Powered By Blogger

Wednesday, June 18, 2025

প্রবন্ধঃ চিচিং ফাঁক' ও 'ভারত ভাগ'।

মাঝে মাঝে ফেসবুকে দেখি দুই বাংলা এক হওয়ার কথা ওঠে, স্বপ্ন দেখে দুই বাংলা এক হওয়ার। আবার সেভেন সিস্টার্স নিয়েও অখন্ড বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে কেউ কেউ। সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ভারতীয়রা কোনোদিনই মাথা ঘামায়নি, বিশেষ ক'রে সেভেন সিস্টার্সের জনগণ, মাথা ঘামায়নি কোনোদিন পশ্চিমবঙ্গের আম জনতা। সেভেন সিস্টার্স নামটাই জানতো না আম বাঙালি ও সেভেন সিস্টার্সের সাধারণ সহজ সরল মানুষ। শান্তির পুজারী ইউনুস সাহেব অবৈধ, অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিকভাবে বৃদ্ধ বয়সে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অবতীর্ণ হলেন পিছনের দরজা দিয়ে আর তখন ভারত, বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য সমস্ত দেশ জানতে পারলো ভারতের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কে ইউনুস সাহেবের বদান্যতায়।

ড মহম্মদ ইউনুস অস্থির বাংলাদেশে হাসিনার দেশত্যাগের পরেই নিরাপদ বাংলাদেশে এসে চেয়ারে বসার আগেই হুমকি দিলেন সেভেন সিস্টার্স নিয়ে, হুমকি দিলেন ভারত ভাঙ্গার এবং গত দশ মাসে বিদেশ সফরকালে যেখানেই যাচ্ছেন, চীনে গেছেন সেখানে সেভেন সিস্টার্স, নেপালে গেছেন সেখানেও ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে কথা বলছেন, নিজের সাজানো দেশটা ধ্বংস হ'য়ে গেল, শ্মশান হ'য়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই, শুধু ভারতকে ভাঙ্গার বালখিল্য এজেন্ডা নিয়ে চেয়ারে বসেছেন। ব্যাপারটা এমন যেন বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি আমেরিকা আর পাকিস্তানের ইচ্ছা পূরণের জন্য ভারত ভাঙতে চাইলে তিনি শান্তির নোবেল তুলে ধ'রে দস্যুদলের সর্দারের মত হুকুম দেবেন 'চিচিং ফাঁক'-এর মত 'ভা-র-ত ভাগ' আর সঙ্গে সঙ্গে গুহার দেওয়াল সরে যাবার মত ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা হ'য়ে যাবে রক্তপাতহীন ধ্বংস ছাড়াই। বাংলাদেশ অক্ষত থাকবে আর ভারত ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে ভাগ হ'য়ে যাবে আর ভারতের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ভারত আমেরিকান ইউনুস সাহেবের পায়ের কাছে বসে ভারত ভাগের ছাড়পত্র দিয়ে দেবে, সাদা পতাকা তুলে ভারত ভাগ মেনে নেবে মাথা নত ক'রে। 

