Powered By Blogger

Thursday, October 5, 2023

প্রবন্ধঃ সমস্যা সমাধানের ও মুক্তি লাভের সহজ উপায়।

হে দয়াল, তোমার জীবন্ত উপস্থিতি, তোমার সুন্দর অপরূপ মুখমন্ডল, ঐ মুখমন্ডল থেকে ঝ'রে পড়া জ্যোৎস্নার মতো স্নিগ্ধ নরম মিষ্টি আলোর কিরণ, তোমার ভুবনভোলানো শুভ্র হাসি, আর ঐ হাসি থেকে ঝ'রে পড়া মুক্তো রাশি রাশি, তোমার উজ্জ্বল মোলায়েম দেহতনু, অপূর্ব দেহসৌষ্ঠব, তোমার করুণ মায়াময়, আলোময়, রূপময়, বরাভয় চোখের দৃষ্টি, কন্ঠ থেকে ঝ'রে পড়া ভরসাদীপ্ত, ভালোবাসায়, আদরে, স্নেহে, মমতায় ভরা মধুর রসময়, আশাময় স্বর আর চতুর্দিকের গাছগাছালিতে ভরা নির্মল শান্ত স্নিগ্ধ শুভ্রতার চাদরে ঢাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঝাঁ চকচকে তোমার পার্লার, অপূর্ব কারকার্যখচিত চোখ জুড়ানো মন্দির সঙ্গে ভোরের মিষ্টি মধুর ঠান্ডা বাতাস আর নরম স্নিগ্ধ আলোর বন্যায় স্নাত কখনো বা অতি প্রত্যুষের আলোআঁধারিতে ঘেরা ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ, তোমার মন্দিরের ঐ প্রত্যুষের বিহ্বল করা, আত্মহারা, মত্ত, মাতাল, আবেশময় পরিবেশ আমার ভালো লাগে না।

আমার ভালো লাগে দয়াল, নিঝুম রাত, গা ছমছম করা হিমভেজা, রক্তশীতল করা পরিবেশ, অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার, ভুতুরে অনুভূতি ইত্যাদি। দয়াল, এসব না হ'লে কি ইশ্বর আরাধনা হয়? নীরব, নিস্তব্ধ, নিস্পন্দ চরাচর ব্যাপী প্রকৃতির ও অজ্ঞতার গভীর অন্ধকার আর সেই অন্ধকারে ডুবে রয়েছে যখন পৃথিবী ঠিক সেই সময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি। আমার সেই গভীর ঘুমে মগ্ন অবস্থায় কেউ একজন ভয়ংকর দর্শনা দেবদেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে যদি ভয় না পাওয়ায় আমায়, যদি আদেশ না দেয় আমার 'এই চাই, ঐ চাই, নইলে এই ক্ষতি হবে, ঐ ক্ষতি হবে' ব'লে তবে কিসের ঈশ্বর আরাধনা, কিসের ধর্ম পালন দয়াল?

শালা, যে ভক্ত ঠাকুরকে দিনরাত ডেকে ডেকে চোখের জলে বুক ভিজিয়ে, বিছানা ভিজিয়ে এক ক'রে দিল তাকে দেখা দেয় না বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত ঈশ্বর, পরমকারণ, পরমউৎস, পরমঅস্তিত্ব পরমপিতা, পুরুষোত্তম, সদ্গুরু, সর্বজ্ঞ শ্রীশ্রীঠাকুর ও তাঁর পূর্বরূপ শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীবুদ্ধ, শ্রীযীশু, শ্রীমহম্মদ, শ্রীমহাপ্রভু, শ্রীরামকৃষ্ণ কোনও এক অজানা কারণে আর বৃত্তি-প্রবৃত্তিতে আকন্ঠ ডুবে থাকা মানুষ, রিপুতাড়িত উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী, ঠগ, জোচ্চর, পাপী, অসদাচারী, অত্যাচারী, ভন্ড, কপট ধার্মিক, সাজা শয়তান সাধু তাদের নাকি আকাশের মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অদৃশ্য বোবা দেবদেবীরা ঘুমের মধ্যে সশরীরে শুধু দেখা দেয় না, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের নানারকম আদেশ দেয়, স্বপ্নে তাদের নানারকম দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ ব'লে দেয়, পাঁঠাবলি, মোষবলি, গরুবলি দিতে বলে, আবার কোনও কোনও ভয়ংকর দেবীও নাকি আছেন তারা মদ খেতে চায়, রক্ত খেতে চায়, সে আবার যে সে রক্ত নয় মানুষের রক্ত চাই, তা আবার যে সে মানুষ হ'লে হবে না শিশুর রক্ত চাই। বর্তমানে দেবদেবীরা যারা ছোট্ট শিশুর রক্ত পান করতে চাইতো তারা সভ্যতার ঝাঁ চকচকে আলোর ধাক্কায় ভয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়ে স'রে গেছে অন্ধকার কুসংস্কারাছন্ন গ্রাম গঞ্জের অজ্ঞতার ঘোর অন্ধকারে ডুবে থাকা প্রত্যন্ত প্রান্তে। কিন্তু অন্য সবরকম ভাবেই জাঁকিয়ে বসে আছে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে উচ্চলেখাপড়া জানাওয়ালা ও উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে অক্ষর জ্ঞানহীন নিম্নবিত্ত ও দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের ঘরে ঘরে।

