Powered By Blogger

Friday, June 20, 2025

আত্মকথন ২০

মুহূর্তের মধ্যে একটা বিদ্যুৎ তীব্রগতিতে পা থেকে মাথায় উঠে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে গেল। কেঁপে উঠলাম আমি। একটা তীব্র রক্ত চাপ অনুভব করলাম। ব্যায়াম করা শক্ত সমর্থ চেহারার যুবক আমি। বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং অভিনয় জগত, ক্রীড়া জগত (ক্রিকেট), ব্যায়াম, ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে যুক্ত থাকার জন্য আজ পর্যন্ত অনেক রাজনৈতিক নেতা, অভিনেতা, খেলোয়াড় ইত্যাদি বিভিন্ন জনের সংস্পর্শে এসেছি, সঙ্গ করেছি কিন্তু কোনওদিন এরকম শিল্পমহলের কোনও ক্ষমতাবান শীর্ষ ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসিনি এবং এত ভাইব্রেসান, এত প্রভাব কোনওদিন অনুভব করিনি। বুঝতে পারলাম কোনও একটা রহস্যময় অজানা জালে জড়িয়ে পড়তে চলেছি। কোনও কথা বলতে পারছি না। আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন প্রেসিডেন্ট। কি অসম্ভব তীব্রতা সেই দৃষ্টির! আমি যেন সম্মোহিত হ'য়ে পড়ছি। সেই বিশাল ফাঁকা ঘরের বিশাল টেবিলের সামনে প্রায় ২৪ হাজার কর্মচারী আর পিন টু এলিফ্যান্ট সামগ্রীর হাজারো সাপ্লায়ার, আশেপাশের কতশত দোকান, জেলা জুড়ে অনুসারী শিল্প আর তার কর্মচারী মোট কথা সমগ্র জেলার অর্থনীতি, লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি রুজি যে শিল্পের ওপর নির্ভর করছে সেই শিল্পের প্রধান পরিচালকের সামনে দাঁড়িয়ে আমার হঠাৎ নিজেকে বড্ড অসহায় একা নিসঙ্গ মনে হ'লো। মনে হ'লো যেন আমি একটা চুনোপুঁটি আর আমি সম্মোহিত চোখে স্পষ্ট দেখতে পারছি আমার সামনে বি-শা-ল একটা হাঙর আমাকে বি-রা-ট হাঁ ক'রে গিলতে আসছে! এইমুহূর্তে আমি কি করবো, কি করা উচিত, কি উত্তর দেব, কি বলবো, কি বলা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না, মাথাটা এলোমেলো হ'য়ে যাচ্ছে। আমি পাগল হ'য়ে যাবো।

ভাবলাম, হে দয়াল! আমি কেন এখানে এলাম? এখন কি ক'রে এখান থেকে বের হবো? আকুল ভাবে ডাকতে লাগলাম মনে মনে। দয়াল! আমায় এখান থেকে এই ফাঁকা বি-শা-ল যন্তরমন্তর ঘর থেকে বের ক'রে নিয়ে চলো! ভয়ে, এলোমেলো চিন্তায় অবশ আমি। আমার মনে হ'লো এক ছুটে বেরিয়ে যায় বাইরে। প্রেসিডেন্ট পলকহীন একদৃষ্টে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। মনে হ'লো আমার মনের কথা পড়ে নিচ্ছেন তিনি। চোখের তারা দু'টো কি উজ্জ্বল আর শক্তিশালী! মনে মনে অসহায় আমি ঠাকুরকে বললাম, হে দয়াল! আমি কি করবো তুমি বলে দাও। কোনও উত্তরই খুঁজে পাচ্ছি না। দ্রুত তীব্রতার সঙ্গে নাম করতে লাগলাম আমি মনে মনে। একটু পড়ে তিনি বললেন, তাহ'লে লিস্ট তৈরী ক'রে ফেলুন, তারপরে আমি ফোন ক'রে ব'লে দিচ্ছি তার সঙ্গে গিয়ে এখনই যোগাযোগ করুন। কালকের মধ্যে------- আমি আর তাঁকে কিছু বলতে না দিয়ে সাহসে ভর ক'রে নিজেকে শক্ত ক'রে ধ'রে রেখে তাঁর কথার মাঝখানেই তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে শেষবারের মতো দয়ালের বীজনাম স্মরণ ক'রে দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর বলা স্পষ্টবাদী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও কথাকে সম্বল ক'রে স্পষ্ট অথচ মিষ্ট স্বরে কাঁচুমাচু হ'য়ে ব'লে ফেললাম, কনভয়ে ড্রাইভিং-এ ইচ্ছে করলে অনেক আগেই ঢুকতে পারতাম স্যার। ড্রাইভিং-এ ছাড়া অন্য কোনও ডিপার্টমেন্টে যদি সবাইকে একটা ব্যবস্থা ক'রে দেন তাহ'লে আমৃত্যু চিরকৃতজ্ঞ থাকবো স্যার। আপনার কাছে ঋণী হ'য়ে থাকবো স্যার। একনাগাড়ে কথাগুলি ব'লে ভয়ে ভয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয় আমার যদি সমস্তটা ভেস্তে যায়, কারোরই যদি কিছু না হয়। যদি অসম্মতি জানিয়ে বের ক'রে দেয়। তারপরে দ্বিতীয়বার কি করবো? চতুর্দিকে তাঁর লোকজন। ইচ্ছে করলে তিনি অনেক কিছুই করতে পারেন, যা ইচ্ছা তাই-ই করতে পারেন। গুন্ডা-মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা সব তাঁর হাতের মুঠোয়। আমি কি করতে পারি। মাঝখান থেকে এত পরিশ্রম, এত চেষ্টা সব ব্যর্থ হ'য়ে যাবে। আমি মরিয়া হ'য়ে আবার ব'লেই ফেললাম, স্যার, পড়াশুনা ক'রে ড্রাইভারি করবো? আপনি স্যার ড্রাইভারের চাকরী দেবেন? তিনি আমার দিকে গম্ভীর হ'য়ে তাকিয়ে রইলেন। তারপরে কঠিন গলায় বললেন, কেন ড্রাইভারের কাজ কি অপমানের? লজ্জার? আমি থতমত খেয়ে উদভ্রান্তের মতো বললাম, না, না, না স্যার, আমি তা বলতে চাইনি। আমি ক্ষমা চাইছি আমার বলার জন্যে। হাতজোর ক'রে বললাম, কারখানার ভিতরে যদি দয়া ক'রে কাজ করার সুযোগ ক'রে দেন তাহ'লে---- আমায় মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ঠিক আছে। আপনি আপনার একটা বায়োডাটা আমার সেক্রেটারিকে জমা দিয়ে যান আমি দেখছি। আমি সেক্রেটারিকে ব'লে দেব আপনি উনাকে জমা দিয়ে যাবেন কালকের মধ্যে। ঠিক আছে এখন আপনি আসুন। পরে আমি ডেকে নেব।

আমি আকাশ থেকে ধপাস ক'রে পড়লাম। চুপ ক'রে দাঁড়িয়ে রইলাম। মনে মনে বললাম, হে দয়াল, এখন আমি কি করবো? আরও বড় ফাঁদে পড়ে গেলাম আমি। আমার একার বায়োডাটা জমা দিতে বললেন তিনি। বাকীদের তাহ'লে কি হবে? আমি আমার একার বায়োডাটা জমা দেব কি ক'রে? ভেতর থেকে কে যেন বললো, এ তো অন্যায়! এ তো বেইমানি! আমি কি এটা করতে পারি? আমি তাহ'লে এখন কি করবো? বোকার মতো ফ্যালফ্যাল ক'রে প্রেসিডেন্টের মুখের দিকে চেয়ে রইলাম আমি আর ভাবনাগুলি ঝাপটা মারতে লাগলো মাথার মধ্যে। মনে হ'লো আমি পাগল হ'য়ে যাবো। প্রেসিডেন্ট মাথা নীচু ক'রে ফাইলে মন দিলেন।
( লেখা ২০শে জুন' ২০২৩)

