Powered By Blogger

Sunday, January 15, 2023

প্রবন্ধঃ সৌরভ গাঙ্গুলি বনাম বিরাট কোহলি।

কয়েকদিন ধ'রে দেখছি ক্রিকেটার বিরাট কোহলি আর প্রাক্তন ক্রিকেট আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব সৌরভ গাঙ্গুলিকে নিয়ে একটা বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেই বিতর্কে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু ক'রে অসাধারণ(?) মানুষেরা যে যা পারছে মন্তব্য ক'রে যাচ্ছে আর আগুনে ঘি ঢেলে চলেছে। আর এই ঢালা পরিকল্পিত এবং সেই পরিকল্পনার সঙ্গে সাধারণ মানুষ অজান্তে জড়িয়ে পড়ছে আর দু'ভাগে বিভক্ত হ'য়ে পড়ছে। সবেতেই রাজনীতি! এটা এ পোড়া দেশে একটা স্বাভাবিক সংস্কৃতি এবং এই সংস্কৃতি বেশ গ্রহণযোগ্য হ'য়ে উঠেছে এবং বিশেষ ক'রে ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে। এটাই এখন দেশের প্রধান বিষয় এবং তা সমস্ত ক্ষেত্রের----- তা সে রাজনীতি, ধর্ম্ম, শিক্ষা, ক্রীড়া ইত্যাদি ইত্যাদি তা সে যে বিষয় হ'ক না কেন------ইয়ং জেনারেশনের মাথা দাও গুলিয়ে, মাথার ঘিলু দাও চটকে যাতে সে কোনওদিনই খুঁজে না পায় সমস্যার উৎস ও সর্ব্বাঙ্গীন সমাধান।
যাই হ'ক, কোনও কোনও ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের কমেন্ট পড়লেই বেশ বোঝা যায় প্রাক্তন বিতর্কিত অভূতপূর্ব জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক তারকা ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে গায়ের ঝাল মিটিয়ে নেওয়ার মোক্ষম সুযোগ তারা পেয়ে গেছে; আর তা মিটিয়ে নেওয়ার সুযোগ কোনও অবস্থাতেই হাতছাড়া করলে চলবে না। যেমন আমরা দেখেছি গ্রেগ চ্যাপেলের সময়; একজন নোংরা মনের মানুষকে দেশের মানুষেরাই সাথ দিয়েছিল দেশেরই একজন প্রতিভাবান সম্পদ দেশের গৌরব সৌরভ গাঙ্গুলির ক্যারিয়ার ধ্বংস করার জন্যে। তখন সমস্ত ক্রিকেট দিকপালরা চুপ ক'রে বসে বসে তামাশা দেখেছিল! কেউ মুখ খোলেনি সেদিন! কেউ সেদিন গ্রেগ চ্যাপেলের ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে সেদিনের অত্যাশ্চর্য ক্রিকেট প্রতিভাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। আর সেদিন বিসিসিআই-এর সভাপতির পদ অলংকৃত করা একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার কিরণ মোরের একজন প্রতিভাবান নবীন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টির খোলাখুলি নগ্ন আচরণ বিস্মিত করেছিল আপামর আবেগপ্রবণ চিন্তাশীল দুনিয়াকে। যেমন বিস্মিত করেছিল ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব না হ'য়েও ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করার জন্য বিশ্বে ভারতকে অপ্রতিরোধ্য ক'রে তোলার জন্য ক্রিকেট মস্তিষ্ক, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ অবিসংবাদিত ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়ার অবদান!!!!! এরকম কিরণ মোরের মতন অন্ধকার দিক যেমন আরও আছে, সেগুলি আর নাই বা লিখলাম; ঠিক তেমনি জগমোহন ডালমিয়ার মতন আলোর দিকের ট্রাডিশন বজায় রেখে চলেছে প্রকৃত ক্রিকেট মস্তিষ্ক, বিশেষজ্ঞ, ক্রিকেটকে ভালবাসার অকৃত্রিম ব্যক্তিত্ব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আর সেই যোগ্য লোককে খুঁজে নেওয়ার কাজ যারা করেছে তাঁরা নিঃসন্দেহে প্রণম্য। তাদের জানাই স্যালুট।