ছোট্ট একটা সুন্দর সুজলাং সুফলাং শস্যং শ্যামলাং দেশ বাংলাদেশ যার নাড়ির টান রয়েছে ভারতের সঙ্গে সেই ছোট্ট দেশের চেয়ারে এসে বসেছেন মহম্মদ ইউনুস। সদ্য ১০ মাস অতিক্রম হয়েছে তাঁর রাজত্বের, তাও আমেরিকার বদান্যতায় অবৈধ ও অনৈতিক উপায়ে। যে দেশের জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনও অবদান যুক্ত নেই সেই ছোট্ট সুন্দর দেশের চেয়ারে বসা বৃদ্ধ জ্ঞানী পন্ডিত যার রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই যিনি বিশ্বজুড়ে শুধু তাঁর অর্জিত জ্ঞান বিতরণ করেছেন আর পুরস্কৃত হয়েছেন সেই ইউনুস সাহেবের জীবনের অন্তিম পর্বে এসে ইচ্ছে হয়েছে হাল্লার রাজার মতন ভারতের সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে বিবাদ করার, ভারতকে দ্বিখন্ডিত করার, ইচ্ছা হয়েছে বৃদ্ধ বয়সে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলার। কারণ যুদ্ধের ভয়ংকর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে তাঁর তো কোনও অভিজ্ঞতা নেই, সারাজীবন দূরেই থেকেছেন তিনি নিরাপদে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায়। ভারত ভাগের সময়ে তিনি ছিলেন শৈশবে, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের সময় ১৯৭১ সালে্র রক্তাক্ত দিনগুলিতে যখন বাংলার মায়েরা ধর্ষিত হচ্ছে, ধর্ষণ শেষে ছিবড়ে ক'রে ফেলে দেওয়ার সময় করা হচ্ছে নির্মম হত্যা, লক্ষ লক্ষ নাগরিককে করা হচ্ছে নৃশংসভাবে হত্যা, লক্ষ লক্ষ যৌবন হারাচ্ছে অকালে প্রাণ বেয়নেটের নির্ম্মম নিষ্ঠুর আঘাতে আর ঝাঁকে ঝাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা হ'য়ে তখন তিনি ছিলেন যুবক, নিশ্চিন্তে নিরাপদে ছিলেন আমেরিকায়, ব্যস্ত ছিলেন নিজের ক্যারিয়ার তৈরীতে আর ২০২৪ এর জুলাই আগষ্ট-এর পট পরিবর্তনের ভয়ংকর আগুন সময়েও ছিলেন নিরাপদে আমেরিকায় বিলাস বহুল জীবনে। ফলে এই তিন সময়ে ভয়াবহ নারকীয় দৃশ্য, মৃত্যু মিছিল, রক্তের নদী, ধ্বংসের পাহাড় তিনি চাক্ষুস দেখেননি।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে, বিকাল ৩:০০ টার দিকে, পদত্যাগ করেন এবং ভারতের দিল্লিতে পৌঁছান। আর ইউনুস সাহেব ৮ই আগস্ট দায়িত্ব নিলেন। ড. ইউনূস ৮ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৬ই আগস্ট ভারতের সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকি দেন ভারতকে। ভারত ভাঙ্গার হুমকি দিয়ে হাল্লার রাজার ঢঙে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করলেন উচ্চলেখাপড়াজানা পন্ডিত সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১৪৫টা পুরস্কারে পুরস্কৃত ও ভারত থেকে ১০টা পুরস্কারে পুরস্কৃত এবং শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত কৃতি পুরুষ ড মহম্মদ ইউনুস! বিশ্বে আর কোনও দেশ তাঁর শত্রু নয়, শুধু তাঁর প্রতিবেশী দেশ ভারত শত্রু! যে বাংলাদেশ ৫৪ বছর ধ'রে ছিল ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র সেই দেশ হ'য়ে রাতারাতি শত্রু।

আর, তারপর থেকে তাঁর উপস্থিতিতেই শুরু হয় বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ। সেই ধ্বংসযজ্ঞের সময় তিনি মুখে কুলুপ এঁটে নীরবতা পালন করেন। তাঁর নীরবতা মনে পড়িয়ে দেয় রোম সম্রাট নিরোর কথা। কথিত আছে, রোম যখন আগুনে পুড়ছিল তখন সম্রাট নিরো ঠান্ডা মাথায় সুর সাধনা করছিলেন, বেহালা বাজাচ্ছিলেন। ঠিক তেমনি বলা হচ্ছে, শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ী বাংলাদেশের প্রধান উপাদেষ্টা ইউনুস আরো ঠান্ডা মাথায় প্রথম ভারতকে ভাঙ্গার ইঙ্গিত দিয়ে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকি দিলেন, তারপর ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়, ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নিয়ে, ভারতের উত্তর পূর্ব অংশ সেভেন সিস্টার্স নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার পরিবর্তে বিশ্বের অন্য দেশ চীন ও নেপালের সঙ্গে আলোচনা করতে লাগলেন, বারবার আলোচনায় ভারতের সেভেন সিস্টার্স টেনে আনতে লাগলেন এবং নানারকম ভারত বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে বিদেশ সফর করতে লাগলেন এবং একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে রি-সেট বাটন টিপে মুজিব জমানার সব ইতিহাস মুছে দেবার জন্য ধ্বংসযজ্ঞে সীলমোহর দিয়ে দিলেন একেবারে শান্তিপূর্ণ ভাবে ঠান্ডা মাথায়। তাঁর উপস্থিতিতে বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হ'লো আর তিনি চুপ ক'রে সব দেখতে লাগলেন আর ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত আন্দোলনে যুক্ত ছাত্র যুবকদের রসগোল্লার মত গোল গোল মিষ্টি মিষ্টি হাসিতে বলতে লাগলেন, তোমরা মহাকাব্যের সেই মহান বীরদের মতো, যে বীরদের গল্পগাঁথা আমরা মহাকাব্যে পড়েছি। আগামী প্রজন্মও তোমাদের আজকের এই বীর গাঁথা, আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করবে, স্মরণ ক'রে গান, কবিতা, গল্প রচনা করবে, রচিত হবে মহাকাব্য। মনে প্রশ্ন জাগে, গান, কবিতা, গল্প, মহাকাব্য কি রচিত হবে জানি না তবে কালের ইতিহাসে তো থাকবে এই জুলাই-আগষ্ট'২০২৪ অভ্যুত্থান। কিন্তু সেখানে মহম্মদ ইউনুসের ভূমিকা কি থাকবে সেটা ইতিহাস ঠিক করবে।

