সকালে ঘুম ভেঙে বাগানে এসে দাঁড়িয়েছি। ভোরের ঠান্ডা হাওয়া চোখেমুখে তাঁর আদর মাখানো হাত বুলিয়ে দিচ্ছে যেন! গায়ে পাতলা একটা চাদর জড়িয়ে উপভোগ করছি ভোরের আকাশ, ভোরের বাতাস। চারদিক নিস্তব্ধ, চুপচাপ। খুব ভালো লাগে নীরবতা। কোথাও কোনও শব্দের উচ্ছৃঙ্খলতা নেই এই ভোরে। একটা মোটা বিড়াল মটকা মেরে পড়ে রয়েছে পাঁচিলের উপরে। একজন দু'জন পথচারী চলে গেল পাশের রাস্তা দিয়ে। একটু পরেই নিস্তব্ধতা খানখান হ'য়ে ভেঙে ছড়িয়ে পড়বে চারপাশ। তাই ঈশ্বরের উপস্থিতি উপভোগ ক'রে নিতে চাই সাত তাড়াতাড়ি। কিন্তু ছন্দপতন ঘটলো বাড়ীর পাশে পার্কের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এই ভোরে একটা বাচ্চা ছেলে পার্কে এসেছে বস্তা কাঁধে ভোরভোর প্লাস্টিক কুড়িয়ে নিতে। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে মনে হ'ল এত ভোরে কেন? পরমুহূর্তে মনে হ'ল প্রতিযোগিতার বাজার এই প্লাস্টিক, কাগজ কুড়ুনিদের মধ্যেও। তাই ছেলেটি এই ভোরে যখন আর সবার বাড়ীর বাচ্চারা ঘুমোচ্ছে নিশ্চিন্তে বিছানায় মায়ের কোলে কিম্বা চাদরে তলায় তখন এই বাচ্চা ছেলেটি বেরিয়ে পড়েছে প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে থাকবে ব'লে। অসহায় আমি এই ভোরে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হ'ল চোখের কোনাটা ভিজে গেল। তখনি ভেসে উঠলো সুকান্তের মুখ আর মনে পড়লো কবিতার লাইন দু'টি।
"এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।"----সুকান্ত।
কিন্তু কি ভাবে? কোন পদ্ধতিতে? কি সেই ফর্মুলা, যে ফর্মুলায় এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করা যাবে? নব জাতকের কাছে সুকান্তের মত আমিও দৃঢ় অঙ্গীকার ক'রে যেতে চাই, বাকী যতদিন আর আছি এই পৃথিবীতে এ বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি। কিন্তু প্রশ্ন জাগে মনে সেই বাসযোগ্য ক'রে যাওয়ার নীল নকশা কি সুকান্ত দিয়ে গেছিলেন? কেউ জানেন কি? যদি জানেন কেউ আমাকে জানালে চিরবাধিত হব তার কাছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাষাভাষীর কবিকুল আমরা যারা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত রাতের ঘুম নষ্ট ক'রে জীর্ণ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপে ভরা পৃথিবীর ছবি তুলে ধরার কঠিন যজ্ঞের পুরোহিত হ'য়ে শক্ত শক্ত শব্দমালা গেঁথে কবিতার সৌধ গড়ে তুলি প্রাণপাত ক'রে, নিজের জীবনকে বাজি রেখে পার হ'তে চাই এই ভয়ঙ্কর পৃথিবীর গভীর অন্ধকার এ কি শুধুই তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে রঙ্গিন চশমায় দুনিয়াকে দেখার নেশা? নিজেকে প্রশ্ন করি, বিবেক, এ কি নাম যশের পেয়ালায় নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার নেশায় চু্র, মাতাল হ'য়ে পথ চলা? আজ কত বছর হ'য়ে গেল এ বিশ্ব বাসযোগ্য হ'ল কি? কেন হ'ল না? নাকি হ'তে নেই? ওসব কথার কথা? বলতে হয় বলা? কবিতা, ছড়া লিখতে হয় লেখা? সেই কবে থেকে কত কবি, সাহিত্যিক কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনা ক'রে চলেছেন; প্রাবন্ধিক প্রবন্ধ রচনা ক'রে চলেছেন, শিল্পী ছবি এঁকে চলেছেন, বক্তা কণ্ঠনালী ফুলিয়ে চেঁচিয়ে চলেছেন। সবার বিষয় কি? বিষয় সেই নিপীড়িত, শোষিত, অত্যাচারিত মানুষ আর মানুষ আর মানুষ!!!!!!! সবাই আমরা কাঁদছি মানুষের জন্য। যুগ যুগ ধরে কাঁদছি। এই কান্না ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে বাতাসে বিশ্বজুড়ে; অশ্রু হ'য়ে ঝ'রে পড়ছে কলমের, তুলির ডগায় আর কণ্ঠনালীতে! তারপর আবার সব শান্ত, গভীর নিস্তব্ধতা চরাচর জুড়ে! এ' কেই বলে বোধহয় ক্ষণিক বিরতি পরবর্তী আরো ভয়ানক ভূকম্পের জন্যে!
