Powered By Blogger

Tuesday, November 18, 2025

প্রসঙ্গঃ সৎসঙ্গী সমাজ।

যখনই দেশে ও বিদেশে কোনও প্রলয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে সমাজের ভিত নড়ে ওঠে তখনও চুপ থাকে সৎসঙ্গ। এই অভিযোগ সৎসঙ্গ জগতে কিছু সৎসঙ্গীদের, এবং এই অভিযোগে তারা বিরোধী মন্তব্যও ক'রে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় সৎসঙ্গের বিরুদ্ধে, কখনও কখনও বা আচার্য্যের বিরুদ্ধে শানিত অস্ত্র হ'য়ে ওঠে। কেউ কেউ বা এক্ষেত্রে ঋত্ত্বিকের ভূমিকাকেও কথার জাগলিং-এ আচার্য্যের উপরে প্রাধান্য দিয়ে বসে। এরা সবাই নিজস্ব বোধবুদ্ধি থেকে নির্গত কথার স্রোতে ভাসা সৎসঙ্গী। এরা শ্রীশ্রীঠাকুরের গ্রন্থ না পড়া, ঠাকুরের মিশন না জানা, আচরণ সিদ্ধ না হওয়া, ঠাকুরের বিধিবিধান বিন্দুমাত্র পালন না করা, আচার্য সঙ্গ না করা, আচার্য নির্দেশ ও নিদেশ না মানা, আচার্যের ওপরে ঋত্ত্বিককে স্থান দেওয়া ভিত্তিহীন অর্থহীন কর্মহীন কথার স্রোতে ভাসা সৎসঙ্গী, শুধুই ফাঁপা শোম্যানশিপ। এরা প্রভাবিত করতে চায় সমগ্র সৎসঙ্গীদের।

যাই হ'ক যেদিন মহাপ্রলয় আসবে সেদিনও সৎসঙ্গ চুপ থাকবে। কারণ সে জানে মহাপ্রলয় আসবে, লুপ্ত হ'য়ে যাবে মানব সভ্যতা, ধ্বংস হ'য়ে যাবে পৃথিবী। কে রক্ষা করবে এই মহাপ্রলয়ের হাত থেকে? কিভাবে রক্ষা করবে? কি তার Blue print?

শ্রীশ্রীঠাকুর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' জানে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব'লে যাওয়া কথা, "তোদের সামনে এমন একদিন আসছে সেদিন একমুঠো সোনার বদলে একমুঠো চাল পাবি না। দুনিয়ার সামনে একটা সর্বনাশ আসছে যার তুলনায় এই মহাযুদ্ধ, লোকক্ষয়, সম্পদের ক্ষয় কিছুই না। গতিক দেখে মনে হয় মনুষ্যত্বের ভিত পর্যন্ত লোপ পেয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছুই নয়। তাই শিক্ষা, দীক্ষা, বিবাহ এই তিনটে জিনিস ঠিক ক'রে দেন আপনারা।"

তাই শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' সেই মানুষের মনুষ্যত্বের ভিতকে রক্ষা করার জন্য যে মহা আন্দোলন সেই আন্দোলনে মগ্ন। বিশাল প্রাসাদের ভিতটাই যদি নড়ে যায় তাহ'লে কি হবে? ভেঙ্গে পড়বে বিশাল অট্টালিকা। তা' সে যতই শক্তিশালী প্রাসাদ হ'ক না কেন? প্রাকৃতিক ও মানুষের কারণে ভয়ংকর ভূমিকম্পে যখন ভূস্তরের প্লেটগুলি নড়ে ওঠে এবং সরে যায় আর তখনই হয় ভূমিকম্প। আর, ভেঙ্গে পড়ে গাছপালা, ছোটোবড় বাড়িঘর, প্রাসাদ অট্টালিকা মাটির ওপরে সবকিছু। ঠিক তেমনি মানুষের ভিত যে মনুষ্যত্ব সেই মনুষ্যত্বের ভিত যদি লোপ পেয়ে যায় তখন গোটা মনুষ্য সমাজ, মানব সভ্যতা ধ্বংস হয় এবং তারপর নেমে আসে গভীর শীতল যুগ। মানব সভ্যতার অবনতি, মনুষ্যত্বের ভিত যে প্রায় লুপ্ত হওয়ার পর্যায়ে তা' আমরা বর্তমান পৃথিবীর প্রতিটি দেশে দেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

সেই বর্তমান অস্থির সময়ে যখন তথাকথিত গোটা মানব সভ্যতার মনুষ্যত্বের ভিত নড়ে উঠছে, অশনি সঙ্কেতের ইঙ্গিত দিচ্ছে তখন সবাই যখন Superficial thoughts-ওপর দাঁড়িয়ে অর্থাৎ ভাসাভাসা, উপর উপর, অগভীর চিন্তাভাবনার ওপর দাঁড়িয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলনরত, কখনও বা Pseudo politics (ছদ্ম রাজনতির) এর ওপর দাঁড়িয়ে Pseudo movement ( ছদ্ম আন্দোলন) করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য উন্মত্ত, সেরকম আন্দোলন পুরুষোত্তম পরমপিতা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' করে না।

