মহাভারতের গল্প প্রায় সবারই জানা। ভীষ্মের কণিষ্ঠ ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের ছিল দুই পুত্র - ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু। জ্যেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হওয়ায় পাণ্ডু রাজা হন। কিন্তু পাণ্ডুর অকালমৃত্যুর পর রাজত্ব ধৃতরাষ্ট্রের তত্বাবধানে আসে। সেখান থেকেই শুরু হয় মহাভারতের মহাবিরোধ। কুরু বংশের উত্তরাধিকারী কে হবেন? কে হবেন রাজা ? পাণ্ডুর পুত্র, না ধৃতরাষ্ট্রের ? যুধিষ্ঠির না দুর্যোধন? শুরু হয় হিংসা, ষড়যন্ত্র, কপট দ্যূতক্রীড়া বনবাস ইত্যাদি । কাহিনীর পরিণতি সবারই জানা।
হরিচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তিত মতুয়া সম্প্রদায়ের সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবীতে সংগঠিত আন্দোলন তাঁর মৃত্যুর ১৩৬ বছর পার হয়ে এসে আজ মতুয়া মহাসঙ্ঘের অন্দরমহলে ঝড় তুলেছে। কে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত হবে সেই নিয়ে শুরু হয় বিরোধ। কে হবেন মতুয়াদের রাজনৈতিক দাবী আদায়ের মুখ? প্রয়াত কপিলকৃষ্ণর স্ত্রী মমতাবালা না-কি ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণের পুত্র সুব্রতঠাকুর? শুরু হয় উত্তরাধিকারীর পক্ষে যুক্তি-তর্ক, বাগবিতন্ডা, দলত্যাগ ও গ্রহণ ইত্যাদির রণকৌশল। কাহিনীর পরিণতি নির্বাচনী ফলাফলের উপর নির্ভর করছে এই কথা সবারই জানা।
যাই হ’ক আজ ১৩ই ফেব্রুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ লোকসভা ও কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন হয়ে গেল। বনগাঁয় গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর৷ তাঁর মৃত্যুর পর ওই আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে৷ এবার তৃণমূলের প্রার্থী প্রয়াত কপিলকৃষ্ণর স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর৷ বিজেপি এবার প্রার্থী করেছে সুব্রত ঠাকুরকে৷ তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের পুত্র সুব্রত৷ স্বাভাবিকভাবেই মতুয়া সম্প্রদায় কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, এবার বনগাঁর উপনির্বাচন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
এখন প্রশ্ন তাহ’লে কি গৃহযুদ্ধ কি চরমে পৌঁছে গেল? যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল হরিচাঁদ প্রতিষ্ঠিত ‘মতুয়া’ সম্প্রদায়ের দুই প্রধান নেতা তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ও বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণদাস বিশ্বাসের পরস্পর মুখোমুখি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই এর মধ্যে দিয়ে। আজ সেই যুদ্ধ পৌঁছে গেল একেবারে মতুয়া মহাসঙ্ঘের ঠাকুর পরিবারের অন্দরমহলে? তাহ’লে মহাভারত কি ফিরে ফিরে আসে!?
১৬ই ফেব্রুয়ারি ফল প্রকাশের মধ্যে দিয়ে রচনা হবে মতুয়ার নতুন ইতিহাস।।
( ১৩ই লেখা ফেব্রুয়ারী'২০১৫)
No comments:
Post a Comment