মানুষের কষ্ট, মানুষের যন্ত্রণা, মানুষের দারিদ্রতা, মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিক আচরণ, অত্যাচার, নিপীড়ন এ সবই কি মানুষের কাছে আয়ের উপকরণ? আত্মপ্রতিষ্ঠার উপকরণ? মানুষের প্রতি মানুষের নির্মম অত্যাচারের বর্ণনায় কলমের ডগায়, তুলির আঁচরে বাস্তবতা প্রকাশের প্রয়াসে উঠে আসে নারীর নগ্ন শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শব্দে ও ছবিতে, কালিতে ও রঙে! এ কি প্রয়োজনের অছিলা নাকি অবদমিত বৃত্তিপ্রবৃত্তি!? মানুষের যন্ত্রণার হাহাকার এমন হৃদয়কে বিদীর্ণ করে যে তা কান্নায় প্রতিফলিত হ'য়ে ছড়িয়ে পড়তে চায় জীব জগতে সবার মাঝে! আর ছড়িয়ে পড়তে পড়তে তা হাত বাড়ায় ঈশ্বরের দিকে, আর ঈশ্বরকেও ব'লে ফেলি, ঈশ্বর তুমিও কাঁদো!!!!!!! যেন ঈশ্বর এক আহাম্মক; আমার কান্নায় তিনি কাঁদেন, আমার বলায় তাঁর চোখ খোলে, তিনি দেখতে পান!!!!! এতবড় আহাম্মক আমি!
যাক যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা বলি। আমার মনে হ'ল সমস্ত পন্ডিত সমাজ সিনেমায়, নাটকে, গানে, কবিতায়, ছড়ায়, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে, চিত্রকলা ইত্যাদি ইত্যাদিতে মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারের, নির্মমতার বিরুদ্ধে সেই কবে থেকে সুকান্তের মত লড়াইয়ের কথা ব'লে নতুন সূর্য ওঠার, নতুন এক স্বর্গ রচনার, বাসযোগ্য এক পৃথিবী গড়ে তোলার কথা ব'লে এসেছে এবং ব'লে যাচ্ছে নব্য কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা তাঁদের নানা কঠিন শব্দজালে, রঙের আঁচড়ে, জটিল ও দুর্বোধ্য ঢঙে!!!!!
সেইসব আশ্বাসের বাণীর মাঝে আমি চোখ মেলে দেখি বারেবারে, খুঁজে দেখি পথ। ঠুকরে ঠুকরে অবশেষে নিজেকেই দেখি নিজেকে সেইখানে; মনে হয় সেই আমি যেন ঐ এক চড়ুইপাখি যে আয়নায় পথ খুঁজে খুঁজে হয়রাণ হ'য়ে বলে, পথ কোথায়! পথ কোথায়!! পথ কোথায়!!!
(লেখা ২৩শে ফেব্রুয়ারী'২০১৮)
"এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি—
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।"----সুকান্ত।
কিন্তু কি ভাবে? কোন পদ্ধতিতে? কি সেই ফর্মুলা, যে ফর্মুলায় এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করা যাবে? নব জাতকের কাছে সুকান্তের মত আমিও দৃঢ় অঙ্গীকার ক'রে যেতে চাই, বাকী যতদিন আর আছি এই পৃথিবীতে এ বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য ক'রে যাব আমি। কিন্তু প্রশ্ন জাগে মনে সেই বাসযোগ্য ক'রে যাওয়ার নীল নকশা কি সুকান্ত দিয়ে গেছিলেন? কেউ জানেন কি? যদি জানেন কেউ আমাকে জানালে চিরবাধিত হব তার কাছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ভাষাভাষীর কবিকুল আমরা যারা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত রাতের ঘুম নষ্ট ক'রে জীর্ণ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপে ভরা পৃথিবীর ছবি তুলে ধরার কঠিন যজ্ঞের পুরোহিত হ'য়ে শক্ত শক্ত শব্দমালা গেঁথে কবিতার সৌধ গড়ে তুলি প্রাণপাত ক'রে, নিজের জীবনকে বাজি রেখে পার হ'তে চাই এই ভয়ঙ্কর পৃথিবীর