আমি বলি কি যা সত্য তাই সুন্দর আর যা সুন্দর তাই জীবন। আর সুন্দর জীবনে নেই কোনও কঠিন,
জটিল, কষ্ট, মায়া আর যন্ত্রণার কোনও চিহ্ন। শুধু সেই জীবনে আছে সত্যের উপস্থিতির
চিহ্ন। আর সত্য যেখানে সেখানেই সুন্দর, সেখানেই আনন্দের ধারা বহমান। আর সত্য মানেই
ঈশ্বর। যাহা সত্য, তাহাই ঈশ্বর আর যাহা ঈশ্বর তাহাই সত্য। তাই ঈশ্বরই সত্য বাকি সব
মিথ্যা। আর যখন ঈশ্বরকে মানি তখন আমার চারপাশের সব আমার কাছে সত্য হয়ে ওঠে। আর
ঈশ্বরকে যখন মানি না আমার চারপাশের সব তখন আমার সামনে মিথ্যা হয়ে ওঠে। তখন ওই
মিথ্যার মধ্যে দিয়ে আমার সামনে এসে আত্মপ্রকাশ করে কঠিন, জটিল, কষ্ট, মায়া আর
যন্ত্রণার বিভীষিকা। ঐগুলি সব ভ্রম, ভূত, প্রেত ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাই সত্যকে না মানার মানেই হ'ল সে সুন্দর থেকে বঞ্চিত এক মানুষ; যে মানুষ হয়েও বেহুঁশ। আর বেহুঁশের তো কোনও বোধ নেই। অসাড়, অবশ, অনুভূতিহীন, বোধশক্তিহীন। তাহ'লে কোথায় তার কাছে কঠিন, জটিল, কষ্ট, মায়া আর যন্ত্রণার উপস্থিতি? সে তো রক্ত মাংসের এক রোবট বই আর কিছই নয়! আর রোবটের কাছে কিসের কঠিন আর কিসের সহজ, কিসের জটিল আর কিসের সরল, কিসের কষ্ট আর কিসের আনন্দ, কিসের মায়া আর কিসেরই বা যন্ত্রণা? সব তো একাকার! রোবটের জীবনে আলাদা আলাদা কোনও উপস্থিতি তো নেই এসবের। তাই বলি, আমি পরিস্থিতির দাস হ'তে যাবো কেন? আমি কি কারও রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা চালিত? আমাকে এই বিশ্বব্রম্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কে আছে যে আমাকে পরিস্থিতির দাস বানাবে? আমি আমার বা আমার চারপাশের পরিস্থিতিকে আমার দাস বানাবো। তবেই না আমার এই জীবনের সার্থকতা। তবেই না আমার বেঁচে থাকা। তবেই না আমি বুক ফাটো ফাটো করে মাথা উঁচু করে দিগন্ত কাঁপিয়ে স্বর্গ, মর্ত, পাতালকে জানান দিতে পারবো,
'শোনো কে কোথায় আছো তমসার পার অচ্ছেদ্য বর্ণ মহান পুরুষ ইষ্টপ্রতিকে আবির্ভূত হ'য়ে বলছেন, ওঠো, জাগো ভুলে যেও না তুমি মানুষ, মানুষ,মানুষ’।
আর
আমি মানুষ বলেই আমি সমস্ত কষ্ট, যন্ত্রণা, মায়া, কঠিন আর জটিলতাকে দূরে সরিয়ে তাঁর
আলোর পানে ছুটে যাবো। তাঁর আলোর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে পিছন ফিরে ছায়ার দিকে
চেয়ে বলবো না অন্ধকার, অন্ধকার। তাঁর হাসি, আনন্দে মাখা সহজ সরল ঝলমলে মুখ থেকে
দৃষ্টি সরিয়ে কষ্ট, যন্ত্রণার দিকে চেয়ে ডেকে বলবো না আমার চোখে মুখে তোমার প্রলেপ
এঁকে দাও, এঁকে দাও মনের আঙিনায় কঠিন আর জটিলতার আলপনা। এর পরেও যদি তাঁর
সংস্পর্শে 'ওইসব' আসে আসুক, তাঁর দেওয়া বা না দেওয়া 'ওইসব' মাঝে আছে প্রিয়তমের মঙ্গল ইচ্ছা।
তবে
পরিস্থিতিকে আমার দাস বানাতে গেলে আমাকে প্রথমে তাঁর দাস হতে হবে। তা ব্যতীত আমি
মালিক, আমি প্রভু এই মানসিকতায় যদি পরিস্থিতিকে দাস বানাতে যাই তাহ’লে সমাজের বুকে
আমি রাবণ, কংস, দুর্যোধন ইত্যাদির মত ভয়ংকর চরিত্র হ’য়ে উঠবো। আর ঐ সমস্ত কষ্ট,
যন্ত্রণা, মায়া, কঠিন আর
জটিলতা তখন রাহু, কেতুর মত আমার জীবনকে গ্রাস করবে। আর যদি
তাঁর দাস হয়ে পরিবেশ, পরিস্থিতিকে আমার অনুকূলে আনতে চাই তাহ’লে সেই পরিবেশ,
পরিস্থিতি আমার চাওয়ার আগেই আমার করায়ত্ত হবে অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্যে। তাই তো বলি,
কোথায়
দুঃখ, কোথায় কষ্ট, কোথায় আমার যন্ত্রণা?
জীবন
মাঝে কোথায় কঠিন, কোথায় জটিল? আর
মায়া
মমতার উন্মাদনা? জীবন আমার উদাস বাউল
উদার
আমার জীবন আকাশ, জীবন আমার রামধনু
জীবন
আমার মলয় বাতাস। জীবন মাঝে রপোলি চমক
মেঘমল্লারের
বন্দনা! ঝরঝর খরশান বয়ে চলে সেই
বরষণ
অবিরত প্রাণে প্রাণে নেই তার কোনও সীমানা!
জীবন জুড়ে আছে ভরে শুধু পরমেশ প্রভুর মন্ত্রণা!
জীবন জুড়ে শুধুই আলো, শুধুই জ্যোতির বিচ্ছুরণ
জ্যোতির মাঝে হারায় ‘আমি’ সত্তা খোঁজে জীবনস্বামী
জীবন জুড়ে শুধুই সাড়া পরম সত্তায় উত্তরণ!
আর তুমি,
জীবন খুঁজে মরছো কোথায়? কোথায় ফেলেছো নোঙ্গর তুমি?
দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা, শোক, তাপ, ব্যথা-বেদনা
শব্দেরা সব মিলেমিশে মারে তোমায় সেথায় পিষে;
‘কঠিন’ ‘জটিল’ সব শব্দ ঘিরে নরক করেছে ধীরেধীরে
তোমার জীবন ভুমি। আবাদ
তাই হ’ল না বন্ধু
বহু ফসলী তোমার জমি!
এখন তুমি......
জীবন যদি চাও পেতে রাখো হাত আমার হাতে
ঐখানেতে যাবো নিয়ে আলোয় ভুবন ভাসিয়ে দিয়ে
তমসার ওপার হতে যেথায় হাসিমুখে দাঁড়ায় এসে
জীবনস্বামী, বরাভয় দিয়ে দু’হাত তুলে বলছে হেসেঃ
আয়, বুকে আয়, আয়রে তোরা, করি ত্বরা
কোমর বেঁধে ছুট্টে সবাই, হেত্থায় জীবন খুঁজে পাবি।।
No comments:
Post a Comment