আছাড়া আরও আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলাম, উচ্চশিক্ষিত গুণী পন্ডিত অরাজনৈতিক ব্যক্তি ইউনুসের ভারত বিরোধী মানসিকতা! বহুদিন ধরেই তীব্র ভারত বিরোধীতা ভয়ঙ্করভাবে দানা বাঁধছিল বাংলাদেশীদের মনে ও প্রাণে। সেটা বীভৎসভাবে ফুটে উঠতো ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র ক'রে। তখন শুধু ভাবতাম কেন বাংলাদেশীদের এরকম ভারত বিদ্বেষ!? তখন বুঝিনি আজকের পটভূমি।

এর পরেও যখন দুই বাংলার এক হওয়ার কথা কেউ বলে তখন সেই বাংলাদেশের কুট্টিদের কথা মনে পড়ে যায়, 'আস্তে কন বাবু, ঘোড়ায় হাসবো।'

সত্যিই আজ ঘোড়াও হাসছে একশ্রেণীর কাঙ্গালি বাঙালির কথায়। ভারত আর বাংলাদেশের ৫৪ বছরের মধুর সম্পর্ক আজ সাপে নেউলে অবস্থায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছেন শান্তির পূজারী মহম্মদ ইউনুস শান্তির নোবেল হাতে ভারত ভেঙে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্সকে ভাগ করার ইঙ্গিত দিয়ে চিকেন নেক নামক অশান্তির প্রদীপ জ্বালিয়ে। ফলে দুই বাংলার সম্পর্ক আজ আরও বিষাক্ত হ'য়ে উঠেছে ও উঠছে।

যাই হ'ক, যে কথা বলছিলাম, দুই বাংলা এক হওয়ার কথা।
"গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"--- এ আর সম্ভব নয়। গানটির রচয়িতা বিখ্যাত বাউল শিল্পী শাহ আব্দুল করিম গানটিতে যে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিলেন, গানটিতে হিন্দু ও মুসলিম তরুণ সমাজকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার এবং ভেদাভেদ ভুলে কাজ করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই গানের পরিবেশ, সেই মানসিকতা, সেই বিশ্বাস, সেই নির্ভরতা, সেই আবেগ, সেই মধুর নির্মল পবিত্র সম্পর্ক সব নষ্ট হ'য়ে গেছে নোংরা রাজনৈতিক আবহাওয়া, বিকৃত ধর্ম পালন এবং ঈশ্বর, আল্লা সম্পর্কে ভুল ভ্রান্ত ধারণার কারণে।

আজ দুই বাংলার সাধারণ মানুষ পরস্পর পরস্পরের শত্রু। আর সেটাকে তীব্র ক'রে দিলেন শান্তিতে নোবেল পাওয়া জ্ঞানী গুণী মানুষ ইউনুস ভারতকে ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে। যে ভারত ভাগকে আটকাতে এবং বাংলা ভাগ রুখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সেই অভিশপ্ত ভাগের অশনি সংকেত দেখা দিল শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইউনুস সাহেবের কথায়। 

