Powered By Blogger

Saturday, April 12, 2025

বিচিত্রাঃ ১২০

ঠাকুর আছেন, তিনি সব দেখছেন।
তুমি আছো, তুমি কি তাঁকে দেখছো?
যদি দেখে থাকো তবে ভয় পেয়ো নাকো।
তিনি সব কিছুর সমাধান দেবেন।

শয়তানের বন্ধু কে? কপট ঈশ্বর বিশ্বাসী যে!
অধর্মের সাথী কে?
ধর্মের ধ্বজাধারী যে!

শয়তানের শয়তানির প্রধান পৃষ্ঠপোষক তিনি;
ধর্মের নামে ঈশ্বরের সংগে বেইমানী করেন যিনি।

মাঝে মাঝে ভাবি,
ঠাকুর কি হবে এসব ক'রে;
হতাশায় বুক ভাঙে
যখন ঘর শত্রু রাবণ ধ্বজা ধরে।

এ এক ভয়ঙ্কর সময়! কি করি,
কি যে উপায় ভেবে ভয় হয়!ভুল করিনি, করিনা;
তবুও হে ঈশ্বর!
ক্ষমা ক'রো তোমার বিচারে
যদি কোনও ভুল হয়।

জানি প্রভু তুমি আছো আমার সাথে!
কিসের ভয়! কাকে ভয়!
ঘোর অমাবস্যার রাতে!

সবাইকে নিয়ে চলতে চাই,
করতে চাই তোমার কাজ;
আজ যাকে ভাবি বন্ধু
প্রভু! কাল সে মাথায় পড়ে হ'য়ে বাজ!
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০১৮)

ক্ষমতাসীন অসৎ লোকের কাছে 
ক্ষমতাহীন সৎ লোকের 
হাত পেতে সাহায্য নেওয়ার চেয়ে 
আত্মহত্যা করা বা করোনার হাতে মরা ঢের সম্মানের!

কপট সাধুর হাতে অমৃত খাওয়ার চেয়ে 
অকপট অসাধুর হাতে বিশ্বাস ক'রে 
অমৃত মনে ক'রে বিষ খেয়ে মরা বা 
করোনায় মরা অনেক গর্বের!
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০২০)

ভাবছি,
নিজের মাথার ঘায়ে কুকুর নিজেই পাগল!
অন্যকে কামড়ে কি আর পাগল করবে!?
অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন। 
এসো পাশে দাঁড়াও,
ঈশ্বর রক্ষা করবে।

সুর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে! 
অস্ত যাওয়ার সময় হয়েছে 
তবুও ঘুম ভাঙছে না!? 
বন্ধু! কাল সকাল যদি আর না আসে 
তবে দয়ালের কাজ করার
আর সুযোগ পাবে না।

নিজেকে পাল্টাও!
কথার জাগলারিতে অন্যকে পাল্টাতে যেও না।
আপশোষের শেষ থাকবে না।
শেষের সেদিনে কেউ পাশে থাকবে না।

দয়ালের জন্য বাঁচি, বেঁচে আছি।
কারও জন্য বাঁচি না, বাঁচতে চাই না।
দয়ালের জন্য বাঁচি তাই সবার জন্য বাঁচতে চাই।
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০২১)

দয়াল! পথ চেয়ে আছি বসে 
কবে আবার আসবে তুমি এ আশায়! 
আজ বুঝি সেদিন কত দুঃখ কষ্ট, ব্যথা, যন্ত্রণা 
লেখা ছিল শবরীর শরীরে মনে আর 
পরতে পরতে তার বাসায়।
( লেখা ১২ই এপ্রিল'২০২২)
































Thursday, April 10, 2025

কবিতাঃ সবার প্রাণে।

চা শেষ হ'য়ে যায় তবু শেষ হয় না কথা
বুকের ভেতরেই ঝ'রে ঝ'রে পড়ে
কথার বুকে জমে থাকা পাঁজর ভাঙ্গা ব্যথা।
দৃষ্টি আমার হারিয়ে যায় কোন সুদূর পানে
মধু ঝরা কথা 
তোমার পৌঁছে যায়
আমার হৃদয় মাঝে, পৌঁছে যায় 
কানে কানে সবার প্রাণে

কবিতাঃ সুর ও ঈশ্বর সাধনা।

সুর সাধনায় মগ্ন তুমি
হে ধ্যানমগ্ন ঋষি!
ঈশ্বর সাধনায় হবে উত্তরণ!!
জীবন্ত ঈশ্বর মাঝে আছে সুরের খনি,
করো তাঁর অন্বেষণ।
সুরের খনির সন্ধান পেলে
তুমি পাবে ঈশ্বর!
ঈশ্বর লাভ হ'লে পরে
ভাসবে সুর সাগরে নিরন্তর!!

Wednesday, April 9, 2025

পেঁপের লুচি। পর্ব ১

দুর্দান্ত খেতে এই পেপের লুচি। এই পেপের লুচি তৈরির পিছনে একটা কাহানী আছে। আর কাহানীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দয়াল ঠাকুরের অপরিসীম দয়ার কথা। যা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এইখানে একমাত্র প্রযোজ্য শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের একটা ডায়লগ যা ঠাকুর প্রায় সময়ই উচ্চারণ করতেন। ঠাকুরের প্রিয় কিছু কোটেশানের অন্যতম প্রিয় কোটেশন এটা। "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." এর ভাবার্থ হ'লো, "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"

আজ থেকে বহু বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ২৪-২৫ বছর হবে। আজ থেকে ৪৫ বছর আগের (১৯৭৭-৭৮) কথা। পেটের ডানদিকে একটা ব্যাথা হ'তো। ডানদিকের লিভারের ওপরের দিকে একটা সূচের মতো ব্যাথা খোঁচা মারতো লাংসের উপরের দিকে। হোমিওপ্যাথি ডাক্তারকে যখন দেখালাম তখন তিনি বলেছিলেন, এটা গল ব্লাডারের ব্যাথা। তারপর তিনি ওষুধ দিয়েছিলেন। পরে অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। তিনিও একই কথা বলেছিলেন। সঙ্গে ব্যাথার ওষুধ দিয়েছিলেন ব্যারালগন। এইভাবে চলছিল। খাওয়াদাওয়ার উল্টোপালা হ'লেই ব্যাথা চরমে পৌঁছত। হাতের সামনে থাকতো ব্যারালগন। তাৎক্ষনিক উপশমের জন্য ব্যারালগন চালান ক'রে দিতাম পেটে। এইভাবে বছরের পর বছর কেটে চললো। ধীরে ধীরে পেটের হজম শক্তি একেবারে নষ্ট হ'য়ে গেল। হাতের সামনে মেট্রোজিল ৪০০, র‍্যানটেক বা জিনটেক ৩০০, ইউনিয়ামজাইম বা ভিটাজাইম ইত্যাদি পেটের আমাশা, অম্বল দূর করার জন্য এবং খাবার হজম হওয়ার জন্য যা পেতাম তাই পেটে চালান ক'রে দিতাম। 

এমনিভাবেই কেটে গেল বহু বছর। দীর্ঘ বহু বছর প্রায় ২৫-২৬ বছর পর সালটা (২০০৩ সাল হবে) একদিন সকালে একেবারে সর্ষের তেলের মতো বমি করলাম। এই দীর্ঘ সময়ে শেষের দিকে অনেক বছর বাইরের কিছু তো খেতে পারতাম না এমনকি ঘরের রান্নাও হজম হ'তো না। চপ, সিঙারা, কচুরি, লুচি, পরোটা ইত্যাদি খাবার ছিল আমার ফেবারিট।দুপুরে রাত্রে বেশিরভাগ সময়ে ঘি ডালডা দিয়ে ভাজা লুচি, পরোটা সঙ্গে আলুরদম বা অন্যকিছু মুখোরোচক রান্না দিয়ে হ'লেই আমার হ'য়ে যেত। ভাত, মাছ, মাংস না হ'লেও চলতো। কিন্তু পেটের বদহজম আর ব্যাথার কারণে সব বন্ধ হ'য়ে গেছিল। তারপর ঐ সর্ষের তেলের মতো বমি করাতে ডাক্তারের কাছে গেলাম,-সালটা ছিল ২০০৩ সাল, ডাক্তার আল্টাসোনোগ্রাফি করতে লিখে দিল। আলট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে ধরা পড়লো গল ব্লাডারের ভয়ংকর অবস্থা। গল ব্লাডার বাস্ট করার আগেই ইমিডিয়েট অপারেশন প্রয়োজন। আমার ভাইরা ভাই সবসময় আমাকে অপারেশন করিয়ে নেওয়ার কথা বলতো। নইলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা আছে সেই কথা ব'লে আমাকে অনেকবার সাবধান করেছিল।