গভীর অন্ধকার এ কি শুধুই তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে রঙ্গিন চশমায় দুনিয়াকে দেখার নেশা? নিজেকে প্রশ্ন করি, বিবেক, এ কি নাম যশের পেয়ালায় নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার নেশায় চু্র, মাতাল হ'য়ে পথ চলা? আজ কত বছর হ'য়ে গেল এ বিশ্ব বাসযোগ্য হ'ল কি? কেন হ'ল না? নাকি হ'তে নেই? ওসব কথার কথা? বলতে হয় বলা? কবিতা, ছড়া লিখতে হয় লেখা? সেই কবে থেকে কত কবি, সাহিত্যিক কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনা ক'রে চলেছেন; প্রাবন্ধিক প্রবন্ধ রচনা ক'রে চলেছেন, শিল্পী ছবি এঁকে চলেছেন, বক্তা কণ্ঠনালী ফুলিয়ে চেঁচিয়ে চলেছেন। সবার বিষয় কি? বিষয় সেই নিপীড়িত, শোষিত, অত্যাচারিত মানুষ আর মানুষ আর মানুষ!!!!!!! সবাই আমরা কাঁদছি মানুষের জন্য। যুগ যুগ ধরে কাঁদছি। এই কান্না ছড়িয়ে পড়ছে আকাশে বাতাসে বিশ্বজুড়ে; অশ্রু হ'য়ে ঝ'রে পড়ছে কলমের, তুলির ডগায় আর কণ্ঠনালীতে! তারপর আবার সব শান্ত, গভীর নিস্তব্ধতা চরাচর জুড়ে! এ' কেই বলে বোধহয় ক্ষণিক বিরতি পরবর্তী আরো ভয়ানক ভূকম্পের জন্যে!
মানুষের কষ্ট, মানুষের যন্ত্রণা, মানুষের দারিদ্রতা, মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিক আচরণ, অত্যাচার, নিপীড়ন এ সবই কি মানুষের কাছে আয়ের উপকরণ? আত্মপ্রতিষ্ঠার উপকরণ? মানুষের প্রতি মানুষের নির্মম অত্যাচারের বর্ণনায় কলমের ডগায়, তুলির আঁচরে বাস্তবতা প্রকাশের প্রয়াসে উঠে আসে নারীর নগ্ন শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শব্দে ও ছবিতে, কালিতে ও রঙে! এ কি প্রয়োজনের অছিলা নাকি অবদমিত বৃত্তিপ্রবৃত্তি!? মানুষের যন্ত্রণার হাহাকার এমন হৃদয়কে বিদীর্ণ করে যে তা কান্নায় প্রতিফলিত হ'য়ে ছড়িয়ে পড়তে চায় জীব জগতে সবার মাঝে! আর ছড়িয়ে পড়তে পড়তে তা হাত বাড়ায় ঈশ্বরের দিকে, আর ঈশ্বরকেও ব'লে ফেলি, ঈশ্বর তুমিও কাঁদো!!!!!!! যেন ঈশ্বর এক আহাম্মক; আমার কান্নায় তিনি কাঁদেন, আমার বলায় তাঁর চোখ খোলে, তিনি দেখতে পান!!!!! এতবড় আহাম্মক আমি!
যাক যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা বলি। আমার মনে হ'ল সমস্ত পন্ডিত সমাজ সিনেমায়, নাটকে, গানে, কবিতায়, ছড়ায়, গল্পে, উপন্যাসে, প্রবন্ধে, চিত্রকলা ইত্যাদি ইত্যাদিতে মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচারের, নির্মমতার বিরুদ্ধে সেই কবে থেকে সুকান্তের মত লড়াইয়ের কথা ব'লে নতুন সূর্য ওঠার, নতুন এক স্বর্গ রচনার, বাসযোগ্য এক পৃথিবী গড়ে তোলার কথা ব'লে এসেছে এবং ব'লে যাচ্ছে নব্য কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা তাঁদের নানা কঠিন শব্দজালে, রঙের আঁচড়ে, জটিল ও দুর্বোধ্য ঢঙে!!!!!
সেইসব আশ্বাসের বাণীর মাঝে আমি চোখ মেলে দেখি বারেবারে, খুঁজে দেখি পথ। ঠুকরে ঠুকরে অবশেষে নিজেকেই দেখি নিজেকে সেইখানে; মনে হয় সেই আমি যেন ঐ এক চড়ুইপাখি যে আয়নায় পথ খুঁজে খুঁজে হয়রাণ হ'য়ে বলে, পথ কোথায়! পথ কোথায়!! পথ কোথায়!!!
(লেখা ২৩শে ফেব্রুয়ারী'২০১৮)
No comments:
Post a Comment