এটা কোন সময়ের ঘটনা? ল্যাজা মুড়ো বাদ দিয়ে এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবর প্রচার করার পিছনে কারণ কি? কেন এমন রাতের অন্ধকারে "এখানে প্রস্রাব করিবেন না" বিজ্ঞাপনের 'না' মুছে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার, বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে শয়তানি করার, সমাজকে কলুষিত করার মত 'স্থান, কাল, কেন ও কি কারণ ইত্যাদি' বাদ দিয়ে "মুসলিম হ'য়ে ভাবিনি এমন দৃশ্য দেখতে হবে" ভিডিও প্রচার ক'রে সম্প্রদায়গত বিরোধ লাগাবার জন্য ও অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য এরকম নোংরা চক্রান্ত ও ঘৃণ্য প্রচেষ্টা কেন!?!? এর বিরুদ্ধে জ্ঞানী, গুণী, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন, সমাজ সচেতন, মানবপ্রেমী, সৎ নেতানেত্রী, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ইত্যাদি নেটিজেনরা ফেসবুকের মত এমন স্ট্রং মিডিয়ার মধ্যে দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি সকালদুপুর, সন্ধ্যেরাত্রি বারংবার জানান দেওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের সুচিন্তিত মতামত দান করেন না!? কেন!? কারণ কি!? সমাজের ও দেশের সুনাম, উন্নতি ও সভ্যতা রক্ষা করার জন্য এবং গরীব দুঃস্থ ভুক্ত অশিক্ষিত মানুষের জন্য ও তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য এইসমস্ত নেটিজেনদের বিবেক কি বলে!? সবটাই কি মুখ আর মুখোশের খেলা!?
যাই হ'ক, এই ভিডিওর দৃশ্য তো করোনার ভয়াবহতা যখন প্রায় গোটা বিশ্বকে গ্রাস ক'রে ফেলেছিল ঠিক সেই সময়ের দৃশ্য! সেই সময় ভারত এই মহামারীর হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রাথমিকভাবে কোমল এবং পরবর্তীতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল; আর এই পদক্ষেপ গ্রহণ সম্প্রদায় নিরপেক্ষভাবেই গ্রহণ করা হয়েছিল। ভারতে সমস্ত সম্প্রদায়ের উপর এই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ-ই ১৩২কোটি দেশে মহামারীর আকার ধারণ করতে দেয়নি। সমস্ত মন্দির মসজিদ গির্জা এর আওতাভুক্ত ছিল। সমস্ত রাজ্যে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের উপর কঠোর প্রশাসনিক শাসন ব্যবস্থা লাগু হয়েছিল। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান ইত্যাদি কোনও ভেদাভেদ ছিল না। কিন্তু একশ্রেণীর বেয়াদপ মানুষ দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে তা মানছিল না, তা আমরা দূর দর্শনের মাধ্যেমে দেখতে পেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পার্ক স্ট্রীটে করোনার ভয়াবহ অবস্থার সময় মুসলমান সম্প্রদায়ের রাস্তা অবরোধ আন্দোলন কেন্দ্র সরকারের আবেদনে কর্ণপাত করেনি! অথচ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ও কেন্দ্রীয় সরকারী তরফে নেওয়া হয়নি পালটা কড়া ব্যবস্থা। অবস্থা নাগালের বাইরে যাবার উপক্রম হ'লে রাজ্যের তরফ থেকে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের আবেদনে ও অনুরোধে সেই আন্দোলন তুলে নেওয়া হয়। ফিরহাদ হাকিম আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেছিলেন করোনা মুক্ত পরবর্তী সময়ে তাদের পাশে থাকার আবেদন জানিয়ে। ফিরহাদ হাকিম ( Firhad Hakim (ফিরহাদ হাকিম) serving as Cabinet Minister of Urban Development and Municipal