আমরা প্রথম পর্বে দেখেছি বাংলাদেশের প্রধান উপাদেষ্টা ড মহম্মদ ইউনুস পৃথিবীর সর্বনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, "পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা আসামী।" তিনি আরো বলেছেন যে, মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে না। উল্টো পথে চলছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে ড ইউনুস মানুষকে সাবধান ক'রে দিয়েছেন। পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য মানুষের লাইফ স্টাইলকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, মানুষকে তার লাইফ স্টাইল পাল্টাতে হবে।
এই যে উল্টো দিকে চলার কথা বললেন বাংলাদেশের প্রধান উপাদেষ্টা ড ইউনুস, এই উল্টো দিকে চলা বাংলাদেশ, আমার দেশ, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তাই।মানুষের জগতে উল্টো চলাটাই এখন সোজা চলা। ইন্ডিসিপ্লিনটাই এখন ডিসিপ্লিন হ'য়ে গেছে। বিশৃংখলায় এখন শৃংখলা। দুর্নীতি আর উন্নতি এখন দুই ভাই, হাত ধরাধরি ক'রে চলে। অসততা আর সততার এখন সহাবস্থান, সত্য-মিথ্যা এখন গলা জড়াজড়ি ক'রে চলে। আসল নকল এখন কাঁধে কাধ মিলিয়ে চলে। এইসমস্ত সঠিক আর বেঠিক সবকিছু ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা দখলের জন্য সময় সময়ের অস্ত্র। এই ঘোর কলিযুগে নকল ও ভেজাল জিনিসে অভ্যস্ত হ'য়ে গেছে মানুষ। এখন সবসময় দিনরাত কানের কাছে বেজে চলেছে, 'আসল ছেড়ে নকলেতে মনটা মজাও।' আসল জিনিস বা খাঁটি জিনিসে বদহজম হ'য়ে যাবে। নকল জিনিসের দৌরাত্মে আসল জিনিস না পেতে পেতে মানুষ আসল জিনিসের স্বাদই জানে না, জানে না তার স্বাদ কেমন। কার্বাইড পাকা ফল খেতে খেতে গাছ পাকা ফল কেমন খেতে তা জানে না। আর এ দৃশ্য এখন বিশ্বজুড়ে। নকল আর মিথ্যা এখন আসল ও সত্য হ'য়ে গেছে আর আসল আর সত্য এখন নকল ও মিথ্যা হ'য়ে গেছে। আসলের মুখোশ পড়ে নকল আর সত্যের মুখোশ পড়ে মিথ্যা যখন আমাদের সামনে জাগলারের ভূমিকায় হাজির হ'য়ে সকাল-সন্ধ্যা আসল-নকল ও সত্য-মিথ্যার জাগলিং খেলা দেখাচ্ছে আর আমরা সেই খেলায় বিভ্রান্ত হ'য়ে যেই আসল আর সত্যের দিকে ঝুঁকে পড়ছি না বুঝে আবেগে সরল মনে বিশ্বাস ক'রে অমনি বলি হ'য়ে যাচ্ছি, কোতল হ'য়ে যাচ্ছি নির্ম্মম, নিষ্ঠুরভাবে জাগলারের হাতে। তাই আমরা আজ বিভ্রান্ত। তাই সাধারণ মানুষও যখন যেমন তখন তেমন গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয় এতে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত হ'য়ে গেছে। দয়াল প্রভু ঈশ্বর আজ তাঁর সৃষ্ট জীবেদের কাছে অসহায়, আর তাই পৃথিবী ধ্বংস হবে তাঁর ভয়াল রূপে।
কথাটা বললাম এইজন্যে যে, প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে ড ইউনুস যা বলেছেন সেরকম আমার দেশেও মাঝে মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রোগ্রাম চলে। প্রকৃতির সঙ্গে তাল না মিলিয়ে চলা আমার দেশেও ঘটে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের সচেতনতার অভাব, এই কথাটা সত্যি হলেও শাসনব্যবস্থার অসীম ত্রুটি, শাসনব্যবস্থায় আসীন ব্যক্তির অসীম অজ্ঞানতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অসততা, অলসতা, অক্ষমতা, অভদ্রতা, অস্বচ্ছতা, অমানবিকতা, অনিচ্ছা ইত্যাদি যাবতীয় 'অ' সমৃদ্ধ জালি শাসন ব্যবস্থার কারণেই জনগণ উল্টো পথে চলতে সাহস পায়, পায় প্রশ্রয়। শাসনব্যবস্থার ত্রুটি ও ঢিলেমির কারণে এতে লাভবান হয় দুস্কৃতিকারী। একেবারে পুরো মেওয়া খেয়ে বেড়িয়ে যায় তারা। লম্ফঝম্পয় ভরা জনগণের অবস্থা দিনের শেষে সেই তিন নম্বর ছাগলছানার মত হয়, যে ছানা মায়ের দুধ খাওয়ার জন্য লাফিয়েই বেড়ায় দু'পাশে কিন্তু কোনও বাট পায় না, দু'টো বাটই মুখে দিয়ে দুধ টেনে খেয়ে ফেলে ১নং আর ২নং ছাগলছানা। আর ৩নং ছাগলাছানার মত জনগণ 'দিনগত পাপক্ষয়' ব'লে আফশোসের দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাটিয়ে দেয় জীবন। আগে দেশের মাথাকে ঠিক হ'তে হয়। দেশের মাথা ও শাসনব্যবস্থা ঠিক থাকলে, অকপট থাকলে দেশের জনগণ ঠিক থাকে।
এই যে লাইফ স্টাইল পাল্টানোর কথা বললেন ড ইউনুস সাহেব এই লাইফ স্টাইল পাল্টানো সম্পর্কে আমার অভিমত, মানুষের লাইফ স্টাইল তখনি পালটায় যখন মানুষ জীবন্ত আদর্শে কেন্দ্রায়িত থাকে। আর জীবন্ত আদর্শ হ'তে হয় সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত আদর্শ। সেই সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত আদর্শ হলেন শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, হজরত মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ এবং পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। ফলে মানুষের মধ্যে values grow করে, মানবিকতার জন্ম হয়। আর মানবিকতা কার থাকে? কে বুঝবে এই values? মনুষ্যত্ব থাকলে তবেই না মানবিকতার প্রশ্ন আসে। তবেই না বুঝবে জীবনের values-এর গুরুত্ব। আর যদি মনুষ্যত্ব ব'লে কিছু অবশিষ্ট থাকে তখনি মানুষ পৃথিবীর ভয়ঙ্কর সর্বনাশ সম্পর্কে সচেতন হয়, ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে। নতুবা সবটাই তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে কথার স্রোতে ভাসা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভালো ভালো কথা সবটাই বকোয়াসে পরিণত হয়। নিজের সঙ্গে নিজে চালাকি করা আর নিজেকে নিজে ফাঁকি দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। এতে সার্বিক সর্বনাশ ত্বরান্বিত হয়।
এইসব দেখে মনে পড়ে যায়, The greatest phenomenon of the world, The greatest wonder in the world দ্রষ্টাপুরুষ SriSriThakur Anukulchbadra আজ থেকে ১০০বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বলা সাবধান বাণীর কথা।
পরবর্তী ৩য় পর্বে শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা তুলে ধ'রে আলোচনা করবো আমাদের কথায় ও কাজে কতটা মিল, আমরা ঠিক কোন জায়গায় আছি। ধ্বংসের চরম কিনারায় নাকি স্বর্গ রচনার পথে।