মিষ্টভাষী আর স্পষ্টভাষীর মধ্যে স্পষ্টতই কোনও বিরোধ নেই। লোকের মধ্যে অনেক ভুল ধারণার মধ্যে একটা ধারণা হ'লো মিষ্টভাষী আর স্পষ্টভাষীর মধ্যে মূলগত চরিত্রের ফারাক আছে। আছে বিরোধ। তাদের ধারণা হ'লো মিষ্টভাষী যে সে চরিত্রগত দিক দিয়ে দূর্বল কিম্বা অসৎ চাটুকার। আর যে স্পষ্টভাষী সে চরিত্রগত দিক দিয়ে সবলের অধিকারী এবং সৎ। বেশীরভাগ মানুষের এই ধারণা নিজের ও সমাজের কাছে ক্ষতিকর। মানুষের ধারণা কোনও কিছুর বিরোধিতা করতে হ'লে কিম্বা প্রতিবাদের ভাষা জোরালো অর্থাৎ জোরে চিৎকার ক'রে বলতে হবে, রূঢ় হ'তে হবে। আর এটাকেই তারা মনে করে স্পষ্টভাষী।
কিন্তু জোরে চিৎকার ক'রে কর্কষ ভাবে কথা বললেই যে তার মধ্যে স্পষ্টতা থাকে তা নয়। আমরা অহরহই দেখতে পায় ঘরে-বাইরে 'চোরের মায়ের বড় গলা' এই প্রবাদের জলজ্যান্ত নিদর্শন। জোর ক'রে চেঁচিয়ে কাউকে দাবিয়ে দিয়ে প্রমাণ করা যায় না যে সে যা বলছে বা বলেছে সেই বলার মধ্যে ধোঁয়াশা নেই, স্পষ্টতা আছে, আছে সততা বা সত্যতা। কিন্তু শরীরে-মনে সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষ মনে করে স্পষ্টভাষী মানেই সে সৎ এবং তার কথার মধ্যে সত্যতা সততই বিরাজমান। আর এই সুযোগে নেপোয় মারে দই।
আমরা প্রতিনিয়তই বিশ্বজুড়ে দেখতে পায় জীবনের সব ক্ষেত্রেই অসৎ চাটুকার ধান্দাবাজ মাত্রই স্পষ্টভাষীর ভূমিকায় অবতীর্ণ। কি রাজনীতির ক্ষেত্রে, কি ধর্ম্মের ক্ষেত্রে, কি শিক্ষা ক্ষেত্রে, ক্রীড়া ক্ষেত্রে অন্য্যান্য সব ক্ষেত্রেই এর প্রমাণ আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাই। সবাই সবাইকে স্পষ্ট ভাষায় নিজের ত্রুটি ঢেকে রেখে অভিযোগ ক'রে চলেছে। এ নিয়ে আর বিস্তারিত বলার অবকাশ থাকে না। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যে, রাত সর্বক্ষণ-ই এর ছবি আমরা দেখতে পাই টিভির দৌলতে।
আবার আমরা এর উল্টোটাও দেখতে পাই। যে জোরে বুক ফুলিয়ে কথা বলে তাদের প্রায়শই দেখা যায় যে তারা অন্তরে পরিস্কার খোলামেলা, রেখেঢেকে কিছু বলতে পারে না, অভ্যাস নেই। মুখের ওপর সামনাসামনি যা বলার ব'লে দেয়, এর পরিণাম কি হবে তা ভেবে দেখে না। পরিশেষে এরা দুঃখ কষ্টের শিকার হয়। কিন্তু অন্তরে এরা প্রকৃতই ভালো মানুষ। কিন্তু সমাজের চোরাবালির স্রোতে এরা ভেসে যায়। ছোটোবেলা থেকে পরিবেশগত কারণেই হ'ক বা জন্মগত কারণেই হ'ক এরা এইভাবে কথা বলতে অভ্যস্ত। ফলে চারপাশের জটিল নিষ্ঠুর পরিবেশে তারা পিষ্ট হয়। আর তাই তারা তখন নিজের ভাগ্যের দোহাই দিয়ে থাকে। ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিজের অজান্তেই নিজের মুখ লুকিয়ে এরা বাঁচতে চায়।
আবার অনেকে নিজেকে স্পষ্টভাষী বলতে গর্ব বোধ করে। একটা অহংকার চোখেমুখে ফুটে ওঠে। কিন্তু তারা জানে না এই অহংকার, এই গর্ব মূর্খের অহংকার, মূর্খের গর্ব। দিন শেষে যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে যায় তখন এরা ডিপ্রেশানে ভুগতে ভুগতে কঠিন মানসিক ব্যাধির শিকার হয়। আর সেই পরিবেশে বড় হওয়া পরবর্তী প্রজন্ম উত্তরাধিকার সূত্রে এই দুরারোগ্য কঠিন ব্যাধিকে মহৎ মানসিকতা ব'লে সযত্নে লালন পালন ক'রে ব'য়ে নিয়ে চলে আজীবন মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাধিকে জীবন দর্শন মনে ক'রে।
আর মিষ্টভাষীর ক্ষেত্রে যেটা বলা হচ্ছে যে মিষ্টভাষী মানেই দূর্বল, অসৎ বা চাটুকার সেক্ষেত্রে আমরা দেখি যা তা এক কথায় যদি বলা যায় তাহ'লে বলবো, তাহ'লে ধ'রে নিতে হবে শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি! তখন কি বলবো? শয়তান যেহেতু মিষ্টি বেশী তাই মিষ্টভাষী হিসেবে সে তো অসৎ। আর ভগবান মিষ্টি নয়?
