Powered By Blogger

Saturday, November 8, 2025

ভাবার সময় এসেছে।

সৌরভ গাঙ্গুলির জনপ্রিয়তা।

আমার মনে হয় এইসব কিছুর হঠাৎ সমালোচনার কারণ হ'তে পারে তাঁর নিজের কিছু পদক্ষেপ।

একটা সময় ভেবে দেখুন এই মানুষটার জনপ্রিয়তা বাংলার বুকে কোথায় ছিল। গোটা বাংলা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ার ধ্বংসের চক্রান্তের দিনে, সেদিন ভারতের কোন ক্রিকেট খেলোয়াড় ও কোন রাজ্য বাংলার মত সরব হয়েছিল? প্রবাদ আছে, দশের লাঠি একের বোঝা। সেদিন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট কিরণ মোরের সৌরভের বিরুদ্ধে তানাশাহি মেজাজের কথা কেউ ভুলে যায়নি। ঠিক তেমনি এটাও কেউ ভুলে যায়নি যে, সেদিন সৌরভ গাঙ্গুলি ক্রিকেট জগতে একঘরে হ'য়ে গিয়েছিলেন, কেউ কিরণ মোরের স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে ভারতের ক্রিকেট বোদ্ধারা, অতীত ও সেই সময়ের ক্রিকেট নক্ষত্রেরা, ক্রিকেট সাথীরা, ক্রিকেট প্রশাসনের কোনও কর্তাব্যক্তি এমনকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা দলের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সেদিন বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেনি, সবার সেদিন মনোভাব ছিল 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা।' কথায় আছে, হাতি যখন গাড্ডায় পড়ে, ইঁদুরও লাথি মারে। সেদিন যখন মহারাজ চারপাশের চক্রান্তের শিকার হ'য়ে গাড্ডায় পড়েছিলেন তখন চুনোপুঁটিরাও লম্ফ দিয়ে ঝম্প মেরেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তখন একমাত্র গোটা পশ্চিমবাংলার সাধারণ মানুষ ও বাংলার ক্রিকেট প্রেমীরা ভারতের ক্রিকেট বোর্ড ও বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট কিরণ মোরের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, চক্রান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল, তার ফলস্বরুপ উৎসাহে অনুপ্রেরণায় বাংলা তথা ভারতের 'দাদা', লড়াইয়ের আইকন সৌরভ গাঙ্গুলি ফুঁসে উঠে নিজেকে আরও কঠিন লড়াইয়ের জন্য গড়েপিঠে নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছিলেন নোতুন ক'রে ইনিংস শুরু করার লড়াইয়ের জন্য, সেদিন সৌরভ গাঙ্গুলির পাশে দাঁড়িয়েছিল বিরাট বিজ্ঞাপন সংস্থা কোকোকলার বিজ্ঞাপন "মুঝে ভুলে তো নেহী।" স্পর্শকাতর হৃদয় নিঙড়ানো বিজ্ঞাপন নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলা তথা ভারতের ক্রিকেট প্রেমীদের বুক সৌরভের প্রতি অকপট ভালোবাসায়। নড়ে উঠেছিল ক্রিকেট বোর্ড, প্রশাসকবৃন্দ, বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট কিরণ মোরেদের নোংরা পাষাণ বুক। ক্রিকেট বোর্ডের, বোর্ড প্রেসিডেন্ট কিরণ মোরের তানাশাহি মেজাজ সেদিন ভেঙে চুরমার হ'য়ে গিয়েছিল সমগ্র বাংলার সংঘবদ্ধ প্রতিবাদে, সেদিন দশের লাঠি একজনের বোঝা হ'য়ে দাঁড়িয়েছিল। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। ফুঁটো হ'য়ে হাওয়া বেড়িয়ে যাওয়া বেলুনের মত চুপসে গিয়েছিল বোর্ড প্রেসিডেন্ট কিরণ মোরের ও অন্যান্য সৌরভ সমালোচকদের মুখ। মুখ লুকোবার জায়গা পায়নি সেদিন কেউ, নির্লজ্জ, বেহায়ার মত সৌরভের সমালোচকেরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিল সৌরভের প্রত্যাবর্তনের পারফরমেন্সের ইতিহাসকে। এসব কথা কেউ ভুলে যায়নি।

সেদিন বাংলার একতার মুখ আমি দেখেছি তাই আর ভারতের মুখ খুঁজতে যাইনি।

সৌরভের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে উত্থানের পিছনে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের মাস্টারমাইন্ড আনপ্রেসিডেন্টটেড প্রশাসক বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া ও পূর্বাঞ্চলের নির্বাচক সম্বরণ ব্যানার্জীদের উদার অবদান, বলিষ্ঠ সাপোর্ট, সৌরভ গাঙ্গুলির অভূতপূর্ব লড়াকু মানসিকতা ও ক্রিকেট মস্তিষ্ক, মাঠের মধ্যে তাঁর সাহসী আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা ও পারফরমেন্স, সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষ নেতৃত্বের চোখে চোখ রেখে ও বোলারের আগুন ঝড়ানো বোলিং-এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ব্যাটিং-এর শুরুতেই ওপেনিং-এ মোকাবিলা করা ও আগুন বোলিং-এর বিরুদ্ধে আগুন হ'য়ে নেতৃত্ব দেওয়া ও দল পরিচালনায় নেতৃত্বের গুণ, তাঁর অবসরের পর ক্রিকেট দুনিয়ায় দাদাগিরির মত টেলিভিশনের ছোটো পর্দায়ও 'দাদাগিরি' অনুষ্ঠানের আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা, বিসিসিআই সভাপতি হওয়া, আইসিসি-র সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা, বাংলা্র মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আওয়াজ সবেতেই বাংলার মানুষ দ্বিধাহীন চিত্তে সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আজ কেন সব ফিকে হ'য়ে যাচ্ছে, বিবর্ণ হ'য়ে যাচ্ছে বাংলার বুক থেকে?

তাই স্বাভাবিকভাবেই আজ সৌরভ গাঙ্গুলিকেই ভাবতে হবে এই বাংলার বুকেই তাঁর জনপ্রিয়তায় এমন ভাঁটা পড়লো কেন ও কিসের জন্য? সৌরভ গাঙ্গুলিকেই ভাবতে হবে কেন আজ বাংলা তথা ভারতের 'দাদা' ডাক আজ ম্লান হ'য়ে গেল, ফিকে হ'য়ে গেল বাংলার বুকে মানুষের মন থেকে? কেন? কেন??

আজ একবার বিগত দিনগুলোর দিকে পিছন ফিরে তাকিয়ে একান্তে ভাববার সময় এসেছে তাঁর, বাংলা তাঁকে কি দিয়েছিল আর প্রতিদানে বাংলাকে তিনি কি ফিরিয়ে দিয়েছেন?
প্রকাশ বিশ্বাস,
ভদ্রকালী, উত্তরপাড়া।


No comments:

Post a Comment