Powered By Blogger

Friday, February 24, 2023

উপলব্ধি ২৪: মূল গ্রন্থ ও অনুবাদ এবং পাঠ।

বাংলায় ধর্মগ্রন্থ বা ঈশ্বরের বাণী পাঠ বা খুৎবা পড়া নিয়ে আহসানদার (Ahsan Ullah Abm) বক্তব্য ভালো লাগলো। "খুৎবা' একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ বকতৃতা করা বা ভাষণ দেওয়া। জুমার নামাজ ও দুই ঈদের নামাজে খুৎবা পড়া হয়। শুক্রবারে নামাজের আগে খুৎবা অর্থাৎ বক্তব্য পেশের সময় ঈশ্বরের প্রশংসা, এক এবং অদ্বিতীয়ের ঘোষণা, মহানবী হজরতের প্রতি দরুদ অর্থাৎ সম্মানজ্ঞাপক প্রণাম নিবেদন এবং উপস্থিত সাধারণ মানুষের প্রতি উপদেশ প্রদান করা হয়। সাধারণত খুৎবা আরবি ভাষায় প্রদান করা হয়। আহসানদার বক্তব্য ''খুৎবা বাংলায় পাঠ করা হ'ক'' অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। তাঁর বক্তব্য এর ফলে অর্থাৎ "মাতৃভাষাতেই মানুষ সহজেই তাঁর স্রষ্টাকে বুঝতে পারবে এবং ধর্মের ব্যাখ্যা যার যার মাতৃভাষাতেই বেশী কার্যকর।"

আহসানদার বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েই বলতে চাই, বাংলায় অবশ্যই খুৎবা করা যেতে পারে এবং সব ভাষাতেই সব মূল গ্রন্থ থেকে পাঠ কিম্বা উপদেশ প্রদান করা যেতে পারে এবং উচিত; যদি সেই মূল গ্রন্থের অনুবাদ যথাযথ হয়। দেখা গেছে যত কিছুর ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে অনুবাদকের অনুবাদের ত্রুটিতে, অনুবাদের ভুলে। যে কেউ অনুবাদকের ভুমিকা গ্রহণ ক'রে মহান হ'য়ে গেছে। অনুবাদকও আর এক অর্থে সাধক। মূল গ্রন্থ থাকে অবিকৃত। যে ভাষায় মূল গ্রন্থ লেখা হয় সেই ভাষা ভালো ক'রে জানা থাকলে, আর যদি থাকে অনুবাদকের অর্থাৎ সাধকের সাধনার উচ্চ স্তরে বিচরণ তাহ'লে সেই গ্রন্থের বিষয় ও বিষয়ের অন্তর্নিহিত অর্থ পরিষ্কার ক'রে ফুটে ওঠে অনুবাদকের মনশ্চক্ষে, বিষয়ের স্পষ্ট ছবি বোঝা যায়, ধরা পড়ে তা পাঠকের কাছে। অনুবাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে মূল ভাষার উপর দখল না থাকার কারণে এবং মূল বক্তব্যের ভাবের গভীরে প্রবেশ করার যোগ্যতা ও দক্ষতা না থাকার কারণে সমস্ত মূল বিষয় যুগ যুগ ধ'রে অজ্ঞ অনুবাদকের বিজ্ঞ মানসিকতার কারণে ছাগল হ'য়ে গেছে ছাগলী আর ছাগলী হ'য়ে গেছে ছাগল। তাই দক্ষ ও যোগ্য অর্থাৎ যার ভাষার উপর অর্থাৎ যে ভাষায় লেখা হয়েছে সেই ভাষার উপর এবং যে ভাষায় অনুবাদ করা হবে সেই ভাষার উপর এবং যার লেখা তাঁর জীবন দর্শনের উপর এবং তাঁর অর্থাৎ মূল লেখকের জীবনের উপর নিবেদিত প্রাণ স্বরূপ যে সারেন্ডার সেই সারেণ্ডার না হ'লে অনুবাদকের জীবনের উপর, মনের মধ্যে সেই মূল ভাবের প্রভাব পড়বে না, সৃষ্টি হবে না সেই ভাব অনুযায়ী ভাব আর তার ফলে লেখায়, অনুবাদে বিচ্যুতি ও বিকৃতি আসবেই আসবে। যা হ'য়ে এসেছে হাজার হাজার বছর ধরে। তাই যত পারা যায় মূল গ্রন্থ পাঠ করার চেষ্টা করা উচিত, ভাষা শেখা উচিত, সাধনার স্তর পার হওয়া উচিত তারপর বৃহত্তর মানব সমাজের জন্য অর্থাৎ সাধারণ মানুষের জন্য, সাধারণ মানুষের জানার জন্য, পড়ার সুবিধার জন্য, বোঝার জন্য, শিক্ষার জন্য অনুবাদকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত নতুবা ফাঙ্কেন্সটাইনের জন্ম হবেই হবে।
এতটাই গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদকের ভূমিকা। তারপর সেই নিখুঁত অনুবাদ পাঠ করা উচিত যে অনুবাদে ঈশ্বর স্বয়ং বিরাজ করেন। বিরাট, মহান এক দায়িত্ব বহন ক'রে নিয়ে চলে অনুবাদক সভ্যতার অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ও সচল রাখার জন্যে।
আহসানদার কথা সময়োপযোগী এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।


(২৪শে ফেব্রুয়ারী'২০১৮)

No comments:

Post a Comment