Powered By Blogger

Friday, June 20, 2025

আত্মকথন ২০

মুহূর্তের মধ্যে একটা বিদ্যুৎ তীব্রগতিতে পা থেকে মাথায় উঠে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে গেল। কেঁপে উঠলাম আমি। একটা তীব্র রক্ত চাপ অনুভব করলাম। ব্যায়াম করা শক্ত সমর্থ চেহারার যুবক আমি। বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং অভিনয় জগত, ক্রীড়া জগত (ক্রিকেট), ব্যায়াম, ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যুক্ত থাকার জন্য আজ পর্যন্ত অনেক রাজনৈতিক নেতা, অভিনেতা, খেলোয়াড় ইত্যাদি বিভিন্ন জনের সংস্পর্শে এসেছি, সঙ্গ করেছি কিন্তু কোনওদিন এরকম শিল্পমহলের কোনও ক্ষমতাবান শীর্ষ ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসিনি এবং এত ভাইব্রেসান, এত প্রভাব কোনওদিন অনুভব করিনি। বুঝতে পারলাম কোনও একটা রহস্যময় অজানা জালে জড়িয়ে পড়তে চলেছি। কোনও কথা বলতে পারছি না। আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন প্রেসিডেন্ট। কি অসম্ভব তীব্রতা সেই দৃষ্টির! আমি যেন সম্মোহিত হ'য়ে পড়ছি। সেই বিশাল ফাঁকা ঘরের বিশাল টেবিলের সামনে প্রায় ২৪ হাজার কর্মচারী আর পিন টু এলিফ্যান্ট সামগ্রীর হাজারো সাপ্লায়ার, আশেপাশের কতশত দোকান, জেলা জুড়ে অনুসারী শিল্প আর তার কর্মচারী মোট কথা সমগ্র জেলার অর্থনীতি, লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি রুজি যে শিল্পের ওপর নির্ভর করছে সেই শিল্পের প্রধান পরিচালকের সামনে দাঁড়িয়ে আমার হঠাৎ নিজেকে বড্ড অসহায় একা নিসঙ্গ মনে হ'লো। মনে হ'লো যেন আমি একটা চুনোপুঁটি আর আমি সম্মোহিত চোখে স্পষ্ট দেখতে পারছি আমার সামনে বি-শা-ল একটা হাঙর আমাকে বি-রা-ট হাঁ ক'রে গিলতে আসছে! এইমুহূর্তে আমি কি করবো, কি করা উচিত, কি উত্তর দেব, কি বলবো, কি বলা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না, মাথাটা এলোমেলো হ'য়ে যাচ্ছে। আমি পাগল হ'য়ে যাবো।