যাই হ'ক, আল্টাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে অ্যাকিউট গল ব্লাডার ধরা পড়ায় আমাকে সার্জেন ডঃ ------ কাছে রেফার করলেন। ডঃ------- পরীক্ষা ক'রে আমাকে ইমিডিয়েট হস্পিটালে ভর্তি হ'য়ে যাওয়ার কথা বললেন এবং কিছ পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা লিখে দিলেন। তখন আর একমাস পর ছিল দূর্গাপুজা। মনে মনে ভাবলাম এখন যদি অপারেশন করি তাহ'লে পুজোর সময় বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে। এ কথা ভেবে ডাক্তারকে পুজোর পর অপারেশন করার কথা বলায় তিনি প্রচন্ড বিরক্ত হ'লেন। রেগে গিয়ে আমায় আমার যা ইচ্ছা তাই করতে বললেন। ডাক্তারবাবু ছিলেন প্রচন্ড বেরসিক। মুখে তার কখনোই কেউ হাসি দেখেনি। কথাবার্তা একেবারে চাঁচাছোলা। নকশাল মাইন্ডের। কিন্তু অপারেশনের হাত যেন ভগবানের হাত। কিন্তু তাঁর সেই কথায় আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডাক্তারবাবুকে ঠিক আছে ব'লে বেরিয়ে এলাম। তারপর কোনও পরীক্ষা না করিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলাম। বাড়িতে কিছু বললাম না। রাতে ঠাকুরের সামনে বসে ঠাকুরকে সব বললাম। অনেক কথা বললাম। মনের সব কথা ব'লে ঠাকুরকে প্রণাম ক'রে নাম করতে করতে শুয়ে পড়লাম। শুরু হ'লো আমার নোতুন যাত্রা। তখন রামদেবজীর যোগ ব্যায়াম-এর ঘোড়া জোর কদমে ছুটে চলেছে দেশ তথা বিদেশ জুড়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে। শুরু হ'লো ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সাতটা আর সন্ধ্যে ৬টা থেকে আটটা পর্যন্ত মরণপণ কপাল্ভাতি আর অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম। আর সঙ্গে চব্বিশঘন্টা শয়নে স্বপনে জাগরণে নাম জপ। রামদেবজীর প্রাণায়াম আর দয়াল প্রভুর নাম প্রাণায়াম চলতে লাগলো অপ্রতিরোধ্যগতিতে।

এমনিভাবে কেটে গেল টানা একমাস। এসে গেল দুর্গাপুজা। এই একমাসের টানা প্রাণায়ামে নিজেকে অনেক সুস্থ অনুভব হচ্ছিলো। খাওয়া দাওয়া একেবারে পেট পচা রোগীর পথ্য যেমন হয় তেমন। আমাদের বাড়িতে তখন পুজোর সময় জয়েন্টলি খাওয়া হ'তো পুজোর একেবারে ষষ্টি থেকে শুরু ক'রে একাদসী পর্যন্ত। রান্নার লোক থাকতো। সকাল থেকে একেবারে সারাদিনের রান্না করার দায়িত্ব থাকতো তার উপর। এই ছয় দিনই সকালে গরম গরম লুচি কখনো বা কচুরি আর আলুরদম, আলু কুমরোর তরকারি, কিম্বা ছোলার ডাল পরিবেশন হ'তো। এই প্রথম আমি এগুলি থেকে বঞ্চিত হবো। এইভেবে মনটা খুব খারাপ হ'য়ে থাকতো। যত পুজোর দিন এগিয়ে আসতে লাগলো তত মনটা বিষন্ন হ'তে লাগলো। পুজোর মজা আর আমার নেই। কিন্তু শরীরটা বেশ চাঙা হ'য়ে উঠেছে দিনের পর দিন। এই একমাস ধ'রে পেটের কোনও গোলমাল নেই, নেই বিন্দুমাত্র বদহজম, অম্বল, কোনও পেট ব্যাথা। পায়খানা পরিস্কার। মনটা চনমনে হ'য়ে উঠতে লাগলো ক্রমশঃ। পুজো যত এগিয়ে আসছে তত জোর কদমে চলতে লাগলো প্রাণায়াম। তার থেকেও তীব্রগতিতে ২৪ঘন্টা চলতে লাগলো নাম প্রাণায়াম আর ধ্যান। যেন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। মরণপণ সংগ্রাম চলছে নিজের সঙ্গে নিজের। আজ্ঞাচক্রে ঠাকুরকে স্মরণ ক'রে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলছি সকাল থেকে রাত। ঠাকুরের কাছে বসে কাঁদতাম আর বলতাম ঠাকুর আমায় সুস্থ ক'রে দাও। এইভাবে দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। পঞ্চমীর ষষ্টি থেকে একাদশী পর্যন্ত ছয়দিনের জিনিসপত্র এসে গেল। পরেরদিন ষষ্টি। ষষ্টির সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু হ'য়ে গেল রান্নাবান্নার। একটা ছুটির আমেজ অনুভব করতে লাগলাম সকাল থেকে। জয়েন্ট ফ্যামিলি। বাড়িতে একটা কোলাহল চলছে। ভালোই লাগছে। ফুরফুরে সকাল। সকালের ইষ্টভৃতি, প্রার্থনা, প্রাণায়াম সেরে স্নান ক'রে টিভি চালিয়ে বিছানায় বসে খবরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের পুজো আয়োজনের খবর শুনছি। নাকে ভেসে আসছে ডালডা দিয়ে ভাজা লুচির গন্ধ। বুঝলাম সকালের নাস্তা তৈরী শুরু গেছে। এইসময় বৌ এসে জিজ্ঞেস করলো আমি কি খাবো। আমি ভাবলাম কি আর খাবো। লুচি তো আমার পেটে সহ্য হবে না। তাই বললাম, প্রতিদিন যা আমার জন্য বরাদ্দ তাই দাও। মুড়ি আর চা দাও। এইকথা বলে আমি ঘরের বাইরে বাগানে এসে দাঁড়ালাম। সকালের আবহাওয়া বেশ মনোরম। বাগানে চারপাশে প্রচুর গাছপালা। পেপে, কলা, কাঁঠাল, বাতাবি লেবু, গন্ধরাজ লেবু, পেয়ারা, বেল, নারকেল, আম ইত্যাদি গাছ এবং জবা, গন্ধরাজ, শিউলি, নীলকণ্ঠ, কাঠমালতী, টগর ইত্যাদি নানা ফুলের গাছগাছালিতে ভরা বাগান। খুব বিরাট যে বাগান তা নয়। কিন্তু বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গা জুড়ে নানা ফুলফলের গাছ যেন একটা স্বগীয় পরিবেশ রচনা ক'রে রেখেছে। একটা চেয়ার নিয়ে বসে একাকী চুপচাপ চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম ঠাকুরের কথা। চোখ ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে পড়লো পেপে গাছের দিকে। দেখলাম গোল গোল পেপেতে ভরে আছে গাছ। চেয়ে রইলাম গাছের দিকে। কি অপূর্ব নিখুঁত গোল ফুটবলের মতো এক একটা পেপে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনের মধ্যে কে যেন বলে উঠলো পেপের তরকারির মতো পেপে দিয়ে লুচি তৈরি ক'রে খেলে কেমন হয়? জানি না এটাকে সাড়া পাওয়া বলে কিনা। মনের মধ্যে কথাটা জেগে উঠতেই মনে হ'লো স্বস্ত্যয়নীর তৃতীয় নীতির কথা। আমি তন্ময় হ'য়ে ছড়াটা ভাবছিলাম। শ্রীশ্রীঠাকুর স্বস্ত্যয়নীর তৃতীয় নীতি সম্পর্কে ছড়া আকারে বললেন,
"যে-কাজে যা' ভাল ব'লে
আসবে মনে তৎক্ষণাৎ
হাতে-কলমে করবি রে তা'
রোধ ক'রে তা'র সব ব্যাঘাত।"

ইতিমধ্যে বৌ মুড়ি আর চা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। 'এই নাও চা' কথাটায় সম্বিৎ ফিরে এলো, মুখ ঘুরিয়ে আমি চায়ের কাপ্ হাতে নিয়ে বললাম, লুচি ভাজা হ'য়ে গেছে? বউ বললো, না, এখনো ভাজা হচ্ছে। বাচ্চাদের আগে দেওয়া হচ্ছে তারপরে বড়দের দেওয়া হবে। তারপরে বউ উৎসুক হ'য়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি লুচি খাবে? আমি বললাম, আমার পেটে সহ্য হবে? বউ বললো, তোমার তো এখন পেটের কন্ডিশান আগের থেকে অনেক ভালো, পেটে কোনও ব্যাথা নেই, নেই কোনও অম্বল, গ্যাস, বদহজম। পায়খানাও ভালো হচ্ছে, তা বেশী না। একটা লুচি খেয়ে দেখবে নাকি? আমি বুঝতে পারলাম আমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরেই আমাকে এই কথা বলছে। আমি তখন পেপের বিষয়ে সাড়া পাওয়ার কথা বৌকে বললাম।বললাম, পেপে দিয়ে লুচি ক'রে দেবে? বউ কথাটা শুনে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি গাছের দিকে দেখিয়ে বললাম, দেখো কি সুন্দর গোল গোল পেপে হয়েছে গাছে। তা পেপের তরকারীর মতো পেপে দিয়ে লুচি করা যায় না? বউ বললো, তোমাকে এই পেপে দিয়ে লুচির কথা কে বললো? আমি বললাম, কেউ না। আমি বসে বসে মনে মনে ভাবছিলাম নানা কথা। বাইরে সুন্দর বাতাস। ঘরের ভিতর থেকে ভেসে আসছে ডালডা দিয়ে ভাজা লুচির প্রাণমাতানো গন্ধ। মনে মনে ঠাকুরকে বলছিলাম পেট ভালো ক'রে দেওয়ার কথা। গাছের দিকে তাকাতে তাকাতে পেপে গাছের দিকে গিয়ে নজর আটকে গেল, গোল গোল পেপের দিকে তাকিয়েছিলাম অনেকক্ষণ আর তখনি কে যেন ব'লে উঠলো, পেপের লুচি খা। আমি স্পষ্ট যেন শুনতে পেলাম কথাটা। আর তখনি তুমি এসে বললে চায়ের কথা। তাই তোমাকে বললাম। বউ আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ ভাবলো তারপরে দেওয়ালের কোনায় রাখা বাঁশের লগাটা হাতে পেঁপে গাছের নীচে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর লগার খোঁচা দিয়ে একটা বড় দেখে পেঁপে পেড়ে সেটা হাতে নিয়ে চুপচাপ চলে গেল। আমি বললাম, কি গো পেঁপে পাড়লে? বউ বললো, দেখি কি করা যায়। আর দুপুরে তোমার খাবার জন্য পেঁপের তরকারী করবো। এইকথা ব'লে বউ চলে গেল। আমি চুপচাপ বসে প্রকৃতির শোভা দেখছি।

