সামনে দু'টো পথ, দু'দিকে গিয়েছে। কোন পথে যাবেন?
জানতে হ'লে একটু কষ্ট ক'রে ধৈর্য্য ধ'রে পড়ুন, পড়ার অনুরোধ রইলো।
জীবনে টেনশান? জীবনে সমস্যা? জীবনে অভাব-অনটন? জীবনে ব্যর্থতা? জীবনে হতাশা-অবসাদ? জীবনে চারদিকে অন্ধকার দেখছেন? রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় আর দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত? কি করবেন বুঝতে পারছেন না? সমস্যা সমাধানের জন্য বাবাজী, মাতাজী, জ্যোতিষীর দ্বারস্থ হয়েছেন? বিপদতারিণীর পুজো ক'রে হাতে লাল সুতো বেঁধে বিপদ থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন? সন্তোষীমাতার পুজো ক'রে মাকে সন্তুষ্ট ক'রে রোগ, শোক ইত্যাদি থেকে উদ্ধার পেতে চাইছেন? শনি সত্যনারায়ণ পুজো ক'রে শনির প্রকোপ থেকে মুক্তি এবং নারায়ণের হাত ধ'রে বাঁচার পথ খুঁজছেন? হাতে, গলায়, কোমরে তাবিজ মাদুলি বেঁধে গ্রহদের উৎপাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন? মুশকিল আসান করো অর্থাৎ কঠিন, সমস্যা বা বিপদ আসান করো ওগো বাবাজী মাতাজী ব'লে মুশকিল থেকে ত্রাণ পেতে চাইছেন? হে রাম, দাও আরাম ব'লে কান্নাকাটি করছেন? হাতে দশ আঙ্গুলে দশ রকম লাল, নীল, সবুজ পাথরের আংটি ধারণ ক'রে সমস্ত গ্রহদের শান্ত করতে চাইছেন? কব্জিতে, বাহু ও উর্ধ্ব বাহুতে, গলায়, কোমরে লাল, কালো সুতো বেঁধে, তাবিজ, মাদুলি, গাছের শেকড় বাকর, শুকনো ডালপালা ঝুলিয়ে আর সারা শরীরে সিন্দুর চন্দন লেপ্টে বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার পথে সফল ও সার্থক হ'তে চাইছেন?
এত কিছু করার পরেও প্রাপ্তির ঘর শূন্য! এত কিছু করার পরেও টেনশান মুক্ত হ'তে পারছেন না, সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না, অভাব-অনটন দূর করতে পারছেন না, ব্যর্থতাকে সফলতায় টার্ন করাতে পারছেন না, হতাশা অবসাদ থেকে মুক্তি পাননি, উল্টে ক্রমশ হতাশা ও অবসাদ গেড়ে বসছে মনে, অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আসার কোনও আলোকবিন্দু দেখতে পাচ্ছেন না, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা ক্রমশঃ অক্টোপাশের মত আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলছে, হাতে, গলায়, কোমরে তাবিজ, মাদুলি, শেকড় বাকর বেঁধেও গ্রহদের উৎপাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। রাতে ঘুমোতে পারছেন না, ঘুমের মধ্যে উল্টোপাল্টা, অর্থহীন, বীভৎস, কুৎসিত ও ভয়ের স্বপ্ন দেখে হে দয়াল, বাঁচাও, বাঁচাও ব'লে হঠাৎ চেঁচিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসছেন বিছানায়।
