আমরা যারা সৎসঙ্গী পরমপিতার ১৩৬তম জন্মদিন পালন করেছি তারা প্রায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ ঘরে নিজের ও নিজেদের আপনজনের জন্মদিন পালন ক'রে থাকি সাধ্যের মধ্যে থেকে কিংবা কখনও কখনও সাধ্যের বাইরে গিয়েও। কেন করি? নিজের একান্ত প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাতে।
তেমনি আমাদের পরমপ্রিয়, পরম আপনজন, পরম গুরু, পরম উদ্ধাতা, পরম উৎস, পরম সত্ত্বা, পরম অস্তিত্ব, পরম কারণ, পরম বন্ধু, পরম আত্মীয়, পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্মদিনও আমরা প্রায় সৎসঙ্গী পরিবার পালন ক'রে থাকি পরম আনন্দে, পরম ভালোবাসায়, পরম গুরুত্ব সহকারে।
কিন্তু আমরা যারা শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মদিন পালন করি তারা কি সবাই ঠাকুরকে আমাদের জীবনের কেন্দ্রে এক ও একমাত্র ভালোবাসার মানুষ ব'লে মনে ক'রে তাঁকে ভালোবেসে তাঁর জন্মদিন পালন ক'রে থাকি?
আমাদের ঈশ্বররূপে ভালবাসার কেন্দ্রে কি তিনি একাই থাকেন, আরও অনেকে থাকেন না? দুনিয়ার হাজারো দেবদেবী থাকেন না? আমাদের ভালোবাসার মধ্যে কি একটা পাঁচমেশালি ভাব থাকে না? ভয়, ভালোবাসা, সংস্কার, প্রথা, নিয়ম ইত্যাদি নানারকম মানসিকতার লতানো ডালপালা আমাদের মনকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে রাখে না? সাপের মতো জড়িয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে গিলে খায় না? আমরা আমাদের ছোট্ট সন্তানের জন্মদিন, কিংবা আমাদের প্রিয়জন পিতামাতার ভয়ে ভক্তি আর ভালোবাসায় ভক্তি কি এক?
আচ্ছা, সংস্কার, প্রথা ও নিয়ম জোর ক'রে মেনে চলার পারিবারিক চাপ ও তাগিদ এবং তাকে বারো মাসে তের পার্বণের মত বাৎসরিক অনুষ্ঠানে পরিণত করার ঐতিহ্য হিসেবে তাঁর জন্মদিন পালন করা আর তিনি আমার ও আমার পরিবারের বেঁচে থাকা ও শ্রীবৃদ্ধির এবং রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় ও দরিদ্রতা থেকে মুক্তির এক ও একমাত্র কান্ডারি স্বরূপ কি তাঁকে পরিবারের প্রধান মনে ক'রে তাঁর জন্মদিন পালন করা কি এক অর্থ বহন করে?
আবার অনেকে আমরা সৎসঙ্গীরা তাঁর জন্মদিন কবে সেটাই জানি না। আর জানলেও পরিবারে বংশ পরম্পরায় তাঁর জন্মদিন পালন করার চর্চা না থাকার কারণে আমরা পালন করি না। ফলে আমাদের পরবর্তী বংশধরেরাও এই বিষাক্ত আবহাওয়ায় শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক ভাবে বিষাক্ত হ'য়ে জন্মজন্মান্তর নষ্ট হ'য়ে যায় ও ভুগতে থাকে।
যারা তাঁর জন্মদিন পালন করি ও করি না, তাঁকে এই বিশেষ দিনে স্মরণ করি ও স্মরণ করি না তাদের সকলের জন্য পরম দয়ালের কাছে প্রার্থনা করি, হে দয়াল, তুমি যে আগেরবার ঠাকুর রামকৃষ্ণ হ'য়ে এসেছিলে আর বলেছিলে, "তোদের চৈতন্য হ'ক", ঠিক তেমনি তোমার ধার করা কথা নিয়ে বলি, তুমি এদের চৈতন্য দান করো, চেতনা জাগ্রত ক'রে দাও।
কি সেই চৈতন্য বা চেতনা? (পরবর্তী পর্বে)
ক্রমশঃ
(লেখা ১৭ই সেপ্টেম্বর'২৩)
No comments:
Post a Comment