Powered By Blogger

Sunday, February 5, 2023

প্রবন্ধঃ আচার্য প্রথা ও আচার্য পরম্পরা এবং আচার্য অনুসরণীয় কেন? (৩)

আজ 'সৎসঙ্গ'-এর সৎসঙ্গীরা আচার্য অনুসরণের মধ্যে দিয়ে দেওঘরে ও নিজের জীবনে সবসময় শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন্ত উপস্থিতি অনুভব করেন। দেওঘর ঠাকুরবাড়ি থেকে যখনই আসি তখনই প্রাণে একটা উত্তেজনা, নির্মল আনন্দ, বিশ্বাস, নির্ভরতা অনুভব করি। যা জীবনদায়ক টনিকের কাজ করে। এ কথা বোঝে সে, যার প্রাণ বোঝে। যার অভিজ্ঞতা আছে। যে বা যারা যায় তাঁদের কাছে ছুটে ছুটে বারেবার। এ কথা অবিশ্বাসীদের কাছে অতিরঞ্জিত মনে হ'তে পারে, হাসির উদ্রেক সৃষ্টি করতে পারে। তারা তাদের নিজের জীবনের অস্থিরতা দিয়ে, হতাশা, অবসাদগ্রস্থতা দিয়ে, নিরানন্দময় জীবন দিয়ে ব্যঙ্গাত্মক হাসি হাসতে পারেন, বোগাস, বুঝরূকি ব'লে উড়িয়ে দিতে পারেন এইসব মূল্যবান অভিজ্ঞতাকে। কিন্তু এমন জীবনদায়ক টনিকের বিকল্পের খোঁজ তারা দিতে পারবেন না কোনোদিন। না নিজেরা আনন্দ ধারা খুঁজে পায় এ ভুবনে, না অন্যদের দিতে পারে খোঁজ। এমনই হতাশাগ্রস্থ জীবন তাদের। অথচ বিশ্বাসীদের কানে কানে বিষ ঢালতে অভ্যস্ত, বিশেষজ্ঞ এরা।

আজ যদি শ্রীশ্রীঠাকুর রেত শরীরে লীলা না করতেন বংশধরদের মধ্যে দিয়ে তাহ'লে বিশ্বজুড়ে পরিব্যাপ্ত 'সৎসঙ্গ' আন্দোলনের কি হ'তো তা ভাবলেও শিউড়ে উঠতে হয়। শ্রীশ্রীঠাকুরের দেহ রাখার মাত্র ৫৪ বছরের মধ্যে বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশে ছড়িয়ে পড়েছে শ্রীশ্রীঠাকুরের জীবন দর্শন! সমস্ত বিশ্বের দিকে দিকে আজ শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্দির। আর সেইসমস্ত দূর্গরূপী মন্দিরের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে নিঃশব্দে নীরবে সৎসঙ্গ-এর বাঁচা-বাড়ার আন্দোলন। ভারতবর্ষের প্রতিটি রাজ্যের জেলায় জেলায় আজ ঠাকুরের মন্দির! আর এই বিশাল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে ভারতবর্ষের ছোট্ট রাজ্য ঝাড়খন্ডের দেওঘর থেকে। সারা বিশ্বের কোটি কোটি সৎসঙ্গী আজ পরিচালিত হচ্ছে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নির্দেশে। শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীঃ "এক আদেশে চলে যারা, তাদের নিয়ে সমাজ গড়া" আজ বাস্তবায়িত হয়েছে সৎসঙ্গে সৎসঙ্গীদের মাঝে। এই দেখেও চোখ খোলে না বিরোধীদের, সমালোচনাকারীদের।

কি সেই যাদু যা শ্রীশ্রীঠাকুরের সময় থেকে চলে আসছে!? শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে যেমন ছুটে ছুটে যেত দেশ বিদেশ থেকে আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু, জ্ঞানী ঠিক তেমনি দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের কাছে তাদের জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে, প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা নিয়ে! ছুটে আসতো শ্রীশ্রীবড়দার কাছে, আসতো শ্রীশ্রীদাদার কাছে, আসে বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কাছে। আর অশান্ত মন, অতৃপ্ত হৃদয় শান্ত, তৃপ্ত হ'য়ে ফিরে যায় নিজ নিকেতনে। এ কোনও গল্প কথা, বানানো কথা বা গাঁজাখুরি প্রবচন নয়। ঘরের কোণে বসে না থেকে দেওঘরে গিয়ে সমালোচনাকারী বিদ্রুপকারীরা দেখে আসলেই পারে।
আজ ঘরে ঘরে ভাঙ্গন। বাপের পাঁচ ছেলের মধ্যে কারও সঙ্গে কারও সম্পর্ক নেই। রাজনৈতিক দলগুলি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হ'য়ে আঞ্চলিক শ'য়ে শ'য়ে নোতুন দলের সৃষ্টি হয়েছে ও হচ্ছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি খন্ড বিখন্ড হ'য়ে হয় ধ্বংস প্রাপ্ত নোতুবা প্রদীপের সলতের মতো টিমটিম ক'রে জ্বলছে; কেউ কেউ বা সরকারী অনুদানে টিকে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান, কর্ম প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নানা প্রতিষ্ঠান গোষ্ঠী দ্বন্দে জর্জরিত। সব জায়গায় কোন্দল কোন্দল আর কোন্দল। এটা স্বাভাবিক একটা ঘটনা আজ বিশ্বজুড়ে। এর মধ্যে আশ্চর্যের কিচ্ছু নেই। সব জায়গায় ক্ষমতা দখলের মারামারি। একনায়কতন্ত্রের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে সাধারণ সীমাহীন ভাঙ্গাচোরা মানুষগুলোর বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে সুড়সুড়ি দিয়ে আন্দোলনের নামে ধান্দাবাজ ক্ষমতালোভীদের ক্ষমতা দখল আর পরবর্তীতে সেই একনায়কতন্ত্রের পুনারাবির্ভাব!!!! এইটাই সারা বিশ্বের বর্তমান সংস্কৃতি। এর বাইরে গেলেই অস্তিত্ব বিপন্ন।

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর এবার তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করা ও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঝমঝমভরা সংসার রেখে গেলেন।

ক্রমশঃ।

No comments:

Post a Comment