অনেকক্ষণ কেটে গেছে। বাড়ির ভেতরে বেশ জমে উঠেছে পুজোর ছুটির পরিবেশ। ডালডা ভাজা গরম গরম লুচির মজা নিচ্ছে সবাই। মনে হচ্ছে, চারপাশে আকাশে বাতাসে সত্যিই যেন আনন্দধারা বইছে। বাড়ির সামনে রাস্তা দিয়ে যারাই যাচ্ছে তাদেরই চোখেমুখে যেন একটা অনাবিল আনন্দের রেশ ফুটে উঠছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তা। ইতিমধ্যে স্থানীয় ক্লাবের কয়েকজন সদস্য ক্লাবের দুর্গা পুজো সংক্রান্ত কিছু কাজের জন্য দেখা ক'রে গেল বড়দার সঙ্গে। আমার বড়দা ক্লাবের ও পুজোরও ক্যাসিয়ার। পাড়ায় বিভিন্ন সংগঠন যেমন নাগরিক সমিতি, বাড়ির সামনে মহাপ্রভুর মন্দির, নাম সংকীর্তন সমিতি ইত্যাদির প্রতিটি সংগঠনের অনুষ্ঠানের অবিসংবাদিত ক্যাসিয়ার। হিসাব পেশের সময় দেখতাম এক বান্ডিল বিড়ির ও একটা দেশলাই বাক্সের হিসাব দিতে দেখে সবাই হো হো ক'রে হেসে উঠেছিল। আজ লিখতে বসে মনে পড়ে যাচ্ছে কত কথা। চোখ ঝাপসা হ'য়ে আসছে। এই লেখা যখন লিখছি তখন ঘরে কেউ নেই। স্মৃতি বেদনায় বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠছে। তাই তাড়াতাড়ি ফিরে গেলাম মূল ঘটনায়।

এইভাবে কেটে গেল অনেক্ষণ। হঠাৎ বউ-এর গলা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই চোখ ছানাবড়া হ'য়ে গেল! হাঁ ক'রে তাকিয়ে আছি বঊ-এর হাতের দিকে। দেখলাম প্লেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে বউ। প্লেটের উপর বড় বড় দু'টো গরম গরম ফুলকো লুচি আর পাশে মাখা তরকারি। আমি অবাক হ'য়ে তাকিয়ে আছি বউ-এর দিকে। একবার তার মুখের দিকে তাকাচ্ছি পর মুহূর্তে হাতের দিকে। আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না নিজের চোখে যা দেখছি তা। আমি কি যা দেখছি তা সত্যি সত্যিই দেখছি!? বিস্ময়ে মনে মনে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলাম। বউ বললো, এই নাও দু'টো লুচি খেয়ে নাও। আমি অবাক হ'য়ে বললাম, আমি লুচি খাবো? বউ দৃঢ় স্বরে বললো, খেয়ে নাও। কিছু হবে না। ঠাকুর আছে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, যদি খাওয়ার পর কষ্ট হয়? ডালডা দিয়ে ভাজা লুচি আমার সহ্য হবে? আবার যদি পেট ব্যাথা শুরু হয়? বহু বছর খাইনি লুচি, কচুরি, চপ, সিঙ্গারা, ঘুগনি, ভাজাভুজি ইত্যাদি। এখন যদি আবার পেটের গন্ডগোল শুরু হয়? বউ বললো, দু'টোর বেশী খেও না। সেরকম যদি মনে হয় দুপুরে কিছু খেও না।

যাই হ'ক, আমি তখনো জানি না এ কিসের লুচি। তরকারির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটা স্বাভাবিক সবার জন্য যে তরকারি হয়েছে সেই তরকারি। পেঁপের চিহ্নমাত্র নেই। ভাবলাম এক তো আটা বা ময়দার লুচি, সঙ্গে ডালডা দিয়ে ভাজা তার উপর আলু দিয়ে তৈরি মাখা তরকারি। কি জানি কি হবে। একদিকে ভয় অন্যদিকে প্রচন্ড লোভ হচ্ছে। বহুদিন পর লুচি সামনে দেখে জিভে জল এসে গেল। বহু চেষ্টা ক'রেও আটকাতে পারলাম না জিভের জল। মুখটা ভরে উঠেছে সেই জলে। প্লেটটা হাতে নিয়ে মনে মনে ঠাকুরকে বললাম, হে দয়াল! খাবো লুচি? যদি আবার পেট ব্যাথা হয়? বউ-এর দিকে তাকাতে বউ আবার বললো, খেয়ে নাও। কিচ্ছু হবে না। ঠাকুর আছে। কথাটা বলেই চলে গেল। আর আমিও কালবিলম্ব না ক'রে একটা লুচি হাতে নিয়ে ছিঁড়ে একটু তরকারি দিয়ে মুখে দিলাম। আঃ! কি অপূর্ব টেস্ট! তাড়িয়ে তাড়িয়ে লুচি দু'টো তরকারি দিয়ে চেটেপুটে একটু একটু ক'রে পুরোটা খেয়ে নিলাম। তারপর হাত ধুয়ে ঘরে এসে বসলাম। ঘড়িতে সময় এগিয়ে চলেছে আর ভাবছি এইবুঝি পেটে ব্যাথা শুরু হ'লো, এইবুঝি বদহজম, অম্বল, গ্যাস শুরু হ'য়ে গেল। কিন্তু কিছুই হ'লো না। সময় এগিয়ে চললো। মাঝে কয়েকবার বউ এসে দেখে গেল লুচি খাওয়ার পর আমার প্রতিক্রিয়া কি। জিজ্ঞেস করলো, আমার কোনও কষ্ট হচ্ছে কিনা। আমি আমার ভালো থাকার কথা জানালাম। এমনিভাবে সকাল কেটে গেল। দুপুরের খাবার সময় এসে গেল। আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি কিছু খাবোও কিনা। আমি বললাম, আমার পেট একদম ঠিক আছে। কোনও রকম অসুবিধা হচ্ছে না। পেট একদম হালকা। খিদেও আছে পেটে। এইকথা শুনে বউ দুপুরের খাবার নিয়ে এলো অল্প ক'রে ডাল ভাত আর আলুসেদ্ধ। আমি তাই খেয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করার পর শুয়ে পড়লাম।

এমনি ক'রে সময় এগিয়ে গেল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হ'লো। সন্ধ্যাবেলায় দেখলাম পেট একদম স্বাভাবিক। সামান্য চা বিস্কুট খেয়ে বসে গেলাম প্রাণায়ামে। সন্ধ্যে ৬টা থেকে ৮টা দুঘন্টা টানা প্রাণায়াম করলাম। শরীর একেবারে ঝরঝরে ফুলের মতো হালকা বোধ হ'লো।

এমনিভাবে সময় গড়িয়ে চললো আর নিশ্চিন্তে রাত কেটে এলো পরের দিন। পরের দিন সকালে ভয়ে ভয়ে পায়খানায় গেলাম। পরিস্কার স্বাস্থ্যকর পায়খানা হওয়ায় শরীরটা একেবারে তরতাজা সুস্থ মনে হ'লো। লুচি খাওয়ার কোনও রকম উল্টো প্রতিক্রিয়া হ'লো না। স্নান ক'রে পুজো পাঠ সেরে এসে বসলাম কিছু লেখালেখির কাজ করতে। যথারীতি টিফিন এলো। দেখলাম প্লেটে দু'টো লুচি আর তরকারি আর গরম চা। আজ আর মুড়ি এলো না। গরম গরম লুচি তরকারি দিয়ে খেয়ে ফেললাম ফটাফট। দু'টো লুচি খেয়ে মনটা ভরলো না। সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো বউ আমার লুচি খাওয়া। তারপর প্লেটটা নেওয়ার সময় বললাম, আর একটা হবে না?
ক্রমশঃ
( লেখা ৯ই এপ্রিল ২০২৩)

বিচিত্রা ১১৯

জীবন নষ্টের জন্য কে দায়ী? 
মা? বাবা?জ্যোতিষী? 
আপনি নিজে নাকি ঈশ্বর? 
আর কোনটার শিকার হওয়া ভালো?
সু না কুসংস্কার?
( লেখা ৯ই এপ্রিল' ২০১৯)

অন্যের কটু কথায়, সমালোচনায় নড়ে যাই; 
কেন? মন এককেন্দ্রিক নয়, কপট ভক্তি তাই।

ইষ্টসেবা বা ইষ্টকাজে যদি সত্যিই 
থাকো তুমি ব্যস্ত, তবে বন্ধু আমার
তার প্রমাণ দিতে হবে কেন? 
কপট ভক্তি আর লোকদেখানো সেবা 
প্রমাণ দিতে চায় এ কথা জেনো।

সৎসঙ্গী করে ইষ্টসেবা আর 
রাজনৈতিক বা সমাজকর্মী করে মানবসেবা। 
মানবসেবায় আছে সূক্ষ্ম অহংকার 
আর ইষ্টসেবায় আছে বৈরাগ্য।
এ কথা ভেবেছে কবে কেই বা!!