গানঃ পাই যদি তোমারে।

ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।
দিয়েছিলে যে ভালোবাসা আমারে
পারিনি তা আমি রাখতে ধরে
রাখতে ধ'রে, রাখতে ধ'রে।
ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।

ছেড়ে দিয়ে তোমারে প্রভু অপরাধ
করেছি কত, দিয়েছি অপবাদ;
করেছি অপরাধ, দিয়েছি অপবাদ।
ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।

ভালোবাসা পেয়েও দিয়েছি আঘাত
সেই আঘাতে পাই আমি লাজ;
মাথা নত আজ, মাথা নত আজ।
ছাড়বো না গো আর কোনও দিন
পাই যদি আবার তোমারে।
( লেখা ২০শে জুন' ২০২৪)

উপলব্ধিঃ আবেদন।

আবার নির্বাচনের ঘন্টা বেজে উঠেছে। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। যৌবনের শুরু থেকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা জীবন আজ জীবন সায়াহ্নে এসে অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধির উপর দাঁড়িয়ে একটাই আবেদন জয়ী দল আর প্রতিনিধিদের কাছেঃ


দুর্নীতি আর উন্নতি পাশাপাশি হাত ধরাধরি ক'রে চলুক। কোনও আপত্তি নেই। শুধু প্রার্থনা উন্নতির সঙ্গে দুর্নীতির ৭৫ভাগ বাদ দিয়ে বাকী ২৫ভাগ গরীব জনগণের জন্য খরচা হ'ক। দু'বেলা দু'মুটো পেটভরে খেতে পাক গরীব ভোটার। রেশনে যে মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে তাই থাক। সঙ্গে ফাউ হিসেবে কিছু পাওয়া গেলে ঐ মোটা চালের ভাত অন্তত খাওয়া যায়। খেয়ে অন্তত মরুক গরীব ভোটার। তবে বন্টনটা ঠিকঠাক অন্তত হ'ক। হাজার রকমের রেশন কার্ডের মাধ্যমে বন্টন ব্যবস্থা বন্ধ ক'রে একইরকম সহজ সরল হ'ক। দুর্নীতির ক্ষীর আর ঐশ্বর্যে সম্পদে ভরে যাক জীবন কোনও আপত্তি নেই শুধু সব না খেয়ে সামান্য একটু ছিটিয়ে দেওয়া হ'ক গরীবের পাতে, তা'তে ঈশ্বর মঙ্গল করবেন। কিচ্ছু লাগবে না আর। শেষের সেদিন গরীবের অমঙ্গল হ'লেও এই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য শেষের সেদিন মঙ্গল হবেই হবে।
( লেখা ২০শে জুন' ২০২৩)

বিচিত্রা ১৫৭

কবিতা মানেই প্রেম?
আর প্রেম মানেই কি নারী?
কবি আনাড়ির নারী প্রেম এত কোথায় রাখি!!


কবিতা মানেই কি নারী?
আর নারী মানেই শরীরী?
কবি আনাড়ির নারী শরীরী 
উপত্যকায় বিচরণ অকারণ! 
কেমনে ভারসাম্য রাখি!!
( লেখা ২০শে জুন'২০১৭)














Thursday, June 19, 2025

গানঃ প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই

প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই
লাজেতে যে মরি আজ কাহারে শুধাই।
কোথায় খুঁজে পাই।
প্রভুজী 
তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।

কপাল যে আমার মন্দ কার যে কি করেছি ক্ষতি
জানি না আর কি সর্বনাশ লেখা আছে আর কি দুর্গতি।
নামেতেও জাগিল না পোড়া কপাল আমার হায়।
তোমায় কেমনে জাগায়।
প্রভুজী 
তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।

আমি ভক্ত অপদার্থ সখা অনুকূল ভগবান
বৃত্তিজ্ঞানী ইতরপ্রাণী দয়াল তবু দয়াবান।
প্রাণ আমার ওষ্ঠাগত অনুকূল তুমি সহায়।
তোমায় কেমনে জাগায়।
প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।

আমি আজ বোবাঅন্ধ দুঃখ কষ্ট অশেষ
চলনতলে তোমার সঁপেছি প্রাণ নিঃশেষ
ললাটে নামের চিহ্ন মৃত্যুরে কি ডরায়
তোমায় খুঁজে বেড়ায়।
প্রভুজী তোমারে কোথায় খুঁজে পাই।
( লেখা ১২ই মে'২০২৫)

( চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায় সুরে)

Wednesday, June 18, 2025

বিচিত্রা ১৫৬

আমার ছেলেমেয়ের ভুলের জন্য আমি দায়ী। 
আমার ভুলের জন্য আমার বাবা-মা। 
আমার বাবা-মা'র জন্য তাদের বাবা-মা। 
এটাই ট্রাডিশান।

আমার ছেলেমেয়ের ভুলের জন্য আমি দায়ী। 
আমার ভুলের জন্য আমার বাবা-মা। 
আমার বাবা-মা'র জন্য তাদের বাবা-মা। 
এটাই ট্রাডিশান।

আচার্যদেবের সমালোচনা করার আগে 
নিজের চেহারাটা আগে দেখে নাও, মন পড়ে দেখা যাবে, 
বিবেকের কথা তুলে উলঙ্গ আর নাই বা করলাম।

পুরুষ নারীর চরিত্রের ফুটো ধরতে যেও না, নারীও তেমনি। 
নিজের চরিত্রের ফুটো দিয়ে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। ভেবে দেখো।

দুনিয়া জুড়ে সব শালা জ্ঞানী-বিজ্ঞানী-সমাজ সংস্কারকরা পুরুষোত্তমকে বাদ দিয়ে ঈশ্বর- ঈশ্বরকণা খুঁজে চলেছে 
আর সমাজ গড়তে এসেছে।
( লেখা ১৮ই জুন'২০২৪)



















































বিচিত্রা ১৫৫

বেশী ঠাকুরকে ভালবেসো না, 
সবসময় ঠাকুর ঠাকুর ক'রো না 
তাহ'লে তোমায় সবাই ছেড়ে চলে যাবে, 
তুমি একলা হ'য়ে পড়বে। সত্যি?

তুমি যত বুক ফাটো ফাটো ক'রে ঠাকুরের কথা বলবে 
তুমি তত গুরুভাইদের বিরাগভাজন হবে।
তুমি তত কুৎসামন্ডিত হবে। সত্যি?

পকেটে টাকা থাকলে, পিছনে তকমা থাকলে, 
সমাজে কেউকেটা হ'লে ঠাকুরের দরবারে 
তোমার গ্রহণযোগ্যতা থাকে। সত্যি?

মন্দিরে কেন্দ্রে যারা যারা দায়িত্বে আছে 
তারা ইষ্টপ্রাণ, তারা মানুষপ্রাণ। সত্যি?

সৎসঙ্গী ডাক্তার, উকিল, পুলিশ, নেতা, ধনী 
তাঁদের কাছে মানুষ বিপদে পড়ে যেচে যায়। 
তাঁরা সৎসঙ্গীদের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। সত্যি?

