তাই আদর্শকে জীবনে মুখ্য ক'রে নিখুঁত চলনে চলার জন্য তাদের হাত ধ'রে হাতে কলমে ক'রে করিয়ে শিখিয়ে দেওয়ার জন্য আদর্শে উৎসর্গিত প্রাণ একজন পথ প্রদর্শকের প্রয়োজন। যিনি জ্ঞানী শিক্ষিত একজন আচরণসিদ্ধ পুরুষ। যিনি জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর কেমন তা নিজের জীবন দিয়ে, চরিত্রের মধ্যে দিয়ে, আচরণের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলবেন, বুঝিয়ে দেবেন, মুখে বর্ণনা দেবেন না। সেই তাঁকেই শ্রীশ্রীআচার্যদেব বলা হয়। চরিত্র দিয়ে যিনি যাজন করেন। চরিত্রই যার জীবনের হাতিয়ার। নীতিকথার লেকচার মেরে যিনি যাজন করেন না।
শ্রীশ্রীঠাকুর পরবর্তী সৎসঙ্গীরা যাতে অনাথ না হ'য়ে পড়ে, শ্রীশ্রীঠাকুর চ্যুত হ'য়ে না পড়ে, আদর্শ্চ্যুত হ'য়ে বিকেন্দ্রিক না হ'য়ে যায়, শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর ভুল বিকৃত ব্যাখ্যা ক'রে পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্মকে বিপথে চালিত ক'রে ঠাকুরের মিশনকে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে ব্যর্থ ক'রে দিতে না পারে কেউ তার জন্য একজন উপলব্ধিবান, আচরণসিদ্ধ, জ্ঞানী, শিক্ষিত পথপ্রদর্শক দরকার যিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীর জীবন্ত রূপ, ঠাকুরের কার্বন কপি। সেই তিনিই ছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুরের জেষ্ঠ্যাত্মজ আদরের বড়খোকা; যিনি ছিলেন আপামর সৎসঙ্গীর প্রাণের বড়ভাই, শ্রীশ্রীবড়দা। শ্রীশ্রীবড়দা ছিলেন ঠাকুরের কুকুর। প্রভু ভক্ত কুকুরের মতো শ্রীশ্রীবড়দা শ্রীশ্রীঠাকুরকে কেমন ক'রে ভালবাসতে হবে, কেমন ক'রে তাঁর হ'য়ে উঠে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে ছড়িয়ে পড়তে হবে বিভিন্ন দেশে, কেমন ক'রে তাঁকে জীবনে জড়িয়ে নিয়ে কঠিন দূর্গম পথ চলতে হবে সমস্ত কিছু নিখুঁতভাবে নিজের আচরণের মধ্যে দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের মতো নিরাশী নির্ম্মমভাবে নিজে ক'রে করিয়ে সৎসঙ্গীদের শিখিয়েছেন। তাই তাঁকে সৎসঙ্গীরা বলতো শ্রীশ্রীআচার্যদেব। আর একইভাবে শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশনকে আগামী দশ হাজার বছর নিয়ে যাবার জন্য এরকম আচরণসিদ্ধ উপলব্ধিবান জ্ঞানী শিক্ষিত পথপ্রদর্শকরূপী আচার্যদেবের প্রয়োজন। তাই এই আচার্য পরম্পরার সংস্কৃতি।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সহ তেত্রিশ কোটি দেবতা রুষ্ট হ'লে তার হাত থেকে গুরু রক্ষা করেন আর গুরু রুষ্ট হ'লে কেউ বাঁচাবার থাকে না। কিন্তু আমাদের সৎসঙ্গীদের সৌভাগ্য আমরা পিতৃহীন, অভিভাবকহীন সন্তানের মতো ন'ই। আমাদের মাথার ওপর শ্রীশ্রীআচার্যদেব আছেন যিনি প্রতিমুহূর্তে আমাদের মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরকে জীবন্ত ক'রে রেখেছেন তাঁদের ঠাকুরমুখী আচরণ দিয়ে। তাঁরা সামনে থেকে আমাদের রক্ষা করছেন প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে আমাদের ইচ্ছাকৃত অনিচ্ছাকৃত ভুলের হাত থেকে, পথ দেখিয়ে চলেছেন নিজের আচরণসিদ্ধ জীবন দিয়ে আমাদের ইষ্টপ্রাণ ক'রে তুলে গুরুর রোষের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।