ইষ্টসেবায় যদি বৈরাগ্য থাকে 
তবে মন থাকে নিয়ন্ত্রণে,
কারও সমালোচনায় মন চঞ্চল হয় না। 
ইষ্টসেবা নীরবে প্রচার বিহীন করতে হয়,
যা করতে হয় তা' থাকুক মনের কোনে।

'সৎসঙ্গ'-এর বিরুদ্ধে দীক্ষিত-অদীক্ষিতদের 
যাবতীয় বালখিল্য কথা আর বিরোধীতা 
তিন নম্বর ছাগল ছানার মায়ের বাঁটের 
দু'পাশে লম্ফঝম্প করা সমার্থক কথা।

ইষ্টসেবা নেই কিন্তু মানবসেবা আছে 
এ কথার অর্থ,
আস্তিনের তলায় খঞ্জর লুকানো আছে।

ধর্ম্ম মানে অথচ ধর্ম্ম মূর্ত হয়েছে যে আদর্শে 
সেই আদর্শকে মানে না, স্বীকার করে না, 
এ কথার অর্থ,
সে ধর্ম্ম মানে না, ধর্ম্মের অর্থও জানে না, সে কপট।
( লেখা ৯ই এপ্রিল' ২০২৪)















Monday, April 7, 2025

প্রবন্ধঃ আচ্ছা এমন কেন হয়না?

দেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি যে দলেরই হ'ন তিনি যখন দেশের জন্য, দেশের স্বার্থে, দেশের কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান, দেশের দুঃসময়ে বিশ্বের কাছে একজোট থাকার নিদর্শন স্বরূপ কোন উদাহরণ স্থাপনের প্রচেষ্টা চালান, আবেদন করেন তখন সেই আবেদন বা আহ্বান আমরা কি রাজ্যে রাজ্যে যে দল যেখানে ক্ষমতাসীন, যে দল বা দলের মুখ্যমন্ত্রী যে রাজ্যের প্রধান থাকুক না কেন একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সাথে মিলিতভাবে সবার আহ্বানে পরিণত করতে পারি না!? এমন সুরাজ কবে দেখতে পাবো আমরা যেদিন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একসঙ্গে দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছে!? এই যে দেশের ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দের পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার ছবি এই সহযোগিতার ছবি ছড়িয়ে পড়ে দেশবাসীর মধ্যে। তখন প্রত্যেকেই আমরা অনুভব করার শিক্ষা লাভ করতে পারি একে আমরা অপরের সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া বাঁচতে পারি না, পারি না বাড়তে! আজ আমরা সমাজের সর্বস্তরে এক নিদারুণ নির্ম্মম অসহযোগিতার ছবি দেখতে পায়! এই অসহযোগিতার মনোভাব নিষ্ঠুরভাবে ঢুকে গেছে ঘরে ঘরে অন্দরমহলে! আজ দেশে যখনই দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী সেই স্বাধীনতার সময় থেকেই কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সে যতই যুক্তিযুক্ত হ'ক না কেন রাজ্যগুলি কোনও না কোনোভাবে তার বিরোধিতা করেছে, করেছে অসহযোগিতা! আর দেশের নেতৃবৃন্দের নেওয়া সেই অসহযোগিতার হিংস্র মনোভাব দেশ কাল পাত্রভেদে ছড়িয়ে পড়েছে ক্রমেক্রমে আম জনতার মধ্যে, ছড়িয়ে পড়ছে বংশপরম্পরায় কালে কালে যুগে যুগে দেশে-বিদেশে! এর জন্য ফল ভোগ করছে যেমন আম আদমী ঠিক তেমনি আরও প্রকট হ'য়ে তা ফিরে যাচ্ছে দেশের নেতৃবৃন্দের দিকে! দেশনেতাদের তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আরও কঠিন! যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ সেই কাজে বাধা হ'য়ে দাঁড়াচ্ছে দলের ভিতরে ও বাইরের অসহযোগিতা! আমরা এই অসহযোগিতার মনোভাব দেখেছি রাজ্যে, দেশে ও সমাজের সর্বস্তরে! যার পরিণতিতে আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে, প্রতিটি সংসারে অবস্থিত প্রতিটি জীবনের আকাশ এই অসহযোগিতার বিষ বাষ্প ঢেকে ফেলেছে! ভয়ঙ্কর এক দম বন্ধ করা পরিবেশে বেঁচে আছে মানুষ! আজ যেমন লক ডাউনের কারণে মানুষ বন্দি হ'য়ে আছে ঘরে ঘরে ঠিক তেমনি বন্দি হ'য়ে আছে আজ মানুষ অসহযোগিতার অদৃশ্য এক মরণ কারাগারে! কবে মুক্তি পাবে মানুষ এই কারাগার থেকে!? পাবে না! কারণ সেই মুক্তির চেতনা জাগাতে পারে এমন নেতৃত্ব নেই বর্তমান ভারতে! থাকলেও সে অসহায়, বন্দী নিজের ধ্যান ধারণার কাছে, আদর্শহীনতার কাছে, অজ্ঞানতা ও অসততার কাছে, কপটতার কাছে। বন্দি দলের মানুষদের কাছে, নীতির কাছে। জনসাধারণের মানসিকতার কাছে! এর উদাহরন নতুনভাবে নতুন বোতলে পুরোনো মদের মতো পুরোনো ভাইরাস আরও শক্তিশালী হ'য়ে নতুন রূপে করোনার উত্থান!


করোনা আমাদের আর একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমরা কতটা অসহায় আমাদের অসহযোগিতার মনোভাবের কাছে! দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন করোনা থেকে দেশবাসীকে বাঁচাতে আর সেই সিদ্ধান্ত দেশবাসীর কাছে খিল্লি হ'য়ে ফিরে আসছে, উপেক্ষার বিষয় হ'য়ে উঠছে! নিজের দলের কাছেই অসহযোগিতার উদাহরণ হ'য়ে উঠছে দলীয় কার্যক্রম! সবাই যে যার মত পক্ষে বিপক্ষে জান্তে-অজান্তে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলদাস হ'য়ে অসহযোগিতার বলিষ্ঠ মুষ্টিবদ্ধ হাত উর্দ্ধে তুলে হুঙ্কার দিচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধে! কেউ কেউ খিল্লি করতে, উপহাস করতে, নিচা দেখাতে কিংবা অতি উৎসাহে পথে নেবে পড়ছে আবেদন বা আহ্বানকে ব্যর্থ করতে বা সফল করতে! কোথায় যাবে আজ মানুষ!? কার কাছে যাবে আজ মানুষ!? সহযোগিতা আজ নিরুদ্দেশ! নিরুদ্দেশ হ'য়ে গেছে সহযোগিতা সেইদিন যেদিন দেশকে স্বাধীন করার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল! আর সেদিন সেই সময় থেকে অসহযোগিতা বোন ম্যারোর মধ্যে ঢুকে পড়েছে, ঢুকে পড়েছে বংশপরম্পরায় জৈবি সংস্থিতিতে! আর আজ তার বিষময় ফল ভোগ করছে অবিভক্ত ভারতবর্ষের তিন টুকরো হওয়া দেশের প্রায় ১৬০-১৭০কোটি জনগণ! কে বা কারা দায়ী!? কার দোষ!?