একটা ঘৃণার বাতাবরণ তৈরী করা হয়েছিল দেশভাগের আগে থেকে পরিকল্পিত ভাবে। এইভাবেই দেশভাগের মত ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে মানুষের মগজকে ধোলাই করা হয়েছিল ব্রিটিশের সহায়তায়। ব্রিটিশ চায়নি হিন্দু মুসলমান সাধারণ মানুষ পরস্পর মিলেমিশে থাক। কিন্তু হিন্দু মুসলমান বিরোধ সৃষ্টির অপচেষ্টাকে আটকাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়, পরম প্রেম-ভালোবাসার আধার, জ্ঞানের মহাসমুদ্র শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মধুর সম্পর্ক অটুট রাখার ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য, দুই সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন ঘটাবার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, দুই সম্প্রদায়ের সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে এই দেশভাগের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ পরিণাম নিয়ে বহুবার আন্তরিক আলোচনা করেছিলেন, ভারত ভাগ, বাংলা ভাগ আটকাতে তাঁর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আর্থিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। একশ্রেণীর ক্ষমতালোভী কতিপয় মানুষের সাহায্যে অখন্ড ভারতকে ভেঙে দুর্বল করার জন্য দেশভাগের যে ষঢ়যন্ত্র করেছিল ব্রিটিশ সরকার সেই ষড়যন্ত্রকে আটকাতে ও ভারতকে অটুট রাখতে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক সব রকমভাবে চেষ্টা করেছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন সব সম্প্রদায়ের মানুষের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কথা ভেবেই। কিন্তু সেইদিন দেশের কোনও সম্প্রদায়ের কোনও পন্ডিত, মহাত্মা, দেশপ্রেমী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ধার্মিক, আর্থিক ক্ষমতাশালী ও সামাজিক ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কেউই তাঁকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। তিনি তৎকালীন প্রথম সারির দেশনেতাদের উদ্দেশ্যে তৎকালীন 'সৎসঙ্গ'-এর সেক্রেটারি মারফৎ তাঁর বার্তা পাঠিয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা সমাধানে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ রুখতে সেই বার্তায় তিনি এককথায় বলেছিলেন, "Dividing compromise is hatch of the animosity." অর্থাৎ ভাগ ক'রে সমস্যার সমাধানের অর্থ 'তা' দিয়ে দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো। তিনি দ্রষ্টাপুরুষ। বহু আগে থেকেই ভারত ভাগ ও বাংলা ভাগের অশনি সংকেত টের পেয়েছিলেন। ভারত ভাগের এবং বাংলাকে যে অখন্ড বাংলা রূপে আর রাখা যাবে না সেই ষঢ়যন্ত্রের, সেই চক্রান্তের আভাস তিনি বহু আগেই পেয়েছিলেন।

আর, সেই জন্য মানুষের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তায়, উদ্বেগে রাতে ঘুমোতে পারতেন না, ছটফট করতেন আগাম করুণ ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়ে। যে আসতেন তাঁর কাছে সবাইকে ধ'রে ধ'রে আবেগে আগ্রহভরে তিনি এই বিষাক্ত ভাগের পরিকল্পনাকে বানচাল করার জন্য তাঁর পরিকল্পনার কথা বলতেন। বলতে বলতে তিনি এতটাই উদ্বেল হ'য়ে পড়তেন যে উৎকণ্ঠায় তাঁর রক্তচাপ বেড়ে যেতে লাগলো, শরীর খারাপ হ'তে লাগলো, হার্টের চাপে তিনি অসুস্থ হ'য়ে পড়লেন। তখন তাঁকে সুস্থ ক'রে তোলার জন্য, প্রচন্ড মানসিক চাপ ও রক্তচাপ কমানোর জন্য এবং শরীর উদ্ধারের জন্য হাওয়া বদলের প্রয়োজনে দেশভাগের এক বছর আগেই ১৯৪৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জন্মভূমি ত্যাগ করলেন। আর এর ঠিক এক বছর পরেই ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাও ভাগ হ'য়ে গেল। আর, কোনোদিনই ফিরে যাওয়া হ'লো না তাঁর জন্মভূমি দেশভাগের আগে পূর্ব বাংলা, দেশভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান আর ১৯৭১এর পরে বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে। 


সেই থেকে হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা সমাধানের জন্য দেশভাগ ক'রে যে শত্রুতার জন্ম হ'লো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে তা' আজ দেশভাগের ৭৮ বছর পরে ৭৮ বছর আগে দেশভাগ করার মাধ্যমে সৃষ্ট শত্রুতা 'তা' দিয়ে দিয়ে কত ডিম ফুটিয়েছে ও আজও ফুটিয়ে চলেছে।  সেদিনের উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, জমিদার শ্রেণী যারা আজও বেঁচে আছে কিংবা তাঁদের উত্তরপুরুষ এবং আজকের উভয় সম্প্রদায়ের নোতুন যারা নেতৃবৃন্দ, পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, দেশনেতারা সবাই সেই শত্রুতার ডিম ফোটা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারছে কিনা জানি না, যদি বুঝতে পেরেও থাকে তা স্বীকার করছে না।