কি মহাভাগ্যবান আমরা। আমাদের কত দেবদেবী! কত মা আমাদের! প্রতিদিন গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে পাহাড়ে-পর্বতে অমাবস্যা-পূর্ণিমা তিথিতে কত মা আমাদের হিন্দুদের রক্ষা করবার জন্য বিশেষ ক'রে বাঙালি হিন্দুদের জন্য নেমে আসেন, আবির্ভূত হ'ন। ভাদ্রমাসের প্রথম অমাবস্যা কৌশিকী অমাবস্যা বলে পরিচিত তিথিতে উপোস থেকে মায়ের পুজা ক'রে দ্বারকা নদীতে স্নান করলে নাকি মোক্ষলাভ হবে।
জীবনে যত পাপই করি না কেন, যত অন্যায়, অনাচার, অত্যাচার, অধর্ম করি না কেন অন্তত এইরকম কৌশিকি অমাবস্যার রাতের মতো মানুষের সৃষ্ট বিশেষ বিশেষ পবিত্র দিনে (অন্য কোনওদিন হ'লে চলবে না, এই সমস্ত বিশেষ দিনগুলিই একমাত্র পবিত্র দিন ঈশ্বর আরাধনা করার) আকাশের অমূর্ত ভগবান, বোবা ভগবান, অদৃশ্য ঈশ্বর ইত্যাদি সব দেবদেবীর পুজো, উপবাস পালন ক'রে নদীতে স্নান করলে সব পাপ, সব অন্যায়-অধর্ম, অকর্ম-কুকর্ম, সব অনাচার-অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে আর আবার কিছুদিন পরে নোতুন ভাবে চিত্ত সবল ক'রে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে পুনরায় সেই অন্যায়-অধর্ম, অকর্ম-কুকর্ম, অনাচার-অত্যাচার করার জন্য। পরে আবার একটা কোনও একটা বিপদ তাড়াবার দেবীর পুজো ক'রে বা কোনও এক বিশেষ রাতে বা তিথিতে কোনও মায়ের পুজো ক'রে দিলেই মুক্তি হ'য়ে যাবে, হ'য়ে যাবে পাপ স্খলন।

আচ্ছা এর থেকে ভালো ভগবান, বুঝদার ঈশ্বর, পরম বান্ধব ও সহজ পন্থা আর কে আছে বা কি আছে এই ত্রিভুবনে? অন্যায়-অধর্ম, অকর্ম-কুকর্ম করবো, অনাচার-অত্যাচার চালাবো আর হাতে গলায় আঙ্গুলে তাবিজ মাদুলি, লালসুতো কালোসুতো, নানারঙ্গের পাথর, কোমরে লোহা ইত্যাদি আরও কত কিছু ঝুলিয়ে নেব, বেঁধে নেব আর তারপরেও বিপদে পড়লেই ভগবানকে স্মরণ করবো আর তিনি এসে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হাত ধ'রে তুলে নেবে গাড্ডা থেকে, দেবে বিপদ থেকে মুক্তি, বাঁচাবে প্রাণ। একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটে যাবে এই কৌশিকী অমাবস্যায় উপোস থেকে মায়ের পুজো ক'রে নদীতে স্নান করলে। সমস্ত রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে আমার মুক্তি হ'য়ে যাবে, কিচ্ছু আমাকে কর্মফল ভোগ করতে হবে না।

হে দয়াল। তোমার ওসব জ্ঞানগর্ভ কথা,-------
"মানুষের উদ্দেশ্য হ'ল তাঁর লীলা উপভোগ করা। মুক্তি এর অনেক নীচে। স্মৃতিবাহী চেতনা যদি থাকে এবং ইষ্টার্থপরায়ণতা যদি প্রধান হয়, তবে লাখবার জন্মালেও কিছু এসে যায় না। প্রবৃত্তি তখন আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে পারে না। আমি সব অবস্থার মধ্যে থেকেও তার উর্ধ্বে থাকি"----------- চলবে না।

হে দয়াল, আমার উদ্দেশ্য হ'লো জীবনকে উপভোগ করা। রিপুর বশবর্তী হ'য়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির লীলা চুটিয়ে উপভোগ করা। এই জীবনে যখন অল্প কিছুদিনের জন্য এসেছি তখন এই ক্ষণিকের জীবন নিংড়ে উপভোগ করবো না? এই অল্প সময়ের জন্য আসা জীবনেও এত নীতিকথা আর বাধা? আর এই ষড়রিপুর বশবর্তী হ'য়ে বৃত্তি-প্রবৃত্তির তীব্র উৎকট লীলা উপভোগ করতে করতে যখন বিপদ নেবে আসবে মাথার ওপরে তখন তো হাজার দেবদেবতা, মায়েরা আছেন। তাঁরা রক্ষা করবেন তো। তাঁরা আমাকে রক্ষা করার জন্যই তো আছেন; তাই নয় কি? সেটা তো তারও দায়। নইলে এতো মন্দিরই বা কেন আর মন্দিরে মন্দিরে ঘটা ক'রে পুজোই বা কেন?