কে বা কারা দায়ী আর কার দোষ এই আলোচনায় কাকে ছেড়ে কাকে ধরবো বলতে গেলে ঠগ বাঁচতে গাঁ উজাড় হ'য়ে যাবার মত অবস্থা হ'য়ে যাবে। শুধু এটুকু বলতে পারি পরিবারে সদ্য জন্ম হওয়া সন্তানটির জন্মবিজ্ঞানে কোনও ত্রুটি আছে কিনা সে বিষয়ে আলাদা ক'রে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক গভীর তথ্য ও তত্ত্বপূর্ণ আলোচনা করা যেতে পারে প্রকৃত সমস্যা ও ত্রুটিমুক্ত ভবিষ্যৎ শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার জন্যে কিন্তু বর্তমান জটিল সময়ে পরিবারের গার্জিয়ানের উপর নির্ভর করছে জন্মে যাওয়া শিশু কোন পরিবেশে বড় হবে, কোন শিক্ষাব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে কোমর শক্ত ক'রে উঠে দাঁড়াবে! ঠিক তেমনি, দেশের সমস্ত দলের সমস্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশের ও সমস্ত রাজ্যের প্রধানদের আজ সময় এসেছে যদিও অনেক অনেক দেরী হ'য়ে গেছে, তবুও একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হ'লেও ভালো এই প্রবাদের উপর দাঁড়াবার! সময় ডাক দিয়ে বলছে, অনেক ভুলের উপর দাঁড়িয়ে দেশ ব্রিটিশদের শাসন মুক্ত হয়েছে অর্থাৎ দেশ দ্বিখন্ডিত হ'য়ে স্বাধীন হয়েছে! সেই পূর্বসূরীদের ক্ষমতার ভয়ঙ্কর লোভ ও মোহের ফলে দেশভাগের মত মারাত্মক ক্ষমাহীন ভুল আজ পর্যন্ত কোনও দল, কোনও নেতা স্বীকার ক'রে পুনরায় মিলনের কোনও উদ্যোগ নেয়নি! দুই জার্মানির মিলনের মত সেই পবিত্র মহাউদ্যোগ জানি না কবে গৃহীত হবে, আদৌ আর কোনোদিন হবে কিনা! তবে এখনই পরিবারের প্রধানের মত দলের, রাজ্যের, দেশের প্রধান তোমরা তোমাদের নিজ নিজ দেশের প্রতি প্রকৃত গৃহকর্তার কর্তব্য পালন করো! হে দেশের নেতৃবৃন্দ! পালন করো তোমাদের প্রতিশ্রুতি, তোমাদের শপথ! সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দাও পরস্পর পরস্পরের প্রতি! পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও! শ্রদ্ধা আজ ক্ষতবিক্ষত! শ্রদ্ধার মাথায় পরাও শিরস্ত্রাণ! ভালোবাসার করো চাষ! নতুবা ভয়ঙ্কর এক অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার সংক্রামক ব্যাধি অতি চুপিসারে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলেছে সমগ্র সমাজকে, ঢুকে পড়েছে ঘরে ঘরে একেবারে অন্দরমহলে! দেশ, সমাজ, মানুষকে ভালোবেসে দেশনেতারা একটু নিরপেক্ষতার উপর দাঁড়ালে শ্রদ্ধা, ভালোবাসাকে হাতিয়ার করে তাহ'লে অমৃত ছড়াতে পারে মানুষের প্রাণে, মানুষের হৃদয়ে। এই অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতা আক্রমণ করছে জৈবি সংস্থিতিতে যা চিরকালীন এক মহামারীতে পরিণত হবে অদূর ভবিষ্যতে! যার কাছে আজকের করোনা, অতীতের প্লেগ, কলেরা, স্প্যানিশ ফ্লু-এর মত মহামারী তুচ্ছ! অতি তুচ্ছ!! এখনও যদি দেশের নেতারা অনুভব করতে না পারে এর ভয়াবহ পরিণতির কথা তাহ'লে ধরে নিতে হবে নিশ্চিত ধ্বংস অনিবার্য! আর তা শুধু সময়ের অপেক্ষা! শুধু সেদিনের পৃথিবীতে যারা থাকবে----- হয়তো আমিও থাকবো-----তাদের সেদিনের চরম যন্ত্রণাদায়ক অসহায় অবস্থার কথা ভেবে নিজেকে বড় একা নিঃসঙ্গ অসহায় লাগে!

এই অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতা সম্পর্কে সত্যদ্রষ্টা পরমপুরুষ যুগপুরুষোত্তম জীবন্ত নররূপী রক্তমাংসের ঈশ্বর পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আজ থেকে বহু বছর আগে অশ্রদ্ধার করুণ ভয়াবহ ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখে শ্রদ্ধাকে বাঁচাবার জন্য বলেছিলেন,
'শ্রদ্ধার মাথায় শিরস্ত্রাণ দাও! শ্রদ্ধাকে ক্ষতবিক্ষত ও ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে তোমরা রক্ষা করো।'

আর অসহযোগ আন্দোলনের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকে বলেছিলেন,

'ব্রিটিশ চলে গেলেও এই অসহযোগ কিন্তু রাজপথ থেকে একেবারে রান্নাঘরে পৌঁছে যাবিনি!'

ক্ষমতা দখলের লোভে, দেশের প্রধান হওয়ার লোভে সাধারণ মানুষকে ধর্ম্মের ভিত্তিতে ভাগ ক'রে দিয়ে সেদিন যারা অশ্রদ্ধা আর অসহযোগিতার উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার নামে তামাশা ভিক্ষা নিয়েছিলেন ব্রিটিশদের হাত থেকে আজ তাঁদের পুঁতে যাওয়া অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার বিষবৃক্ষ ডালপালা ছাড়িয়ে বি-শা-ল মহীরুহে পরিণত হয়েছে তিন টুকরো হওয়া ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ মাটিতে! যার শাখায় শাখায় বসে আছে শকুনের দল মানুষের ভাগারে মরা মানুষ পড়লেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাংস খাবে বলে!

আজ ভয়ঙ্কর করোনা ছোবলে যখন নীল হ'য়ে যাচ্ছে গোটা দেশ তথা পৃথিবী ঠিক সেই সময়েও অশ্রদ্ধা আর অসহযোগিতার পাশা খেলে যাচ্ছে রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ!

সত্য নেতৃবৃন্দ! কি বিচিত্র এই নেতৃত্বের ভয়াবহ নেশা!
( লেখা ৭ই এপ্রিল' ২০২০)

উপলব্ধিঃ দিগন্তে উঠেছে ঐ ঝড়!

প্রকাশ, দিগন্তে উঠেছে ঐ ঝড়! কোথা আমি, কোথা তুমি! কে আছো আপনপর?
প্রকাশ! নৌকো যে টলোমলো! ব্যষ্টি জীবন, সমষ্টি জীবনের উত্তাল সমুদ্রে ব্যক্তি আমি থেকে সমষ্টি আমি নৌকো যে ভয়ংকর ভাবে দুলছে! হাল ধরার কেউ নেই! পারে দাঁড়িয়ে, নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে সবাই সাঁতার কাঁটার পদ্ধতি শেখাচ্ছে! চারিদিকে সবাই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে ভোকাল হয়ে উঠেছে! সমস্যার পর সমস্যা তুলে ধরছে! নিজে চালুনি হয়ে সূচের ফুটো খুঁজে বেড়াচ্ছে!

প্রকাশ, সমস্যা বহু এ-কথা সত্যি কিন্তু সমাধান কউ(কোথায়)? সুযোগ সন্ধানীরা বলছে, ‘দে মা লন্ডভন্ড করে লুটেপুটে খায়’!! কায়েমি স্বার্থ বলছে, ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার’! ফেলো কড়ি মাখো তেলের মত ফেলো তুলি, মারো গরম বুলি, বাংলা, বাঙ্গালী চুলোয় যাক; এসো সবাই, যে আছো যেথায়, একতায় বিচ্ছেদের পতাকা তুলি!’

প্রকাশ, বড়লোক চিরকাল বড়লোক আর গরীব চিরকাল গরীব, বোকা চিরকাল বোকা আর চালাক চিরকাল চালাক! এটা আর কিছু নয়! এ শুধু হাঁদা আর ভোঁদাদের লড়াই! হাঁদাকে মারে ভোঁদা চিরকাল, চিরদিন। আর প্রকাশ, ভোঁদাকে মারে কিন্তু খোদা! এ কথাটা কিন্তু মনে রেখো।

প্রকাশ, সৎসঙ্গের প্রধান আচার্য্যদেব শ্রী শ্রী বড়দার কথাটা মনে আছে তো? একটা ফুটোও ফুটো, দশটা ফুটোও ফুটো। জল কিন্তু বেরিয়ে যাবে। দশটা ফুটো দিয়ে তাড়াতাড়ি আর একটা ফুটো দিয়ে দেরিতে বেরোবে। কিন্তু বেরিয়ে যাবে। এই যা! একদিন আগে আর পরে! বেরোবেই!! তাই সাধু সাবধান!!!