ঠাকুর সত্য জগত মিথ্যা। ঠাকুর ছাড়া জগত মিথ্যা।
ঠাকুর সত্য জগত সত্য।
কোনটা ঠিক? কোনটা সত্য?
( লেখা ১২ই জুন' ২০২৫)






































প্রবন্ধঃ চিচিং ফাঁক' ও 'ভারত ভাগ'।

মাঝে মাঝে ফেসবুকে দেখি দুই বাংলা এক হওয়ার কথা ওঠে, স্বপ্ন দেখে দুই বাংলা এক হওয়ার। আবার সেভেন সিস্টার্স নিয়েও অখন্ড বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে কেউ কেউ। সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ভারতীয়রা কোনোদিনই মাথা ঘামায়নি, বিশেষ ক'রে সেভেন সিস্টার্সের জনগণ, মাথা ঘামায়নি কোনোদিন পশ্চিমবঙ্গের আম জনতা। সেভেন সিস্টার্স নামটাই জানতো না আম বাঙালি ও সেভেন সিস্টার্সের সাধারণ সহজ সরল মানুষ। শান্তির পুজারী ইউনুস সাহেব অবৈধ, অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিকভাবে বৃদ্ধ বয়সে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অবতীর্ণ হলেন পিছনের দরজা দিয়ে আর তখন ভারত, বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য সমস্ত দেশ জানতে পারলো ভারতের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কে ইউনুস সাহেবের বদান্যতায়।

ড মহম্মদ ইউনুস অস্থির বাংলাদেশে হাসিনার দেশত্যাগের পরেই নিরাপদ বাংলাদেশে এসে চেয়ারে বসার আগেই হুমকি দিলেন সেভেন সিস্টার্স নিয়ে, হুমকি দিলেন ভারত ভাঙ্গার এবং গত দশ মাসে বিদেশ সফরকালে যেখানেই যাচ্ছেন, চীনে গেছেন সেখানে সেভেন সিস্টার্স, নেপালে গেছেন সেখানেও ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে কথা বলছেন, নিজের সাজানো দেশটা ধ্বংস হ'য়ে গেল, শ্মশান হ'য়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই, শুধু ভারতকে ভাঙ্গার বালখিল্য এজেন্ডা নিয়ে চেয়ারে বসেছেন। ব্যাপারটা এমন যেন বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি আমেরিকা আর পাকিস্তানের ইচ্ছা পূরণের জন্য ভারত ভাঙতে চাইলে তিনি শান্তির নোবেল তুলে ধ'রে দস্যুদলের সর্দারের মত হুকুম দেবেন 'চিচিং ফাঁক'-এর মত 'ভা-র-ত ভাগ' আর সঙ্গে সঙ্গে গুহার দেওয়াল সরে যাবার মত ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স আলাদা হ'য়ে যাবে রক্তপাতহীন ধ্বংস ছাড়াই। বাংলাদেশ অক্ষত থাকবে আর ভারত ক্ষতবিক্ষত হ'য়ে ভাগ হ'য়ে যাবে আর ভারতের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে ভারত আমেরিকান ইউনুস সাহেবের পায়ের কাছে বসে ভারত ভাগের ছাড়পত্র দিয়ে দেবে, সাদা পতাকা তুলে ভারত ভাগ মেনে নেবে মাথা নত ক'রে। 

ছোট্ট একটা সুন্দর সুজলাং সুফলাং শস্যং শ্যামলাং দেশ বাংলাদেশ যার নাড়ির টান রয়েছে ভারতের সঙ্গে সেই ছোট্ট দেশের চেয়ারে এসে বসেছেন মহম্মদ ইউনুস। সদ্য ১০ মাস অতিক্রম হয়েছে তাঁর রাজত্বের, তাও আমেরিকার বদান্যতায় অবৈধ ও অনৈতিক উপায়ে। যে দেশের জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনও অবদান যুক্ত নেই সেই ছোট্ট সুন্দর দেশের চেয়ারে বসা বৃদ্ধ জ্ঞানী পন্ডিত যার রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগ নেই যিনি বিশ্বজুড়ে শুধু তাঁর অর্জিত জ্ঞান বিতরণ করেছেন আর পুরস্কৃত হয়েছেন সেই ইউনুস সাহেবের জীবনের অন্তিম পর্বে এসে ইচ্ছে হয়েছে হাল্লার রাজার মতন ভারতের সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে বিবাদ করার, ভারতকে দ্বিখন্ডিত করার, ইচ্ছা হয়েছে বৃদ্ধ বয়সে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলার। কারণ যুদ্ধের ভয়ংকর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে তাঁর তো কোনও অভিজ্ঞতা নেই, সারাজীবন দূরেই থেকেছেন তিনি নিরাপদে 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতায়। ভারত ভাগের সময়ে তিনি ছিলেন শৈশবে, স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের সময় ১৯৭১ সালে্র রক্তাক্ত দিনগুলিতে যখন বাংলার মায়েরা ধর্ষিত হচ্ছে, ধর্ষণ শেষে ছিবড়ে ক'রে ফেলে দেওয়ার সময় করা হচ্ছে নির্মম হত্যা, লক্ষ লক্ষ নাগরিককে করা হচ্ছে নৃশংসভাবে হত্যা, লক্ষ লক্ষ যৌবন হারাচ্ছে অকালে প্রাণ বেয়নেটের নির্ম্মম নিষ্ঠুর আঘাতে আর ঝাঁকে ঝাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা হ'য়ে তখন তিনি ছিলেন যুবক, নিশ্চিন্তে নিরাপদে ছিলেন আমেরিকায়, ব্যস্ত ছিলেন নিজের ক্যারিয়ার তৈরীতে আর ২০২৪ এর জুলাই আগষ্ট-এর পট পরিবর্তনের ভয়ংকর আগুন সময়েও ছিলেন নিরাপদে আমেরিকায় বিলাস বহুল জীবনে। ফলে এই তিন সময়ে ভয়াবহ নারকীয় দৃশ্য, মৃত্যু মিছিল, রক্তের নদী, ধ্বংসের পাহাড় তিনি চাক্ষুস দেখেননি।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে, বিকাল ৩:০০ টার দিকে, পদত্যাগ করেন এবং ভারতের দিল্লিতে পৌঁছান। আর ইউনুস সাহেব ৮ই আগস্ট দায়িত্ব নিলেন। ড. ইউনূস ৮ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৬ই আগস্ট ভারতের সংবাদমাধ্যম এনিডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকি দেন ভারতকে। ভারত ভাঙ্গার হুমকি দিয়ে হাল্লার রাজার ঢঙে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করলেন উচ্চলেখাপড়াজানা পন্ডিত সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১৪৫টা পুরস্কারে পুরস্কৃত ও ভারত থেকে ১০টা পুরস্কারে পুরস্কৃত এবং শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত কৃতি পুরুষ ড মহম্মদ ইউনুস! বিশ্বে আর কোনও দেশ তাঁর শত্রু নয়, শুধু তাঁর প্রতিবেশী দেশ ভারত শত্রু! যে বাংলাদেশ ৫৪ বছর ধ'রে ছিল ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র সেই দেশ হ'য়ে রাতারাতি শত্রু।

আর, তারপর থেকে তাঁর উপস্থিতিতেই শুরু হয় বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ। সেই ধ্বংসযজ্ঞের সময় তিনি মুখে কুলুপ এঁটে নীরবতা পালন করেন। তাঁর নীরবতা মনে পড়িয়ে দেয় রোম সম্রাট নিরোর কথা। কথিত আছে, রোম যখন আগুনে পুড়ছিল তখন সম্রাট নিরো ঠান্ডা মাথায় সুর সাধনা করছিলেন, বেহালা বাজাচ্ছিলেন। ঠিক তেমনি বলা হচ্ছে, শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ী বাংলাদেশের প্রধান উপাদেষ্টা ইউনুস আরো ঠান্ডা মাথায় প্রথম ভারতকে ভাঙ্গার ইঙ্গিত দিয়ে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হুমকি দিলেন, তারপর ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়, ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ নিয়ে, ভারতের উত্তর পূর্ব অংশ সেভেন সিস্টার্স নিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার পরিবর্তে বিশ্বের অন্য দেশ চীন ও নেপালের সঙ্গে আলোচনা করতে লাগলেন, বারবার আলোচনায় ভারতের সেভেন সিস্টার্স টেনে আনতে লাগলেন এবং নানারকম ভারত বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে বিদেশ সফর করতে লাগলেন এবং একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে রি-সেট বাটন টিপে মুজিব জমানার সব ইতিহাস মুছে দেবার জন্য ধ্বংসযজ্ঞে সীলমোহর দিয়ে দিলেন একেবারে শান্তিপূর্ণ ভাবে ঠান্ডা মাথায়। তাঁর উপস্থিতিতে বাংলাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হ'লো আর তিনি চুপ ক'রে সব দেখতে লাগলেন আর ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত আন্দোলনে যুক্ত ছাত্র যুবকদের রসগোল্লার মত গোল গোল মিষ্টি মিষ্টি হাসিতে বলতে লাগলেন, তোমরা মহাকাব্যের সেই মহান বীরদের মতো, যে বীরদের গল্পগাঁথা আমরা মহাকাব্যে পড়েছি। আগামী প্রজন্মও তোমাদের আজকের এই বীর গাঁথা, আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করবে, স্মরণ ক'রে গান, কবিতা, গল্প রচনা করবে, রচিত হবে মহাকাব্য। মনে প্রশ্ন জাগে, গান, কবিতা, গল্প, মহাকাব্য কি রচিত হবে জানি না তবে কালের ইতিহাসে তো থাকবে এই জুলাই-আগষ্ট'২০২৪ অভ্যুত্থান। কিন্তু সেখানে মহম্মদ ইউনুসের ভূমিকা কি থাকবে সেটা ইতিহাস ঠিক করবে।

