Powered By Blogger

Saturday, November 8, 2025

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ( ২য় পর্ব)।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ নোংরা ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় হিন্দু মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে হিংসার বীজ পুঁতে দিল তারপর রক্তক্ষয়ী নৃশংস লড়াই লাগিয়ে দিয়ে ভারত ভাগ ক'রে দিয়ে চলে গেল। ২০০ বছর ধ'রে ভাতবর্ষকে ভোগ করার পর অকৃতজ্ঞ নেমকহারাম বেইমান ব্রিটিশ ভয়ংকরভাবে ক্ষতবিক্ষত ক'রে দিয়ে গেল ভারতকে, বিশেষভাবে পাঞ্জাব ও বাংলাকে। কিন্তু দাঙ্গা বন্ধে কোনওরকম সাহায্য করলো না বৃটিশ। তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছিল দুই সম্প্রদায়ের রক্তের হোলি খেলা। দেশভাগের ফলে ধর্মীয় ভিত্তিতে ১ কোটি ২০ লক্ষ থেকে ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয় আর মৃত্যু হয় ২০লক্ষ মানুষ। তৎকালীন মহান নেতারা সবাই চুপ ক'রে উপভোগ করেছিল সেই ধ্বংসযজ্ঞ।

যাই হ'ক, ভারত ভাগ হওয়ার পর ২৪বছর পর স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান আবার দু'ভাগে ভাগ হ'য়ে যায় ১৯৭১ সালে। পাকিস্তান হ'লো মুসলিম দেশ। কিন্তু সেই মুসলিম দেশ পাকিস্তান তার অংশ পূর্ব পাকিস্তানকে দাবিয়ে রাখতে চাইলো ভাষার ভিত্তিতে, বাংলা ভাষাকে নিশ্চিহ্ন করতে চাপিয়ে দিতে চাইলো বাঙালীদের ওপর উর্দু ভাষাকে। ফলে ধীরে ধীরে সুকৌশলে মুসলমানদের বাংলা ভাষা হ'য়ে গেল অদ্ভুত এক উর্দু ও বাংলা মিশ্রিত ভাষা, হারিয়ে গেল বাংলা ভাষার নিজস্ব মাধুর্য।

অখন্ড ভারতবর্ষের অখন্ড বাংলার (বঙ্গ) পুর্ব ও পশ্চিম অংশকে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের পূর্ব অংশকে পূর্ববাংলা বলা হ'তো।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের পূর্ব অংশ পূর্ববাংলায় একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করা হয়। সেইসময় এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৫২ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে।

বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালে হ'লো বাঙালীদের সংগ্রাম এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানে্র পূর্ব অংশ পূর্ববঙ্গের বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, উর্দুর পাশাপাশি। এবং এই ১৯৫৬ সালেই পাকিস্তান তার পূর্ব অংশ পূর্ববাংলার নাম পরিবর্তন রাখে পূর্ব পাকিস্তান। দেশ থেকে সুকোশলে মুছে দেওয়া হ'লো বাংলা শব্দটা।

বাঙালি জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করার যে শয়তানী প্রচেষ্টা করেছিলো বৃটিশ ১৯০৫ সালে বাংলাকে ভাগ ক'রে বাংলা্র পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ নামে তার ফলে দেশজুড়ে, বিশেষত বাংলায় তীব্র প্রতিবাদ ও আন্দোলনের জন্ম হয়, যাকে বলা হ'তো 'স্বদেশী আন্দোলন'। এইসময়েই কলকাতা থেকে রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয় এবং বাংলাকে দু'ভাগ করার ফলে দুই বাংলার প্রশাসনিক দপ্তরগুলিকে পুনর্বিন্যাশের প্রয়োজন হ'য়ে পড়ে ফলে ব্রিটিশ বঙ্গভঙ্গ বাতিল ক'রে পুনরায় বঙ্গকে একত্রিত করে। কিন্তু শকুনের নজর যেমন ভাগাড়ের দিকে থাকে ঠিক তেমনি ব্রিটিশের অন্তরেও তাই ছিল ভারতকে তো ভাগ করবোই সঙ্গে বাংলাকেও ভাগ করবো। তাই-ই সাময়িক এক হলেও শেষ পর্যন্ত ৪২বছর পর ১৯৪৭ সালে বাংলাকে ভেঙে দিতে সফল হয়েছিল ব্রিটিশেরা। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিন চন্দ্র পাল, কৃষ্ণ কুমার মিত্র, বাল গঙ্গাধর তিলক, অরবিন্দ ঘোষ ইত্যাদি 'স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত প্রধান প্রধান মানুষগুলির অনুপস্থিতি ব্রিটিশের অখন্ড বাংলাকে পুনরায় ভাগ করার সুযোগ এনে দিয়েছিল। তখন একমাত্র শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বাংলা তথা ভারত ভাগের ষঢ়যন্ত্রকে আটকাতে।
ক্রমশ
(পরবর্তী অংশ ৩য় পর্বে)।


No comments:

Post a Comment