তখন সবে স্কুলের গন্ডি পার হ'য়ে কলেজ জীবনে পা রেখেছি। সাল সম্ভবত ১৯৭১। টগবগে টাটকা যৌবন! প্রতিদিনের ভয়ঙ্কর খবর রেডিওতে শুনে, কাগজে প'ড়ে প্রচন্ড ঘৃণায় কুঁকড়ে যাচ্ছি! প্রতিদিন চিৎকার ক'রে আকাশের দিকে দু'হাত তুলে বলছি, হে ঈশ্বর! আমরা মানুষ!? দেশজুড়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তীব্র থেকে তীব্রতর হ'য়ে উঠছে। ইন্দিরা সরকারের কাছে দাবি উঠছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর প্রত্যাঘাতের। সংসদ তোলপাড়, বিধানসভায় ঝড়। পথেঘাটে প্রতিবাদের, প্রতিশোধের মিছিল মিটিং। বাংলাদেশে পাকিস্তানের নারকীয় বর্বরতার ঘটনা প্রকট হ'য়ে উঠেছিল বাংলাদেশের মায়েদের উপরে বীভৎস, নারকীয়, দানবীয় বিকৃত অত্যাচার! যে অত্যাচারের নমুনায় বনের হিংস্র পশুরা লজ্জা পেয়ে বনের গভীরে মুখ লুকিয়েছিল! সেইসময় 'জয় বাংলা' ব'লে একটা সিনেমা বেরিয়েছিল। সিনেমায় নারীদের উপর পাক সেনাদের ভয়ঙ্কর নৃশংসতা এখন এই ১৯৭১ থেকে ২০১৯ অর্থ্যাৎ প্রায় ৪৮ বছর পরেও চোখের সামনে ভেসে ওঠে মনে পড়লেই!!! সেদিন সেই যৌবনে একটা কথা বুঝতে পেরেছিলাম? যা আজও এত বছর পরেও এতটুকু পাল্টায়নি! তা হ'লো 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' যার ট্র্যাডিশন আজও হ'য়ে চলেছে সমানে!!!! পুলওয়ামার ঘটনাও সেই একই বার্তা দেয়----- 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা'! সেদিনও ছিল বাংলাদেশের উপর, বাংলাদেশের মায়েদের উপর অত্যাচার করা অত্যাচারী দরিন্দাদের পাশে মানবতার পূজারীরা, যেমন আজও আছে!!!! আবার দেখানো হ'ক সেই সিনেমা 'জয়বাংলা', ফিরে আসুক সেদিনের দিনগুলিতে প্রকাশিত ভয়াবহ নরকের দৃশ্য সম্বলিত পত্রিকাগুলো, পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের অত্যাচারের ছবিগুলি! হে আমজনতা! পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়! বারবার ফিরে আসুক সেই চোখে দেখতে না পারা লজ্জাজনক, দুঃখজনক, যন্ত্রণাময় অত্যাচারের দৃশ্যগুলো আজকের যুবসমাজের কাছে। তারা দেখুক, জানুক, বুঝুক পাকিস্তানের সেইদিনের বিষাক্ত রক্তের ধারা ব'য়ে চলেছে আজও সমান তালে!। তাই বাংলাদেশের নাম হওয়া উচিত ছিল 'ইজ্জতস্থান!!!!!! কিন্তু কেউ আজ আর অতীতকে মনেও রাখে না। তাই যারা মারা যায়, অত্যাচারিত হয়, অপমানিত হয়, লাঞ্চিত হয়, তীব্র ইজ্জৎ লুন্ঠিত হয় যাদের তাদের যন্ত্রণার ধার ধারে না কেউ, সবাই ব্যস্ত মানবতা, শান্তি ও উদারতার পতাকা ওড়াতে!
No comments:
Post a Comment