Powered By Blogger

Tuesday, February 21, 2023

উপলব্ধি ২১ঃ তুমি কেন জন্মেছো?

আজ আমার জন্মদিন। কাল রাত্রিরে প্রথম ইন্দু মাধব তালুকদারদা ও দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায়দার আগাম জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেয়ে আমার জন্মদিনের কথা জানতে পারলাম। আমার মনে ছিল না। আর মনে রাখার মত আমি তেমন কোনও ব্যক্তিও নই। আর মনে ছিল না তার অন্য কারণও বোধহয় কয়েকদিন পরপর কয়েকটা অনুষ্ঠান আয়োজন করা নিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলাম, ছিলাম খুব উৎকন্ঠার মধ্যে। শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি ছিল কিন্তু অবসাদ ছিল না শরীরে ও মনে। তাই ভুলেই গেছিলাম জন্মদিনের কথা। তারপর সকাল থেকে একে একে অনেকে মনে করিয়ে দিতে লাগলো আমার জন্মদিনের কথা। ভালোবাসা, শুভেচ্ছায় ভরিয়ে দিলো শরীর-মন। ছেলেমেয়ে ফেসবুকে জন্মদিন নিয়ে লিখলো। সন্ধ্যেবেলায় মিলনদা, অভিজিৎদা, জয়ন্তদা, করুণভাই ইত্যাদি গুরুভাইয়েরা এলেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। কেউ দিলেন রজনীগন্ধা ফুল হাতে তুলে, কেউ দিলেন মিষ্টি, আবার কেউ বা দিলেন গরম গরম চপ। দারুণ জমে গেল সন্ধ্যেটা। গল্প আর চা, চপ, মিষ্টি আর আড্ডায় কখন যে সময় গড়িয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। রাত ১১টায় সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল।
রাতের খাওয়া শেষে এসে বসেছি বিছানায়। একে একে মনের মধ্যে ভিড় ক'রে এলো সবার ভালোবাসা আর শুভেচ্ছার কথা। এখন ফাঁকা ঘর। সবাই রাতের বিছানায় আশ্রয় নিয়েছে। আমি বসে বসে ভাবছি আমার আজকের দিনের কথা। আমি জন্মেছি। মনে পড়ে গেলো আমার জন্ম দিন সংক্রান্ত একটা ব্যাপার। শুনেছিলাম, ছোটবেলায় নাকি এত দুরন্ত ছিলাম, এত পরিণত ছিলাম যার ফলে আমাকে ৬ বছর বয়স হওয়ার অনেক আগেই নাকি বয়স বাড়িয়ে ৬ বছর দেখিয়ে স্কুলে ভর্তি ক'রে দেওয়া হ'য়েছিল। সেটা আর কোনোদিনই চেঞ্জ করা হয়নি। সেই বয়সই আমার আজকের বয়স। আমি শুনেছি ৮/৯ মাসের তফাৎ। যাই হ'ক। যাক কুষ্টি দেখে বের করতে হবে।
আমি জন্মেছি। তা সে কয়েক মাস আগেই হ'ক আর পরেই হ'ক আমি জন্মেছি। সেই ছোট থেকে এত বছর যে দিনটাকে জেনে এসেছি আমার জন্মদিন সেই দিনটাই আপাতত আমার জন্মদিন। প্রশ্ন এইসব দিন টিন নিয়ে নয়, প্রশ্ন আমার অন্য জায়গায়। আমি জন্মেছি তা আগেই হ'ক আর পরেই হ'ক সেটা ঠিক আজ যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে চারপাশে তখন মনের মধ্যে কে যেন টোকা মেরে চুপিচুপি কানে কানে ফিসফিস ক'রে বলে গেলো, তুমি কেন জন্মেছো? আমি থতমত খেয়ে গেলাম। মুহূর্তে মাথার মধ্যে তোলপাড় শুরু হ'য়ে গেল। কি করি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কি জানি একটা মনের মধ্যে এসেই পর মুহুর্তে মিলিয়ে যেতে চায়। ভাবতে লাগলাম। অবশেষে ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল বিশ্বের বিস্ময় সর্বশ্রেষ্ট বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্মবিষয়ক অনেক কথা। মনে পড়ে গেলো তাঁর অনেক বাণীর মধ্যে একটা অমোঘ বাণী।
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
"তুমি কেন জন্মেছো
মোটা ভাবেও কি দেখেছো?
থাকাটাকে কি উপভোগ করতে নয়------
চাহিদা ও কর্মের ভিতর দিয়ে-------
পারস্পরিক সহবাসে-----
প্রত্যেক রকমে?
তেমনি বুঝছ না
ভগবান কেন সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর কি এখন?
নিজেকে অনুভব করতে
উপভোগ করতে---বিশ্বে
প্রত্যেক অনুপাতে, দেওয়ায় নেওয়ায়,
আলিঙ্গনে, গ্রহণে,
কর্ম্ম বৈচিত্রে নয় কি?
সত্যি সত্যিই আজ জীবন সায়াহ্নে এসে মনে হ'ল, আমি কি সত্যি সত্যিই আমার এই জীবনের কাটিয়ে আসা দীর্ঘ সময়ের থাকাটাকে উপভোগ করতে পেরেছি না পারছি!? উপলব্ধি হ'লো, আমার চাহিদা দিয়ে, আমার কর্ম দিয়ে, পারস্পরিক মিলনের মধ্যে দিয়ে প্রত্যেক রকমে আমার থাকাটাকে কি উপভোগ করতে পেরেছি!? পেরেছি কি বিশ্বের প্রত্যেকটি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে নিজেকে অনুভব করতে!?
কি চিন্তা করছো প্রকাশ!!!!! নামেই শুধু হ'য়ে রইলে প্রকাশ! পারলে না তাঁকে প্রকাশ ক'রে নিজে প্রকাশিত হ'তে!!!!!!!

(লেখা ২১শে ফেব্রুয়ারী'২০১৮)

No comments:

Post a Comment