আপনি আমার জয়গুরু ও প্রণাম নেবেন। আপনাকে হঠাৎ চিঠি লিখতে বসলাম বিশেষ কারণে। ভেবেচিন্তেই আপনাকে এই চিঠি লিখছি। উঠলো বাতিক তো কটক যাই'-এর মতো উঠলো খুজলি আর আপনাকে চিঠি লিখলাম তা' নয়। আর জানি না আপনার চোখে পড়বে কিনা এই চিঠি।
আমি আপনার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক। বলা ভালো পাঠক ছিলাম যৌবনে এখন আর পড়ার সময়ও পাই না; বরং বলা ভালো পড়তে আর কোনও কিছুই ভালো লাগে না। পড়তে না পারার পিছনে কারণ অবশ্যই আছে আর সেই কারণ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। মাঝে মধ্যে উল্টে পাল্টে যদিও দেখতে বা পড়তে ইচ্ছে করে তা করে শুধু ঠাকুরের বিশাল গ্রন্থ। আপনার উপন্যাস ঘুণপোকা প্রথম পড়েছিলাম স্কুল জীবন শেষে কলেজ জীবনের সময়। সালটা সম্ভবত ১৯৭৪-৭৫ হবে।
সে যাই হ'ক ঘুণপোকা আমার সর্বাঙ্গ ঢেকে ফেলেছিল; আমার শরীর, আমার মন, আমার আত্মা। এরপর দূরবীন, রঙিন সাঁকো, মানব জমিন, পারাপার, যাও পাখি, কাগজের বৌ ইত্যাদি উপন্যাস কম বেশী পড়েছি। পড়েছি কয়েকটা গল্প। তারমধ্যে 'ট্যাঙ্কি সাফ' যে গল্প সমাজকে সরাসরি মেসেজ দিচ্ছে "বহুত গাদ্দা বাবু, এ সাফ হবার নয়' সেই গল্প নিয়ে কেন যে কেউ সিনেমা করলো না অবাক হ'তে হয়! আপনার সব লেখা মেসেজ দেয়; যেমন আজব 'গাঁয়ের আজব কথা' সিনেমা।
যাক এসব কথা। আসল কথা সরাসরি বলার আগে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার পাওয়ার জন্য। যদিও এর আগেও আপনি আপনার উপন্যাস 'মানবজমিন' এর জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন।
এবার আসি অন্য পুরস্কারের কথায়। পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, পেয়েছেন বঙ্গবিভুষণ পুরস্কার আর গত বছর আপনি সাহিত্য আকাডেমি ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন।
এবার আসি আসল কথায়। আপনি সাহিত্য সাধনায় সফল কৃতি পুরুষ। পেয়েছেন অর্থ, মান, যশ ইত্যাদি সব। আপনার অতীত অর্থাৎ যৌবনকাল ছিল ভয়ংকর। তা আপনি অনেকবার বলেছেন। এবং সেই ভয়ংকর অতীত যে শ্রীশ্রীঠাকুরের দয়ায় ১৯৬৫ সালে সরস্বতী পুজোর সকালে তাঁর দেওঘর আশ্রমে মন্ত্রশিষ্য হওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে এসেছিলেন বাসে দীর্ঘ রাস্তা আপনার কলকাতার মেসে। আর সেদিনই মেসের দরজা খুলেই ঘরে প্রবেশ করার পর আপনি আপনার দীর্ঘদিনের যন্ত্রণাময় জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন জীবন, নতুন জগতের সন্ধান পেয়েছিলেন। তারপর থেকে শুরু হ'লো আপনার সাহিত্য জীবনের সুসংবদ্ধ উত্থান আর অন্যদিকে The greatest phenomenon of the world SriSriTHakur Anukulchandra-এর জীবন দর্শন প্রচার। এই যে The greatest phenomenon of the world SriSriTHakur Anukulchandra কথাটা লিখলাম ঠাকুর সম্পর্কে এই বিশেষণ প্রয়োগও আপনারই।
যাক, বারবার আসল কথা থেকে সরে যাচ্ছি। এবার বলি, আপনি তো জানেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কে? আপনি তো জানেন তাঁর জীবন দর্শন? আমি ঠাকুর কে, ঠাকুরের জীবন দর্শনের কথা না হয় বাদ দিলাম। সেটা পক্ষপাতিত্য দোষে দুষ্ট হ'তে পারে। কিন্তু আপনি তো জানেন তাঁর কি বি-শা-ল সাহিত্য ভান্ডার! আপনি তো জানেন তাঁর ৮৮২৯ টি জীবনের সমস্ত বিষয়ে কথিত ছড়ার সমুদ্র! আপনি তো জানেন তাঁর প্রায় তিন হাজার ইংরেজি বাণির কথা! আপনি তো জানেন তাঁর গদ্য আকারে ১০ হাজার বাণির কথা! আপনি তো জানেন তাঁর সব মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার বাণির কথা! আপনি তো জানেন তাঁর শ্রীহস্তে লেখা