প্রকাশ, মনের আয়নায় দাঁড়িয়ে একবার নিজেকে আপাদমস্তক দেখে নাও আর কান পেতে একবার শুনে নাও, বিবেক তোমায় কি বলছে। জীবনের সফরটা বড় অল্প দিনের! সবটাই ‘dam care and don’t bother’ বলে উড়িয়ে দিও না। Minimum একটা মুল্যবোধের মুল্য দিও। তোমার কছে তোমার দেশ, তোমার সমাজ, তোমার পরিবার, তোমার জীবন minimum values আশা করে।

প্রকাশ, মনে রেখো The greatest phenomenon of the world present living Supreme Being Sri Sri Thakur Anukulchandra-এর সাবধান বাণী, “ তুমি যদি সৎ হও, তোমার দেখা-দেখি হাজার-হাজার লোক সৎ হ’য়ে পড়বে। আর, যদি অসৎ হও, তোমার দুর্দ্দশার জন্য সমবেদনা প্রকাশের কেউ থাকবে না; কারণ, তুমি অসৎ হ’য়ে তোমার চারিদিকই অসৎ ক’রে ফেলেছ। তুমি ঠিক-ঠিক জেনো যে, তুমি তোমার, তোমার নিজ পরিবারের, দশের এবং দেশের বর্ত্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য দায়ী”।
( লেখা ৭ই এপ্রিল'২০১৭)


Saturday, April 5, 2025

বিচিত্রা ১১৮

শিষ্টেরা গড়ে দুষ্টেরা ভাঙে;
শিষ্টেরা করে ভালো আর দুষ্টেরা ভোগ করে।
হে প্রভু! তুমি ছাড়া কি উপায়!!
(লেখা ৫ই এপ্রিল' ২০১৮)

আমি কি প্রকৃতির আর তুমি কি প্রকৃতির
সেটা আমারটা আমি জানি
আর তোমারটা জানো তুমি;
কিন্তু উভয়েরটা জানেন ঈশ্বর।
তাই শেষ বিচার ঈশ্বরেরই হাতে।

নিজেকে বুদ্ধিমান মানুষ ভাবা সবচেয়ে বড় মূর্খামি।
আর আমি চালাক বাকিরা সব নালায়েক
এই ভাবনা হারামি।।
( লেখা ৫ই এপ্রিল' ২০২১)

অনুভূতিহীন মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো
আর মৃতদেহের সঙ্গে থাকা একই।

Spending time with unfeeling people is the same
as being with dead bodies.
( লেখা ৫ই এপ্রিল' ২০২৪)






































Tuesday, April 1, 2025

প্রবন্ধঃ বাংলদেশ ও আমি (৩য় পর্ব)

২০২৪এর জুলাই মাসের এই পট পরিবর্তন সমস্তটাই রচনা হয়েছিল ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনকে সামনে রেখে বৈদেশিক শক্তির নিয়ন্ত্রণে, অঙ্গুলী হেলনে। তাই একাত্তর আর চব্বিশ সমান নয়। ১৯৭১ এর মুক্তির লড়াই, স্বাধীনতার লড়াই ছিল স্বতস্ফুর্ত লড়াই, ইজ্জতের লড়াই, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার লড়াই, মা-বোনেদের ইজ্জৎ রক্ষার লড়াই, মা-বোনেদের ইজ্জৎ লুন্ঠনের, ৩০লক্ষ বাঙালী হত্যার প্রতিশোধের লড়াই।

আর ২০২৪ এর জুলাই মাসের ছাত্র নাগরিক আন্দোলন, অভ্যুত্থান ছিল বিদেশী শক্তির রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত ছদ্ম ছাত্র নাগরিক আন্দোলন, অভ্যুত্থান।

বৈদেশিক শক্তির সাহায্যের কথা বললাম এইজন্যে যে, যখন দেশের সেনাবাহিনী এই জুলাই আন্দোলনে চুপ থেকে একই সঙ্গে দু'দিকে ব্যালান্স রক্ষা ক'রে চলে তখন বোঝা যায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ছিল ভয়ংকর চাপে। সেনাবাহিনী একই সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিরাপদে দেশের বাইরে চলে যেতে সাহায্য করে এবং একই সঙ্গে হঠাৎ উড়ে এসে দেশের প্রধান চেয়ারটাতে জুড়ে বসতে মহম্মদ ইউনুসকে সাহায্য ও সমর্থন করে। কিন্তু আশ্চর্য, সেনা অভ্যুত্থান হয় না! কেন হয়নি? কার চাপে?

মহম্মদ ইউনুসের হঠাৎ দেশের প্রধান চেয়ারে এসে বসা সাময়িকভাবে উপরসা আশ্চর্য্যের ব্যাপার ছিল। কিন্তু সমস্তটাই ছিল পূর্বপরিকল্পিত। হাসিনার দেশত্যাগের পর ছাত্র নেতারা যখন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করছিলেন তখন ছাত্র নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সেই মিটিং-এ উপদেষ্টা প্রধান হিসেবে প্রস্তাব আসে দেশের বাইরে অবস্থানরত মহম্মদ ইউনুসের নাম। কেন তাঁর নাম হঠাৎ উঠে এলো? এই ছাত্র আন্দোলনে বা ছাত্র নাগরিক যৌথ আন্দোলনে মহম্মদ ইউনুসের কি ভূমিকা ছিল? তিনি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে দেশের অভ্যন্তরে ছিলেন? যারা যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে থেকে কেন কারও নাম, কোনও নাম বিবেচ্য ও গ্রহণযোগ্য হ'লো না? কি কারণ? ১৮কোটি নাগরিকের বাংলাদেশে অবস্থানরত, আন্দোলনরত, বা আন্দোলন সমর্থনরত নেতা কর্মীদের মধ্যে দেশ চালানোর মতো কোনও যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক বা রাজনীতিবিদ ছিলেন না? কেন একজনেরও নাম গ্রহণযোগ্য হ'য়ে ওঠেনি? যারা লড়াই, আন্দোলন করলো ভয়ংকর বিপদকে মাথায় নিয়ে তারা কেন কেউ বিবেচ্য হ'লো না? কার বা কাদের অঙ্গুলী হেলনে দেশের বাইরে অবস্থানরত, লড়াই অভ্যুত্থানের ময়দান বাংলাদেশ থেকে 12,840 km দূরে অবস্থিত আমেরিকায় শান্তির নোবেল হাতে শান্তিতে অবস্থানরত একজনই ছিলেন বিবেচ্য ও উপযুক্ত? যিনি ৭১ এর ভয়াবহ যুদ্ধের সময়ও দেশে ছিলেন না, দেশের বাইরে আমেরিকায় ছিলেন, ঠিক তেমনি চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে দেশের মধ্যে ছিলেন না, ছিলেন আমেরিকায়। আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না থাকা, আন্দোলনের সময়ে দেশের বাইরে থাকা একজনকে দেশের প্রধান হিসেবে নির্বাচন করার পিছনে নির্বাচিত ব্যক্তির যে এই ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের নেপথ্যে যোগাযোগ ছিল তা' স্পষ্টতই দেশের নানা ঘটনাবলী প্রমাণ করে।

আশ্চর্য ও দুঃখের বিষয় মহম্মদ ইউনুসের মত শিক্ষিত, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত মানুষ পেছনের দরজা দিয়ে চোরের মত অগণতান্ত্রিক উপায়ে অবৈধভাবে দেশের প্রধানের চেয়ারে ব'সে ক্ষমতা দখলের পর পরই ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেন। তিনি এক ইন্টারভিউতে স্বীকার করেন শেখ হাসিনা তাঁকে অনেক অত্যাচার করেছে। শেখ হাসিনার প্রতি যে তাঁর ব্যক্তিগত রাগ রয়েছে তা' তিনি প্রকাশ ক'রে দিয়েছেন তাঁর বক্তব্যে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মপদ্ধতি ও অন্যান্য নানা বিষয় ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতির কারণ। তিনি এক ইন্টারভিউতে রি-সেট বাটন টিপে অতীত ইতিহাস মুছে দেওয়ার কথাও বলেন। চব্বিশের জুলাই মাসের ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া ছদ্ম গণ অভ্যুত্থানের পর দেশের ৭১এর সমস্ত ইতিহাস ভাংচুরের সময় অনৈতিকভাবে দেশের প্রধানের চেয়ারে বসে থাকা সত্ত্বেও মহম্মদ ইউনুস বাধা দেননি, কোনও কথা বলেননি। তাঁর নীরব উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছিল ধ্বংসলীলা। তাঁর নীরবতা প্রমাণ করে তিনি রি-সেট বাটন টিপে সত্যি সত্যিই ৭১এর সব অতীত মুছে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ৭১সালে ভারতের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সাহায্য, সেই All out সাহায্যকে স্বীকার করেন না, স্বীকৃতি দিতে চান না। সত্যিকে তিনি পা দিয়ে দাবিয়ে রাখতে চান। মিথ্যেকে মালা পড়িয়ে গলায় বুকে জড়িয়ে ধরতে চান গভীর মমতায়। দিবানিদ্রায় নিজে মিথ্যে স্বপ্ন দেখেন ও দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখান ২০২৪শের জুলাই গণ আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রকৃত গণ আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থান।

