Powered By Blogger

Wednesday, June 11, 2025

আত্মকথন ৯

 প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যাবেলায় বেড়িয়েছি বাড়ি থেকে আড্ডা মারতে। আমাদের বন্ধুদের ১০-১২ জনের একটা দল ছিল। সন্ধ্যে হ'লেই সবাই একজায়গায় জড়ো হ'য়ে আড্ডা মারতাম। হাঁটতে হাঁটতে কখনো চলে যেতাম গঙ্গার ধারে দলবেঁধে গঙ্গার হাওয়া খেতে। কখনো বা তিন রাস্তার মোড়ের মাথার এক কোণায় বিরাট বটগাছের চাতালে ব'সে দেদার আড্ডা মারতাম। কখনো বিরাট খোলা মাঠে বসে আড্ডা। এমনিভাবেই চলতো আমাদের প্রতিদিনের যৌবনের রুটিন।


একদিন দলবেঁধে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়িয়েছি একটা দোকানে মুড়ি-চানাচুর কিনবো ব'লে। সঙ্গে আলুর চপ। এমন সময়ে সামনে এসে দাঁড়ালো এলাকার দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদার বিজনেস পার্টনার। এসে দাঁড়িয়েছিলো ভগবানের দূত হ'য়ে। এখন লেখার সময় জীবনের সায়াহ্নে এসে মনে হয় আমার জন্য তা ছিল হয়তো বা যমদূত। এখান থেকেই হয়েছিল সেই বুদ্ধি বিপর্যয় আর গ্রহদোষের সূত্রপাত।

সে এসেই মিষ্টি হেসে কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো। তারপরই মুড়ি চানাচুরের ঠোঙা থেকে এক্মুঠো মুড়ি নিয়ে খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো। আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর, দাদা-ভাইয়ের মতো। একদিকে এলাকার সেই অটোমোবাইল কারখানায় সে কাজ করে এবং অন্যদিকে দাদার বিজনেস পার্টনার। একদিনও কাজে যায় না, গেলেও ঘুরতে যায়। আর, মাইনের দিন যায়। কখনো কখনো ডিপার্ট্মেন্টের চ্যালা এসে মাইনের খামটা দিয়ে যায়। সবে কিছুদিন হয়েছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে রাজ্যে। আর সেই সময় শুরু হয়েছে সবে প্রোমোটিং বিজনেস। আমি কথা বলতে বলতে হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তাকে আমার কপট অসন্তোষ প্রকাশ ক'রে ফেললাম। সেই অসন্তোষটা হ'লো 'তুমি বাপু উপরেরও খাচ্ছো আবার তলারও কুড়োচ্ছো আর আমি বসে বসে দেখবো আর আঙ্গুল চুষবো? মিটিং করলাম, মিছিল করলাম, স্লোগান তুললাম, বক্তৃতা দিলাম, পোষ্টার লাগালাম, নাটক-অভিনয় ক'রে বেড়ালাম গ্রামে-গ্রামে, জেলায়-জেলায় আমি আর নেপোয় মারে দই? আমাদের কথা একটু ভাবো। থতমত খেয়ে সেই দাদা ব'লে উঠলো, তুই কি চাস? আমি বললাম, আমি একা কিছু চাই না, আমার দলের প্রত্যেকের চাই। তুমি যেখানে চাকরী করো সেখানে আমাদের সবার কিছু একটা ব্যবস্থা ক'রে দাও। দাদা আশ্চর্য হ'য়ে ঘাবড়ে গিয়ে বললো, আমি কি ক'রে ব্যবস্থা করবো বল। তারপরে তার বিজনেস পার্টনার এলাকার দাদার নাম ক'রে বললো, তুই বরং ওকে বল। একটা কিছু ব্যবস্থা হ'য়ে যাবে। তারপরে একটু দূরে আলাদা ক'রে ডেকে নিয়ে বললো, তুই চিন্তা করিস না, তোর হ'য়ে যাবে একটা ভালো ব্যবস্থা। আমি বললাম, না না না, আমি আমার একার কথা বলিনি আর আমি একা কিছুই চাই না আর দরকারও নেই। উদারতার ভঙ্গিতে সহজ সরল ভাবে কথাগুলি ব'লে ফেললাম। এক্কেবারে দাতা কর্ণ ছিলাম। তারপরে হঠাৎ কিছু না ভেবেই ব'লে ফেললাম, কাল সকালে দেখতে পাবে কি করি। সে ঘাবড়ে গিয়ে বললো, কাল কি করবি? আমি বললাম, কাল সকালে দেখতে পাবে; দেখতে পাবে ঠিক ন'টায়। আমি আর কিছু না ব'লে সবাইকে নিয়ে আমাদের আড্ডার জায়গার দিকে হেঁটে চললাম।

No comments:

Post a Comment