Powered By Blogger

Thursday, February 23, 2023

অন্তর্যামী ও সর্বজ্ঞ! (১)

"মন্দিরের আশেপাশে কুৎসিত লোকের আনাগোনা বেশী সাবধান থেকো তা থেকে।"---শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।
এই কথাটা ঠাকুর তাঁর একজন ভক্ত শিষ্যকে উদ্দেশ্য ক'রে বলেছিলেন।
একদিন এক শিষ্য আশ্রমে এসে ঠাকুরকে প্রণাম করতে এসেছেন। ঠাকুরকে প্রণাম ক'রে উঠতেই ঠাকুর সেই শিষ্য কখন এসেছেন, কোথায় উঠেছেন, খেয়েছেন কিনা ইত্যাদি খোঁজ নিলেন। তার উত্তরে সেই শিষ্য ঠাকুরকে জানালেন যে সে এসেমাত্রই তাঁকে প্রণাম করতে এসেছেন। তখন ঠাকুর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তার সঙ্গের ব্যাগ জিনিসপত্র ইত্যাদি কোথায়। সেই কথার উত্তরে তিনি জানালেন যে, সেই সমস্ত বাইরে রেখে প্রণাম করতে এসেছেন। তখন ঠাকুর সেই শিষ্যকে বলেছিলেন, শিগগিরই বাইরে গিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে ঘরে গিয়ে রেখে স্নান, খাওয়া, বিশ্রাম ক'রে তারপরে আসতে। এই কথা শুনে ঠাকুরকে প্রণাম ক'রে সেই ভক্ত শিষ্য বাইরে বেড়িয়ে গেলেন।
সেদিন তার যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ঠাকুর কেষ্টদাকে বলেছিলেন, "মন্দিরের আশেপাশে কুৎসিত লোকের আনাগোনা বেশী; সাবধান থেকো তা থেকে।"
এখন আমার নিজেকে নিজের প্রশ্নঃ কেন আমি এই কথা লিখলাম?

উত্তরঃ লিখলাম এইজন্য যে সেই ছোটবেলা থেকে এই দীর্ঘ ৬৭বছর বয়স পর্যন্ত সৎসঙ্গ জগতে যা দেখলাম তা ঠাকুরের এই বলার সঙ্গে কতটা গভীর নির্মম মিল তা মিলিয়ে নেবার জন্য। অভিজ্ঞতার কষ্টি পাথরে ঘষে দেখে নিতে চায় মন-হৃদয় ঠাকুর কতটা অন্তর্যামী, কতটা সর্বজ্ঞ।


