Powered By Blogger

Monday, October 9, 2023

প্রবন্ধঃ ধর্ম ও ধর্মান্তর ৬

(পরবর্তী ও শেষ অংশঃ)

অনেকে বলেন, বুক বাজিয়ে বলেন, স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হ'তে চাইলে সমস্যা কোথায়?
তখন বলতে ইচ্ছে করে, স্বেচ্ছায় তো বিশ্বজুড়ে ঘরেবাইরে, সমাজে, রাজ্যেরাজ্যে দেশেদেশে স্বেচ্ছাচারিতার বীজ বপন হ'য়ে চলেছে। ধর্ম্ম, শিক্ষা, সমাজ ও রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই যা ইচ্ছা তাই-ই হ'য়ে চলেছে। আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমি স্বাধীন তাই আমার অধিকার রয়েছে আমার বোধবুদ্ধি মতো যা ইচ্ছা তাই-ই করার, যা ইচ্ছা তা বলার। আমি/আপনি করছিও তাই। সমস্যা কি? সমস্যা আছে কিছু?
যে কেউ যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে, যেখানে ইচ্ছা খেতে পারে, যেখানে ইচ্ছা শুতে পারে, বসতে পারে, থাকতে পারে। কারও কিছু বলার নেই। যদি অবশ্য সে স্বেচ্ছায় তা করে। কারণ আমার স্বাধীনতা, আমার স্বাধীন ইচ্ছা একান্তই আমার। স্বেচ্ছাচারিতা ও উশৃংখলতার প্রশ্রয় পাওয়া আমার জন্মগত অধিকার। তাই নয় কি?

ঠিক তেমনি যে কেউ নিজের ইচ্ছায় নিজের ধর্ম্ম ত্যাগ করতেও পারে, অন্য ধর্ম্ম গ্রহণ করতে পারে। আবার ধর্ম্ম আফিম ব'লে ধর্ম্মকে নাও মানতে পারে। আবার যেদিন ভালো লাগবে না ধর্মগুরু ধ'রে প্রায়শ্চিত্ত ক'রে পুরোনো ঘরে ফিরে আসতেও পারে। যস্মিন দেশে যদাচার!

আর যদি তা না হয়? উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উসকে দিয়ে উদারতার ভঙ্গী নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে সাধারণ সীমাহীন ভাঙ্গাচোরা লেখাপড়া না-জানাওয়ালা অশিক্ষিত মধ্যবিত্ত গরীব প্রান্তিক মানুষগুলোর অসহায় অবস্থা ও দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অর্থ মান যশ পাওয়ার লোভ দেখিয়ে মগজ ধোলাই ক'রে যদি মানুষগুলোর মুহূর্তের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজ কার্য সিদ্ধ করার খেলা হবে খেলা হবে স্লোগান তুলে ঘৃণ্য খেলায় মাতে তখন তাকে পাঠক আপনি কি বলবেন? স্বেচ্ছায় ধর্মান্তর? আর এই যে কার্যসিদ্ধির খেলার কথা বললাম এই খেলার শিকড় কত গভীরে তা কি পাঠক আপনার জানা আছে? জানার কথা ছেড়ে দিলাম আদৌ কি ধারণা করতে পারেন এর পিছনে কোনও গভীর ভয়ংকর সর্ব্বনাশা চক্রান্তমূলক ষড়যন্ত্র আদৌ আছে কিনা? কি বলবেন পাঠক আপনি?

আচ্ছা এই যে দশ হাজার হিন্দু ধর্মান্তরিত হ'লো এতে লাভ হ'লো কার? নিঃসন্দেহে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মুরুব্বীদের। তাদের সংখ্যা বাড়লো। তাই তো? যারা ধর্ম্মান্তরিত হ'লো তাদের কি লাভ হ'লো? তারা কি জাতে উঠলো? রাতারাতি আর্থিক, সামাজিক উন্নতি হ'লো? ট্রাডিশনাল জীবনযাপনের ধারা বদলে গেল? যা হিন্দুধর্মে পায়নি। আচ্ছা তারা কি হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি, হিন্দুধর্মের জাতপাত, হিন্দুধর্মের কুসংস্কার, অত্যাচার ইত্যাদি খারাপ দিক থেকে চিরতরে মুক্ত হ'য়ে গেল? বৌদ্ধধর্ম্ম কি ওয়াশিং মেশিন? ওখানে সব ভালো, উন্নত, পবিত্র ও স্বর্গীয় ভাবধারা ও আচার আচরণ, রীতিনীতি? ওখানে গেলেই মানুষ ঝকঝকে তকতকে হ'য়ে যাবে?