আছাড়া আরও আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখতে লাগলাম, উচ্চশিক্ষিত গুণী পন্ডিত অরাজনৈতিক ব্যক্তি ইউনুসের ভারত বিরোধী মানসিকতা! বহুদিন ধরেই তীব্র ভারত বিরোধীতা ভয়ঙ্করভাবে দানা বাঁধছিল বাংলাদেশীদের মনে ও প্রাণে। সেটা বীভৎসভাবে ফুটে উঠতো ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র ক'রে। তখন শুধু ভাবতাম কেন বাংলাদেশীদের এরকম ভারত বিদ্বেষ!? তখন বুঝিনি আজকের পটভূমি।

এর পরেও যখন দুই বাংলার এক হওয়ার কথা কেউ বলে তখন সেই বাংলাদেশের কুট্টিদের কথা মনে পড়ে যায়, 'আস্তে কন বাবু, ঘোড়ায় হাসবো।'

সত্যিই আজ ঘোড়াও হাসছে একশ্রেণীর কাঙ্গালি বাঙালির কথায়। ভারত আর বাংলাদেশের ৫৪ বছরের মধুর সম্পর্ক আজ সাপে নেউলে অবস্থায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছেন শান্তির পূজারী মহম্মদ ইউনুস শান্তির নোবেল হাতে ভারত ভেঙে ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্সকে ভাগ করার ইঙ্গিত দিয়ে চিকেন নেক নামক অশান্তির প্রদীপ জ্বালিয়ে। ফলে দুই বাংলার সম্পর্ক আজ আরও বিষাক্ত হ'য়ে উঠেছে ও উঠছে।

যাই হ'ক, যে কথা বলছিলাম, দুই বাংলা এক হওয়ার কথা।
"গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"--- এ আর সম্ভব নয়। গানটির রচয়িতা বিখ্যাত বাউল শিল্পী শাহ আব্দুল করিম গানটিতে যে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিলেন, গানটিতে হিন্দু ও মুসলিম তরুণ সমাজকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার এবং ভেদাভেদ ভুলে কাজ করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সেই গানের পরিবেশ, সেই মানসিকতা, সেই বিশ্বাস, সেই নির্ভরতা, সেই আবেগ, সেই মধুর নির্মল পবিত্র সম্পর্ক সব নষ্ট হ'য়ে গেছে নোংরা রাজনৈতিক আবহাওয়া, বিকৃত ধর্ম পালন এবং ঈশ্বর, আল্লা সম্পর্কে ভুল ভ্রান্ত ধারণার কারণে।

আজ দুই বাংলার সাধারণ মানুষ পরস্পর পরস্পরের শত্রু। আর সেটাকে তীব্র ক'রে দিলেন শান্তিতে নোবেল পাওয়া জ্ঞানী গুণী মানুষ ইউনুস ভারতকে ভেঙে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে। যে ভারত ভাগকে আটকাতে এবং বাংলা ভাগ রুখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সেই অভিশপ্ত ভাগের অশনি সংকেত দেখা দিল শান্তিতে নোবেল পাওয়া ইউনুস সাহেবের কথায়। 

একটা ঘৃণার বাতাবরণ তৈরী করা হয়েছিল দেশভাগের আগে থেকে পরিকল্পিত ভাবে। এইভাবেই দেশভাগের মত ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে মানুষের মগজকে ধোলাই করা হয়েছিল ব্রিটিশের সহায়তায়। ব্রিটিশ চায়নি হিন্দু মুসলমান সাধারণ মানুষ পরস্পর মিলেমিশে থাক। কিন্তু হিন্দু মুসলমান বিরোধ সৃষ্টির অপচেষ্টাকে আটকাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বিশ্বের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়, পরম প্রেম-ভালোবাসার আধার, জ্ঞানের মহাসমুদ্র শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মধুর সম্পর্ক অটুট রাখার ও বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য, দুই সম্প্রদায়ের মেলবন্ধন ঘটাবার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, দুই সম্প্রদায়ের সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে এই দেশভাগের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ পরিণাম নিয়ে বহুবার আন্তরিক আলোচনা করেছিলেন, ভারত ভাগ, বাংলা ভাগ আটকাতে তাঁর পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আর্থিক ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। একশ্রেণীর ক্ষমতালোভী কতিপয় মানুষের সাহায্যে অখন্ড ভারতকে ভেঙে দুর্বল করার জন্য দেশভাগের যে ষঢ়যন্ত্র করেছিল ব্রিটিশ সরকার সেই ষড়যন্ত্রকে আটকাতে ও ভারতকে অটুট রাখতে পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক সব রকমভাবে চেষ্টা করেছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন সব সম্প্রদায়ের মানুষের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কথা ভেবেই। কিন্তু সেইদিন দেশের কোনও সম্প্রদায়ের কোনও পন্ডিত, মহাত্মা, দেশপ্রেমী, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ধার্মিক, আর্থিক ক্ষমতাশালী ও সামাজিক ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কেউই তাঁকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। তিনি তৎকালীন প্রথম সারির দেশনেতাদের উদ্দেশ্যে তৎকালীন 'সৎসঙ্গ'-এর সেক্রেটারি মারফৎ তাঁর বার্তা পাঠিয়েছিলেন। হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা সমাধানে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ রুখতে সেই বার্তায় তিনি এককথায় বলেছিলেন, "Dividing compromise is hatch of the animosity." অর্থাৎ ভাগ ক'রে সমস্যার সমাধানের অর্থ 'তা' দিয়ে দিয়ে শত্রুতার ডিম ফোটানো। তিনি দ্রষ্টাপুরুষ। বহু আগে থেকেই ভারত ভাগ ও বাংলা ভাগের অশনি সংকেত টের পেয়েছিলেন। ভারত ভাগের এবং বাংলাকে যে অখন্ড বাংলা রূপে আর রাখা যাবে না সেই ষঢ়যন্ত্রের, সেই চক্রান্তের আভাস তিনি বহু আগেই পেয়েছিলেন।

আর, সেই জন্য মানুষের ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ মর্মান্তিক পরিণতি সম্পর্কে গভীর দুশ্চিন্তায়, উদ্বেগে রাতে ঘুমোতে পারতেন না, ছটফট করতেন আগাম করুণ ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়ে। যে আসতেন তাঁর কাছে সবাইকে ধ'রে ধ'রে আবেগে আগ্রহভরে তিনি এই বিষাক্ত ভাগের পরিকল্পনাকে বানচাল করার জন্য তাঁর পরিকল্পনার কথা বলতেন। বলতে বলতে তিনি এতটাই উদ্বেল হ'য়ে পড়তেন যে উৎকণ্ঠায় তাঁর রক্তচাপ বেড়ে যেতে লাগলো, শরীর খারাপ হ'তে লাগলো, হার্টের চাপে তিনি অসুস্থ হ'য়ে পড়লেন। তখন তাঁকে সুস্থ ক'রে তোলার জন্য, প্রচন্ড মানসিক চাপ ও রক্তচাপ কমানোর জন্য এবং শরীর উদ্ধারের জন্য হাওয়া বদলের প্রয়োজনে দেশভাগের এক বছর আগেই ১৯৪৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর জন্মভূমি ত্যাগ করলেন। আর এর ঠিক এক বছর পরেই ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাও ভাগ হ'য়ে গেল। আর, কোনোদিনই ফিরে যাওয়া হ'লো না তাঁর জন্মভূমি দেশভাগের আগে পূর্ব বাংলা, দেশভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান আর ১৯৭১এর পরে বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার হিমাইয়েতপুর গ্রামে। 


