আমার বড় তৃষ্ণা। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হ'য়ে যাচ্ছে। চারপাশে আমার জল আর জল। তবুও তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে কেন!? কেন আমি তৃষ্ণার্ত?
ঠিক এইরকম যখন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তখন একটা পোষ্ট চোখে পড়লো। মুখের কারণে নাকি কিছু মানুষের জীবনে উত্থান আটকে যায়।
তাই কি? চারদিকে কি তাই দেখছি? সকাল থেকে রাত অব্দি কি তাই দেখছি? সূর্য ওঠা থেকে শুরু ক'রে অস্ত গিয়ে আবার পরদিন ওঠা পর্যন্ত আসমুদ্রহিমাচলব্যাপী শুধু তো গালবাজ আর গলাবাজদের উত্থান!!!! তাই নয় কি?
আচ্ছা বাড়ির পাশে পেঁচো অন্ধকার গলি থেকে শুরু ক'রে উন্মুক্ত আলোর রাজপথে, বস্তির জঞ্জাল থেকে আকাশ ঢাকা ইটের জঙ্গলের দমবন্ধ করা ভিড়ে, টিভির চ্যানেল থেকে চ্যানেল শুরু ক'রে রেডিও স্টেশনে, স্থলে-জলে-অন্তরিক্ষে সব জায়গায় আমরা কি দেখি? কি শুনি? সবজায়গায় তো মুখে মারিতং জগতের কারবার চলছে! তাই না? ঘরেবাইরে, পাড়ায়পাড়ায়, স্কুলেকলেজে, অফিস-কাছারিতে, কলেকারখানায়, হাটেবাজারে, পথেঘাটে, মাঠেময়দানে, সাহিত্য, নাটক, চলচিত্র, শিল্প, ধর্ম্ম, রাজনীতি ইত্যাদি সমস্ত অঙ্গনে সকাল থেকে রাত শুধু গালবাজি আর গলাবাজি আর মুখের কারণে উপরে ওঠার লাজ লজ্জাহীন তীব্র প্রতিযোগীতা আর প্রতিযোগীতা চলছে! তাই নয় কি? ভুল বললাম? বাজে বকলাম?
হ্যাঁ! এটা সত্যি কথা যে, মুখ আর মুখের ভাষায় আকাশপাতাল তফাৎ থাকে। কারও মুখ এত সুন্দর কিন্তু মুখ খুললেই সাপ ব্যাঙ ছুঁচো বেরিয়ে পড়ে! আবার দেখতে সুন্দর না হ'লে কি হবে মুখের কথা এত মিষ্টি যে শয়নে স্বপনে জাগরণে তা মনে লেগে থাকে! কানে বাজতে থাকে!! কিন্তু সময় কি বলে? সাপ, ব্যাঙ, ছুঁচো উগলাতে উগলাতে ছুটে চলেছে শুধু সুন্দর মুখের দল উন্নতির শিখরে, উত্থানের পথে! ভবিষ্যৎ কি হবে, শেষের সেদিন ভয়ংকর হবে না সুন্দর হবে তা দেখার প্রয়োজন নেই, ধারও ধারে না। তাৎক্ষণিক ফল লাভ হ'লেই হ'লো আর হয়ও তাই। আর অসুন্দর মুখের অধিকারী মিষ্টি ভাষার মানুষ পড়ে থাকে নীচে, খুদকুঁড়ো পাওয়ার আশায় বাঁচে! ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময় নেই। ত্রুটি নিয়েই বাঁচে-মরে। মিষ্টি ভাষার মানুষের উত্থান না হওয়ার পিছনে কিছু কমি বা ছোটো বড় ত্রুটি থাকেই।
যাই হ'ক, বলছিলাম তৃষ্ণা নিয়ে আর তাই ফিরে আসি সেই তৃষ্ণায়। এই লেখাটা যখন লিখছি তখন লিখতে লিখতে মনে পড়লো পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি, সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে ভালোবাসাময় প্রেমময় আলোময়, রূপময়, রসময় মানুষ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র-এর বাণী "Behavior is the beverage of
life." যার অর্থ দাঁড়ায়, ব্যবহারই জীবনের পানীয়। এই মিষ্টি প্রাণকাড়া ব্যবহারের কথা তিনি যতবার এসেছিলেন সেই রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ রূপে ততবারই বারেবারে নানাভাবে, নানা ঢঙ্গে ব'লে গেছেন আমাদের সবার জন্য, পৃথিবী জুড়ে তাঁর সমস্ত সন্তানদের জন্য। সেখানে কোনও হিন্দু ছিল না, মুসলমান ছিল না, ছিল না কোনও খৃষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন কোনও সম্প্রদায়ের কেউ। সবাই, সব সম্প্রদায়ের বিশ্ব জুড়ে ৮০০ কোটি মানুষের জন্য ব'লে গেছিলেন এই মিষ্টি পানীয় রূপী ব্যবহারের কথা। যাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেই এই ভয়ংকর অন্ধকার সময়ে জীবনের সব তৃষ্ণা মিটে যায়! জুড়িয়ে যায় সব জ্বালা, যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট!! দূর হ'য়ে যায়, কেটে যায় সব অভাব, অনটন, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা!!! বুকের মধ্যে জ্বলে ওঠে অপার আনন্দের আলো! আলোর ফুলঝুড়ি!!
আর, তৃষ্ণা মেটার জন্য আমরা কি করেছি? কি করছি?? কি করবো???
No comments:
Post a Comment