তাই বলি, একাত্তর আর চব্বিশ এক নয়। সত্যের জামা কাপড় চুরি ক'রে সত্যকে উলঙ্গ ক'রে ফেলে রেখে মিথ্যে আজ সত্যের পোশাক পড়ে আজ জনসমক্ষে হাজির। আর, সত্য সবার পিছনে উলঙ্গ হ'য়ে দাঁড়িয়ে বলছে আমি সত্য, আমি সত্য, আমি সত্য। উলংগ সত্যকে দেখে জনগণ যতই হাসাহাসি করুক আর কাকের পিছনে ময়ুরের পুচ্ছ লাগানোর মত মিথ্যা যতই সত্যের পোশাক পড়ে সাজগোজ ক'রে মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়াক সত্য সত্যই, আর মিথ্যা মিথ্যা। সত্য কখনও মিথ্যা হ'তে পারে না, আর মিথ্যা কখনও সত্য হয় না। সত্য চিরন্তন, আর মিথ্যা প্রতিদিন প্রতিনিয়তই ক্ষণে ক্ষণে তার ভোল পালটায়। সময় সবসে বড়া বলবান। সময় তার হিসাব নিকাশ করবে সময় মত। আজ নয়তো কাল। কপট ব্যক্তিত্ব, কপট চরিত্র ও কপট কর্ম দিয়ে দেশের ও দেশবাসীর কখনও মঙ্গল ও উন্নতি করা যায় না।
তাই বলা হ'য়ে থাকে সত্য উলঙ্গ ও অপ্রিয়। সত্য উলঙ্গ ও অপ্রিয় হ'লেও সত্য সত্যই, সূর্যের মত চিরন্তন। সত্য প্রকাশ হ'তে দেরী হলেও সত প্রকাশ হয়ই হয়। কথায় আছে, ভগবান কে ঘর দের হ্যায়, পার আন্ধের না'।
( লেঝা ২৮শে মার্চ'২০২৫)

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশ ও আমি (২য় পর্ব)

একাত্তর ও চব্বিশ যে সমান নয় এই কথাটা মহম্মদ ইউনুসও জানে। সত্য সত্যই, সত্য কখনও মিথ্যা হ'তে পারে না, মিথ্যা কখনও সত্য হ'তে পারে না। এ চিরন্তন সত্য। সূর্যকে অস্বীকার ক'রে রাতের আঁধারে একটা জিরো পাওয়ারের নাইট ল্যাম্প জ্বালিয়ে যারা সূর্যের উপস্থিতি ঘোষণা করে তাদের মস্তিষ্কের ভারসাম্যহীনতা কোনও চিকিৎসায় ঠিক হবার নয়। ওটা বায়োলজিক্যালি ডিফেক্টের ফল। তাই একাত্তর ও চব্বিশ সমান এই কথাটা যারা বলে তারা ভারসাম্যহীন ও ঐ প্রবাদের মতন, 'পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায়।'
একাত্তর ও চব্বিশ যে সমান নয় এটা বাংলাদেশের প্রতিটি দলই জানে, তা' তারা স্বীকার করুক আর না করুক। সত্যকে যারা অস্বীকার করে, অসম্মান, অশ্রদ্ধা, অমর্যাদা করে তারা ঈশ্বর, আল্লা বা গডের অস্তিত্বকে অস্বীকার, অসম্মান, অশ্রদ্ধা ও অমর্যাদা করে। আর তাদের পরিণতি হয় ভয়ংকর, ভয়াবহ। কারণ ঈশ্বর, আল্লা বা গড অকৃতজ্ঞ, বেইমান আর নেমকহারামকে কখনই কোনোদিনই ক্ষমা করেনি ও করেনা। সত্যকে অস্বীকার করা মানে স্বয়ং ঈশ্বর, আল্লা বা গডকে অস্বীকার করা।

আর, মিথ্যাকে মান্যতা দেওয়া মানে শয়তানের পৃষ্টপোষকতা করা।
মহম্মদ ইউনুস একাত্তরের সত্যকে রি-সেট বাটন টিপে মুছে দিতে চেয়েছিলেন। আর, চব্বিশের মিথ্যাকে করতে চেয়েছেন জোর ক'রে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তিনি জানতেন বাঙালী জাতির বুক থেকে উদ্ভুত, আত্মা থেকে জাগ্রত একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম, অবাঙ্গালীদের বাংলা ও বাঙ্গালীর ওপর অত্যাচার, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, বলাৎকার থেকে মুক্তি, শিরায় শিরায়, কোষে কোষে, রক্ত কণিকার অভ্যন্তরে স্বাধীনতার যে বিস্ফোরণ সেই সংগ্রাম, সেই মুক্তি, সেই বিস্ফোরণ ছিল বাঙ্গালীর স্বতস্ফুর্ত সংগ্রাম, মুক্তি ও বিস্ফোরণ। তা' ছিল স্বতঃ উৎসারিত। সেই স্বতঃ উৎসারিত সংগ্রাম, মুক্তি ও বিস্ফোরণের ভাগীদার ছিল না মহম্মদ ইউনুস। তিনি সেই ৭১এর স্বাধীনতা, মুক্তি ও বিস্ফোরণের লড়াইয়ে দেশের অভ্যন্তরে পাক সৈন্যদের দ্বারা সৃষ্ট শ্বশানভূমির ওপর ছিলেন না। তিনি সেই সময় ছিলেন আমেরিকার স্বর্গদ্যানে। তার শরীরে সেই ৭১-এর অগ্নিদগ্ধ বাংলার তাপ লাগেনি, ফোস্কার চিহ্ন নেই। তিনি সেই সময় ছিলেন ভরা যৌবনের অধিকারী তিরিশের টগবগে যুবক। তাঁর একবারও মনে হয়নি তাঁর মাতৃভূমির ওপর পাক সেনাদের দ্বারা বলাৎকারের সময় তাঁর মাতৃভূমি তাঁকে পাশে পেতে চেয়েছিল। তখন তিনি অগ্নিদগ্ধ রোমের নিরোর বেহালা বাজানোর মত নিজের ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে ছিলেন মগ্ন। তাঁর মাতৃভূমি বাংলার ক্যারিয়ার যে ধর্ষিত হচ্ছে পাক সেনাবাহিনীর দ্বারা সে সম্পর্কে তাঁর ছিল না বিন্দুমাত্র অনুভূতি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পেতে চেয়েছিলেন পূর্ণ মর্যাদা। কিন্তু সেই পূর্ণ মর্যাদা না পাওয়ার কারণে তাঁর মনে জন্মেছিল অতৃপ্তি, ক্ষোভ। স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ তাঁকে দেয়নি তাঁর পান্ডিত্যের যোগ্য সম্মান। ফলে মহম্মদ ইউনুসের মনে জন্মেছিল ক্ষোভ। আওয়ামী লীগ প্রধান যদি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতেন, তাঁর জ্ঞান, তাঁর পান্ডিত্যকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারতেন কৌশলী দক্ষতায়, আর মহম্মদ ইউনুস, তিনি নিজে যদি তাঁর পান্ডিত্য, তাঁর জ্ঞানকে সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারতেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাহ'লে কতটা উপকৃত হ'তো বাংলাদেশ তা' জানিনা, কিন্তু নিঃসন্দেহে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হ'তো না। বাংলাদেশের আজকের অস্থির পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ প্রধান, বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস ও দেশের জনগণ সবার জন্যই ক্ষতিকর ও বিষাক্ত মারণ বিষ বহনকারী।

আর, চব্বিশের যে জুলাই অভ্যুত্থানকে যে জনগণের অভ্যুত্থান, জনগণের বিপ্লব ব'লে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছেন মহম্মদ ইউনুস ও কোটা আন্দোলন ও বৈষম্য বিরৈধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তা' সর্বৈব মিথ্যা, একথা জনগণ জানে কিন্তু পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকের চাপে তা গুলিয়ে যায়। এই আন্দোলন যে মিথ্যা ছিল তার কারণ,
১) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল শুধু ছাত্রদের আন্দোলন।
২) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
৩) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন।
৪) এই আন্দোলন প্রথমে ছিল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন।
ছাত্রদের এই আন্দোলনের দাবী মেনে নিয়েছিলেন হাসিনা সরকার। কোটা সংস্কার নয় কোটা সিস্টেমটাকেই উঠিয়ে দিয়েছিলেন, তুলে নিয়েছিলেন, বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অংশ হাসিনা সরকারের কোটা সিস্টেম তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টিকে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালতের ওপরে ন্যস্ত করেন।

ঠিক এই সময়, এই মাহেন্দ্রক্ষণে ঘুরতে থাকে চাকা। পরিস্থিতির বদল হ'তে থাকে। এই যে মুক্তি যোদ্ধারা বা তাঁদের উত্তরসূরীরা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে কোর্টে গেল এইটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। এর মধ্যেই চক্রান্তের বীজ হয়তো নিহিত ছিল নতুবা নোতুন ক'রে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চক্রান্তের বীজ জন্ম নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সরকারের যথাসময়ে এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক হওয়া ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ ছিল। উচিৎ ছিল হাইকোর্টের কোটা পুনর্বহাল করার রায়কে সুপ্রীম কোর্টে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষা করা এবং আলোচনা চালানো। এছাড়া হাসিনা সরকারের উচিৎ ছিল ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও হাইকোর্টে যাওয়া কোটা সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং দ্রুত ভারসাম্যরক্ষাকারী একটা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো। উচিৎ ছিল দেশের প্রচার মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে সরকারের সদিচ্ছাকে তুলে ধরা, পৌঁছে দেওয়া।