Affairs Government of West Bengal and the Mayor of Kolkata which is the third Megacity in India. He is a member of the All India Trinamool Congress party, Hakim was elected to the West Bengal Legislative Assembly in 2009. Two years later, he became a cabinet minister in the Mamata Banerjee ministry. In December 2018, he was elected mayor following the resignation of the incumbent Sovan Chatterjee. He is the first Muslim since the independence of India to become the mayor of the city.)-এর আবেদনে সাড়া দিয়ে মুসলমান সম্প্রদায় আন্দোলন বন্ধ করেন। করোনার ভয়ংকর মারণ যজ্ঞে এমন অবিবেচকের মত অমানবিক কাজ কারা করেছিল? আর তার বিরুদ্ধে কোনও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল কি? হয়নি। করোনাকালীন এমন কাজ ভারতের রাজধানী দিল্লি ও অন্যান্য মুসলিম প্রধান অঞ্চলেও হয়েছে কিন্তু কোনও অবস্থায় ভারতের শাসন ব্যবস্থায় তা লাগাম ছাড়ায়নি। এই ভিডিওতে ভুল বানানে লেখা হয়েছে "আমাদের মুসলিম ভাইদের কি ওবস্তা নামাজ পড়ার সুযোক টাও নেই (ভারত)"
আমি তাদের আশ্বস্ত ক'রে বলি,
ভারতে যে সুযোগ আছে সে সুযোগ বিশ্বে আর কোথাও আছে কিনা এই অপ্রিয় সত্য কথা বললেও বিতর্ক শুরু হ'য়ে যাবে। কারণ বিতর্ক আজ আমাদের অস্তিতে মজ্জায় ঢুকে গেছে। সব দেশেই সব কালে বিশৃঙ্খলাকে ধর্মীয় রীতিনীতি ও শৃঙ্খলা হিসেবে দেখানোটাই আমাদের স্বভাব হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। ইদ বা অন্য মুসলমান ধর্ম অনুষ্ঠান পালনের সময় ভারতে নামাজ পড়ার সুন্দর দৃশ্য টিভিতে ও নেট ব্যবস্থার কারণে আমরা তা দেখতে পাই। এখন আর কোনও কিছু দেখা অসম্ভব নয়। একটা মারণ রোগকে প্রতিরোধ করা ও তার ছোবলের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্ম। স্বপারিপারশ্বিক বাঁচা ও বাড়া ছাড়া আর কোন ধর্মের কথা বলে মুসলমান বা বিশ্বের অন্যান্য ধর্ম!? ধর্ম কি বিজ্ঞান অস্বীকার করে? ধর্ম কি এই কথা বলে তুমি জীবনীয় রীতিনীতি বাদ দিয়ে মরণীয় যা তাকে ধর্মের নামে ঈশ্বরের নামে জীবনে গ্রহণ করো!? ধর্ম কি এই কথা বলে যে ধর্ম মানে কুসংস্কার!? ধর্ম কি এই কথা বলে যে ধর্ম পালন করা মানে জীবন রক্ষা ও জীবন বৃদ্ধির যা কিছু অন্তরায়, যা কিছু ক্ষতিকর তাকে ধর্মের মোড়কে মুড়ে গোঁড়ামির আধিখ্যেতায় আল্লা বা ঈশ্বর বা গডের দোহাই দিয়ে তাঁর উপরে দায় চাপিয়ে দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে যা ইচ্ছা তাই ক'রে যাও!? ধর্ম কি অবাস্তব অবৈজ্ঞানিক অস্তিত্ব ধ্বংসকারী কর্মসূচীকে সমর্থন করে!? এমন অনেক প্রশ্নই করা যেতে পারে। কিন্তু যে প্রশ্ন আজ মনপ্রাণ অস্থির ক'রে তোলে তা হ'লো আমরা যারা মূর্খ বোকা বেকুব দুর্বল মানসিকতার লোক তারা নাহয় অদূর ভবিষ্যতের ভয়ংকর মৃত্যু স্রোতকে দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিদগ্ধজনেরা কি ভবিষ্যত ভয়ংকর সম্প্রদায়গত বিরোধ বিদ্বেষের বিষে জর্জরিত মৃত্যুলীলার হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন না!? এত দেখতে পান আপনারা আর তা ভেসে ওঠে আপনাদের কবিতায়, শিল্পে, সাহিত্যে ইত্যাদি নানা মাধ্যমে আর এই আশনি সঙ্কেতের টের পান না!?
কি বলেন নেটিজেনরা? নেটিজেনরা কিছু বলুন। বলবেন না? চুপ ক'রে থাকবেন?
(লেখা ১৮ই জানুয়ারী'২০২১)
No comments:
Post a Comment