Powered By Blogger

Sunday, June 1, 2025

প্রবন্ধঃ গাঁজার দেশ গাজার অন্তিম দশা।

এটাই ব্রিটিশদের সার্থকতা যে তারা অখন্ড ভারতকে টুকরো ক'রে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে ঘৃণার বীজ বপন ক'রে দিয়ে গেছে যা' আবহমান কাল ধ'রে চলবে। আর শেষ ক'রে দিয়ে গেছে পাঞ্জাব আর বাংলার ভবিষ্যৎ। একদিনের অখন্ড বাংলা ব্রিটিশদের বিষাক্ত বিষে দু'ভাগ হ'য়ে গেছে। আজ দুই বাংলা ও বাঙালী হিন্দু মুসলমান ব্রিটিশদের বিভাজনের রঙে রাঙিয়ে গিয়ে পরস্পরের চরম শত্রু।
ভারতে পাঞ্জাব আর বাংলা আজ সবচেয়ে ঘায়ে ঘায়ে ঢেকে গেছে। দুই বাংলা একদিন এক ছিল। এক ছিল হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক। ছিল এক ভাষা, এক কৃষ্টি, এক সংস্কৃতি। কিন্তু আজ বাঙালি আর এক ভাষা, এক কৃষ্টি, এক সংস্কৃতি বহন করে না। আজ আমূল বদলে গেছে দুই বাংলার ভাষা, দুই বাংলার কৃষ্টি, দুই বাংলার সংস্কৃতি। একেবারে বায়োলজিক্যালি পরিবর্তন হ'য়ে গেছে। এখন আর বাঙালি শত চেষ্টা করলেও এক হ'তে পারবে না, শত চেষ্টা, হাজার চেষ্টা করলেও দুই বাংলা আর কোনোদিন এক অখন্ড বাংলা হবে না।
আজ দুই বাংলার মানুষ দুই বাংলার মানুষকে ঘৃণা করে, ঘৃণা করে অদ্ভুত এক বাংলা ভাষায়। আর এই ঘৃণার বিষ ইঞ্জেক্ট হয়েছে বৃটিশের হাতে। দেশভাগের পরে পরে পশ্চিমবাংলার হিন্দু ঘটি বাঙালি আর পূর্ববাংলা থেকে আগত হিন্দু বাঙ্গাল বাঙালি এই দুই বাংলার হিন্দু বাঙ্গালীর মধ্যে ছিল লড়াই, ঘৃণা। এখনও হিন্দু বাঙ্গাল বাঙালিকে শুনতে হয় পশ্চিমবঙ্গে দেশ ভাগের ফলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য হিন্দু ঘটি বাঙালির কাছে পরদেশী বলে। পশ্চিমবঙ্গের ঘটি বাঙালি আর পূর্ব বাংলা থেকে আগত বাঙ্গাল বাঙালি, এই দুই হিন্দু বাঙালি একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে গিয়ে প্রতিমুহুর্তে হয়েছে তর্ক বিতর্ক, সংঘাত। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন রয়েছে হিন্দু মুসলিম বাঙালি সমস্যা।
পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ঘটি বাঙালি ও পূর্ববংগ থেকে আগত মুসলমান বাঙ্গাল বাঙালি পরস্পরের মধ্যে সমস্যা কতটা প্রকট তা' আমি জানি না, জানা নেই। আর এখন নোতুন সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হ'য়ে উঠেছে ও উঠছে দুই বাংলার হিন্দু মুসলমান বাঙালির বাংলা ভাষা। এ বাংলার ও পূর্ববাংলার উভয় বাংলার হিন্দু মুসলমান উভয় বাঙ্গালীর বাংলা ভাষার মধ্যে আছে তফাৎ। বর্তমানে মুসলমান বাঙালির অনেক বাংলা কথা আমি বাঙালি, হিন্দু বাঙালি বাঙালি হয়েও বুঝতে পারি না। সেখানে দুই বাংলা এক হয়ে হবে এক বাংলা রাষ্ট্র? হিন্দু মুসলমান পরস্পরের বিশ্বাস যেখানে একেবারে খতম হ'য়ে গেছে সেখানে দুই বাংলা এক হ'য়ে হবে বাংলা রাষ্ট্র!? তখনি কুট্টিদের মত বলতে ইচ্ছে করে, "একটূ আস্তে কন দাদা, ঘোড়ায় শুনুলে হাসবো।'
তার ওপর আবার কেউ কেউ বালখিল্য স্বপ্ন দেখে দুই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা কিংবা সেভেন সিস্টার্স নিয়ে বৃহৎ বাংলার! শালা, দুই বাংলার পাগলা গারদ থেকে সব পাগলগুলো একসঙ্গে পাগলাগারদ ভেঙে বেড়িয়ে পড়েছে হাঠেমাঠে, পথেঘাটে, খোলা ময়দানে একসঙ্গে আর শুরু ক'রে দিয়েছে লম্ফ দিয়ে ঝম্প মারা পাগলামি।
একে তো দুই বাংলার বাঙ্গালিতে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক অর্থাৎ পরস্পর বিরুদ্ধ স্বভাবযুক্ত বা শত্রুভাবাপন্ন, তার ওপর বালখিল্য দুই কিম্ভূতকিমাকার বাঙালী, সঙ্গে অরুনাচলি, অসমিয়া, মেঘালয়ি, মণিপুরি, মিজো, নাগা ও ত্রিপুরি বিভিন্ন ভাষাভাষী নিয়ে এক অখন্ড বৃহৎ বাংলা বা অখন্ড (?) দেশ গঠনের গাঁজাখুরি গল্প গাঁজার তীব্র নেশা চড়ে গেলেই হয়। ভুলে যাচ্ছে গাঁজার দেশ গাজার অন্তিম দশা। তাহ'লে বিভিন্ন ভাষাভাষী দেশ ভারত কি দোষ করেছিল? তাই, সেভেন সিস্টার্স নিয়ে অখন্ড বাংলা বা অখন্ড (?) দেশের স্বপ্ন পাগলা----- স্বপ্ন, ইউটোপিয়া।
( লেখা ২২শে মে' ২০২৫)

No comments:

Post a Comment