কিন্তু এইগুলির কোনওটাই হয়নি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাজিমাৎ ক'রে বেড়িয়ে যায় ছাত্র আন্দোলনকারী নেতারা। হয় তাদের আন্দোলনের পট পরিবর্তন। এই পট পরিবর্তন হয়তো বা পূর্বপরিকল্পিত ছিল নতুবা উদ্ভূত সুযোগ বা অবস্থাকে দ্রুত কাজে লাগিয়েছিল হাসিনা বিরোধীরা ছাত্রদের আন্দোলনকে মূল্ধন ক'রে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপ্রীম কোর্টের রায়ের ওপর নির্ভর ক'রে অপেক্ষা করা, কালক্ষেপ করা ছিল তাঁর মারাত্মক রকমের ভুল ও আত্মহত্যার সামিল। দেশের আইন ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সঠিক সময়ে সঠিক ও উপযুক্ত রূপে সাহায্য করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আর, তা' হয়েছিল হয় সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবেই নতুবা অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি আগাম বুঝতে না পেরে।
দেশের আগুন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই বিলম্বিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র আন্দোলন দ্রুত তার আসল রূপে বা ভূমিকায় ফিরে আসে। ,
প্রথমে,
১) এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন ছিল না, ছিল ছাত্র আন্দোলন।
২) এই আন্দোলন সরকার বিরোধী আন্দোল্ন ছিল না, ছিল ছাত্রদের দাবী দাওয়ার আন্দোলন।
৩) এই আন্দোলন ছাত্রদের সরকার উৎখাতের আন্দোলন ছিল না, কোটা সংস্কার আন্দোলন।
পরিস্থিতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে,
১) এই আন্দোলন ঘুরে গেল ছাত্র-নাগরিক যৌথ আন্দোলনে।
২) এই আন্দোলন ঘুরে গেল সরকার বিরোধী আন্দোলনে।
৩) এই আন্দোলন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গেল সরকার উৎখাতের আন্দোলনে।

ছাত্র রাজনীতি ও ছাত্র আন্দোলন পরিণত হ'লো ছদ্ম রাজনীতি ও ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনে। Pseudo politics, Pseudo student movement কি জিনিস দেখতে পেল গোটা দূনিয়া ও দুনিয়ার ছাত্র সমাজ। সমগ্র বিশ্বের সাধারণ ছাত্র সমাজ কিছু বুঝতে বা শিখতে পারলো কি বাংলাদেশের এই ছাত্র আন্দোলন থেকে? যদিও সাধারণ ছাত্রছাত্রী এত খবর পায় না, রাখেও না। রাখার প্রয়োজন মনে করে না। আর, সেই সুযোগকে কাজে লাগায় ভবিষ্যতের ছদ্ম ছাত্র রাজনীতি ও ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র সমাজ।

ঠিক এইরকম ছদ্ম ছাত্র রাজনীতির জুতোয় পা গলিয়ে রাতারাতি কোটা আন্দোলন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পাট চুকিয়ে 'হাসিনা হঠাও, দেশ বাঁচাও' আন্দোলনে মেতে উঠলো ছাত্র আন্দোলনকারীরা। দ্রুত সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে স্কুল চত্বরে সমস্ত স্তরের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। ছড়িয়ে পড়লো ছাত্র আন্দোলন ছাত্র ক্যাম্পাস ছাড়িয়ে মাঠে ময়দানে, গ্রামে গঞ্জে, শহরে নগরে আম জনতা মাঝে। হাসিনা ও তাঁর সরকার বুঝতেও পারেনি দেশের ছাত্র, যুব, শ্রমিক, আম জনতার দ্রুত মানসিক পরিবর্তন। এই প্রথম দেশের প্রাইমারী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত স্তরের ছাত্রদের মধ্যে সফলভাবে ছড়িয়ে পড়লো ছাত্র আন্দোলন অদৃশ্য হাতের রিমোট কন্ট্রোলে।
ক্রমশ
( ২৮শে মার্চ'২০১৫)


প্রবন্ধ" বাংলাদেশ ও আমি। ( ১ম পর্ব )

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ ও ২০২৪ সালের বাংলাদেশ স্বর্গ নরক তফাৎ।
১৯৭১ সাল ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল পটভূমি, পবিত্র ও শুদ্ধতার প্রতীক।
২০২৪ সাল ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন ও ছদ্ম রাজনীতির প্রতীক।
বাংলাদেশ নিয়ে একটা আলাদা সেন্টিমেন্ট জড়িয়ে আছে পশ্চিমবাংলার বাঙালীদের মধ্যে বিশেষ ক'রে বাঙ্গাল হিন্দু বাঙালীদের মধ্যে। আমারও তাই। আমার মায়ের, আমার বাপদাদাদের জন্মভূমি মাতৃভূমি অখন্ড ভারতের পূর্ববঙ্গ বর্তমানে বাংলাদেশ আমারও ভূমি।

তাই, আমি বাংলাদেশ নিয়ে বারবার আমার মতামত প্রকাশ করি। এছাড়া ৭১-এর যৌবনের প্রথম দিনগুলি জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে। বাংলাদেশে মানুষের ওপর পাকিস্তানী সেনাদের নারকীয় বর্ব্বরোচিত অত্যাচার, হত্যাযজ্ঞ, মা-বোনেদের ওপর পাশবিক নির্ম্মম বলাৎকার ও হত্যা, ধ্বংস যজ্ঞ প্রথম যৌবনের দিনগুলিতে আমার জীবনকে করেছিল উত্তাল।

সেদিন ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ পাকিস্তানের দানবীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে হয়েছিল সোচ্চার। বিধানসভা ও লোকসভা উত্তাল হ'য়ে থাকতো বাংলাদেশ ইস্যুতে।

আর, বিশেষ ক'রে একসময় অখন্ড ভারতের একই ভূমি অখন্ড বাংলা পরবর্তীতে ব্রিটিশের ঘৃণ্য চক্রান্তে ভাগ হ'য়ে পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অঙ্গীভূত হ'য়ে পূর্বপাকিস্তান ও পশ্চিমবাংলা হওয়ার কারণে পশ্চিমবাংলার ঘটি, বাঙ্গাল, হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ইত্যাদি সমস্ত বাঙালি পূর্ববাংলার ১৯৭১ এর ভয়াবহ ঘটনায় হয়েছিল সমব্যাথী ও আন্দোলিত এবং প্রতিবাদে শামিল।

১৯৭১ সালে পশ্চিমবাংলার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল পূর্ববাংলার মানুষের যন্ত্রণা, পূর্ববাংলার মানুষের অসহায় নির্বিচার মৃত্যু, মা-বোনেদের নারকীয় যৌন অত্যাচারের সঙ্গে পশ্চিবাংলার মানুষ একাত্ম হ'য়ে গিয়েছিল সেদিন। সেদিন পশ্চিমবাংলার হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ নারীপুরুষ, ছাত্র, যুব, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ বাঙালী হয়েছিল প্রতিবাদের সাথী, নেমেছিল পথে। আওয়াজ তুলেছিল বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াবার জন্য। সেই আওয়াজ শুনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আন্তর্জাতিক বিদেশী শক্তির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা ক'রে ভারত সেদিন দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের পাশে। আমিও সেদিন ছিলাম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একজন ১৬বছরের তাজা টাটকা টগবগে রক্তের পথে নামা প্রতিবাদী।

আর, সেইজন্যই আজও জীবন সায়াহ্নে এসে আন্তরিকভাবেই একাত্ম অনুভব করি আমি বাংলাদেশ ইস্যুতে। আর তাই আমার প্রাণের কথা তুলে ধরি বারবার। সেদিনের ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক ৩০লক্ষ বাঙ্গালীর রক্তে ধোয়া ৭১সাল, মা-বোনেদের ইজ্জৎ লুন্ঠনের কলঙ্কিত ৭১ সাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গিত প্রাণের ইতিহাস লেখা ৭১ সাল এবং পাকিস্তানের নারকীয় নৃশংস আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক অল আউট সহযোগীতা আজও ভুলতে পারি না। যে ইতিহাস রি-সেট বাটন টিপে মুছে দিতে সচেষ্ট বর্তমান বাংলাদেশের জবরদখল সরকারের অবৈধ প্রধান মহম্মদ ইউনুস; যিনি কোনোদিনই বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের পট পরিবর্তন ও ২০২৪ সালের ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের মাটিতে ছিলেন না। আমেরিকায় আয়েসে কাটিয়েছিলেন জীবন নিজ ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্নে। যিনি বাংলাদেশের মানুষকে ভারত বিদ্বেষী ক'রে তুলতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। ২০২৪ এর ছদ্ম ছাত্র আন্দোলনের সময় বাংলাদেশের জনগণের কাছে ভারতকে শত্রু দেশ হিসেবে চিহ্নিত ক'রেছিলেন এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছিলেন।

যাই হ'ক বাংলাদেশের ২০২৪ এর জুলাই ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল পটভূমি যে এক নয় তা' নিয়ে আমি পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।
 ক্রমশ
( লেখা ২৮শে মার্চ'২০২৫)