আজ ২৩শে জানুয়ারী' ২০১৮ নেতাজির জন্মদিন। জন্মদিনের সকালে তাঁর কথা মনে পড়লো। মনের মধ্যে ভেসে উঠলো অনেক কথা, অনেক ছবি। এর মধ্যে শুধু মনের মধ্যে উঠে আসে তাঁর পৃথিবী বিখ্যাত কথা "আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।" এই কথার মধ্যে অর্থাৎ রক্ত দেওয়া এবং তার বিনিময়ে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার যে কথা রয়েছে সেই কথা আমাকে ভাবায়। ভাবায় এইজন্য বললাম যে, এই রক্ত দেওয়া ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া এই দুইয়ের মাঝে স্পষ্টতই যে ছবি ফুটে ওঠে সেটা হ'লো সেই চিরন্তন সত্য 'Give & Take Policy' অর্থাৎ 'দাও আর নাও তত্ত্ব'। এই যে দেওয়া নেওয়ার কথা তিনি বলেছেন এই রকম দেওয়া নেওয়ার কথা পৃথিবীর স্বাধীনতার ইতিহাসে আর কোথাও আছে? এরকম সরাসরি দেওয়া নেওয়ার কথা কোনো স্বাধীনতা সংগ্রামী বা নেতা আজ পর্যন্ত কোথাও কখনও বলেছেন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই জটিলতার মধ্যে এত দৃঢ়তার সঙ্গে, এত বিশ্বাস ও বলিষ্টতার সঙ্গে তিনি বলছেন 'আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো'! ভারতের আর কোনও নেতা এত গভীর বিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পেরেছিলেন সেদিন ভারতবাসীর কাছে স্বাধীনতা দেওয়ার কথা!? ঈশ্বরের চরণে ফুল নিবেদন করার মত ভারতবাসীর হাতে স্বাধীনতা তুলে দেওয়ার কথা এমনভাবে বলেছিলেন সেদিন আমাদের নেতাজী আজ স্বাধীনতার ৭০বছর পর আজকের পবিত্র দিনে ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই ঠাকুরের ফটোর সামনে বসে মনের মধ্যে জেগে উঠলো কেন তাঁকে নেতাজী বলা হয়!? ভারতের আকাশে এত নেতা, এত অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব থাকা সত্বেও কেন শুধু তিনিই ইতিহাসের বুকে 'নেতাজী হিসাবে আখ্যা পেলেন!? কেন আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভিড়ে তাঁকেই শুধু ভারতবাসী জাতি, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই এক ও অদ্বিতীয় নেতাজী হিসাবে হৃদয় মাঝে স্থান দিলো!? এইখানেই নেতা হিসাবে স্বার্থকতা। এইখানেই সেই গানের কলি স্মরণ করা যেতে পারে, “তোমায় হৃদমাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না।“ আর স্মরণ করি ‘সত্যানুসরণ’ গ্রন্থের কথা। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শ্রীহস্ত লিখিত একমাত্র গ্রন্থ ‘সত্যানুসরণে’ তিনি বলেছিলেন যে অমোঘ বাণী সেই বাণী নেতাজীর জীবনে পূর্ণ চন্দ্ররূপে আলোয় আলোকিত হ’য়ে প্রকাশ পেয়েছিল।
সত্যানুসরণ গ্রন্থে তিনি বলেছেন,
“যে আগে ঝাঁপ দিয়েছে, আগে পথ দেখিয়েছে, সেই নেতা; নতুবা শুধু কথায় কি নেতা হওয়া যায়? আগে অন্যের জন্য যথাসর্ব্বস্ব ঢেলে দাও, দশের পায়ে মাথা বিক্রয় কর, আর, কারো দোষ ব’লে দোষ দেখা ভুলে যাও, সেবায় আত্মহারা হও, তবে নেতা, তবে দেশের হৃদয়, তবে দেশের রাজা। নতুবা ও-সব কেবল মুখে-মুখে হয় না। যদি নেতা হ’তে চাও, তবে নেতৃত্বের অহংকার ত্যাগ কর, আপনার গুণগান ছেড়ে দাও, পরের হিতে যথাসর্ব্বস্ব পণ কর, আর, সকলকে প্রেমের সহিত বল; দেখবে হাজার-হাজার লোক তোমার অনুসরণ ক’রবে।“
এখন পাঠকবর্গ ঠাকুরের নেতা সম্পর্কিত বাণীর সঙ্গে আমাদের ভারতের গর্ব নেতাজীর স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন মিলিয়ে নিক নিজের নিজের বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। ঠাকুরের বাণী যে কারও জীবনে বাস্তব হ’য়ে উঠতে পারে তা আজ নেতাজীর জন্মদিনের সুপ্রভাতের আরো অনেক আগে আলোআঁধারি পরিবেশে টের পেলাম। এই সেই ভারতের নেতা যার পিতামাতা ঠাকুরের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন, এই সেই নেতা যার পিতামাতা শ্রীশ্রীঠাকুরের রাতুল চরণে সমস্ত অর্পণ ক’রে দিয়েছিলেন, এই সেই নেতা যিনি ঠাকুরের কাছে তিন তিনবার গিয়েছিলেন তাঁর দর্শন লাভের জন্য, এই সেই সত্যানুসরণের বাণীর জীবন্ত প্রতিবিম্ব, জ্বলন্ত রূপ যার ঘরে আজও, যে ঘর থেকে তিনি অন্তর্ধান হ’য়েছিলেন সেই ঘরের দেওয়ালে আজও টাঙ্গানো আছে পরম দয়াল শ্রীশ্রীঠাকুরের ছবি।
তাই আজকের এই পবিত্র দিনে তাঁর কথা স্মরণ করতে গিয়ে বারবার খালি মনে হয়, আজকের এই ভারতবর্ষের জন্য তিনি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন!!!!!!!! কত কষ্ট, কত যন্ত্রণা, কত অপমান, অপবাদ পেয়েছিলেন স্বাধীনতার সময় ও স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ সময়ে ভাবলে বুকের ভেতরে কষ্ট হয়, ব্যাথা হয়। খালি মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসে, বাড়ীর খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে তিনি কি পেলেন? ন্যুনতম সম্মানটুকুও তিনি পাননি স্বাধীনতা পরবর্তী আজ পর্যন্ত কোনও দল, কোনও সরকার বা নেতৃবৃন্দের কাছে তথা দেশবাসীর কাছ থেকে। শাবাশ! ভারত শাবাশ! শাবাশ! দেশের সমস্ত নেতৃবৃন্দ শাবাশ! শাবাশ দেশের জনগণ! শাবাশ!!!!!!!!
(লেখা ২৪শে জানুয়ারী'২০১৮)
No comments:
Post a Comment