তবে আরও একবার ভারতীয় ক্রিকেটকে যে অন্ধকারের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়েছে তার নমুনা বিরাট কোহলিকে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়ার নোংরা খেলা, চক্রান্ত। তবে এ লড়াইয়ে বরাবরের মতো মাথা উঁচু ক'রে ফিরে আসবে সৌরভ গাঙ্গুলি এ নিশ্চিত কিন্তু বিরাট কোহলি যেন তার পক্ষে অবস্থানকারী সুহৃদদের সম্পর্কে থাকে সাবধান! কারণ তার এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে ক্রিকেট বিশ্বকে। চক্রান্তের শিকার হ'য়ে সলিল সমাধি না ঘটে প্রতিভার। শুধু বলতে পারি, বিরাট! কন্ট্রোল ইউরসেলফ, কন্ট্রোল!
আর এই চক্রান্ত ঘরে-বাইরে হ'য়েই চলেছে। কিরণ মোরে, গ্রেগ চ্যাপেলের মত ব্যক্তিত্বরা চিরকাল ছিল, আজও আছে আর আগামীতেও থাকবে; তা সে মাঠের ভিতর থেকেই হ'ক আর বাইরে থেকেই হ'ক আমৃত্যু এই সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু ইনজেক্ট ক'রে যাবে।। আর ফলে আগামীতেও গ্রেগ চ্যাপেলের মত বিদেশীরাও সুযোগ পেয়ে যাবে বাইরের লোক হ'য়ে ঘরের মাঠে ঘরের লোকের সহযোগীতায় ঘরের লোককে পা দিয়ে চটকে ফট ক'রে পটকা ফাটিয়ে কচলে ফ্যাদা বের ক'রে দেওয়ার।
তবে আশ্চর্যের বিষয় এখনও পর্যন্ত কিরণ মোরে জী বিতর্কের ময়দানে নাবেনি সৌরভ বিরোধীতায় এটাই এখনও পর্যন্ত বোধহয় সেরা মাষ্টার স্ট্রোক, অত্যাশ্চর্য নবম আশ্চর্য!!!!!!
বিরাট কোহলির নেতৃত্ব হারানোর প্রশ্নে কোন পক্ষ ঠিক আর কোন পক্ষ বেঠিক সেই প্রশ্ন তুলে কাউকে ছোট বা বড় করা যায় না। কে সত্য আর কে মিথ্যা সে প্রসঙ্গ তুলে কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজের প্রতিভার প্রতি সঠিক বিচার বা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা যায় না। আসল সব সময় নোংরা বিতর্কের আড়ালে চাপা পড়ে যায়। মানুষের চরিত্র, মানুষের ব্যবহার তাঁর পরিচয়। কব্জির জোর দিয়ে, দিমাগের জোর দিয়ে সহ্য ও ধৈর্য শক্তির মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করতে হয় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব। এ ছাড়া বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি দিয়ে কাউকে ছোট বা বড়, সৎ বা অসৎ, সত্য বা মিথ্যা অথবা নিজের অনুগামী বিতর্ক ব্যক্তিত্বদের দিয়ে নিজের ফেবারে কথা বলিয়ে 'আমি সত্য' 'আমি ঠিক' 'আমি শ্রেষ্ঠ' প্রমাণ করা যায় না। যেটা আমরা দেখেছিলাম সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে তাঁর ক্রিকেট জীবনে বারবার খাঁড়ার নীচে দাঁড়িয়ে থেকে মুখ বুজে কিভাবে জবাব দিয়েছিল নোংরা ক্রিকেট দুনিয়াকে। সেদিন কেউ ছিল না পাশে। একা মাঠে ও মাঠের বাইরে 'লড়কে লেঙ্গে আপনা দুনিয়া' দর্শনে বিশ্বাসী থেকে খাদের নীচ থেকে উঠে এসেছিল বারবার অবিসংবাদিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়!!