প্রথমত বলি অন্তর্যামী যে কেউ হ'তে পারে। একাগ্রতার সঙ্গে ত্রিনয়নে মন স্থির ক'রে বিষয়বস্তুতে একটু ধ্যানস্থ হ'লেই এই ক্ষমতা অর্জন সম্ভব। আর কারও প্রতি বা কোনও কিছুর প্রতি ভালোবাসা অকৃত্রিম ও তীব্র হ'লেও সেই ভালোবাসার পাত্র বা বিষয় সম্পর্কে আগাম ধারণা করার ক্ষমতা অর্জন হয়। যেমন মায়ের সন্তানের প্রতি বা মানুষের প্রিয়জনের প্রতি। কিন্তু সর্বজ্ঞ জীবন্ত ঈশ্বর ব্যতিত কেউ হ'তে পারে না। তাই শুধু অন্তর্যামী বললে সৃষ্টিকর্তা শ্রীশ্রীঠাকুরকে ছোট করা হয়। সর্বজ্ঞ একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীমহম্মদ, শ্রীশ্রীমহাপ্রভু, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও সর্বশেষ জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। এঁরাই হ'লেন একমাত্র সর্বজ্ঞ মানুষ পরমপিতা পুরুষোত্তম।
যাই হ'ক ঠাকুরের "মন্দিরের আশেপাশে..................সাবধান থেকো তা থেকে" এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমার অভিজ্ঞতা কি বলে দেখা যাক। প্রচুর অভিজ্ঞতার মধ্যে থেকে কয়েকটা অভিজ্ঞতা মাত্র তুলে ধরবো যাতে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। অবশ্য এখন আর পাঠক নেই এবং থাকলেও পাঠকের সংখ্যা সীমিত ও রঙ্গীন গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবুও সচেতন ইষ্টপ্রাণ ভক্তদের জন্য আমার এই লেখা।
মন্দিরের আশেপাশে নয় একেবারে মন্দিরের অন্দরমহলে বহাল তবিয়তে বিচরণ করা কয়েকজন চলনে বলনে আলো ঝলমলে ইষ্টপ্রাণ(?) সৎসঙ্গীর কুৎসিত আচরণের কথা তুলে ধরবো একে একে।
এক প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক সৎসঙ্গীর আচরণের কথা আগেও একবার বলেছিলাম আবার মনে করিয়ে দিই। একবার তাঁর চেম্বারে গিয়েছিলাম হার্টের চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তারবাবুর কম্পাউন্ডার এসে নাম লিখে নিয়ে যান। আর এর কিছুক্ষণ পর এসে আগাম নিয়ে যান ডাক্তারবাবুর ভিজিট। এইটাই সিস্টেম। কিন্তু আমার সঙ্গে ভাঙ্গানি না থাকায় আমি পাশের অপেক্ষারত পেশেন্টের সঙ্গে ৫০০ টাকার ভাঙ্গানি আছে কিনা এই বিষয়ে কথা বলছিলাম। আর সেই অপরাধে (?) রীতিমত ধমকে উঠলেন ঐ ব্যক্তি। তারপর ডাক্তারবাবুর ভিজিটের জন্য ৫০০ টাকা নিয়ে পর্দা সরিয়ে ওপাশে চলে গেলেন এবং একটু পরে এসে আমাকে ২০০ টাকা ফেরত দিলেন। তখন আমি তাকে আমাকে অপমান করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম আর তার উত্তরে তিনি আমার সঙ্গে আরও রুঢ় ভাষায় অপমান করে চুপ ক'রে বসে থাকতে বললেন। আমি স্তম্বিত হ'য়ে যায় এই ঘটনায়! ডাক্তারবাবুর কম্পাউন্ডার হিন্দিতে আমাকে ধমকাচ্ছেন আর আমি তার প্রতিবাদে এই ধরণের আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করছি। ঠিক সেইসময় ঘরের মাঝখানে পর্দা দিয়ে ভাগ করা ঘরের ওপাশ থেকে ডাক্তারবাবুর রাগান্বিত গলা শোনা গেল। গম্ভীর গলায় উত্তেজিত কন্ঠে পর্দা দিয়ে ঘেরা ঘর থেকেই কোনও কিছু না জেনে, না শুনে, না দেখেই তিনি তার সহযোগী কম্পাউন্ডারকে হিন্দিতে কড়া নির্দেশ দিলেন পেশেন্টকে টাকা ফেরত দিয়ে চেম্বার থেকে বের ক'রে দেবার। এবং সেই নির্দেশ মত ডাক্তারবাবুর সহযোগী পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকে টাকা এনে আমার হাতে গুঁজে দিয়ে বেড়িয়ে যেতে বললেন। আমি এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনায় অবাক হ'য়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। চোখ ভ'রে গেল জলে। এই বয়সে অকারণ এরকম অপমান তাও ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে! এর চেয়েও যা আমাকে স্তম্বিত করেছিল তা হ'লো ডাক্তারবাবু একজন সৎসঙ্গী! একজন ঋত্বিক!! আচার্যদেবের চিকিৎসা করেন!!! সৎসঙ্গ মেডিকেল কনফারেন্সে জীবনে সুস্থ ও নীরোগ থাকার জন্য ঠাকুর নির্দেশিত পথে চলার আবেদন করে!!!! আর, নামধ্যান, প্রার্থনা, ইষ্টভৃতি ও মানুষকে ভালোবাসার যে প্রেস্ক্রিপশান ঠাকুর দিয়েছেন সেই প্রেস্ক্রিপশান নিখুঁতভাবে ফলো করার কথা বলেন!!!!! এমন অমানবিক আচরণ কোনও ডাক্তার করেছে ব'লে আমার জানা নেই। কোনও পেশেন্টকে চেম্বার থেকে অকারণ অপমান ক'রে বের ক'রে দেবার ঘৃণ্য ঘটনার বিচার নিজের হাতে নেবার শিক্ষা ঠাকুর আমাদের দেননি তাই নিজেকে সংযত করার শক্তি অর্জন করেছিলাম আর ছেড়ে দিয়েছিলাম ঠাকুরের ওপর বিচারের ভার; সঙ্গে ঠাকুরের কাছ থেকে শেখা ঠাকুরের ওপর বিচারের ভার ছেড়ে দেবার সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করেছিলাম ঠাকুরের কাছে।
এই ঘটনায় মনে পড়ে যায় ঠাকুরের উপরে উল্লেখিত
"মন্দিরের আশেপাশে........................সাবধান থেকো তা থেকে" বাণীর সত্যতার কথা। অন্তর্যামী ও সর্বজ্ঞ-তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ঘটনা! আরও মনে পড়ে ঠাকুরের বাণী, "মুখেতে আছে, ব্যবহারে নাই সেই শিক্ষার মুখে ছাই"।
(লেখা ২৩শে ফেব্রুয়ারী'২০২১)
ক্রমশঃ অন্তর্যামী ও সর্বজ্ঞ! (২)

No comments:

Post a Comment