তাই ধর্মকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল সেদিনের দেশনেতৃবৃন্দ বৃটিশ ও ব্রিটিশের Divide and Ruleএর মত নোংরা পলিসির সাহায্যে, সেই নোংরা পলিসি দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত নেতৃবৃন্দ, সমস্ত পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি যতদিন না বুঝতে পারবে, স্বীকার করবে বিশেষ ক'রে দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের সাধারণ নাগরিক ও ছাত্রসমাজ যতদিন না বুঝতে পারবে, বুঝতে চেষ্টা করবে, চোখ খুলবে এবং যতদিন না ধর্ম সম্পর্কে, ঈশ্বর, আল্লা সম্পর্কে, ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে বিকৃত প্রচার বন্ধ হবে, বিকৃত প্রচার বুঝতে পারবে, বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে ততদিন পর্যন্ত আর কোনোদিন এক হওয়া সম্ভব নয় দুই সম্প্রদায়ের মানুষের।

দুই বাংলার মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠা দূরের কথা। এক বাংলায় তা' সে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ যে বাংলার কথা বলা হ'ক না কেন কোনও বাংলায় বাঙ্গালীদের নিজেদের মধ্যে কোনও সম্প্রীতি প্রেম ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আজ আর নেই। ও বাংলায় বাঙ্গাল হিন্দু আর বাঙ্গাল মুসলমানের মধ্যে এবং এ বাংলায় ঘটি হিন্দু ও ঘটি মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক আজ সন্দেহের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। হিন্দু মুসলমান বাঙালির বাংলা ভাষাও আজ দুর্বোধ্য হ'য়ে উঠেছে। বাংলা ভাষাও আজ দেওয়াল হ'য়ে দাঁড়িয়েছে দুই বাংলার বাঙালির মধ্যে। বাঙালি আজ বাংলা ভাষাও বুঝতে পারে না। বাংলা ভাষায় ঢুকে গেছে ইংরেজী, উর্দু, হিন্দি শব্দ প্রচুর পরিমাণে। বাঙালি আজ খিচুড়ি বাংলা বলে। উচ্চবিত্ত বাঙালি বংশ পরম্পরায় ভুলে গেছে প্রায় বাংলা ভাষা, তারা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় আজ ইংরেজী বলে, মধ্যবিত্ত বাঙালি বলে হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজী মিশ্রিত বাংলা, নিম্নবিত্ত বাঙালি বলে আঞ্চলিক বাংলা ভাষা। বাঙালী আজ জাত হিসেবে, বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যখানা হিসেবে বাঙালি নেই। বাঙালি আজ হিন্দু মুসলমান, খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ইত্যাদি হ'য়ে গেছে। বাঙালি আগে হিন্দু, আগে মুসলমান, আগে খ্রীষ্টান, আগে বৌদ্ধ তারপর যদি সেন্টিমেন্ট কিছু বেঁচে থাকে তবে বাঙালি। বাঙালি আজ খন্ড খন্ড, টুকরো টুকরো হ'য়ে গেছে। তার ওপর বাংলার লেখাপড়াজানা বাঙ্গালীরা, বাঙালি ছেলেমেয়েরা আর স্কুলে, কলেজে, অফিসে বাংলা বলে না, বলে ইংরেজী আর হিন্দি।

তাই বাংলা ও বাঙালি আজ "গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা"-----এই গানের স্মৃতি নিয়েই বাঙালি বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে পঙ্গু ল্যাংড়া বংগালী আর গলির ব্যাঙ হ'য়ে আরও কয়েক দশক তারপর ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হ'য়ে যাবে বিভিন্ন ভাষা ও বিভিন্ন প্রজাতির মত বাংলা ও বাঙালি। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ বছর পরে কলিযুগের শেষে ধ্বংসস্তুপের ওপর বাংলা ভাষা ও বাঙালি শব্দ শুধু বেঁচে থাকবে  জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ, শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ-এর সর্বশেষ বর্তমান রূপ 
The greatest phenomenon of the world, The greatest wonder in the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নামের মধ্যে।

( লেখা ১৬ই জুন'২০২৫)

No comments:

Post a Comment