শুধু একটা দিক দিয়ে সেরা হ'য়ে কমপ্লিট প্লেয়ার বা সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব হওয়া যায় না। আর একজন কমপ্লিট প্লেয়ারের সঙ্গে একজন ব্যাটিং-এ সফল প্লেয়ারের তুলনা করা ভারতের মত পা চাটা দেশেই সম্ভব! শুধু ব্যাটিং বোলিং বা ফিল্ডিং-এ সফল কিম্বা শুধু ক্যাপ্টেন্সিতে সফল অথবা মাঠের ভিতরে ও বাইরে টিম বন্ডিং-এ অসাধারণ নৈপুণ্য পারফরমেন্স ইত্যাদি ইত্যাদিতে একজন সফল মানুষ আর ক্রিকেটের সব দিকের বা অন্য সব বিষয়ের অনুকূল ও প্রতিকূল উভয় দিকের পরিস্থিতি ও পরিবেশে সইয়ে বইয়ে মানিয়ে নিয়ে শরীর-মনের ভারসাম্য বজায় রেখে সময় মতো মোটর নার্ভ আর সেন্সরি নার্ভের সমন্বয় ঘটিয়ে পরিস্থিতি-পরিবেশ নিজের অনুকূলে, টিমের অনুকূলে সর্বোপরি দেশের অনুকূলে নিয়ে আসার মধ্যে যে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়ে একজন কমপ্লিট হ'য়ে ওঠার যে পুরস্কার পাওয়া সম্ভব হয়, জয়ী হয় তা একমাত্র গড গিফটেড ছাড়া সম্ভব হয় না। পুরুষকার দিয়ে অনেক কিছুই ঘটানো যায় কিম্বা দৈব শক্তির সাহায্যে চমকদারী কিছু হঠাত ক'রে দেখানো যায় কিন্তু যখন দৈব আর পুরুষকারের মিলন ঘটে তখন সমস্ত 'না' হ'য়ে যায় 'হ্যাঁ,' আর সমস্ত 'অসম্ভব' হ'য়ে যায় 'সম্ভব' এক লহমায়। এর জন্যে জন্মের পর শৈশব অবস্থা থেকেই কিছু ভ্যালুজ-এর প্রয়োজন হ'য়ে পড়ে। বিরাট খেলোয়ার, বিরাট অভিনেতা, বিরাট সাহিত্যিক, বিরাট ইত্যাদি ইত্যাদি হওয়া আর কমপ্লিট ব্যক্তিত্ব হওয়া এক জিনিস নয়। আম আর আমলকী যেমন এক নয়, জল আর জলপাই যেমন এক নয় ঠিক তেমনি আংশিক বিকাশ আর সর্ব্বাঙ্গীন বিকাশের মধ্যে আকাশপাতাল, স্বর্গ নরক তফাৎ আছে। যেমন তফাৎ আছে গাছ পাকা ফল আর কার্বাইড পাকা ফলের মধ্যে। যেমন তফাৎ আছে জন্মগত প্রতিভা আর পরিশ্রম ক'রে ক'রে কোনও বিষয়কে রপ্ত করার মধ্যে। যেমন রবীন্দ্রনাথেরা জন্মায়। কষ্ট ক'রে পরিশ্রম ক'রে রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না; কষ্ট ক'রে, পরিশ্রম ক'রে স্কুলের হেডমাষ্টার বা কলেজের প্রিন্সিপ্যল হওয়া যায় কিন্তু রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না। পেডিগ্রি ব'লে একটা কথা আছে।
যাই হ'ক, সমঝদারকে লিয়ে ইসারা কাফি হোতা হ্যাঁয়। যে যার জায়গায় মহান। পরিশ্রম ক'রে ক'রে একটা লক্ষ্যে পৌঁছনো যায় ব'লে পরিশ্রমের কোনও বিকল্প হয় না। আর পেডিগ্রি পেডিগ্রি! পেডিগ্রির পিছনে একটা সুদূর ধারাবাহিক রক্তবাহিত ইতিহাস আছে। আবার পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে একইভাবে উত্তরসূরি যদি পূর্বসূরীকে নিখুঁত নিশানায় অনুসরণ ক'রে চলে তাহ'লে তা একদিন পেডিগ্রিতে পরিণত হয়। তাই কারও সাথে কারও তুলনা করাটা বা অসম আলোচনা করাটাই অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়।
আর, সৌরভ গাঙ্গুলিরা পেডিগ্রি!!!!!!!

No comments:

Post a Comment