নিশ্চয়ই ভগবানের হাসি মিষ্টি! তৃপ্তিদায়ক মিষ্টি! প্রাণ জুড়ানো মিষ্টি! আকাশে বাতাসে নীল দিগন্তে ভাসমান আনন্দের মহাসাগরে নিশ্চিন্তে ভেসে থাকার আধার ভগবানের নির্মল মিষ্টি হাসি!!!!
আর ভগবানের চেয়েও শয়তানের মিষ্টি হাসির মধ্যে আছে একটা কড়া পোড়া মিষ্টির তিতকুটে ভাব। একটু নজর করলেই মিষ্টির তারতম্য ধরা যায়, ধরতেও পারে মানুষ। কিন্তু কোথায় জানি রিপুর টানে বেসামাল মানুষ বৃত্তি প্রবৃত্তির বৃত্তে পড়ে তফাৎ ক'রেও ক'রে উঠতে পারে না প্রকৃত মিষ্টির। তিতকুটে কড়া পোড়া মিষ্টিকেও মিষ্টির সার্টিফিকেট দেয়!
কিন্তু মিষ্টভাষী যে অন্তরে বাহিরে সে প্রকৃতিগতভাবেই মিষ্টি। এ মিষ্টতা তার জন্মজন্মান্ত ধ'রে ব'য়ে যাওয়া মিষ্টতা! এ মিষ্টতা তার রক্তের মধ্যে দিয়ে বংশপরম্পরায় গুণাবলী রূপে ব'য়ে যাওয়া মিষ্টতা!! এ মিষ্টতা তার জন্ম থেকে পরিবেশগতভাবে লব্ধ মিষ্টতা!!! এই মিষ্টতায় নেই কোনও দূর্বলতা, নেই কোনও কপটতা, নেই কোনও অসততা।
আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি, বলে ফেলি। বলতে বিবেচনা করি না। ভুল বলার পরেও ভুলকে শুধরে নেবার কোনও আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা থাকে না। ভুল কথা জোর দিয়ে বলি, সগর্বে বলি। ভুল ব'লে তা স্বীকার করি না বা পরবর্তী সময়ে ভুল বলা থেকে সাবধান হ'ই না। স্পষ্টভাষীর নামে সত্য কথা বলতে গিয়ে সংহার এনে ফেলি। সত্য কথা বলার মানুষ আমি আর তাই আমি স্পষ্টভাষী ব'লে বাহবা নিই, অহঙ্কার করি। কিন্তু স্পষ্টভাষীর তকমা লাগিয়ে সত্য কথা বলার পরে সেই সত্য কথা অনুভব করি না।
তাই স্পষ্টভাষী যে সে মিষ্টি করেই স্পষ্টকথা বলতে পারে আবার যে মিষ্টভাষী সে স্পষ্টভাষী হ'তে পারে। এই দুইয়ের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
Living God, Living Supreme Being, Supreme Cause, Full filler The Best, Full Father The greatest phenomenon Of the world SriSriThakur AnukulChandra says, "
BE OUTSPOKEN BUT SWEET. Consider before you speak, but having spoken do not evade. If you have spoken wrong, beware! Do not do wrong. Speak the truth, but don't bring destruction. It is good to speak good, but better to think and fill it.
(স্পষ্টবাদী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও। ব'লতে বিবেচনা কর, কিন্তু ব'লে বিমুখ হ'য়ো না। যদি ভুল ব'লে থাক, সাবধান হও। ভুল ক'রো না। সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না। সৎ কথা বলা ভাল, কিন্তু অনুভব করা আরোও ভালো।)
কত কিছুই যে পরমপিতার থেকে শিখি তার ইয়ত্তা নেই। ( লেখা ৮ই জুন'২০২১)
No comments:
Post a Comment