সেই থেকে হিন্দু-মুসলমানের সমস্যা সমাধানের জন্য দেশভাগ ক'রে যে শত্রুতার জন্ম হ'লো দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে তা' আজ দেশভাগের ৭৮ বছর পরে ৭৮ বছর আগে দেশভাগ করার মাধ্যমে সৃষ্ট শত্রুতা 'তা' দিয়ে দিয়ে কত ডিম ফুটিয়েছে ও আজও ফুটিয়ে চলেছে।  সেদিনের উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ, পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, জমিদার শ্রেণী যারা আজও বেঁচে আছে কিংবা তাঁদের উত্তরপুরুষ এবং আজকের উভয় সম্প্রদায়ের নোতুন যারা নেতৃবৃন্দ, পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, দেশনেতারা সবাই সেই শত্রুতার ডিম ফোটা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু বুঝতে পারছে কিনা জানি না, যদি বুঝতে পেরেও থাকে তা স্বীকার করছে না।

তাই ধর্মকে সামনে রেখে হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল সেদিনের দেশনেতৃবৃন্দ বৃটিশ ও ব্রিটিশের Divide and Ruleএর মত নোংরা পলিসির সাহায্যে, সেই নোংরা পলিসি দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত নেতৃবৃন্দ, সমস্ত পন্ডিত, মহাত্মা, ধার্মিক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবি যতদিন না বুঝতে পারবে, স্বীকার করবে বিশেষ ক'রে দেশের সমস্ত সম্প্রদায়ের সাধারণ নাগরিক ও ছাত্রসমাজ যতদিন না বুঝতে পারবে, বুঝতে চেষ্টা করবে, চোখ খুলবে এবং যতদিন না ধর্ম সম্পর্কে, ঈশ্বর, আল্লা সম্পর্কে, ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে বিকৃত প্রচার বন্ধ হবে, বিকৃত প্রচার বুঝতে পারবে, বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে ততদিন পর্যন্ত আর কোনোদিন এক হওয়া সম্ভব নয় দুই সম্প্রদায়ের মানুষের।

দুই বাংলার মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠা দূরের কথা। এক বাংলায় তা' সে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ যে বাংলার কথা বলা হ'ক না কেন কোনও বাংলায় বাঙ্গালীদের নিজেদের মধ্যে কোনও সম্প্রীতি প্রেম ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আজ আর নেই। ও বাংলায় বাঙ্গাল হিন্দু আর বাঙ্গাল মুসলমানের মধ্যে এবং এ বাংলায় ঘটি হিন্দু ও ঘটি মুসলমানদের মধ্যে সম্পর্ক আজ সন্দেহের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। হিন্দু মুসলমান বাঙালির বাংলা ভাষাও আজ দুর্বোধ্য হ'য়ে উঠেছে। বাংলা ভাষাও আজ দেওয়াল হ'য়ে দাঁড়িয়েছে দুই বাংলার বাঙালির মধ্যে। বাঙালি আজ বাংলা ভাষাও বুঝতে পারে না। বাংলা ভাষায় ঢুকে গেছে ইংরেজী, উর্দু, হিন্দি শব্দ প্রচুর পরিমাণে। বাঙালি আজ খিচুড়ি বাংলা বলে। উচ্চবিত্ত বাঙালি বংশ পরম্পরায় ভুলে গেছে প্রায় বাংলা ভাষা, তারা ঘরে-বাইরে সব জায়গায় আজ ইংরেজী বলে, মধ্যবিত্ত বাঙালি বলে হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজী মিশ্রিত বাংলা, নিম্নবিত্ত বাঙালি বলে আঞ্চলিক বাংলা ভাষা। বাঙালী আজ জাত হিসেবে, বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যখানা হিসেবে বাঙালি নেই। বাঙালি আজ হিন্দু মুসলমান, খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ইত্যাদি হ'য়ে গেছে। বাঙালি আগে হিন্দু, আগে মুসলমান, আগে খ্রীষ্টান, আগে বৌদ্ধ তারপর যদি সেন্টিমেন্ট কিছু বেঁচে থাকে তবে বাঙালি। বাঙালি আজ খন্ড খন্ড, টুকরো টুকরো হ'য়ে গেছে। তার ওপর বাংলার লেখাপড়াজানা বাঙ্গালীরা, বাঙালি ছেলেমেয়েরা আর স্কুলে, কলেজে, অফিসে বাংলা বলে না, বলে ইংরেজী আর হিন্দি।

তাই বাংলা ও বাঙালি আজ "গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা"-----এই গানের স্মৃতি নিয়েই বাঙালি বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে পঙ্গু ল্যাংড়া বংগালী আর গলির ব্যাঙ হ'য়ে আরও কয়েক দশক তারপর ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হ'য়ে যাবে বিভিন্ন ভাষা ও বিভিন্ন প্রজাতির মত বাংলা ও বাঙালি। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ বছর পরে কলিযুগের শেষে ধ্বংসস্তুপের ওপর বাংলা ভাষা ও বাঙালি শব্দ শুধু বেঁচে থাকবে  জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীরামচন্দ্র, শ্রীশ্রীকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীবুদ্ধ, শ্রীশ্রীযীশু, শ্রীশ্রীহজরত মহম্মদ, শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ-এর সর্বশেষ বর্তমান রূপ 
The greatest phenomenon of the world, The greatest wonder in the world শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের নামের মধ্যে।

( লেখা ১৬ই জুন'২০২৫)

Friday, June 13, 2025

আত্মকথন ১৭

ঘুম যখন ভাঙল তখন সন্ধ্যে গড়িয়ে গেছে অনেকক্ষণ। ঘড়িতে আটটা বাজে। উঠে বসলাম বিছানায় কিন্তু আজ আর বেরোতে ইচ্ছে করছিল না। চুপ ক'রে বিছানায় বসে আছি। সকালের ঘটনা মনে ভেসে উঠলো একের পর এক। এখন কি করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না। ঠাকুরের ফটোর দিকে তাকিয়ে প্রণাম ক'রে চেয়ে রইলাম ঠাকুরের মুখের দিকে। মনে মনে বললাম, ঠাকুর আমি কি ভুল করলাম? বড্ড বেশী ঝুঁকি ও চাপ নিয়ে ফেললাম ঠাকুর? এমন সময় বন্ধুরা এসে ডাকাডাকি করতে লাগলো। ঘরে ঢুকে এলো, বললো, কিরে বেরোবি না? আমি কিছু বললাম না। ওদের বসতে ব'লে আমি চোখমুখ ধুয়ে এসে জামা প্যান্ট পড়ে নিলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম প্রতিদিনের মতো আড্ডা মারতে।

আজ আর আড্ডা জমছে না। বুঝতে পারছি সবাই আমার মুখে কিছু শুনতে চাইছে আজ সকালে যা ঘটলো তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে। কিন্তু আমি কিছু নিজে থেকে বলছি না ব'লে কেউ আগ বাড়িয়ে কিছু বলছে না। তবে একটা ছটফটানি লক্ষ্য করতে পারছি সবার মধ্যে। আসলে সময়ে পাশে না থাকাটা যেমন আমার মধ্যে সামান্য প্রভাব ফেলেছে ঠিক তেমনি ঐ চরম মুহূর্তে পাশে না থাকাটা যে আমি ভালো ভাবে নিইনি সেটাও ওরা বুঝতে পেরেছে।

তবে অনেক পরে বুঝেছিলাম কেমনভাবে সরলতার জন্য কঠিন মার খেতে হয়। স্বার্থ সিদ্ধির জন্য সব করা যায়, চোখ উলটে দেওয়া যায় মুহূর্তের মধ্যে। পরবর্তী কয়েক দিনের ঘটনায় তা প্রমাণ হয়েছিল।
একজন চা দিতে দিতে সাহস ক'রে বললো, কি রে এর পরে কি করবি কিছু ঠিক করেছিস? আমি বললাম, কি করবো তাই-ই তো ভাবছি। আর একজন বললো, প্রেসিডেন্ট কি বললো? তিনি কিছু বললেন? আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হ'তে লাগলো পরিস্থিতিটা। গুমোট ভাবটা কেটে যেতে লাগলো। একজন খুব কৌতুহল নিয়ে ব'লে উঠলো, বাপী, তুই কি বললি প্রেসিডেন্টকে?

