মানুষের জীবনে যখন সংকট আকাশের কালো মেঘের মত নেবে আসে চারিদিক অন্ধকার ক’রে
তখন দিশেহারা মানুষ পাগলের মত ছুটে বেড়ায়, ছটফট করে, এদিক ওদিক হাতড়ে বেড়ায়
একটুখানি সাহায্যের আশায়, গভীর অন্ধকারের মাঝে একটুখানি আলোর আশায় খাঁচায় বন্দি
পাখির মত। আমরা খাঁচায় বন্দি পাখিকে ঘরে রেখে দিই ঘরের শোভা বাড়াবার
জন্য আর ওই বন্দী পাখি খাঁচার ভেতর থেকে খোলা আকাশের নীচে গাছের ডালে বসে থাকা
উন্মুক্ত পাখির দিকে তাকিয়ে থাকে জুলজুল চোখে, নীল আকাশের বুকে ডানা মেলে দূর
দিগন্তে উড়ে যাওয়া পাখির ঝাঁকের দিকে চেয়ে আনমনে হঠাৎ ডেকে ওঠে, ডানা ঝাপটায় আর
খাঁচার চারপাশে ঘুরতে থাকে। ‘পথ কোথায়, পথ কোথায়’ ব’লে ঘুরতে ঘুরতে হতাশ হ’য়ে
অবশেষে বসে পড়ে দাঁড়ের ওপর। মানুষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে সেই দৃশ্য। সে বুঝতেই
পারে না পাখিটার মুখের ভাষা, শরীরের ভঙ্গী, বুকের মধ্যে ওঠা মুক্তির ঝড়। জালে আটকে
পড়া কিম্বা বড়শিতে আটকে তীব্র যন্ত্রনায় ছটফট করা মাছের কষ্ট কি বুঝতে পারে সাধারণ
মানুষ? মাছ ধরার আনন্দে যখন মানুষ বড়শী থেকে মাছের মুখটা খুলতে গিয়ে খুলতে না পেরে
একটানে মাছের ঠোঁটটা ছিঁড়ে নেয় তখন কি মানুষ তার ‘মানুষ’ নামের মধ্যে থাকা ‘হুশ’-এর
মধ্যে থাকে? ঠিক তেমনি আমরা অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থাকা চারপাশের সাধারণ মানুষ,
ভাঙ্গাচোরা মানুষ, স্বার্থপর মানুষ, ধান্দাবাজ মানুষ, লোভী-মতলববাজ মানুষ, হিংসুটে
মানুষ, ভন্ড মানুষ, বোধহীন, রোবোটিক ইত্যাদি ইত্যাদি মানুষ সমস্যা জর্জরিত
ক্ষতবিক্ষত মানুষের পাশে থাকি? লোক দেখানো ভালো মানুষের ভিড়ে আমরা হাবুডুবু খায়।
যদিও বা কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় হয় বিনিময়ে নিংড়ে নেয় যা কিনা গোদের ওপর বিষফোঁড়া, আর
না হয় উদারতার ভঙ্গী নিয়ে আন্তরিকতাহীন শুকনো কথার ঝিকিমিকি! শুধু কথায় যে চিঁড়ে
ভেজে না, চিঁড়ে ভেজাতে গেলে যে জল ঢালতে হয় সেদিকে বেহুঁশ! তার ওপর শুধু কথা নয়,
শুকনো কথা! তখন এক বুক কান্না নিয়ে ‘মা সীতা’ হতে চায় প্রাণ। মনে হয় এ-যন্ত্রণার
অবসান হোক ধরণীর বুকে আশ্রয় নিয়ে।
ক্রমশঃ
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment