Powered By Blogger

Thursday, October 12, 2023

প্রবন্ধঃ আমার আচার্য শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

ইদানীং প্রায়ই শ্রীশ্রীআচার্য প্রসঙ্গ নিয়ে ফেসবুকে সৎসঙ্গীদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে তীব্র বাদানুবাদ হ'তে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের নানা বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝুক বা না বুঝুক তুলে ধরা হয়। শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী পড়ে নিজের মন মতো তার ব্যাখ্যা ক'রে শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে ইষ্ট হিসেবে তুলে ধরার অন্ধ প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও বর্তমান শ্রীশ্রীআচার্যদেব এ প্রসঙ্গে বহুবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্টভাষায় তুলে ধরেছেন। যারা প্রায়শই দেওঘর যান, শ্রীশ্রীআচার্দেবের সম্মুখে নাটমন্ডপে বসেন এবং বিভিন্ন জনের মনোবাসনা, শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, পারিবারিক, চাকরী, ব্যবসা, পড়াশুনা, রোগ, শোক, অভাব, বাস্তু ইত্যাদি নানা সমস্যা, প্রশ্ন নিবেদনের সময় তাঁর সমাধান বাণী শোনেন তারা তাঁর বক্তব্য পেশের সময় তাঁর শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে অভিব্যক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু আবেগ তাড়িত ভক্ত সরাসরি শ্রীশ্রীঠাকুরের মুখে নিজের মন মতো কথা 'আমার অবর্তমানে আচার্য্য রইবে এবং আচার্য্যই ইষ্ট' বসিয়ে দিয়ে শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে ইষ্ট বানিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁকে বিরোধীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ক'রে তুলেছেন এবং সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করছেন। আর শ্রীশ্রীঠাকুরের রেফারেন্স বা বিশদভাবে এ সম্পর্কে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখা জানতে চাইলে, জানতে চেয়ে প্রশ্ন করলে বিরক্ত হ'য়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন ও অযৌক্তিক তর্কে লিপ্ত হচ্ছেন। এই অতি আবেগতাড়িত ভক্তদের মধ্যে যাজক ও কিছু সহ প্রতি ঋত্ত্বিকও আছেন।

এছাড়া আর এক শ্রেণী সৎসঙ্গী আছে যারা ইউ টিউবে শ্রীশ্রীআচার্যদেব এই বলেছেন, শ্রীশ্রীঠাকুর ঐ বলেছেন সকালে-বিকেলে করতে ও ফটোগ্রাফির কলাকৌশলে শ্রীশ্রীআচার্যদেবের হাত কাটা ছবি বানিয়ে তা প্রকাশ ক'রে হাতকাটা জগন্নাথের সঙ্গে তুলনা ক'রে শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে জ্যান্ত জগন্নাথ বানিয়ে জোর গলায় প্রচার ক'রে ভিডিও বানিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে নিয়েছে; এমন রোজগারের দল আজ সৎসঙ্গ প্ল্যাটফর্মে ভয়ঙ্কর ভাবে সক্রিয়।

এরা, যারা দূর্বল, ভীরু, কুসংস্কারাছন্ন, না ক'রে পাওয়ার মানসিকতা সম্পন্ন সৎসঙ্গীদের শ্রীশ্রীঠাকুরের চলনপুজোর পরিবর্তে মূর্তি পুজোর মতো চরণপুজো ও অলৌকিকত্বের উপর নির্ভরশীল ক'রে তুলে নিজেদের আয়ের নোংরা মানসিকতাকে পোষণ দিয়ে চলেছে। এদের ইউ টিউবে ভিউয়ারদের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায় এদের উদ্দেশ্য।

আর কিছু চালাক বুদ্ধিমান ধান্দাবাজ সৎসঙ্গী নাম নিয়ে নিজেরাই শ্রীশ্রীঠাকুরের নাম দিয়ে সংগঠন বানিয়ে নিজেরাই শ্রীশ্রীঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এক ও একমাত্র প্রতিষ্ঠান 'সৎসঙ্গ' ও ইষ্টভৃতি জমা রাখার প্রতিষ্ঠান 'ফিলান্ত্রপি' কে উপেক্ষা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরের বাঁচার এক ও একমাত্র মহা কৌশল, মৃত্যু নামক মহাভীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রতিকার, উপায় নিকুম্ভিলা যজ্ঞ স্বরূপ 'ইষ্টভৃতি' সাধারণ অজ্ঞ সৎসঙ্গীদের (?) কাছ থেকে আদায় ক'রে নিজেদের হেফাজতে রাখতে দ্বিধা করছে না বা ভয় পাচ্ছে না। শ্রীকৃষ্ণের চেতাবনিকে যেমন ভয় পায়নি শিশুপালের দল ঠিক তেমনি দয়ালের ভয়াল রূপকেও এরা ভয় পায় না। এরা আজকের শিশুপাল। এরা সিদ্ধ না হ'য়েও স্বঘোষিত ঋত্বিক হ'য়ে কাঁধে স্বনির্মিত ঋত্বিকের দন্ড নিয়ে মানুষকে 'সৎসঙ্গ' বিরোধী কথা ব'লে, শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও শ্রীশ্রীআচার্যদেবের নামে কুৎসা ও মিথ্যা রটনা ক'রে বিভ্রান্ত ক'রে অবৈধ দীক্ষা দিয়ে চলেছে। এরা সিদ্ধ না হ'য়ে নিজেরাও মরছে ও অন্যদেরও মারছে আর ক'রে চলেছে সমাজের ক্ষয়।

যাই হ'ক, এ প্রসঙ্গে বহুবার আলোচনা করেছি। আবারও যৎসামান্য তুলে ধরছি।
প্রশ্নঃ ইষ্টানুসরণে ধ্যান করতে হয় কা’র?
শ্রীশ্রীঠাকুরঃ যুগাবতার ছাড়া অন্য কেউ ধ্যেয় নন।
প্রশ্নঃ তাঁর অবর্ত্তমানে কি হবে?
শ্রীশ্রীঠাকুরঃ যুগাবতারের অবর্ত্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্ত্তী, জীবন-বৃদ্ধিদ আচরণ-সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর ইষ্ট-প্রতীকস্বরূপ থাকতে পারেন। পরবর্ত্তী এসে গেলে তখন তিনিই হবেন ধ্যেয়। [আ.প্র.১/৮.১.১৯৪০]

"ইষ্ট গুরুপুরুষোত্তম
প্রতীক গুরু বংশধর
রেতঃ শরীরে সুপ্ত থেকে
জ্যান্ত তিনি নিরন্তর। "-------শ্রীশ্রীঠাকুর।

সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর যুগ শেষে ঘোর কলিযুগের যুগাবতার হ'লেন পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হ'লেন যুগাবতার রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ-এর পরবর্তী রূপ। তাঁকে যুগাবতার না ব'লে বলা উচিৎ যুগাবতারী। তিনি যুগাবতারী। অর্থাৎ যিনি যুগাবতারদের প্রেরণ করেন অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা। সেই অর্থে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরামচন্দ্র থেকে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ প্রত্যেকেই হ'লেন যুগাবতারী। অর্থাৎ তিনি নিজেই নিজেকে প্রেরণ করেন। তিনি নিজেই যুগাবতার ও যুগাবতারী।

আর যত জীবকোটি ও ঈশ্বরকোটি মানুষ আছে সবাই অবতরণ করেছে এই ধরাধামে। সেই অর্থে সবাই অবতার।

আর, পরবর্তী যুগাবতারী যতক্ষণ না আসছেন ততক্ষণ শ্রীশ্রীঠাকুরই ধ্যেয়। পরবর্ত্তী যুগাবতারী এসে গেলে তখন তিনিই হবেন ধ্যেয়। আর শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা ও বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা হ'লেন যুগাবতারী দয়াল ঠাকুরের অবর্তমানে তাঁতে অচ্যুত-আনতিসম্পন্ন, ছন্দানুবর্ত্তী, জীবন-বৃদ্ধিদ আচরণ-সিদ্ধ তঁদ্ বংশধর ইষ্ট-প্রতীকস্বরূপ। যাকে আমরা আচার্য বলি। তিনি হলেন শ্রীশ্রীঠাকুর কথিত প্রেষ্ঠটানে মাতাল প্রবৃত্তিভেদী normally adjusted solved man, ঈশ্বরকোটি পুরুষ।

শ্রীশ্রীঠাকুর ইষ্ট, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, জীবন্ত ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা, এক ও অদ্বিতীয়, সদ্গুরু, পরম কারণ, সর্ব্বশক্তিমান, সর্বসর্শী, সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী, পরমপ্রেমময় ও শ্রীশ্রীঠাকুরই আচার্য। শ্রীশ্রীঠাকুরই আচার্য কারণ তিনি জীবন সম্পর্কে, জীব, জগত সম্পর্কে, বাঁচা ও বাড়া সম্পর্কে, ধর্ম, ইষ্ট, কৃষ্টি সম্পর্কে যা যা ব'লে গেছেন তাঁর হাজার হাজার বাণী, লক্ষ লক্ষ কথার মধ্যে সবটাই তিনি আচরণ ক'রে ও করিয়ে দেখিয়ে, শিখিয়ে, বুঝিয়ে, চিনিয়ে, জানিয়ে দিয়ে গেছেন। আর এইভাবে আট আটবারই তিনি ক'রে করিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। আচার্য পরম্পরা নিয়ে বিতর্ক যদি হয়েই থাকে শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশূ, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ আর সর্বশেষ শ্রীশ্রীঠাকুর এরাই হলেন সেই অর্থেই আচার্য পরম্পরা।