আর, ঠিক সে-সময়ে একজন সাইকেলে ক'রে এসে থামলো আমাদের সামনে। এসে বললো, বাপীদা, দাদা তোমায় ডাকছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে বললাম, তুই যা, আমি যাচ্ছি। ছেলেটা আবার সাইকেলে চড়ে চলে গেল। আমি ভাবলাম সত্যিই তো এখন ঘড়িতে প্রায় ৯ টা বাজে, এখনও পর্যন্ত সকালের এতবড় ঘটনার কোনও ফিডব্যাক দেওয়া হয়নি দাদাকে। আমি আর দেরী না ক'রে সকলকে বসতে ব'লে বন্ধুর সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম।

আমাকে দেখেই দাদা উঠে এলো নিজের বসার জায়গা থেকে আর চিবিয়ে চিবিয়ে হাসি মুখে সবাইকে শুনিয়ে বললো, কি রে তুই তো একদিনেই হিরো হ'য়ে গেছিস। তা একটু আমাদেরও মনে রাখিস। সকলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো, কি বল তোরা।
আমি কাছে আসতেই আমার কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সকলের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো, বাপী আমার অনেক বড় উপকার করেছে তারপর আমাকে জড়িয়ে ধ'রে বললো, তুই অনেক সহজ ক'রে দিয়েছিস আমার কাজ। তারপর সকলের থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম। তারপর সব ঘটনা বিস্তারিত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বললাম দাদাকে। দাদা বললেন, তোর ওপর ------দা খুব রেগে আছে। আমি বললাম, তুমি কিছু বলোনি উনাকে আগে? দাদা বললেন, বলেছি। আমি বললাম, তাহ'লে? আরে বাবা তুই কি জানিস তুই কোথায় হাত দিয়েছিস? আমাকে বোঝাতে কি বেগ পেতে হয়েছে তা আমি জানি। আমি বললাম, আমার জন্য তোমাকে অনেক চাপ নিতে হ'লো। তারপরে হাসতে হাসতে বললাম, রাগটা আমার ওপরে না, আসল রাগ তোমার ওপরে।

তারপরে অনেক কথা হ'লো যা খুবই গোপনীয়। শেষে দাদা বললো, এবার কি করবি? আমি বললাম, আমাকে তো দেখা করতে বলেছে তা' কালকে না-হয় একবার অফিসে যাবো দেখা করতে। দেখি কি হয় আর কি বলেন। দাদা সম্মতি দিয়ে বললেন, হ্যাঁ, দেরী করিস না, কালকেই সকাল ১০টার সময়ে চলে যা। দ্যাখ কি হয়।

কথা শেষ ক'রে আমি চলে এলাম আমার ডেরায়। সেখানে দেখলাম সবাই বসে আছে আমার জন্য। সবাইকে পরবর্তী কর্মসূচী জানিয়ে দিয়ে যে যার বাড়ি ফিরে এলাম।

কাল সকালে কি করবো আর না-করবো তার পরিবর্তে সারারাত একটা কথা ঘুরপাক খেতে লাগলো মাথার মধ্যে, "বাপী আমার অনেক বড় উপকার করেছে। তুই অনেক সহজ ক'রে দিয়েছিস আমার কাজ।" কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারলাম না, কি উপকার করেছি আর কি কাজই বা সহজ ক'রে দিয়েছি।

যখন বুঝেছি, তখন আমি খাদের কিনারায়।

( লেখা ১৩ই জুন'২০২৪)

বিচিত্রা ১৫৪

কোনটি স্বয়ং রক্তমাংসসংকুল ঈশ্বর কথন?

বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, ভগবৎ গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল, কোরআন, হাদিস, চৈতন্য চরিতামৃত, কথামৃত ও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র লিখিত সত্যানুসরণ ও কথিত ২৪হাজার বাণী তৎসহ কথোপকথন সমগ্র!

(১) অজ্ঞানতা কি? 
মানুষের মাথার দু'পাশে দু'টো অদৃশ্য শিং আছে তাই; যা দিয়ে ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত সে ক্ষতবিক্ষত ক'রে চলেছে সবাইকে।

(২) অজ্ঞানতার শিংগুলি কি দিয়ে তৈরী? অর্থ, জ্ঞান ও ক্ষমতার অহংকার, ঔদ্ধত্ব দিয়ে তৈরি যা যেতে আসতে কাঁচ কাঁটা হীরের মত কাটে।
জ্ঞান একমাত্র স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার উপায়। যত জানবো তত সমস্যামুক্ত হ'য়ে আনন্দে থাকতে পারবো।

ঠাকুরকে ধরেছি জানার জন্য, শেখার জন্য, ভালো খারাপ চেনার জন্য। ঠাকুরকে ধরা তখনই পূর্ণ হয় যখন অপ্রিয় সত্যকে মেনে নিই।

আর, সত্য অপ্রিয় ও উলঙ্গ। মিথ্যা প্রিয় ও সাজগোজে জাঁকজমক পূর্ণ। তাই অপ্রিয় সত্যকে যে মেনে নিতে পারে তার ঠাকুর দর্শন ও লাভ হয়।
( লেখা ১৩ই জুন'২০২৪)
















বিচিত্রা ১৫৩

ঠাকুর মানি, তাঁর আশীর্বাদী কেন্দ্রকে মানি না!'
সৎসঙ্গ' জানি, সৎসঙ্গের বিধান জানি না।

তোমার ইচ্ছেটা তোমারই;
তোমার ইচ্ছের পথে তুমি হাঁটো।
তোমার পাঁঠা তোমারই;ল্যাজে কিম্বা মাথায় কাটো।
যা ইচ্ছা তোমার।

ছেদকদের গানঃ
চল কোদাল চালাই, ভুলে কেন্দ্রের বালাই
ঝেড়ে সংহতির দায়, ভাসি ফুর্তির হাওয়াই।

ছেদকদের গানঃ
যত ভক্তির বালাই,
বলবে,পালাই পালাই;
অর্থ মান যশের ধান্ধায়
যাব ইষ্টের দরজায়।

আমাদের দুর্বলতা হলোঅকৃতজ্ঞ ও বেইমান গুলোকে আমরা বারবার
বিশ্বাস করি ও ক্ষমা করে দিই।

পকেটে রেখে গুপ্ত ছুরিবদনে বলো, এসো প্রেম করি!!
( লেখা ১৩ই জুন' ২০১৭)

































































































Wednesday, June 11, 2025

জীবন ও অঙ্ক! ১ থেকে ১৪

জীবন একটা অঙ্ক, জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্কেরও একটা ফর্মূলা আছে। 
গোঁজামিল দিয়ে এই অঙ্ক মেলানো যায় না। সাবধান!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্ক মেলাতে গেলে একটা ফর্মূলা দরকার। 
আর এই ফর্মূলা জানেন একমাত্র ঈশ্বর, জীবন্ত ঈশ্বর!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্ক যে কেউ মেলাতে পারে না 
তা সে যতবড় বিদ্ধান, বুদ্ধিমান আর পন্ডিত হ'ক না কেন।

 জীবনও একটা অঙ্ক। জটিল অঙ্ক! 
অঙ্কের জগতে হিলবার্টস প্রবলেমস এখনও মেলাতে পারেনি অঙ্কবিদেরা! জীবন অঙ্ক মেলাবে কোন অঙ্কবিদ!?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
জীবন অঙ্ক মেলানো যার তার কর্ম্ম নয়! 
জীবন দিয়েছেন যিনি একমাত্র তিনিই পারেন 
জীবন নামক জটিল অঙ্ক মেলাতে!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
জীবন দিয়েছেন যিনি জীবন নামক জটিল অঙ্ক 
একমাত্র মেলাতে পারেন তিনি। কে তিনি?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
ঘরে ঘরে কেন কেউ এই অঙ্ক মেলাতে পারছে না? 
কেউ কি আছে যে নিজের জীবনের এই জটিল অঙ্ক মিলিয়েছে?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
ঘরে ঘরে ছেলেমেয়ের জীবন অঙ্ক মেলাতে 
কারও তাগিদ নেই বিন্দুমাত্র! পুঁথির অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত!