আচ্ছা এর আগেও যারা ধর্ম্মান্তরিত হয়েছে তারা কি ভাল আছে? তারা কি সবাই ঝকঝকে তকতকে হ'য়ে গেছে বৌদ্ধধর্মের ওয়াশিং মেশিনের ধাক্কায়? খোঁজ নিয়েছেন কেউ? ধর্ম্মান্তরিত হ'লেই কি সামাজিক, আর্থিক ভালো থাকা যায়, সুখে থাকা যায়? ধর্মান্তর কি সুখে থাকার, শান্তিতে থাকার, মানব সভ্যতা বিকাশের চাবিকাঠি? আচ্ছা হিন্দুধর্ম না হয় খারাপ তা বৌদ্ধধর্ম ভালো হ'লো কি কি গুণের অধিকারী হ'য়ে? কিছুদিন আগে আমরা কি দেখেছি? রোহিঙ্গাদের কারা নির্ম্মমভাবে মেরে, অমানুষিক অত্যাচার ক'রে দেশ ছাড়া করেছিল? যারা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করলো তাদের সামনে কি বৌদ্ধদের এই অত্যাচারের কথা তুলে ধরা হয়েছিল?

আচ্ছা অনেকে আবার প্রায়শ্চিত্ত ক'রে পুনরায় অনুতপ্ত হৃদয়ে পুরোনো নিজ ধর্মে ফিরে আসেই বা কেন?

আচ্ছা হিন্দুধর্মের বা বৌদ্ধধর্মের কিম্বা অন্য যে কোনও ধর্মের ভগবান ঈশ্বররা কি এই অত্যাচারের কথা বলেন বা ধর্মান্তরিত হওয়া অনুমোদন করেছেন? সনাতন ধর্মের বা হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের কোথাও এই ধর্মের নামে উচ্চবর্ণের আরো পরিস্কার ক'রে বলা যেতে পারে ব্রাহ্মণদের দ্বারা নিম্নবর্ণের মানুষকে অত্যাচারের কথা বলা আছে? স্বীকৃতি আছে? তাহ'লে ধর্মের নামে উচ্চবর্ণের মানুষের দ্বারা নিম্নবর্ণের মানুষের ওপর এই মানসিক শারীরিক অত্যাচার যা শাস্ত্র দ্বারা অনুমোদিত নয় কে বা কারা সৃষ্টি করেছে?

তাহ'লে কায়েমী স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম বা নিজের মন মতো মৌরসি পাট্টা বজায় রাখার বিরুদ্ধে কি প্রতিবাদ মানেই নিজ ধর্ম ত্যাগ করা ও অন্য ধর্ম গ্রহণ করা? আবার অন্য ধর্ম গ্রহণ করার পর সেই ধর্মেও যখন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের রমরমা পরিলক্ষিত হয় তখন কি অবস্থা হয়? সাপের ইঁদুর মনে ক'রে ছুঁচো গেলার অবস্থা। ছুঁচোর দূর্গন্ধে সাপ না পারে ছুঁচোকে গিলতে আবার না পারে উগলাতে! টাকরায় আটকে প্রাণ ওষ্টাগত হওয়ার অবস্থা। প্রাণ যায়ও চলে কখনো কখনো। ধর্মান্তরিদের অবস্থাও তথৈবচ।

এখন এই পর্যন্ত। পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যেতে পারে যদি আলোচনা এগোয়।
(লেখা ১০ই অক্টোবর'২০২২)

No comments:

Post a Comment