আবার, অর্থ, মান, যশের অধিকারী হ'য়েও জীবনে আনন্দ নেই, মনে শান্তি নেই, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের বেসিক প্রয়োজনগুলি দারুণ ভাবে মেটার পরও রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাননি, জীবনে সুখ নেই, নিদেন পক্ষে ঘরে নেই সোয়াস্তি। বিপদতারিণীনির পুজো ক'রে কব্জিতে একসঙ্গে অনেকগুলি লাল সুতো বেঁধেও বিপদ থেকে রক্ষা পাননি, সন্তোষীমায়ের পুজো ক'রে আজও জীবনের শেষ দিনেও সন্তোষ পাওয়া গেল না, শনি সত্যনারায়ণ পুজো ক'রে শনির প্রকোপ থেকে মুক্তি এবং সত্য নারায়ণের হাত ধ'রে বাঁচার পথ খুঁজে পাননি শনি ও সত্যনারয়ণের সিন্নি প্রসাদ ভক্তিভরে খেয়েও।
এক কথায় মানসিক নানা অশান্তিতে আপনি জর্জরিত, বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। আর আপনার এই জর্জরিত, বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত অবস্থার জন্যে কেউ দায়ী নয়। দায়ী আপনার ছোটোবেলায় আপনার পিতামাতা আপনার জীবনের ভিত গড়ে না দেবার জন্য। আর বড়বেলায় আপনার জর্জরিত, বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত জীবনের জন্য, ছোটোবেলা থেকে গড়ে ওঠা জীবনকে পরিবর্তন না করার জন্য আপনি নিজেই দায়ী। আপনার স্বভাব দায়ী। আপনার ব্যবহার দায়ী। আপনার কথা বলার ধরণ দায়ী। আপনার শরীরের ভাষা ও মুখের ভাষা দায়ী। আপনার অজ্ঞানতা দায়ী। আপনার কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবন দায়ী। আপনার বৃত্তি-প্রবৃত্তি দায়ী। আপনার নিয়ন্ত্রণহীন ৬টা রিপু দায়ী। আপনার রিপু তাড়িত উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল জীবন দায়ী। আপনার থট প্রসেস দায়ী। আপনার আদর্শহীন জীবন দায়ী। আপনার বায়োলজিক্যালি ডিফেক্ট জীবন দায়ী। আপনার মাথায় মালিক অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর নেই, থাকলেও তাঁতে সম্পূর্ণ সমর্পিত জীবন নয়, শয়তান বসে আছে মাথা জুড়ে। আর, তাই সমস্য্যা জর্জরিত জীবনে ক্ষতবিক্ষত।
তাই আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের বলি, যারা জীবন্ত ঈশ্বরকে জীবনে পেয়েও এইরকম অসহায় যন্ত্রণাকাতর অবস্থার শিকার, তারা নানা কারণে আজ ঠাকুর থেকে দূরে সরে গিয়ে সাক্ষাৎ শয়তানের খপ্পরে পড়ে কষ্ট পাচ্ছেন। কষ্ট পাচ্ছেন কিছু না ক'রে চট জলদি কিছু পাওয়ার আশায়। কষ্ট পাচ্ছেন গুরুভাইদের ব্যবহারে ঠাকুর থেকে সরে গিয়ে, কষ্ট পাচ্ছেন বৃত্তি-প্রবৃত্তির শিকার হ'য়ে, কষ্ট পাচ্ছেন কপট ভক্তির কারণে, কষ্ট পাচ্ছেন ঘরে-বাইরে পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে এবং আরও নানা কারণে।
আমার প্রিয় গুরুভাইবোনেদের উদ্দেশ্যে বলি, শ্রীশ্রীঠাকুরের হাত ধরুন, তাঁকে বিশ্বাস করুন, তাঁর উপর নির্ভর করুন। আপনি নামময় হ'য়ে থাকুন। তিনি সবসময় আপনার সাথে সাথে থাকবেন। আপনি পথে পা রাখুন। সামনে দু'টো পথ, দু'দিকে গিয়েছে। কোন পথে যাবেন? কোন পথে যাবেন তা' ঠিক করতে পারছেন না? ধন্দে রয়েছেন? ভয় কি?
