ঘুম যখন ভাঙল তখন সন্ধ্যে গড়িয়ে গেছে অনেকক্ষণ। ঘড়িতে আটটা বাজে। উঠে বসলাম বিছানায় কিন্তু আজ আর বেরোতে ইচ্ছে করছিল না। চুপ ক'রে বিছানায় বসে আছি। সকালের ঘটনা মনে ভেসে উঠলো একের পর এক। এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। ঠাকুরের ফটোর দিকে তাকিয়ে প্রণাম ক'রে চেয়ে রইলাম ঠাকুরের মুখের দিকে। মনে মনে বললাম, ঠাকুর আমি কি ভুল করলাম? বড্ড বেশী ঝুঁকি ও চাপ নিয়ে ফেললাম ঠাকুর? এমন সময় বন্ধুরা এসে ডাকাডাকি করতে লাগলো। ঘরে ঢুকে এলো, বললো, কিরে বেরোবি না? আমি কিছু বললাম না। ওদের বসতে ব'লে আমি চোখমুখ ধুয়ে এসে জামা প্যান্ট পড়ে নিলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম প্রতিদিনের মতো আড্ডা মারতে।
আজ আর আড্ডা জমছে না। বুঝতে পারছি সবাই আমার মুখে কিছু শুনতে চাইছে আজ সকালে যা ঘটলো তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে। কিন্তু আমি কিছু নিজে থেকে বলছি না ব'লে কেউ আগ বাড়িয়ে কিছু বলছে না। তবে একটা ছটফটানি লক্ষ্য করতে পারছি সবার মধ্যে। আসলে সময়ে পাশে না থাকাটা যেমন আমার মধ্যে সামান্য প্রভাব ফেলেছে ঠিক তেমনি ঐ চরম মুহূর্তে পাশে না থাকাটা যে আমি ভালো ভাবে নিইনি সেটাও ওরা বুঝতে পেরেছে।
তবে অনেক পরে বুঝেছিলাম কেমনভাবে সরলতার জন্য কঠিন মার খেতে হয়। স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সব করা যায়, চোখ উলটে দেওয়া যায় মুহূর্তের মধ্যে। পরবর্তী কয়েক দিনের ঘটনায় তা প্রমাণ হয়েছিল।
একজন চা দিতে দিতে সাহস ক'রে বললো, কি রে এর পরে কি করবি কিছু ঠিক করেছিস? আমি বললাম, কি করবো তাই-ই তো ভাবছি। আর একজন বললো, প্রেসিডেন্ট কি বললো? তিনি কিছু বললেন? আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হ'তে লাগলো পরিস্থিতিটা। গুমোট ভাবটা কেটে যেতে লাগলো। একজন খুব কৌতুহল নিয়ে ব'লে উঠলো, বাপী, তুই কি বললি প্রেসিডেন্টকে?
আর, ঠিক সে-সময়ে একজন সাইকেলে ক'রে এসে থামলো আমাদের সামনে। এসে বললো, বাপীদা, দাদা তোমায় ডাকছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে বললাম, তুই যা, আমি যাচ্ছি। ছেলেটা আবার সাইকেলে চড়ে চলে গেল। আমি ভাবলাম সত্যিই তো এখন ঘড়িতে প্রায় ৯ টা বাজে, এখনও পর্যন্ত সকালের এতবড় ঘটনার কোনও ফিডব্যাক দেওয়া হয়নি দাদাকে। আমি আর দেরী না ক'রে সকলকে বসতে ব'লে বন্ধুর সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম।
আমাকে দেখেই দাদা উঠে এলো নিজের বসার জায়গা থেকে আর চিবিয়ে চিবিয়ে হাসি মুখে সবাইকে শুনিয়ে বললো, কি রে তুই তো একদিনেই হিরো হ'য়ে গেছিস। তা একটু আমাদেরও মনে রাখিস। সকলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো, কি বল তোরা।
আমি কাছে আসতেই আমার কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সকলের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো, বাপী আমার অনেক বড় উপকার করেছে তারপর আমাকে জড়িয়ে ধ'রে বললো, তুই অনেক সহজ ক'রে দিয়েছিস আমার কাজ। তারপর সকলের থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম। তারপর সব ঘটনা বিস্তারিত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বললাম দাদাকে। দাদা বললেন, তোর ওপর ------দা খুব রেগে আছে। আমি বললাম, তুমি কিছু বলোনি উনাকে আগে? দাদা বললেন, বলেছি। আমি বললাম, তাহ'লে? আরে বাবা তুই কি জানিস তুই কোথায় হাত দিয়েছিস? আমাকে বোঝাতে কি বেগ পেতে হয়েছে তা আমি জানি। আমি বললাম, আমার জন্য তোমাকে অনেক চাপ নিতে হ'লো। তারপরে হাসতে হাসতে বললাম, রাগটা আমার ওপরে না, আসল রাগ তোমার ওপরে।
তারপরে অনেক কথা হ'লো যা খুবই গোপনীয়। শেষে দাদা বললো, এবার কি করবি? আমি বললাম, আমাকে তো দেখা করতে বলেছে তা' কালকে না-হয় একবার অফিসে যাবো দেখা করতে। দেখি কি হয় আর কি বলেন। দাদা সম্মতি দিয়ে বললেন, হ্যাঁ, দেরী করিস না, কালকেই সকাল ১০টার সময়ে চলে যা। দ্যাখ কি হয়।
কথা শেষ ক'রে আমি চলে এলাম আমার ডেরায়। সেখানে দেখলাম সবাই বসে আছে আমার জন্য। সবাইকে পরবর্তী কর্মসূচী জানিয়ে দিয়ে যে যার বাড়ি ফিরে এলাম।
কাল সকালে কি করবো আর না-করবো তার পরিবর্তে সারারাত একটা কথা ঘুরপাক খেতে লাগলো মাথার মধ্যে, "বাপী আমার অনেক বড় উপকার করেছে। তুই অনেক সহজ ক'রে দিয়েছিস আমার কাজ।" কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারলাম না, কি উপকার করেছি আর কি কাজই বা সহজ ক'রে দিয়েছি।
যখন বুঝেছি, তখন আমি খাদের কিনারায়।
( লেখা ১৩ই জুন'২০২৪)
No comments:
Post a Comment