'সৎসঙ্গ' মনুষ্যত্বের ভিত যাতে লোপ না পেয়ে যায়, যা যা করলে মনুষ্যত্বের ভিত টেকসই, দীর্ঘস্থায়ী হয়, কঠিন মজবুত হয় সেই বিষয়ে 'সৎসঙ্গ' বিভোর, তন্ময়, সমাচ্ছন্ন, সাধিস্থ। মানব জাতি যাতে তাদের জ্ঞানের অহংকারে লুপ্ত হ'য়ে না যায়, জ্ঞানের অভাবে জাগতিক নানারকম ধাঁধায় বিভ্রান্ত হ'য়ে ভুল পথে পরিচালিত হ'য়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ও ধ্বংস হ'য়ে যায় সেই কঠিন আন্দোলনে 'সৎসঙ্গ' মগ্ন, অন্তর্লিপ্ত। প্রত্যেকটি ধর্ম প্রতিষ্ঠানের তার নিজের নিজের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী সমাজের জন্য কাজ আছে। বহিরঙ্গ ও অন্তরঙ্গ দুইভাবে সমাজ সেবা হয়। সমস্ত ধর্ম প্রতিষ্ঠান তাদের শক্তি সামর্থ্য দিয়ে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন অন্তরস্পর্শী সেবার মধ্যে সমাজের বহিরঙ্গের সেবা করছে। ছদ্ম সেবা হ'ক আর প্রকৃত সেবা হ'ক দুই সেবায় সমাজকে বহিরঙ্গে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। সময়ের কষাঘাতে টিকে থাকে প্রকৃত সেবা। আর, শীতের শেষে ঝরা পাতার মত সময়ের কষাঘাতে সময়মত লুপ্ত হ'য়ে যায় ছদ্ম সেবা প্রতিষ্ঠান। আর অন্তর অঙ্গের সেবা করে ঈশ্বর স্বয়ং ও তাঁর সৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান এই দুনিয়ার বুকে ঈশ্বর যতবার এসেছেন,--- আট আটবার এসেছেন,----কিন্তু তিনি কোনও প্রতিষ্ঠান এর আগে নিজের হাতে গড়ে দিয়ে যাননি, তাঁকে কেন্দ্র ক'রে গড়ে উঠেছিল সমস্ত প্রতিষ্ঠান তাঁর প্রধান প্রধান ভক্তদের উদ্যোগে। কিন্তু এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠান নিজের হাতে গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন বর্তমান সৃষ্টিকর্তা, জীবন্ত ঈশ্বর, সদগুরু, সর্বদর্শী, সর্বশক্তিমান, সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ, সর্বজন কল্যাণকর, পরম কারণ, পরম উৎস, পরমপুরুষ, পুরুষোত্তম, পরমপিতা শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ এঁদের নবরূপ পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।

'সৎসঙ্গ' শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নেতৃত্বে শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীঠাকুরের মিশন প্রতিষ্ঠায় মগ্ন, বিভোর। তাই, আমরা যদি প্রকৃতই ঠাকুরকে ভালোবেসে থাকি, তাঁর আসার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বুঝে থাকি, তিনি আমাদের কাছে কি চেয়েছিলেন তা' যদি বুঝে থাকি তাহ'লে আমাদের সৎসঙ্গীদের শ্রীশ্রীঠাকুরের মত জীবন্ত একজনের আদেশ মাথায় নিয়ে চলতে হবে নিজেদের বালখিল্য বোধবুদ্ধিকে দূরে সরিয়ে রেখে। তবেই আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্ন 'সৎসঙ্গী সমাজ' জগতের বুকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।

শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী "এক আদেশে চলে যারা তাদের নিয়েই সমাজ গড়া"-র শৃঙ্খলিত, শিক্ষিত, সভ্য, জ্ঞানী সৎসঙ্গী হ'তে পারবো।
আর, যিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের সৎসঙ্গী সমাজ গঠনে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, যাঁর আদেশ আমরা মেনে চলবো, যাঁর নির্দেশ ও নিদেশ মেনে আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের সমাজ গড়ার লক্ষ্যে অংশ নিতে পারবো ও 'সৎসঙ্গ' প্রতিষ্ঠানের সৈনিক হ'তে পারবো তিনি হলেন এক ও একমাত্র শ্রীশ্রীআচার্যদেব! আচার্যদেব!! আচার্যদেব!!! অন্য কেউ নয়।।
( লেখা ১৮ই নভেম্বর'২০২৪)

No comments:

Post a Comment