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
নিজের জীবন অঙ্ক মেলাতে পারিনি, 
গোঁজামিলে মেলাতে চেয়েছি চিরদিন; 
ছেলেমেয়ের মেলাবো কি ক'রে?

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
যে জটিল অঙ্ক আমি অঙ্কবিদ তা ভাবিনি কোনোদিন! 
অঙ্কবিদ হিলবারটস প্রবলেমস সল্ভ করার পেছনে ছুটেছি চিরদিন।

জীবনও একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক!
এই অঙ্ক কেউ মেলাতে চায় না অথচ পাস করতে চায় সবাই, একেবারে স্টার মার্ক্স নিয়ে পাস!

জীবন একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
এই অঙ্ক যেই মেলাক একটু ফাঁক থেকেই যাবে। 
জীবন্ত ঈশ্বর ছাড়া এই অঙ্ক নিখুঁত মেলানো অসম্ভব।

জীবন একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
জীবনের জটিল অঙ্ক মেলাতে পারে একমাত্র জীবন্ত ঈশ্বর! 
একমাত্র তিনিই জানেন সেই ফর্মূলা! কে সেই জীবন্ত ঈশ্বর!?

জীবন একটা অঙ্ক! জটিল অঙ্ক! 
জীবন অঙ্ক সমাধান করতে পারেন একমাত্র 
রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ ও অনুকূলচন্দ্র।
( লেখা ১১ই জুন'২০২১)






























বিচিত্র ১৫২

অতীত যদি বর্তমানের চলার পথে কাঁটা হ'য়ে বেঁধে প্রতিমুহূর্তে শরীরে-মনে-আত্মায়,বাধা হ'য়ে দাঁড়ায় সামনে সাফল্যের শিখরে পৌঁছবার রথে চড়ার, শত্রু হ'য়ে দাঁড়ায় সোনার ভবিষ্যতের তবে কি দরকার সেই অতীতের!? 
তবে জয়গুরু ব'লে দে না ঝাঁপ আর মরণ দুয়ারে পড়ুক ঝাঁপ!
শালা! দে না এক কোপে বলি!!!

অতীত যদি না হয় আমার চলার সাথী
স্মৃতিবাহী চেতনায় খালি মারে লাথি
তবে কি লাভ আমার সেই অতীতে! 
বন্ধ্যা হ'ক সেই অতীত স্মৃতির জমিতে!!
( লেখা ১১ই জুন' ২০২০)

কবিতাঃ মন ও হৃদয় এবং শরীর ও আত্মা।

মন ক'রো না তুমি ছটফট, থাকো স্থির, থাকো অকপট!
হৃদয় পড়ো না তুমি ঘুমিয়ে, থাকো সদা জাগ্রত,
থাকো দয়ালের নিকট! হে শরীর! অকারণ হেকমতি
আর নটঘট নাও সামলে চটপট! আর হে আত্মা!
সদা তুমি থাকো শুদ্ধ পবিত্র, হ'ক সদা তোমাতে
পরমাত্মার প্রকট!!-
( লেখা ১১ই জুন'২০২০)

বিচিত্রা ১৫১

হায়েনারা ঘরে দিচ্ছে হানা
আর তুমি রাত কানা !
ভাইগুরু!
দয়াল ব'লে দিচ্ছো হাঁক 
আর করছো টালবাহানা !!

কপটতা আর চাতুরীর প্রতি রেখে নিষ্ঠা!
ভাইগুরু ইষ্টপ্রতিষ্ঠার আড়ালে করছো আত্মপ্রতিষ্ঠা!!

বাবাইদাদার নামে মিথ্যা প্রচারে করতে চাও বাজীমাৎ!?
গাঁয়ে মানে আপনি মোড়ল জেনো হবেই কুপোকাত।

আত্মপ্রতিষ্ঠায় মত্ত তুমি, তুমি বেসামাল।
ইষ্টকে নিয়েছ ক'রে আয়ের উপকরণ আর
ইষ্টপ্রতিষ্ঠার নামে করতে চাও তুমি কামাল!?

দয়ালের দয়ায় আজ ভিখিরি থেকে হয়েছো রাজা!
রাজা হয়েই বলছো দয়ালের নামে দয়ালের ব্যান্ড বাজা!?
বাহবাঃ! ভাইগুরু বাহবাঃ!!
( লেখা ১১ই জুন'২০১৭)












































































ঠিক ও ভুল ১

কথায় আছে ঘর শত্রু বিভীষণ!

এবং তা বলাও হ'য়ে থাকে যত্রতত্র! একটা ভুল কথা হাজার হাজার বছর আমাদের সত্য ব'লে পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো! আসলে বিভীষণ ঘর শত্রু নয়, ঘরের বন্ধু ছিল, দেশ ও দশের বন্ধু ছিল। তাই বারবার ঘর, দেশ ও দশকে বাঁচাবার জন্য তিনি দাদা রাবণকে অন্যায় কাজ, অসৎ কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু দাদা তা শোনার প্রয়োজন মনে করেনি। তাই সত্যকে, ন্যায়কে, সৃষ্টিকে, সংসার-পরিবারকে, সমাজ-দেশকে রক্ষা করার জন্য যা করার বিভীষণ তাই করেছিলেন! তাই বিভীষণ ঘর শত্রু নয়, বিভীষণ ঘর বন্ধু বিভীষণ ছিলেন। তাহ'লে ঘর শত্রু কে? ঘর শত্রু ছিলেন প্রকৃতপক্ষে দুর্যোধন! তাই ভুল দর্শন ব্যক্তি-সমষ্টি-সমাজ-দেশকে ধ্বংস করে, ধ্বংস করে সৃষ্টির মূল মরকোচকে!!!!!!!!! শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দৃষ্টিতে কত কিছুই যে উদ্ভাসিত হয় তার সীমা-পরিসীমা নেই!!!!!!!!!
( লেখা ১১ই জুন'২০২৩)