তাই, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর সহ তেত্রিশ কোটি দেবতা রুষ্ট হ'লে তার হাত থেকে যেমন গুরু রক্ষা করেন আর গুরু রুষ্ট হ'লে অন্তত আমাদের সৎসঙ্গীদের রক্ষা করেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব। তাই দয়াল----- 'দয়াল যখন ভয়াল হন'------ সেই দয়ালের ভয়াল রূপের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সামনে রেখে গেছিলেন তাঁর জেষ্ঠ্যাত্মজ পরম আদরের বড়খোকা আমাদের সৎসঙ্গীদের চোখের মণি শ্রীশ্রীবড়দাকে যাতে এক ও অদ্বিতীয়কে আমরা ভুলে না যায়, জীবন্ত ঈশ্বর পরমপিতা পুরুষোত্তম সদ্গুর শ্রীশ্রীঠাকুরকে একমাত্র জীবনের কেন্দ্রে বসিয়ে রাখি। কোনও অবস্থাতেই আমাদের যেন বিচ্যুতি না ঘটে এই শিক্ষা থেকে।
আর ব'লে গেছিলেন, যুগাবতারের অবর্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতি-সম্পন্ন, ছন্দানুবর্তী, জীবন-বৃদ্ধির আচরণ-সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর ইষ্ট-প্রতীকস্বরূপ থাকতে পারেন এবং রেত শরীরে সুপ্ত থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করবেন যতদিন তিনি আবার না আসছেন ততদিন।
হে সৎসঙ্গী বন্ধুগণ! শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে শ্রীশ্রীঠাকুরে অচ্যুত-আনতি-সম্পন্ন, ছন্দানুবর্তী, জীবন-বৃদ্ধির আচরণ সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর হ'লেন শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা। আর সামনে আগামী প্রজন্মের জন্য অপেক্ষা করছেন আগামী আচার্যদেব লক্ষ লক্ষ ইয়ং জেনারেশনের আইকং শ্রদ্ধেয় পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা। আমাদের সৎসঙ্গীদের মহাসৌভাগ্য আমরা অভিভাবকহীন নই। তিনারা শ্রীশ্রীঠাকুরের কথানুযায়ী আচরণ সিদ্ধ বলেই শ্রীশ্রীঠাকুর পরবর্তী সৎসঙ্গের শ্রীশ্রীআচার্যদেব। কিন্তু তাঁরা কোনওদিনই কখনোই শ্রীশ্রীঠাকুর হ'য়ে যাননি। 'সৎসঙ্গ-এর কোটি কোটি সৎসঙ্গী তাঁদের কখনোই শ্রীশ্রীঠাকুরের স্থলাভিষিক্ত মনে করে না আর তাঁরা সে শিক্ষাও কখনোই দেননি সৎসঙ্গীদের। বরং তাঁরা না থাকলে কি যে হ'তো আজ 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের তা ভাবলেও শিউড়ে উঠতে হয়, ঠাকুরের করুণ মুখ ভেসে ওঠে। যে মিথ্যে প্রচারে বিভ্রান্ত ক'রে চলেছে সৎসঙ্গ বিরোধীরা ইচ্ছাকৃতভাবেই বছরের পর বছর। তাদের বিচারের ভার শ্রীশ্রীঠাকুরের ওপর ছেড়ে দেওয়াই মঙ্গলজনক। আর তাদের বিচারের ভার সৎসঙ্গীরা নেয়নি। তাই সৎসঙ্গীরা কোথাও তাদের বিরুদ্ধে কোনও কুৎসা করে না। জয়গুরু।
(লেখা ১৮ই জানুয়ারী'২০২৩)
No comments:
Post a Comment