তিনি তো বলেছেন,
"ভয় কি! বলেছি তো! এমন একজন আছেন যিনি সর্বদাই সন্নিকটে আছেন। তিনি সবসময় আপনাকে রক্ষা করবেন। তাঁকেই বিশ্বাস করুন। তাঁর ওপরে সর্ব্বস্ব দিয়ে নির্ভর করুন, ভয় নাই।"
তাঁর বলা এই কথা বিশ্বাস করুন।
এত সহজ সরল ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর বলার পরেও ভয়? আপনি দেখতে পান আর না-পান তিনি তো আপনার সামনেই আছেন, আপনার সাথে আছেন, আপনার মাথায় আছেন! তাহ'লে আর চিন্তা কিস বাত কি? ডর কিস বাত কি? ডরো মাত্। শুধু একটাই তুক। সকালে ঘুম থেকে যখনি উঠুন (অতি প্রত্যূষে হ'লে ভালো হয়) ঘুম থেকে উঠেই আগে দয়ালকে আপনার যা সামর্থ্য তাই দিয়ে বাস্তব সেবা দিন অর্থাৎ ইষ্টভৃতি করুন আর তারপর অকপট হৃদয়ে-মনে জীবনে চলার পথে পা রাখুন, পা রাখুন মনে মনে তাঁর দেওয়া বীজ নাম করতে করতে। পথে নামার আগে, অনেক আগে থেকেই নাম করুন, পথে নেমে নাম করুন, নাম করতে করতে আপনি হাঁটতে থাকুন, নাম করুন, ফলের আকাঙ্ক্ষা না ক'রে করতে থাকুন, আবেগ ভরে করতে থাকুন, কোনও দিকে তাকাবেন না, নাম করতে করতে লক্ষ্যের দিকে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যান। ঠিক সময় দয়ালের অদৃশ্য হাত আপনাকে দু'দিকে চলে যাওয়া দু'টো রাস্তার সঠিক রাস্তায় নিয়ে যাবেন। ভয় নেই। আপনি তাঁর হাত ধরেছেন। এবার যেদিকে তাঁর ইচ্ছা তিনি নিয়ে যাক, তা' স্বর্গ হ'ক আর নরক হ'ক, কুছ পরোয়া নেহি। স্বর্গে গেলেও তিনি আছেন, নরকে নিয়ে গেলেও তিনি সঙ্গে আছেন। যদি নরকে নিয়ে যায় দয়াল, নরকও তাঁর আবির্ভাবে স্বর্গ হ'য়ে যাবে। সেই নরককে স্বর্গ বানাতে তিনি আমাকে সাথী হিসেবে চয়েস করেছেন। এই যে তাঁর কাজ করার জন্য আমাকে চয়েস করেছেন দয়াল আমার, এই-ই আমার জীবনে চরম প্রাপ্তি, পরম প্রাপ্তি, জীবনে পরম চরম সার্থকতা। তিনিই স্বর্গ, তিনিই আলো, তিনিই সুখ, তিনিই শান্তি, তিনিই ধ্যান, তিনিই জ্ঞান, তিনিই আরাম, তিনিই আমার জীবনে আলাদিনের প্রদীপ। প্রদীপ ঘষলেই যেমন প্রদীপ থেকে বেরিয়ে আসতো দৈত্য আর আলাদিনের ইচ্ছে পূরণ করতো। ঠিক তেমনি তাঁর ওপর জীবনের সব চাওয়া পাওয়া ছেড়ে দিয়ে অনবরত নাম করতে থাকো, আর নাম করতে করতে তাঁকে বিবশ ক'রে দাও। তিনি বিবশ হ'লে তোমার বাঁচা-বাড়ার সব স্বপ্ন, সপারিপার্শ্বিক সব ইচ্ছা তিনি পূরণ ক'রে দেবেন। শর্ত একটাই তাঁতে সমর্পণ। নিজেকে সঁপে দাও, সম্পূর্ণ সঁপে দাও। তাঁর যা ইচ্ছা তাই হ'ক। তিনি আমার মঙ্গল-অমঙ্গল সব জানেন। আমার জন্য যা সর্বোত্তম তিনি তাই আমাকে দেবেন। তিনিই আমার সংক্ষিপ্ত মনুষ্য জীবনে এবং এই জীবন ছেড়ে চলে যাবার আগে মানুষ হ'য়ে আসার চরম পরম সফলতা। এই সফলতা, এই সঁপে দেওয়ার সফলতা যদি লাভ করতে না পারি তাহ'লে আমার সঙ্গে আর অন্য জীবের তফাৎ কোথায়? কোথায়?? কোথায়??? একবার তো নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন।
আসুন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার আগে তাঁর হাত ধরি, শক্ত ক'রে ধরি, অকপট হৃদয়ে, মনে ধরি। তারপর একে অন্যের হাত ধরি আর দয়ালের কাজে এগিয়ে যাই। তাঁকে পেলে আপনি সব, সব, সব পাবেন যাওয়ার আগে এই জীবনে। নতুবা তাঁকে ধরা আর না-ধরা সমান, সব ব্যর্থ, সব বকোয়াস। জয়গুরু।
( লেখা ৩০শে মে' ২০২৫)
No comments:
Post a Comment