গঙ্গাজলে স্নান ক'রে পবিত্র হ'য়ে সারাদিন উপোস ক'রে পুজো স্থানে গোবরজল, গঙ্গাজল ছিটিয়ে, সিঁদুর চন্দনে আর লাল জবায় পুজোবেদী ও পাথরের মূর্তিকে মাখামাখি ক'রে কিম্ভূতকিমাকার সাজিয়ে একটা গা ছমছম করা পরিবেশ সৃষ্টি ক'রে ঢাকঢোল-কাঁসাঘন্টা পিটিয়ে, আলপনা দিয়ে, ফুল, চন্দন দিয়ে সিঁদুর দিয়ে ঘট লেপ্টে, ধুপধুনো জ্বালিয়ে ধোঁয়ায় ঢেকে দিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে, হোম যজ্ঞ ক'রে, ফুলচন্দন দিয়ে মন্ত্র আউড়ে, গান কীর্তন ক'রে, ভোগের আয়োজন ক'রে পুজো শেষে হৈ হৈ ক'রে ঐ মহামুক্তির আমিষ মহাভোগ মাছ, মাংস, পোলাও সাথে কারণ সুধা আবার নিরামিষ ভোগ খিচুরি, তরি-তরকারি, লুচি, সুজি, পায়েস পরমান্ন খাইয়ে ও খেয়ে তো সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি। নইলে মুক্তি ব'লে আর কিচ্ছু নেই।

আর হে দয়াল, তোমার সোনার সৎসঙ্গীরাও তো তাই বলছে। অল্প বয়সী তোমার মহান ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তোমাকে এই বয়সে আয়ের উপকরণ বানিয়ে বসে গেছে। তোমাকে ও আচার্যদেবকে লৌকিক মহিমা থেকে অলৌকিক মহিমায় মহিমান্বিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তোমার বালখিল্য ঋষির দল শ্রীশ্রীআচার্যদেবকে ইষ্ট বানিয়ে দিচ্ছে, শ্রীশ্রীআচার্যদেবের ফটো তুললে নাকি ফটোতে হাত কাটা জগন্নাথের মতো দেখাচ্ছে, তাই তাঁকে জ্যান্ত জগন্নাথ বানিয়ে ছেড়েছে; জগন্নাথ এখন দেওঘরে জীবন্ত অবস্থান করছেন পুরীর মন্দির ছেড়ে। তুমি এখন তাদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউ টিউবে আয়ের মোক্ষম উপকরণ। 
তারা ভিডিওতে ব'লে বেড়াচ্ছে,
১) ভাদ্র মাসে এই কাজগুলি করবেন এইগুলি করবেন না।
২ ) ডাক্তার সেজে ঠাকুর তুমি রোগীকে দিয়ে গেছো ওষুধ।
৩) চক্রফটো দেখার সময় ঠাকুরের ফটোর দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন এই দু'টি কথা বলুন শুধু দেখুন কি হয়।
৪) ইষ্টভৃতি যদি করতেই হয় এই নিয়মে করুন। বিপদে রক্ষা পাবেন। শ্রীশ্রীঠাকুর স্বয়ং এসে হাজির হন।
৫) ঠাকুরের কাছে কটা ধূপকাঠি একসঙ্গে জ্বালানো উচিত?
৬) ঘুম থেকে উঠেই এই কথা বলুন নিশ্চিত আকাঙ্ক্ষিত বস্তু প্রাপ্তি।
--------ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
এ সব কিছু পালন করলে ১০দিনে পরিবর্তন হ'য়ে যাবে জীবন।

জীবন সম্পর্কে তোমার হাজার হাজার চলনপুজার বাণী চলবে না তাদের কাছে হে আমার দয়াল গুরু! "চলনহারা চরণপুজা বন্ধ্যা পুজা সে জানিস", "দেবতার পায়ে মাথা খুঁটে তুই ফাঁকিতে চাস বাগাতে মাল, ঠাকুর কি তোর এতই বেকুব ফাঁকি দেখে নয় সামাল?" ইষ্টস্বার্থই ভুল হ'ল তোর মূর্তি-চিন্তাই ধরলি, ধ্যানটি গেল গোল্লায় কিন্তু এমন করাই করলি।"ইষ্ট ছাপিয়ে তোর জীবনে যা'র প্রয়োজন মুখর হবে, সেই পথেতে সর্ব্বনাশটি তোর তরেতেই দাঁড়িয়ে র'বে।"
-------------এরকম বহু বাণী আছে যা তোমার সৎসঙ্গী ভক্তদের কাছে বকোয়াস।

তাই তো গলা ছেড়ে গান গেয়ে উঠি, বলি, এমন ধর্ম, এমন ভগবান, এমন ভক্ত কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সে যে সকল ধর্ম, সকল ভক্ত ও ভগবানের রাণী সে যে আমার দেবদেবীর ভুমি!
(লেখা ১৫ই সেপ্টেম্বর'২০২৩)

No comments:

Post a Comment