এখন আমরা আলোচনা করবো, কি সেই চৈতন্য বা চেতনা?
আমরা চৈতন্য মানে জানি চেতনা অর্থাৎ প্রকৃত অনুভূতি, প্রকৃত জ্ঞান, প্রকৃত বোধ। চেতনা মানে সচেতন অবস্থা। চেতনা মানে সাড়া পাওয়া, হুঁশ থাকা।
চৈতন্য অর্থাৎ চেতনা মানে বাহ্যজ্ঞান বা সংজ্ঞা। আমরা এর উদাহরণ স্বরূপ বাক্য ব্যবহার হ'তে দেখেছি, "কবে তোমার আর চৈতন্য হবে? আঘাত পেয়ে মানুষটি চৈতন্য হারালো, ইত্যাদি।"
আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা বলেন, মানুষ অর্থাৎ মান ও হুঁশ। মান মানে অস্তিত্ব (existence)। আমার ও আমার চারপাশের সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব সম্পর্কে হুঁশ থাকা অর্থাৎ চেতন থাকা।
তাহ'লে কি দাঁড়ালো? মানুষ সেই যার নিজের অস্তিত্ব ও চারপাশের সব অস্তিত্ব সম্পর্কে চেতনা বা হুঁশ আছে অর্থাৎ অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রকৃত অনুভূতি আছে, প্রকৃত জ্ঞান আছে, আছে প্রকৃত বোধ। যে সৃষ্টির সমস্ত কিছু সম্পর্কে সচেতন। এককথায় যে নিজের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্ত কিছু থেকে ও জাগতিক ও মহা জাগতিক সমস্ত কিছুর সাড়া পায় সেই-ই মানুষ। যার অন্তর্দৃষ্টি ও বাহ্যিক দৃষ্টি প্রবল। বাহ্যিক দৃষ্টি অর্থাৎ পঞ্চ ইন্দ্রিয়-চোখ, কান, নাক, জিহ্বা এবং ত্বক প্রখর ক্ষমতা সম্পন্ন সাড়াপ্রবণ যার দ্বারা দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ, স্পর্শ ইত্যাদি উপলব্ধি করে মানুষ। আর Sixth Sense বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যাকে অন্তর্দৃষ্টি বলে। এরও অস্তিত্ব মানুষই অনুভব করতে পারে। বিজ্ঞান এবং ধর্ম অনুসারে এগুলিকে বিবেচনা করা হয়।
এই অন্তর্দৃষ্টিকে প্যারাসাইকোলজি হিসাবে বিবেচনা করা হ'য়ে থাকে।
প্যারাসাইকোলজিকে পরামনোবিজ্ঞান বলা হ'য়ে থাকে। অর্থাৎ এটি এমন একটি বিষয় যা যেসব মানসিক বিষয় ও ব্যাপারস্যাপার গুলিকে ব্যাখ্যা করা যায় না সেগুলিকে নিয়ে আলোচনা করে।
যাই হ'ক, এই যে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কথা বললাম, সেই পঞ্চ ইন্দ্রিয় চোখ, কান, নাক, জিহ্বা এবং ত্বক-এর কথা বললাম এই পঞ্চ ইন্দ্রিয় আমাদের কি সাড়াপ্রবণ? আমরা কি আমাদের চোখ, কান, নাক, জিহ্বা এবং ত্বক দিয়ে আমাদের চারপাশে সবকিছু দেখতে, শুনতে, ঘ্রাণ নিতে, স্বাদ নিতে এবং স্পর্শ অনুভব করতে পারি? পারি না। সবকিছু সম্পর্কে সচেতন থাকি না। সবকিছুর সাড়া পায় না। চারপাশের সবকিছুর অস্তিত্ব সম্পর্কে হুঁশ থাকি না, চেতন থাকি না। কারণ শ্রীশ্রীঠাকুরের কথানুযায়ী আমাদের মোটর নার্ভ ও সেনসরি নার্ভ (বোধবাহী ও কর্ম্মপ্রবোধী স্নায়ু) সক্রিয় থাকে না, থাকলেও দু'টোর মধ্যে কো-অডিনেশন (সমন্বয়) থাকে না।
এ তো গেল পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের কথা। ষষ্ট ইন্দ্রিয় তো তাহ'লে দূর কি বাত।
এই পঞ্চ ও ষষ্ট ইন্দ্রিয় সক্রিয় ও পজিটিভ হ'লে তখন মানুষ সাড়াপ্রবণ হয়। তখনই মানষের প্রকৃত অনুভূতি, প্রকৃত জ্ঞান, প্রকৃত বোধ জাগে। মানুষ চেতন মানে সচেতন অবস্থা প্রাপ্ত হয়। চেতনা মানে সাড়া পাওয়া, হুঁশ থাকা।
এই অবস্থা লাভকেই শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, "তোদের চৈতন্য হ'ক।"
এই চৈতন্য অবস্থা জাগলো না বলে হে দয়াল ঠাকুর তুমি কে, তুমি কেন এসেছিলে, তোমার আসার উদ্দেশ্য কি, তুমি কি ব'লে গেলে, কি দিয়ে গেলে, কেন এরা তোমাকে গ্রহণ করলো, গ্রহণ করেই বা কি লাভ হ;লো আর না ক'রলেই বা কি ক্ষতি ছিল ইত্যাদি এরা কিছু জানতে পারলো না। আর জানে না বলেই, তোমাকে ভালোবাসলো না বলেই, তোমার কথা জানলো না, পড়লো না, শুনলো বলেই, তোমাকে শুধু প্রয়োজন মেটানোর চাকর মনে করেছিল বলেই এরা তোমাকে ভালোবেসে তাদের জীবনে গ্রহণ করতে পারলো না। আর গ্রহণ করতে পারলো না বলেই এদের চৈতন্য হ'লো না, চেতনা জাগলো না। নিজের সত্তার সঙ্গে আশেপাশের পরিবেশের কি সম্পর্ক তা অনুধাবন করতে পারলো না। হ'লো না আত্মদর্শন অর্থাৎ নিজেকে দেখা, হ'লো না সবকিছু থেকে নিজেকে ও সবকিছুর থেকে সবকিছুকে পৃথক ক'রে দেখার ক্ষমতা অর্জন। ফলে অচেতন অবস্থায় পোল্ট্রির মুরগীর মতো কাটিয়ে দিল সারাজীবন শয়তানের ভোগ্যবস্তু হ'য়ে।
তাই কেন আমি জন্মেছি, কেন ঠাকুর জন্মেছিলেন, কেন ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি ক'রেছিলেন তা আর জানা হ'লো না।
পরবর্তী পর্বে আলোচনা করার চেষ্টা করবো কেন জন্মেছি, কেন ঠাকুর জন্মেছিলেন, কেন ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি ক'রেছিলেন এই নিয়ে।
প্রকাশ বিশ্বাস।
উত্তরপাড়া। ভদ্রকালী।
(লেখা ২০শে সেপ্টেম্বর'২০২৩)
No comments:
Post a Comment