Powered By Blogger

Wednesday, October 29, 2025

প্রসংগঃ ফেসবুক সংস্কৃতি, অবশেষে-------

ফেসবুক সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক ব্যাধির মত। ফেসবুকে professional dashboard-এ নির্দেশনা থাকে কিভাবে পেজকে মানিটাইজেশন করতে হবে। তা' সত্ত্বেও তার সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেককেই বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় অবতীর্ণ হ'তে দেখা যায় ফেসবুকে। ইয়ং জেনারেশনকে রাতদিন একটা অলীক মায়ার মোহন বাঁশির সুরে ডাকার মত টাকা রোজগারের নিশ্চিত লাভের পরামর্শ দিয়ে চলেছে ফেসবুক professional dashboard-ও ফেসবুক ব্যবহারকারী বিশেষজ্ঞরা। ফলে সারাদিন মোবাইলে বা ল্যাপটপে মুখ বুঝে পড়ে থাকে জেন এক্স, জেন ওয়াই, জেন জি প্রজন্মের সবাই ঘরে-বাইরে, পথেঘাটে, স্কুলেকলেজে, অফিসে-কলে-কারখানায় সমস্ত জায়গায় বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার পথের সমস্ত কাজকর্ম পিছনে ফেলে রেখে।

বর্তমানে প্রায় সবাই ফেসবুক বিশেষজ্ঞ হ'য়ে নেমে পড়েছে ফেসবুকে কিভাবে কিভাবে সকালে, দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায় ও রাতে আলাদা আলাদা ভাবে পা ফেলে এগোতে হবে ফেসবুকে পরিকল্পিতভাবে তা' জানান দিতে। বলা হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেই সুর্যোদয়ের ছবি বা একগুচ্ছ ফুল হাতে কিংবা ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপ বাড়িয়ে শুভ সকাল জানিয়ে দাও ফেসবুক বন্ধুদের, তারপর সময় এগিয়ে চলার সাথে সাথে একটা স্টোরি কিংবা একটা রীল পোষ্ট করো, তারপর দুপুরে একটা লেখা পোষ্ট করো, মাঝখানে মাঝে মাঝে অন্যের পোষ্টে কমেন্ট করো বা কমেন্টে সাড়া দাও, বিকেলে ও সন্ধ্যায় ভিডিও পোষ্ট করো এবং সবশেষে রাতে সময় হ'লে লাইভ করো ও সবাইকে গুডনাইট ও জয়গুরু জানিয়ে পোষ্ট ক'রে দিয়ে দিন শেষ করো, মনে মনে কালকের প্রস্তুতি নিয়ে ফেসবুক নাম জপতে জপতে শুয়ে পড়ো।

ফলস্বরুপ ফেসবুক অফিশিয়াল স্টাফদের কাজ হ'য়ে গেছে হালকা।
প্রতিদিন পরামর্শ আসছে, মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারকারী এমনিভাবেই ধৈর্য্য ধ'রে তোমার রুটিন মাফিক দিন শুরু করো ও দিন শেষ করো। ব্যস, আর কিচ্ছু করতে হবে না দৈনন্দিন জীবনে। ভাগ্যলক্ষ্মী সুড়সুড় ক'রে ঢুকে পড়বে তোমার ঘরে, তোমার জীবনে। কুবেরের মন্ত্র পড়তে হবে না, ধারণ করতে হবে না কোনও মহালক্ষ্মী যন্ত্র, হবে না লক্ষ্মী পূজা করতে। এক ঢিলে সব পাখি মারার মত এক ফেসবুক মন্ত্রে সব দেবতার পুজো হ'য়ে যাবে। সুড়সুড় ক'রে ডলার ঢুকে যাবে তোমার ব্যাংক একাউন্টে।

এমনিভাবে সব ফেসবুক ব্যবহারকারী স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞদের অযাচিত পরামর্শ প্রচার হ'য়ে চলেছে ফেসবুকে। কেন হচ্ছে তা' জানি না। তারা 'ফেসবুক' থেকে কোনও কমিশন পায় কিনা জানি না এইসব স্বাধীনভাবে নিজের উদ্যোগে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় হাজির হ'য়ে সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সাহায্য করার জন্য, কিংবা এটাও হয়তো বা তাদের নিজেদের জন্য মানিটাইজেশনের স্ট্রাটেজি। কখনও বা মানিটাইজেশনের জন্য সফল হওয়ার পরামর্শ সমৃদ্ধ একই লেখা সবাই কপি পেষ্ট ক'রে চলেছে ফেসবুকে, কিংবা কখনও বা আলাদা আলাদা ভাবে নিজস্ব স্টাইলে মতামত নিয়ে বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় অবতীর্ণ হ'চ্ছে ফেসবুকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে।

দিনরাত পাকা মাথার চুলের এমন পরামর্শে কাঁচা চুলের মাথারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ফেসবুকে, পিছনে পড়ে থাকছে পড়াশুনা, কাজকর্ম সব। সব ছেড়ে দিয়ে মুখ বুঁজে পড়ে থাকছে আফিমের নেশার মত মানিটাইজেশনের নেশায় বুঁদ হ'য়ে। অনুরোধ, উপরোধ, আবেদনের কান্নায়, অনুরোধের বন্যায় ভরে উঠছে ফেসবুকের বুক। সস্তা, হালকা, চটুল, সুড়সুড়ি কন্টেন্টে ভরে যাচ্ছে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম।
কিন্তু হায়, তথাপি অধরা ফেসবুক ডলার! এত পরিশ্রম, এত ব্রেন ওয়ার্ক, এত ঘাম ঝড়ানোর পড়ও মানিটাইজেশনের শর্ত আর ফুলফিল হচ্ছে না, ডলার আসছে না ঘরে। ডেইলি, উইকলি, মান্থলি শর্তপূরণের নিত্য নোতুন নোতুন পরামর্শ আসছে professional dashboard-এ ফেসবুকের অফিস থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে। যত লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে যায় ফেসবুক ব্যবহারকারী, তত দূরে দূরে সরে সরে যায় দিগন্তের মত মানিটাইজেশনের হাতছানি। এতটাই নির্দয় ফেসবুক।

অবশেষে হতাশায় অবসাদে বিষন্ন হৃদয়ে গেয়ে ওঠে টাকার স্বপ্ন দেখা ফেসবুক ব্যবহারকারী কান্না ভেজা গলায়,
একুল-ওকুল, গেল আমার দুই কুল,
হায়, ভবিষ্যৎ হ'লো আমার নির্মূল!
তবুও আমার শুষ্ক ফেসবুক বুকে
ডাকে না পাখি, ফোটে না ডলার ফুল!!
প্রকাশ বিশ্বাস,
ভদ্রকালী, উত্তরপাড়া।


No comments:

Post a Comment