একমাত্র ছোট্ট 'সত্যানুসরণ' গ্রন্থের কথা! আপনি তো জানেন তাঁর অজস্র মূল্যবান মধুর চিঠির বিষয় ও ভাষা সম্পদের কথা? আপনি তো জানেন তাঁর দীর্ঘ জীবনের কথোপকথন প্রফুল্লদা দ্বারা অনুলিখিত দুনিয়ার সমস্ত বিষয় উন্মোচিত 'আলোচনা প্রসঙ্গে ২৩ খন্ড' গ্রন্থের কথা? আপনি তো জানেন দেবীদার 'দীপরক্ষী' রেবতীদা, মণিদা, আতপেন্দ্রদা ইত্যাদি দ্বারা অনুলিখিত ঠাকুরের অজস্র বিষয় সংকলিত বিভিন্ন গ্রন্থের কথা? আপনি তো জানেন ইসলাম প্রসঙ্গে, বিজ্ঞান বিভুতি, চলার সাথী, শাশ্বতী (৩ খন্ড), বিবাহ বিধায়না, সমাজ সন্দিপন, যতি অভিধর্ম ইত্যাদি বহু বিষয়ের উপর ব'লে যাওয়া কথা সম্বলিত গ্রন্থ (প্রায় ৪৬টি)? আপনি তো জানেন শ্রীশ্রীঠাকুরের সমাধি অবস্থায় কথিত ৭২ দিনের কথা সম্বলিত গ্রন্থ পূণ্যপুঁথি' গ্রন্থের কথা? যদিও ঠাকুর তাঁর সমাধি অবস্থায় বলা এই কথাগুলি অনুমোদন করেননি নিজে। আপনি তো জানেন শীর্ষেন্দুবাবু জগতে এমন কোনও বিষয় নেই যে বিষয়ে তিনি সহজ সাবলীল বিচরণ করেননি? আপনি তো জানেন জগতের সমস্ত সমস্যার সুচিন্তিত সমাধান তিনি দিয়ে গেছেন? আপনি তো জানেন ঠাকুর তাঁর রচনায় কত নতুন নতুন নিজস্ব বাংলা শব্দ তৈরি করেছেন, খুলে দিয়েছেন পুরোনো শব্দের রুটে গিয়ে উপরি অর্থের পরিবর্তন ক'রে নতুন অর্থের দরজা? যার জন্য তৈরি করতে হয়েছে নতুন ক'রে তাঁর শব্দের বাংলা অভিধান!
তাই বলি, যাক এসব আপনি সবই জানেন। আপনাকে বলা ধৃষ্টতারই নামান্তর। আমি এর জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী। শুধু বলতে চাই, এই চিঠি লিখলাম আপনাকে কারণ আপনি বৃত্তি প্রবৃত্তির উপরে অবস্থানকারী এই বাংলা তথা ভারতের একজন গুণী মানুষ। আপনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাডেমির ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। আপনি কি পারেন না তাঁর সমগ্র সাহিত্য ভান্ডার বাংলা আকাডেমির ছত্রছায়ায় এনে তাঁর মূল্যায়ন ক'রে তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে? তিনি ধর্ম জগতের লোক, ঠাকুর আখ্যা প্রাপ্ত বিস্ময় পুরুষ ব'লে কি তিনি বঞ্চিত হবেন? তাঁর মূল্যায়ন করার কেউ নেই? যদিও নেই একথা সত্যি কারণ তাঁর মত এমন সমস্ত বিষয়ে নিখুঁত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, বর্ণনা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। এই কথা কেন বললাম সেটা আপনি জানেন আর যারা তাঁর বিশাল জ্ঞান ভান্ডার স্টাডি করেছে তারা জানে।
যাই হ'ক আপনি ও আপনার মতন যারা গুণী মানুষ আছেন তাঁরা এগিয়ে আসুন। অন্তত প্রতিবারের মত এবারও ধর্ম্মগ্রন্থ ব'লে তাঁর অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বরের বি-শা-ল সাহিত্য ভান্ডারকে উপেক্ষা করবেন না, উপেক্ষিত হতে দেবেন না। যদিও জীবন্ত ঈশ্বর কোনো পুরুস্কারের লোভে সৃষ্টি করেন না তথাপি তাঁর গ্রন্থের প্রকৃত মূল্যায়ন হ'ক, সম্মান পাক তাঁর জীবন দর্শন ও জাগতিক সমস্ত বিষয়ের ওপর ব'লে যাওয়া অমূল্য রত্নসম বিপুল গ্রন্থ ভান্ডার! চালু হ'ক সমস্ত বিষয়ের ওপর ব'লে যাওয়া হাতে কলমে করা তত্ত্বকথা পাঠ্য হিসেবে স্কুল,কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে।
আপনার কাছে একজন শ্রীশ্রীঠাকুরের শিষ্য হিসেবে আমার আন্তরিক আবেদন আপনার জীবন সায়াহ্নের শেষ দিনগুলিতে ওকালতি হ'ক বিশ্বের বিস্ময় সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বিরাট সাহিত্যের স্বপক্ষে।
পরমপিতার রাতুল চরণে আপনার সর্বাঙ্গীন কুশল প্রার্থনা ক'রে চিঠি শেষ করলাম।
জয়গুরু।
No comments:
Post a Comment