সে সময় আমার এলাকার যিনি দন্ডমুন্ডের কর্তা তিনি আমার বড়দা ও মেজদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং আমাদের ক্লাবের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আমাদের পরিবারের সঙ্গে ছিল একটা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। উনাকেও আমরা পরিবারের অন্য সদস্যরা পরিবারের একজন সদস্যের মতোন ভাবতাম। এলাকা ও ফ্যাক্টরিতে খুব প্রভাব ছিল। আমাদের বাড়ির ঠিকানা ছিল ক্লাবের ঠিকানা। সন্ধ্যেবেলা তাকেও তার অফিসে গিয়ে সব জানালাম। শুনে চিবিয়ে চিবিয়ে শুধু বললেন, কোম্পানির ভেতরে মারামারি করবি তো সাসপেন্ড হবি না? আমি তাকেও মূল ঘটনাটা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু তিনিও পরে শুনবো ব'লে এড়িয়ে গেলেন ও বিশেষ কাজ আছে, পরে আসিস ব'লে বেরিয়ে গেলেন। আমিও ফেউ ফেউ ক'রে ঘুরে বেড়ানো ভ্যাগাবন্ডের মতো যেন তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বুঝলাম এখন কারও সময় নেই আমার কথা শোনার। শুধু মনে পড়ে গেল অনেকগুলি ঘটনা। তার মধ্যে এলাকার পার্টির এই দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদার একদিন আমাকে বলা কথা মনে পড়লো। "বাপি। তুই যে চাকরীর লিস্টটা প্রেসিডেন্টকে দিচ্ছিস সেখানে আমার দু'টো লোকের নাম দিয়ে দিস।" আমি বলেছিলাম, দু'টো কি বলছেন দাদা, আপনি যেমন বলবেন আমি তেমন ক'রে লিস্ট তৈরী করবো। তিনি বললেন, না-রে আমার দু'টো লোক হ'লেই হ'য়ে যাবে। এই চাকরীর লিস্ট তৈরীর ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েকদিন যা কথা হয়েছে তোর সঙ্গে হয়েছে, আমার তো এখানে কোনও হাত ছিল না, আমার কোনও অবদান নেই। তাই তুই তোর লিস্টে আমার দু'টো লোকের নাম দিলেই হবে। তখন তিনি যে দু'টো লোকের নাম বলেছিলেন সেই দু'জন সম্পূর্ণ ফোকটে দাঁও মেরে দিয়েছিল। তার মধ্যে একজন আজ আর নেই, মারা গেছে কিন্তু সেই জন এলাকার সেই দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদার সঙ্গে দাদার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ছিল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থেই ছিল। আর একজন ছিল জন্মকৃতঘ্ন। শুধু এলাকার দাদার বন্ধুর ভাই ব'লে সুযোগটা পেয়েছিল। কোনদিনও কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না তার আর চাকরী পাওয়ার পরও একদিনের জন্য যোগাযোগা রাখেনি।
সেদিন দাদার কথাটা ভালো লেগেছিল। সহজ সরল স্বীকারোক্তি। প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর অটোমোবাইল কোম্পানির একছত্রাধিপতি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার পরিচয়ের কাহিনীটা অন্য কোনও এক সময় আত্মকথনের ফাঁকে তুলে ধরবো। সেই প্রেসিডেন্টের নির্দেশ মতো আমি এলাকার কয়েকজন বেকার যুবকের একটা লিস্ট তৈরী ক'রে কোম্পানির হেড টাইম কিপারের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেটা ছিল সম্পূর্ণ আমার আর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপার। আর সেটা সেই এলাকার দন্ডমুন্ডের কথা জানতো বলেই স্বীকার করেছিল যে চাকরীর লিস্ট তৈরীর ব্যাপারে উনার কোনও কৃতিত্ব নেই। কিন্তু সেই মানুষই যে পরে আমার উন্নয়নের পথের কাটা হ'য়ে দাঁড়াবে তা ভাবতে পারিনি। যেমন পারিনি আমার দূর সম্পর্কের মামার নিষ্ঠুর ভূমিকার কথা। আসলে তখন বয়স ছিল ২৫ আর ছিল সহজ-সরল জীবন। অনেক পরে যখন বুঝেছি তখন অনেক দেরী হ'য়ে গেছে।
( লেখা ১১ই জুন' ২০২৩)
No comments:
Post a Comment