মুসলমান ছেলের সঙ্গে হিন্দু মেয়ের বিয়ে আগে তো কখনও হয়নি, এটাই প্রথম; তাই না? দিল্লির শাহি ইমামের ছেলে বলে কথা! খবর তো হতেই হয় তাই না সাংবাদিক বন্ধু? দেশে যখন অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল তখন দুই ধর্মের বৈবাহিক সম্পর্ককে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে বড় প্রতিবাদ বলে তুলে ধরতে চাইছে সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু কিছু প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে এ প্রসঙ্গে। সাম্প্রতিক অসহিষ্ণুতার ঘটনা আর দুই ধর্মের ছেলেমেয়ের মধ্যে সম্পর্ক----এই দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান কতদিনের? দেশের মধ্যে ঘটে চলা অসহিষ্ণুতার ঘটনার প্রতিবাদ করার জন্যই কি এই দুই ধর্মের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন দুই পক্ষের অভিভাবকরা? দুই ধর্মের ছেলেমেয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তো খবরের সূত্র অনুযায়ী দু'বছরের; আর অসহিষ্ণুতার ঘটনা সাম্প্রতিক। এই অসহিষ্ণুতার ঘটনার সঙ্গে এই বিবাহের সম্পর্ক কোথায়? তাছাড়া খবরের সূত্র অনুযায়ী ইমাম সঈদ আহমেদ বুখারির ছেলে শাবান বুখারির সঙ্গে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ নিবাসী হিন্দু মেয়ের বিয়েতে কখনোই ইমামের অনুমতি ছিল না। এটা কি সাম্প্রদায়িক সহিষ্ণুতার বলিষ্ট উদাহরণ? নিজের ধর্মকে ত্যাগ করে ভালোবাসার মানুষের ধর্মকে গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে তবেই হিন্দু মেয়েকে মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে হয়েছে। এটাকে কি অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে বড় প্রতিবাদ বলা চলে? সংবাদ মাধ্যমের প্রচার করা এই খবরকে দেশের জ্ঞানী পন্ডিত মহল কি বলেন? শ্রদ্ধেয় ইমামের মত জ্ঞানী পন্ডিত মানুষ যখন ধর্ম ও সম্প্রদায় কে আলাদা করতে পারেন না, সহিষ্ণুতা প্রশ্নে উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ব্যর্থ হন, যখন প্রেমিক শিক্ষিত পুরুষ প্রেমের মুখোশ পড়ে সম্প্রদায় নিরপেক্ষ হতে পারেন না, পারেন না প্রকৃত ধর্মের অর্থ অনুধাবন করতে, পারেন না হিন্দু ধর্ম ত্যাগ না করিয়েই বহুদিনের জীবন সঙ্গিনীকে পবিত্র বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ করে জীবন সঙ্গিনী করে নিতে তখন সংবাদ মাধ্যমের এই ধরনের কলমের জোরে কপট প্রচার আর যাই হোক কখনোই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আনতে সাহায্য করতে পারে না; বরং ধর্মভেদ ও সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্বের উস্কানি দেয়। আর প্রেমিকার এই ধর্ম ত্যাগ আর যাই হোক উদারতা, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ইত্যাদি বড় বড় কথা অবশ্যই নয়। কেননা নারী হয়ে যদি সে তার পিতৃপুরুষের ঐতিহ্য, শিক্ষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ত্যাগ করতে পারে তাহলে সে নারীকে কি কখনোই আদর্শ নারী বলা চলে না-কি নারী হয়ে সে হয়ে গেল আনাড়ি? আর প্রেমিকার মত পুরুষ প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য কেন একই দৃষ্টান্ত স্থাপনে এগিয়ে আসার মত বড় মন, উদার হৃদয়ের পরিচয় দিতে পারলো না? নারী বলেই তাকে সব ত্যাগ করে পুরুষের হাত ধরতে এগিয়ে আসতে হবে এটাই ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি, শিক্ষা আর সভ্যতা? যে সভ্যতার বলাৎকার হয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে নারী পুরুষ উভয়ের হাত ধরেই। প্রশ্ন জাগে মনে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ধর্ম ত্যাগ করতে হবে কেন? যে যার ধর্মকে বজায় রেখেই, পালন করে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না? কোথায়, কোন শাস্ত্রে এর বিরোধিতা আছে? বিবাহ শব্দের একটা অন্তর্নিহিত মানে আছে। বিবাহ বিজ্ঞানভিত্তিক জৈবীসংস্থিতির আধার। সেখানে আলোকপাত নেই। আলোকপাত যত ধর্মের নামে অধর্মকে কেন্দ্র করেই। ধর্ম কি এতটাই ফালতু, ঠুনকো বিষয় যে যার জন্য আমাকে ধর্ম ত্যাগ করতে হবে? ধর্ম কি কোনও বস্তু নাকি যা যখন ইচ্ছা গ্রহণ ও ত্যাগ করা যায়? ধর্ম এতটাই সস্তা ফুটপাতের সামগ্রী যা কিনা কোনো নারী বা পুরুষকে লাভের জন্য পা দিয়ে ঠুকরে দেওয়া যায়? শাবাশ প্রেমিক! শাবাশ প্রেমিকা! শাবাশ অভিভাবক! শাবাশ সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যম! তোমাদের সবাইকে দীপাবলির শুভেচ্ছা ও শাবাশী জানাই!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
http://zeenews.india.com/bengali/nation/imams-son-married-with-a-hindu-girl-in-delhi_133249.html
http://zeenews.india.com/bengali/nation/imams-son-married-with-a-hindu-girl-in-delhi_133249.html
No comments:
Post a Comment