Powered By Blogger

Wednesday, October 29, 2025

বাংলাদেশে কোন ছবিটা বা খবরটা সঠিক?

বাংলাদেশে সম্প্রতি শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের যে ছাত্র ঝড় ব'য়ে গেল সেই ঝড়ে লন্ডভন্ড দেশে ভারতের রয়েল এনফিল্ড বাইক লঞ্চ হয়েছে। এই ঝড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যে অগ্নিমূল্য, হাত দিলেই ফোসকা পড়ছে, চাহিদার তুলনায় যোগানের ভয়ংকর অভাব ইত্যাদি ব'লে যে প্রচার চলছে প্রতিনিয়ত। 'বাংলাদেশের সবজি বাজার উত্তপ্ত। সাধারণ মানুষ ফাঁসি লাগাতে চাইছে। সবজি যেন এখন বিলাসী। অস্থির রাজধানীর সবজি বাজার, চলছে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগীতা' ইত্যাদি নানা হেডলাইনে ঢেকে আছে বাংলাদেশের সবজী বাজার।

আর সবজী বাজারের এই অগ্নিমূল্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের ইয়ং জেনারেশন সম্প্রতি ভারতের রয়েল এনফিল্ড বাইক বাংলাদেশের ঢাকায় শোরুম খোলার ঘোষণা হ'তেই কেনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে ডিলার পয়েন্টে কে আগে বুক করবে।

ভারতীয় মোটরসাইকেল প্রস্ততকারক সংস্থা রয়্যাল এনফিল্ড বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে একটি উৎপাদন ইউনিট এবং ঢাকায় একটি শোরুম শুরু করার ঘোষণা করেছিল।
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে 7.83 একর জুড়ে বিস্তৃত এই প্ল্যান্টটি বার্ষিক 30,000 এর বেশি মোটরসাইকেল উৎপাদন করবে। হান্টার 350, উল্কা 350, ক্লাসিক 350 এবং বুলেট 350 এই চারটি মডেলের মোটর সাইকেল বাংলাদেশে উৎপাদন হবে।

আর, ভারতের রয়্যাল এনফিল্ডের প্রথম শোরুম এবং দেশের একমাত্র শোরুম হবে বাংলাদেশের ঢাকায়। 7,866 বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত শোরুমটি মোটরসাইকেল বিক্রি করবে এবং গ্রাহকদের সহায়তা করবে।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত রয়্যাল এনফিল্ডের ফ্ল্যাগশিপ শোরুমে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের বাজারে মোটরসাইকেলগুলো লঞ্চ করা হয়।

বাংলাদেশে রয়্যাল এনফিল্ডের একমাত্র প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইফাদ মোটরস লিমিটেড। বাংলাদেশের বাজারের জন্য ৩৫০ সিসির হান্টার, ক্লাসিক, বুলেট ও মিটিয়র মডেলের মোটরসাইকেল লঞ্চ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে; সঙ্গে বেড়ে চলেছে নিত্য প্রয়োজনী পণ্যের দাম। পণ্যমূল্যের দাম এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ডিম থেকে কাঁচামরিচ, ভারত থেকে আমদানি করে সামাল দিতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সুফল মিলছে না। মজুতদাররা রাতারাতি দলবদল করে সব জিনিসেরই দাম বাড়িয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরই মধ্যে আড়াই মাস অতিক্রম করেছে। দেশজুড়ে ভয়ংকর অস্থিরতা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আগুন হ'য়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, ১০০০ টাকার নোট নিয়ে গেলে সবজির বাজারে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা চলে যাচ্ছে শুধু কাঁচা বাজারে। তাহলে বাকি বাজার কি দিয়ে করা যাবে? এই সময় সবজির বাজারে এত দাম হওয়ার কথা নয়। ঐ ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে পকেটে করে সবজি আনার মতো সাধারণ মানুষের অবস্থা। সাধারণ মানুষ চরম বিপর্যয়ে।
এখন প্রশ্ন জাগে মনে, এই যে হাসিনা সরকারের পতন হ'লো, এই আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে ভারত বিরোধী আন্দোলন হ'লো, বাংলাদেশের আপামর ইয়ং ছাত্র ও যুবদের মনে যে তীব্র ভারত বিরোধী ঘৃণা জন্মানো হ'লো, ভারতের সমস্ত রকম সম্পদ বয়কটের ডাক দেওয়া হ'লো, রবীন্দ্রনাথ যেহেতু ভারতীয় ও হিন্দু সেইহেতু তাঁর লেখা ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত বর্জনের ডাক দেওয়া হ'লো, রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙ্গা হ'লো, ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেওয়া হ'লো, ভারত শত্রু দেশ ব'লে বাংলাদেশীদের মনে গেঁথে দেওয়া হ'লো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নোংরা অসভ্য জংলী সংস্কৃতির রগরগে প্রচার হ'লো, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা যেহেতু হিন্দু অতএব তারা ভারতীয় এই মানসিকতায় তাদের ওপর অত্যাচার শুরু হ'লো, হিন্দু মন্দির, দেবদেবী ভাঙচুর হ'লো, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়নের ভয় দেখানো শুরু হ'লো, কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেওয়া হ'লো হিন্দুদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার, হুমকি দিলেন একজন মৌলানা। এরকম নানা অমানবিক যন্ত্রণাদায়ক ঘটনা ঘটানো হ'লো পরিকল্পিতভাবে এবং ঘটে চলেছে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ মদতে।

