Powered By Blogger

Sunday, February 5, 2023

প্রবন্ধঃ আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরা এবং আচার্য অনুসরণীয় কেন? ( ১ )

ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সহ তেত্রিশ কোটি দেবতা রুষ্ট হ'লে মহাপ্রলয় অনিবার্য। আর সৃষ্টি হবে ধ্বংস। তিনি বা তাঁরা রুষ্ট হ'লে কেউ রক্ষা করতে পারেন না। মানুষকে ফল ভোগ করতে হয়।
একমাত্র সেই মহাপ্রলয়ের ধ্বংসের হাত থেকে সৃষ্টিকে কিম্বা দেবতার রোষের হাত থেকে আমার জীবনকে রক্ষা করতে পারেন গুরু। গুরু অর্থাৎ সদগুরু; অর্থাৎ পরমপিতা, জীবন্ত ঈশ্বর, পুরুষোত্তম। পুরুষোত্তম হ'লেন রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মোহাম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ এবং পূর্বাপূরক বর্তমান পুরুষোত্তমম্ শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। পুরুষোত্তম পরমপিতা সদ্গুরুই পারেন একমাত্র দেবতাদের রুষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে। যে কেউ সদগুরু হ'তে পারেন না। একমাত্র সদগুরু হ'লেন উপরে বর্ণিত আটজন। সদ মানে অস্তিত্ব (existence). আর অস্তিত্বকে অন্ধকারের বুক চিরে আলোর বুকে নিয়ে এসে বাঁচিয়ে রাখেন এবং বৃদ্ধির পথে নিখুঁত ভাবে চালিত করেন যিনি তিনিই একমাত্র সদগুরু। নামের আগে সদগুরু বসালেই সদগুরু হ'য়ে যান না। একমাত্র সময় তাঁকে স্বীকৃতি দেন।
সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। সেই এক ও অদ্বিতীয় তিনিই বারবার যুগের প্রয়োজনে তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করতে নেবে এসেছেন। নেবে এসেছেন আট আটবার উপরে বর্ণিত নামরূপে মানুষের মাঝে মানুষ মায়ের গর্ভে সাধারণ মানব রূপে তাঁর সৃষ্টিকে, সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকে রক্ষা করতে। কয়লার মাঝে যেমন হীরে লুকিয়ে থাকে, মুক্তো যেমন সুক্তির বুকে আত্মগোপন ক'রে থাকে ঠিক তেমনি তিনি মানুষের মাঝে অতি সাধারণ এক মানুষ রূপে আত্মগোপন ক'রে থাকেন। একমাত্র প্রেমীই সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে চিনতে পারে, ধরতে পারে, বুঝতে পারে। সেই পরমপ্রেমীক পুরুষই হ'লেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব।

শিক্ষিত আর জ্ঞানী সমার্থক। জ্ঞানী মাত্রেই শিক্ষিত আর শিক্ষিত মানেই জ্ঞানী। জ্ঞানীর অর্জিত জ্ঞান বা শিক্ষা তাঁর জীবনে, কথায়-বার্তায়, চলাফেরা, আচার-আচরণে, ব্যবহারে, কর্মে প্রস্ফুটিত, বাস্তবায়িত। জ্ঞানীকে দেখলেই বোঝা যায়, চেনা যায়। ফুলের সৌরভ যেমন ছড়িয়ে পড়ে আকাশে বাতাসে ঠিক তেমনি জ্ঞানীর জ্ঞান, শিক্ষিতের শিক্ষা ফুটে ওঠে তাঁর জীবনে। সৎসঙ্গের বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব আমাদের বলেন, "যদি জিজ্ঞেস করে তোমার ঠাকুর কেমন? আমি বলবো, আমি বলবো কেন আমার ঠাকুর কেমন? আমাকে দেখে বোঝো আমার ঠাকুর কেমন।"
এইকথার অন্তর্নিহিত অর্থ গভীর ও ব্যাপক। ঠিক তেমনি জ্ঞান বা শিক্ষার পরিচয় কি? রূপ কেমন? চরিত্রই জ্ঞান বা শিক্ষার রূপ। যদি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে অর্জিত জ্ঞান ফুটে না বেরোয়, শিক্ষার ছাপ না পড়ে চরিত্রে তাহ'লে সে জ্ঞানী বা শিক্ষিত নয়। সে লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ। লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ বই পড়ে বই হ'য়ে গেছে। বইয়ের এসেন্সকে মজ্জাগত করতে পারেনি। বইয়ের এসেন্স যার মজ্জাগত সেই জ্ঞানী, শিক্ষিত।
এই বইয়ের এসেন্সের মতো শ্রীশ্রীঠাকুরের এসেন্স যার মজ্জাগত তিনি হ'লেন আমাদের শ্রীশ্রীআচার্যদেব।
তাই বইয়ের এসেন্স অর্জনে ব্যর্থ ও বই পড়ে বই হ'য়ে যাওয়া মানুষ হ'লো লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ। আর লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষ আর অজ্ঞানী সমার্থক। তাই এইসমস্ত লেখাপড়াজানাওয়ালা মানুষকে ইংরাজিতে literate বলা হয়; আর, শিক্ষিত মানুষকে বলা হয় educated। শ্রীশ্রীআচার্যদেব হ'লেন সেই জ্ঞানী, আচরণসিদ্ধ, উপলব্ধিবান, অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ একজন শিক্ষিত মানুষ (educated man)।
(লেখা ১৮ই জানুয়ারী'২০২৩)

No comments:

Post a Comment