Powered By Blogger

Thursday, October 5, 2023

প্রবন্ধঃ মুক্তি নেই।

কোনও লেখা লেখার পর বা কমেন্ট করার পর ভালো লাগে যখন কেউ সেই লেখা ও কমেন্ট দেখে ও পড়ে। কমেন্ট করলে মনের ও ভাবের আদান প্রদান হয়। আলোচনায় মানুষ সমৃদ্ধ হ'য়ে ওঠে। কিন্তু বেশীরভাগই শুধু লাইক আর জয়গুরুতেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমি সকলকেই বলি মনের ভাব প্রকাশ করতে। এর জন্যে লেখায় পারদর্শী হ'তে হবে তার কোনও মানে নেই। আস্তে আস্তে লেখায় হাত পাকা হয়। তার থেকেও বড় কথা আলাপ আলোচনায় জ্ঞানচক্ষু খোলে। ভুল ত্রুটি শুধরে যায়। ধারণা ও ভাবনা পাল্টে যায় ও সমৃদ্ধ হ'য়ে ওঠে।

আজ ফেসবুকের মধ্যে দিয়ে যে সুযোগ মানুষের সামনে এসেছে নিজেকে তুলে ধরার পরিবর্তে শ্রীশ্রীঠাকুরকে তুলে ধরার সৎসঙ্গীদের কাছে সেই সুযোগ আগে ছিল না। এই শক্তিশালী মাধ্যমের সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ঠাকুরের কুৎসাকারীরা। আর ফেসবুক ব্যবহারকারী সৎসঙ্গীরা ফেসবুকে ঠাকুর, ঠাকুর কথা ও ঠাকুর পরিবার সম্পর্কিত বিভিন্ন পোষ্টে শুধু লাইক আর লাভ সাইনের সঙ্গে জয়গুরুতে সীমাবদ্ধ থাকছে এবং আর সব সাধারণ অদীক্ষিত মানুষের মতো ফেসবুককে ব্যবহার করছে নিজেদেরকে নিয়ে । আশ্চর্যের বিষয় কুৎসাকারীদের পোষ্টেও জয়গুরু আর লাইক, লাভ সাইন দিচ্ছে সৎসঙ্গীরা ছবি দেখেই পোষ্টের কুৎসিত বিষয় না পড়েই। কুৎসাকারীরা জানে পোষ্টের সঙ্গে ছবি দিয়ে দাও শ্রীশ্রীঠাকুরের তাহ'লেই হবে; লাইক আর লাভ সাইন ও জয়গুরুতে ভরে যাবে পোষ্ট আর অদীক্ষিত দেখবে সে পোষ্ট আর বলবে, দেখো সৎসঙ্গীরাই সমর্থন করছে এই কুৎসায় ভরা মিথ্যেকে সত্য ব'লে।

আর কিছু সৎসঙ্গী আছে যারা ভুল বানানে, ভুল শব্দে ভরা ভুল বাণী পোষ্ট করছে ঠাকুরের, ধরিয়ে দিলে রেগে যাচ্ছে। ভুল হ'তেই পারে। ভুল আমারও হয়। ভুল হওয়াটা দোষের নয়, যারা কিছু করে তাদের ভুল হ'তেই পারে কিন্তু সেই ভুল ধরিয়ে দিলে ভুল থেকে শিক্ষা নেবার বা ভুল শুধরে নেবার ইচ্ছে না থাকাটা, উল্টে রেগে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে অপরাধ ও নিজের ও অপরের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক।

আবার কিছু অতি আবেগে উদ্দীপ্ত সৎসঙ্গী আছে যারা ঠাকুরের বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থ না বুঝেই ভুল ব্যাখ্যা করছে। উদাহরণ স্বরূপ কেউ শ্রীশ্রীবড়দাকে ও আচার্যদেবকেই ঠাকুর বা ইষ্ট বানিয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে ফটোতে হাত নেই দেখিয়ে হাত কাটা জ্যান্ত জগন্নাথ বানিয়ে চোখের জলে নিজেকে ভাসিয়ে ভিডিও বানিয়ে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে আয়ের উপকরণ ক'রে। আর সেই ভিডিও লক্ষ লক্ষ লোক দেখছে আর আয়ের রাস্তা খুলে যাচ্ছে ভিডিওকারীর। আবার কেউ বা শ্রীশ্রীঅবিনদাদাকে সর্ব্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ব'লে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করছে কাঁদতে কাঁদতে। আর এর বিরুদ্ধে বলতে গেলে কিছু সৎসঙ্গী বলছে, আপনি মুখ খুলছেন, আপনি একঘরে হ'য়ে যাবেন। মনে হচ্ছে যেন শ্রীশ্রীআচার্যদেব ও ঠাকুর পরিবার এগুলি সমর্থন করেন। আর এর বিরুদ্ধে বললে আমি ঐ সমস্ত আবেগে উদ্দীপ্ত সৎসঙ্গী ও ঠাকুরবাড়ির চক্ষুশূল হ'য়ে যাবো। শ্রীশ্রীঠাকুর ও ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের তারা এমনভাবে তুলে ধরছে যার ফলে সৎসঙ্গী ও অদীক্ষিতদের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ভুল বার্তা যাচ্ছে শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ' বিরোধী, শ্রীশ্রীবড়দা ও তাঁর পরিবার বিরোধী সৎসঙ্গী(?) নামধারী ব্যক্তিদের হাতে। মোক্ষম সুযোগ ক'রে দিচ্ছে এই অতি উৎসাহী সৎসঙ্গীরা তাদের নানারকম ব্যভিচারী ভক্তির সাহায্যে শ্রীশ্রীঠাকুর বিরোধী কুৎসাকারীদের হাতে। আর তখন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে শ্রীশ্রীঠাকুর, শ্রীশ্রীআচার্যদেব, শ্রীশ্রীঅবিনদাদা ও ঠাকুর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ওপর সমালোচনা, কুৎসা ইত্যাদির ঝাঁপি খুলে।