আবার পর মুহুর্তে ভারতের পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য আমদানি হয়। ভারত দেশটি থেকে যেসব খাদ্য পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হয় তার মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেলসহ ভোজ্য-তেল, চিনি, মধু, কোমল পানীয়, চিপস, বিস্কুট, চকলেট ও ক্যান্ডি জাতীয় খাবার।
আর, এবার বাংলাদেশের ইয়ং জেনারেশন সম্প্রতি ভারতের রয়েল এনফিল্ড বাইক বাংলাদেশের ঢাকায় শোরুম খোলার ঘোষণা হ'তেই আনন্দে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। কেনার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে ডিলার পয়েন্টে কে আগে বুক করবে। দাম ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ হবে।
এই যে বৈষম্য বিরোধী তীব্র ছাত্র আন্দোলন হ'লো, যুব আন্দোলন হ'লো, দেশের স্থিরতা নষ্ট হ'লো, প্রভূত জাতীয় সম্পদ নষ্ট হ'লো, আবু সাঈদের মতো মানব সম্পদ ক্ষয় হ'লো, একটা উন্নয়ন মুখী রাষ্ট্রের গতি রুদ্ধ হ'লো, ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হ'লো, দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হ'লো। 
এখন প্রশ্ন জাগে মনে,
বাংলাদেশে যারা ভারতের তৈরী রয়েল এনফিল্ড বাইক কিনবে তারা কারা? তারা 'ভারতীয় পণ্য বয়কট করো' শ্লোগান ও দাবীর পক্ষে অবস্থানকারী যুব সমাজ? তারা কি শত্রু দেশ ভারত বিরোধী বাংলাদেশী? তারা কোন বাজার থেকে সবজি কেনে? এই যুব সমাজের গায়ে কি বর্তমান বাংলাদেশের ভয়ংকর দামের আগুনে তপ্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ফোস্কা পড়ে না? তাহ'লে সাধারণ মানুষ, গরীব মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ভয়ংকর অগ্নিমূল্য আর ৫-৬ লাখ টাকা দিয়ে বাইক কেনার মানুষের বিলাসিতার ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য নেই? এখানে কোনও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হয় না? যে ছাত্র, যুব সমাজ তীব্র উগ্র ভারত বিরোধিতা করেছিল, ভারতকে শ্ত্রু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছিলো সেই দেশের সেই ছাত্র, যুব সমাজ ভারতীয় পণ্য বিভিন্ন মডেলের বাইক কেনার ক্ষেত্রে এত উল্লসিত, এত আনন্দিত? এখানে একই দেশের ছাত্র, যুব সমাজের চরিত্রের মধ্যে মানসিকতার বৈষম্য চোখে পড়ে না, বিশেষ ভাবে চিহ্নিত হয় না? তাহ'লে এক্ষেত্রেও বৈষম্য নেই? তাহ'লে বৈষম্য কোথায়? বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনটা তাহ'লে কিসের ওপর ভিত্তি ক'রে? সবটাই কি ধোঁকাবাজি? সবটাই কি কপটতা? সবটাই কি ধান্দাবাজী আন্দোলন ছিল? ছয় সমন্বয়ক তো ছাত্র ও যুবক। আর, তাদের অনুগামীরাও ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়। তাহ'লে ঐ ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ভারতীয় পণ্য রয়েল এনফিল্ড কেনার ছাত্র যুবকদের মানসিকতা সম্পর্কে ছয় যুবক ছাত্র সমন্বয়কদের কি বক্তব্য? তাদের অনুগামী হাজার হাজার বিপ্লবী ছাত্র যুবকদেরই বা এই বৈষম্য সম্পর্কে কি বক্তব্য?

সোশ্যাল মিডিয়ায় মূল্যবৃদ্ধি, ক্রেতাদের নাভিশ্বাস, ভারত বিরোধিতা, বাইক লঞ্চ, বাইক ক্রেতাদের উল্লাস ইত্যাদি কোন ছবিটা বা খবরটা সঠিক? বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনকারী ছয় সমন্বয়ক, লক্ষ লক্ষ ছাত্র, যুব সমর্থক, জনগণ, দেশের উপদেষ্টামন্ডলী ও প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া মহাজ্ঞানী ডাঃ ইউনুস আপনারা কি এর মধ্যে কোনও বৈষম্য খুঁজে পান?
( লেখা ২৯শে অক্টোবর'২০২৪)।


No comments:

Post a Comment