ভাবলাম, হে দয়াল! আমি কেন এখানে এলাম? এখন কি ক'রে এখান থেকে বের হবো? আকুল ভাবে ডাকতে লাগলাম মনে মনে। দয়াল! আমায় এখান থেকে এই ফাঁকা বি-শা-ল যন্তরমন্তর ঘর থেকে বের ক'রে নিয়ে চলো! ভয়ে, এলোমেলো চিন্তায় অবশ আমি। আমার মনে হ'লো এক ছুটে বেরিয়ে যায় বাইরে। প্রেসিডেন্ট পলকহীন একদৃষ্টে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হ'লো আমার মনের কথা পড়ে নিচ্ছেন তিনি। চোখের তারা দু'টো কি উজ্জ্বল আর শক্তিশালী! মনে মনে অসহায় আমি ঠাকুরকে বললাম, হে দয়াল! আমি কি করবো তুমি বলে দাও। কোনও উত্তরই খুঁজে পাচ্ছি না। দ্রুত তীব্রতার সঙ্গে নাম করতে লাগলাম আমি মনে মনে। একটু পড়ে তিনি বললেন, তাহ'লে লিস্ট তৈরী ক'রে ফেলুন, তারপরে আমি ফোন ক'রে ব'লে দিচ্ছি তার সঙ্গে গিয়ে এখনই যোগাযোগ করুন। কালকের মধ্যে------- আমি আর তাঁকে কিছু বলতে না দিয়ে সাহসে ভর ক'রে নিজেকে শক্ত ক'রে ধ'রে রেখে তাঁর কথার মাঝখানেই তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে শেষবারের মতো দয়ালের বীজনাম স্মরণ ক'রে দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর বলা স্পষ্টবাদী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও কথাকে সম্বল ক'রে স্পষ্ট অথচ মিষ্ট স্বরে কাঁচুমাচু হ'য়ে ব'লে ফেললাম, কনভয়ে ড্রাইভিং-এ ইচ্ছে করলে অনেক আগেই ঢুকতে পারতাম স্যার। ড্রাইভিং-এ ছাড়া অন্য কোনও ডিপার্টমেন্টে যদি সবাইকে একটা ব্যবস্থা ক'রে দেন তাহ'লে আমৃত্যু চিরকৃতজ্ঞ থাকবো স্যার। আপনার কাছে ঋণী হ'য়ে থাকবো স্যার। একনাগাড়ে কথাগুলি ব'লে ভয়ে ভয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয় আমার যদি সমস্তটা ভেস্তে যায়, কারোরই যদি কিছু না হয়। যদি অসম্মতি জানিয়ে বের ক'রে দেয়। তারপরে দ্বিতীয়বার কি করবো? চতুর্দিকে তাঁর লোকজন। ইচ্ছে করলে তিনি অনেক কিছুই করতে পারেন, যা ইচ্ছা তাই-ই করতে পারেন। গুন্ডা-মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা সব তাঁর হাতের মুঠোয়। আমি কি করতে পারি। মাঝখান থেকে এত পরিশ্রম, এত চেষ্টা সব ব্যর্থ হ'য়ে যাবে। আমি মরিয়া হ'য়ে আবার ব'লেই ফেললাম, স্যার, পড়াশুনা ক'রে ড্রাইভারি করবো? আপনি স্যার ড্রাইভারের চাকরী দেবেন? তিনি আমার দিকে গম্ভীর হ'য়ে তাকিয়ে রইলেন। তারপরে কঠিন গলায় বললেন, কেন ড্রাইভারের কাজ কি অপমানের? লজ্জার? আমি থতমত খেয়ে উদভ্রান্তের মতো বললাম, না, না, না স্যার, আমি তা বলতে চাইনি। আমি ক্ষমা চাইছি আমার বলার জন্যে। হাতজোর ক'রে বললাম, কারখানার ভিতরে যদি দয়া ক'রে কাজ করার সুযোগ ক'রে দেন তাহ'লে---- আমায় মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে। আপনি আপনার একটা বায়োডাটা আমার সেক্রেটারিকে জমা দিয়ে যান আমি দেখছি। আমি সেক্রেটারিকে ব'লে দেব আপনি উনাকে জমা দিয়ে যাবেন কালকের মধ্যে। ঠিক আছে এখন আপনি আসুন। পরে আমি ডেকে নেব।

আমি আকাশ থেকে ধপাস ক'রে পড়লাম। চুপ ক'রে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে বললাম, হে দয়াল, এখন আমি কি করবো? আরও বড় ফাঁদে পড়ে গেলাম আমি। আমার একার বায়োডাটা জমা দিতে বললেন তিনি। বাকীদের তাহ'লে কি হবে? আমি আমার একার বায়োডাটা জমা দেব কি ক'রে? ভেতর থেকে কে যেন বললো, এ তো অন্যায়! এ তো বেইমানি! আমি কি এটা করতে পারি? আমি তাহ'লে এখন কি করবো? বোকার মতো ফ্যালফ্যাল ক'রে প্রেসিডেন্টের মুখের দিকে চেয়ে রইলাম আমি আর ভাবনাগুলি ঝাপটা মারতে লাগলো মাথার মধ্যে। মনে হ'লো আমি পাগল হ'য়ে যাবো। প্রেসিডেন্ট মাথা নীচু ক'রে ফাইলে মন দিলেন।
( লেখা ২০শে জুন' ২০২৩)

No comments:

Post a Comment