যাই হ'ক আর বেশি কিছু বলার নেই এ ব্যাপারে। তবে কুৎসাকারী নরাধমদের হ'য়ে কেউ কেউ সহানুভূতির অশ্রু ত্যাগ করতে করতে নিজেরাই প্রায় ঠাকুর হ'য়ে যাচ্ছে। 
তাদের মধ্যে ঠাকুর প্রেমের আতিশয্যে অনেকে জগাই মাধাই, দস্যু পল, দস্যু রত্নাকর ইত্যাদি নানাজনের জীবনের পরিবর্তনের উদাহরণ দিয়ে বলছে এই সমস্ত কুৎসাকারীরাও একদিন ঠাকুর প্রেমে মাতাল হ'য়ে যাবে তাঁকে জীবনে গ্রহণ ক'রে, শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই তারা তাদের কথার কোনও প্রতিবাদ না ক'রে তাদের পরিবর্তন হওয়ার জন্য তাদের মিষ্টি মিষ্টি কথা ব'লে কুৎসার জবাব দেয়। ভাবি সত্যি ভালো মানসিকতা। এমন ভালোবাসার, প্রেমের মানসিকতা ঠাকুর চেয়েছিলেন? ফেসবুকে এমন প্রেমময় মানসিকতার প্রতিফলন দেখা যায় করার ধারে কাছে না থাকা শুধু কথার স্রোতে ভাসা কিছু ইষ্টপ্রাণ গুরুভাইবোনের মুখে। কিন্তু কুৎসাকারিদের ক্ষমাহীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরামিষ প্রতিবাদটুকুর বিন্দুমাত্র প্রতিফলনও দেখা যায় না প্রেমী সৎসঙ্গীদের মন্তব্যে, কথাবার্তায়, আচরণে। পরিবর্তে ঠাকুরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ স্বরূপ একটা উদারতার ভঙ্গি নিয়ে তারা ঠাকুরের বিভিন্ন বাণী, ছড়া, কথোপকথনে বলা বিভিন্ন বাণীগুলিকে তাদের স্বপক্ষে তন্ন তন্ন ক'রে হাতিয়ার ক'রে ফেসবুকে তুলে ধরে কুৎসাকারীদের সংশোধনের জন্য এবং যদি কেউ কুৎসাকারীদের বিরুদ্ধে মিষ্টভাষ্যে স্পষ্টকথায় তাদের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করে তখন তার বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে যায়। ফলে তখন নিজেদের মধ্যেই একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং বিতর্কের সূচনা হয়।

এই কথার উত্তরে শুধু বলি রত্নাকর দস্যু আগে সারেন্ডার করেছিল প্রভু রামের চরণে। তাই তাঁর মুক্তি হয়েছিল শুধু নয় বিরাট পরিবর্তন হয়েছিল তাঁর জীবনের। তিনি বাল্মীকিতে পরিণত হয়েছিলেন। রত্নাকর দস্যুর সাধনার জোর ও জৈবী সংস্থিতিই রত্নাকরকে বাল্মিকিতে পরিণত করেছিল। ঠিক তেমনি একই পরিবর্তন আমরা দেখেছিলাম দস্যু সল, জগাই মাধাই, মেরী ম্যাগডালিন ইত্যাদিদের মধ্যে।

তাই আজ যারা গালাগালি করছে ঠাকুরকে, ঠাকুরকে আয়ের উপলরণ বানিয়ে নিয়ে রোজগার করছে বিভিন্ন উপায়ে, ঠাকুরকে সামনে রেখে আত্মপ্রতিষ্ঠায় মগ্ন তারা পাপ ও অপরাধবোধে ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে যতক্ষণ না ঠাকুরের চরণে আসছে, অনুতাপ করছে, প্রায়শ্চিত্ত করছে কৃত কর্মের এবং তাঁর চরণে সারেন্ডার না করছে ততক্ষণ হাজার ভালো কথাতেও, কারও কোনও আশীর্বাদেও এদের মুক্তি নেই।
(লেখা ২৬শে সেপ্টেম্বর'২০২৩)

No comments:

Post a Comment