কিন্তু শ্রীশ্রীঠাকুরকে কেমন ক'রে ভালোবাসবো? শ্রীশ্রীঠাকুরের বলে যাওয়া বাণীর মূর্ত রূপ কে? শ্রীশ্রীঠাকুরের অবর্তমানে তাঁর প্রতিফলন, প্রতিবিম্ব কার মধ্যে দেখতে পাবো যতদিন না তিনি আবার আসবেন? এই সমস্ত কিছুর উত্তর যার জীবনের মধ্যে, চরিত্রের মধ্যে প্রকাশমান সেই মূর্ত বিগ্রহ হলেন আমার আচার্য। তিনি আমাদের দেখিয়ে দেন ক'রে ও করিয়ে কেমন ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভালোবাসবো, কেমন ক'রে তাঁর ব'লে যাওয়া বাণীকে নিজের জীবনে, চরিত্রে মূর্ত ক'রে তুলবো, কেমন ক'রে আমার মধ্যে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রকাশ ঘটাবো। তাই তিনি আচার্য। প্রভুর অবর্তমানে প্রভুকে মাথায় নিয়ে নামময় হ'য়ে কেমন ভাবে চলবো সে চলনা যিনি আমায় দেখিয়ে দেন সেই তিনিই আমার প্রেমিক সুজন, আমার চালক আচরণ সিদ্ধ শ্রীশ্রীআচার্য। তিনি হ'লেন আমার আচার্য শ্রীশ্রীবাবাইদাদা।

তাই আবার বলি, বারবার বলি, শ্রীশ্রীআচার্যদেব বাবাইদাদা হ'লেন এক ও একমাত্র প্রেষ্ঠটানে মাতাল প্রবৃত্তিভেদী normally adjusted solved man, ঈশ্বরকোটি পুরুষ।

প্রভুর অবর্তমানেঃ
"ধরুন, আমি প্রভুকে দেখিনি, কিন্তু তাঁকে আমি ভালোবাসতে চাই। এজন্য আমার এমন একজনের সঙ্গ লাভ করা প্রয়োজন, যে তাঁকে কায়মনোবাক্যে ভালোবাসে ও অনুসরন করে। এই প্রেমী সুজনের সান্নিধ্য লাভ তাই সৌভাগ্যের কথা। তবে যাকে তাঁকে চালক হিসাবে নির্বাচন করা ঠিক নয়। দেখতে হবে প্রবৃত্তিভেদী প্রেষ্ঠটান তাঁকে normally adjusted solved man এ পরিনত করেছে কিনা।"
------শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র
(আলোচনা প্রসঙ্গে, ১০ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৫০)

তাই, সাকার ঈশ্বর অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া যেমন নিরাকার ঈশ্বরের কাছে পৌছোনো যায় না, ঠিক তেমনি শ্রীশ্রীআচার্যদেব ছাড়া জীবন্ত ঈশ্বর অর্থাৎ সাকার ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কাছে পৌছোনো যায় না, অনুভব ও উপলব্ধি করা যায় না।

যদি ভন্ডামি না হ'য়ে থাকে, কপটতা জীবনকে ঘিরে না রাখে, ছল চাতুরী ও ব্যভিচারী ভক্তির অধিকারী না হ'য়ে থাকে, যদি সময় নষ্ট না ক'রে, অল্প দিনের জন্য আসা মহার্ঘ জীবনকে জন্ম জন্মান্তরের জন্য নরকের দ্বারে বসাতে না চায়, বসাতে না চায় নিজেকে ও পরিবারের সবাইকে ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের এবং সত্যি সত্যিই প্রকৃতই সাকার ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে পৌঁছোতে চায় সৎসঙ্গীরা তাহ'লে 'সৎসঙ্গ'-এর বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদার শরণাপন্ন হ'তেই হবে। নতুবা শ্রীশ্রীঠাকুর গ্রহণ বৃথা ও ব্যর্থ হবে জীবন। আর শেষের সেদিন ভয়ংকর।

No comments:

Post a Comment