসের মত, নরকের পথ। সেটা শয়তানের মতবাদ, আবাসস্থল। সেটা অন্ধকারের জগত। সেখানে শয়তান কিলবিসের বাস, কংস, রাবণ, দুঃশাসন, দুর্যোধনদের বিচরণ ক্ষেত্র সেটা।
ঈশ্বরের জগত আলোর জগত, সুন্দর থেকে সুন্দরতর ও সুন্দরতম বাঁচার ও বেড়ে ওঠার জগত, পারিপার্শ্বিক সবাই মিলে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার লওয়াজিমা অর্থাৎ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ার জগত। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "বাঁচতে নরের যা যা লাগে, তাই-ই নিয়ে ধর্ম জাগে।" এখানে কোনও হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ইত্যাদি ৪৩০০ মতের মানুষের বাঁচার জন্য ও বেড়ে ওঠার জন্য আলাদা আলাদা কিছুই নেই, যা যা লাগে অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চেতনা ইত্যাদি ইত্যাদি সবার সব এক।

তাই হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে ৪৩০০টি ধর্ম পালনের মতের কথা শুনুন, মতকে জানুন, বুঝুন, শ্রদ্ধা করুন। আর বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, হজরত মহম্মদ, মহাপ্রভু, ঠাকুর রামকৃষ্ণ এদের মাথায় নিয়ে এঁদের নোতুন রূপ যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলন্দ্রকে ভালোবাসুন, আর পারিপাশ্বিকের স্বার্থ নিজের স্বার্থ বিবেচনা ক'রে, পারিপার্শ্বিকের বাঁচা ও বাড়া নিজের বাঁচা ও বাড়া বিবেচনা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভালোবেসে যেটা করার করুন।

এই কথা বলতে চেয়েছেন আজকের ভয়ংকর অস্থির উত্তপ্ত পৃথিবীতে উপস্থিত কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য সব বয়সের কথার স্রোতে ভাসা অস্থির, অসহিষ্ণু, অজ্ঞানী, অবিশ্বাসী, উদ্ধত, আত্মপ্রতিষ্ঠায় মগ্ন কপট সৎসঙ্গী নারীপুরুষ সবাইকে ২৫বছরের এক ধীর, স্থির, অচঞ্চল, শান্ত, স্নিগ্ধ, আলোময়, মধুময়, রুপময়, রসময়, জ্ঞানময় ও সদাহাস্যময় এক আশ্চর্য যুবক পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা।

কে এই দিব্যকান্তি রহস্যময় পুরুষ!? ঝলমলে প্রশান্ত মুখে আলোর দীপ্তি, ঠোঁটে তাঁর মিষ্টি মধুর হাসি, গভীর রহস্যময় উজ্জ্বল স্বচ্ছ চোখ, জ্বলজ্বল করছে চোখের কালো তারা, সেখান দিয়ে বেরিয়ে আসছে দিব্য জ্যোতি, সর্বাঙ্গ দিয়ে ছিটকে বেড়িয়ে আসছে আলোর ধারা! মাত্র ২৫বছরের এই যুবকের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবি কে এই দিব্যকান্তি রহস্যময় পুরুষ!? দিব্যকান্তি সেই প্রেমিক পুরুষের শ্রীচরণে জানাই কোটি কোটি প্রণাম।
( লেখা ৩রা জুলাই'২০২৫)।


No comments:

Post a Comment