আত্মকথন ১২

রাতে ঘুম হ'লো না। কাল সকাল ৯টার কথা ভেবে সারারাত হাজার কথা মাথার মধ্যে বিলি কাটতে লাগলো। বাবার কথা মনে এলো ঘুমের মধ্যে। বাবার শরীরটা ভালো নেই। তবুও দেখলে বোঝা যাবে না যে শরীর ভালো নেই। চোখমুখের স্বাভাবিকতা বুঝতেই দেয় না কাউকে বাবার কিছু কষ্ট আছে শরীরে। আর আমরাও অপদার্থ সন্তান বাবাকে কখনো তেমনভাবে বোঝার চেষ্টা করিনি। এই যে বাবা-মায়ের প্রতি উদাসীনতা এর পেছনে কাজ করে নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকা বা মত্ত থাকার কারণে। মনের কোণে দুশ্চিন্তার ঝড় উঠলো রাতের আঁধারে। চিন্তায় পড়ে গেলাম। যদি কাল সকালে গাড়ি আটকাবার প্রতিক্রিয়ায় কিছু হ'য়ে যায় আমার তাহ'লে তার জেরে বাবার এই দূর্বল শরীরের ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে সেই কথা ভেবে ঘুম আসছে না চোখে। ঘড়ির কাঁটা যেন আজ দ্রুতবেগে দৌড়চ্ছে সকাল হবার জন্য। রাত যেন আরো ঘন কুচকুচে কালো হ'য়ে আমাকে গিলতে আসছে। আজেবাজে চিন্তা আসতে লাগলো মাথায়। জোশের মাথায় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম না তো? নাকি সত্যি সত্যিই সত্যের ওপর দাঁড়িয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি? পরস্পর বিরোধী প্রশ্ন উঠে এলো মনে। মনকে শক্ত ক'রে বেঁধে রাখতে চাইলে মন আরও বেশী স্লিপ ক'রে বেরিয়ে যেতে চায়, পিং পং বলের মতো এখান থেকে ওখানে ছিটকে ছিটকে চলে যেতে চাইছে। ফলে গরম হ'য়ে উঠছে মাথাটা। উঠে বসলাম বিছানায়। বিছানা থেকে নেবে চোখেমুখে জল দিলাম ছিটিয়ে। একগ্লাস ঠান্ডা জল খেলাম। তারপর ঠাকুরের ফটোর সামনে এসে বসলাম। কিছুক্ষণ স্থির হ'য়ে বসে নাম করলাম। তারপর ভাবতে লাগলাম কোনটা সত্য।

নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম।
জোশের থেকে কি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
বন্ধুদের মাঝে হিরো সাজার জন্য কি এই সিদ্ধান্ত?
মাথা মোটা হুব্বার মতো আবেগে ভেসে এই সিদ্ধান্ত?
বাস্তবের মাটি থেকে উঠে গিয়ে কল্পনায় ভেসে এই সিদ্ধান্ত?
উন্মত্ত যৌবনের পাগলা ঘোড়ায় চেপে আকাট মূর্খের সিদ্ধান্ত?
আবার মনে হ'লো,
সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত?
এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে মানবিকতার দিক কি নেই?
সত্যকে সামনে রেখে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের মধ্যে কি উগ্রতা বা সংহার আছে?

ঠাকুরের সামনে বসে ভাবতে ভাবতে সামনে যা উঠে এলো তা হ'লো কারও মঙ্গলের জন্য নেওয়া সৎ সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনও ভুল, অন্যায়, উগ্রতা বা সংহার নেই। আসলে মনের বিক্ষেপের পিছনে আছে বাবার শারীরিক অসুস্থতা। বাবাকে কেন্দ্র ক'রে একটা দুশ্চিন্তা মনকে স্থির হ'তে দিচ্ছে না। এ ছাড়া অন্য কোনও ভুল, অন্যায়, উগ্রতা বা সংহার নেই। নেই কোনও জোশ বা হিরো সাজার মতলব। নেই আবেগে বা কল্পনায় ভেসে যাওয়া কিংবা যৌবনের উন্মত্ততা। আর, মংগল যজ্ঞে সবসময় দয়ালের আশীর্বাদ ও দয়া আছেই আছে।

এতক্ষণে মনটা শান্ত হ'লো। ঠাকুরের প্রতি বিশ্বাস, নির্ভরতা ফিরে আসার সঙ্গে নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ধীরে ধীরে চোখ দু'টো বন্ধ হ'য়ে এলো। ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বাবা-মায়ের মুখটা ভেসে উঠলো মনের আঙিনায়। উপলব্ধি হ'লো বাবা-মায়ের প্রয়োজনীয়তা ও উপস্থিতি।
( লেখা ১১ই জুন' ২০২৩)

আত্মকথন ১১

হাঁটতে হাঁটতে এসে উপস্থিত হ'লাম দাদার ডেরায়। দাদা একটা চেয়ারে বসে আছে। কথা বলছে সবার সঙ্গে। বহুজনের বহু সমস্যা। সামনে আশেপাশে অনেক লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দাঁড়িয়ে বা বসে আছে। আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। তারপর আমার হাত ধ'রে নিয়ে চলে গেল দূরে অন্ধকারে যাতে কেউ আমাদের কথা শুনতে না পায়। সবাই অবাক বিস্ময়ে উৎকণ্ঠায় চেয়ে রইলো সেদিকে। কি জানি কি হয়। প্রত্যেকের মনে এই ভাব। আমরা দুজনে এসে দাঁড়ালাম দূরে একটা অন্ধকার বারান্দায়। তারপর আমাকে দাদা বললো, কি রে কি শুনছি? কি বলেছিস ----দাকে? আমি বুঝতে পারলাম এই অল্প সময়ের মধ্যেই ঐ দাদা কথাটা পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বস্ত সৈনিকের মতো। আমি বললাম তুমি যা শুনেছো ঠিক শুনেছো। উত্তেজিত হ'য়ে দাদা বললো, মানে? আমি বললাম, মানে আমি কাল সকাল ন'টায় গাড়ি আটকাবো। চাপা গলায় চেঁচিয়ে উঠলো দাদা, কার গাড়ি আটকাবি? আমি দ্বিধাহীন কন্ঠে নিঃসঙ্কোচে বললাম, প্রেসিডেন্টের গাড়ি। তুই আটকাতে পারবি? তোর এত সাহস? তোর এত বুকের পাটা? ব'লে উত্তেজনায় কাঁপতে লাগলো দাদা। আমি জোশের সঙ্গে বলে উঠলাম, এতে সাহসের কি আছে আর বুকের পাটার কি দরকার? সকালবেলা গাড়ি যাবে আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি আটকে দেবো। ব্যাস্। এতে আশ্চর্যের কি আছে? আমার এরকম উত্তেজনাবিহীন সহজ সরল নির্লিপ্ত উত্তর শুনে দাদা আবার রেগে ব'লে উঠলো, তুই জানিস তুই কার গাড়ি আটকাবি? এর পরিণতি কি হ'তে পারে তুই জানিস? তোর কোনও বোধবুদ্ধি আছে? নাকি সব লোপ পেয়ে গেছে? পরে এর ঠেলা সামলাতে পারবি তো? আমি বললাম, দ্যাখো, আমরা বেকার ছেলেরা সব রাস্তায় বসে থাকি। এই রাস্তার ওপর দিয়ে এই কোম্পানির প্রেসিডেন্ট রোজ ৩৬৫ দিন যান। আমরা যেখানে থাকি আড্ডা মারি সেখান থেকে কোম্পানির গেটের দূরত্ব ৫ মিনিট। আমাদের এই রাস্তার ওপরে যারা রোজ আড্ডা মারে, সময় কাটায় প্রেসিডেন্ট এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ও কোম্পানী থেকে ফেরার সময় দু'বেলা আমাদের বসে থাকতে দ্যাখেন। তা উনাকে আমাদের বেকার অবস্থার কথা যদি বলি তাহ'লে দোষ বা অপরাধ কোথায়? অন্যায় কোথায়? আর তিনিই বা কেন শুনবেন না? কারখানা সংলগ্ন এলাকার লোকেদের কোনও অধিকার বা দাবী নেই সেখানে কাজ পাবার?

নিজেকে একটু সামলে নিয়ে রাগ বিরক্তিসহ চাপা গলায় বললেন, তোর এসব দাশর্নিক কথা শোনার মতো প্রেসিডেন্টের সময় আছে? যত্তসব ভাবের কথা, আবেগের কথা। এইকথা ব'লে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললো, তুই ভাবিস না আমি তোর একটা ভালো ব্যবস্থা ক'রে দেবো এই কারখানায়। আমি বললাম, দাদা, ভাবের কথা, আবেগের কথা হয়তো আমি বলেছি কিন্তু আবেগে ভেসে গিয়ে কোনও অসম্ভব আজগুবি অন্যায্য কথা আমি বলিনি। তাছাড়া সামনে আমার এম-এ পরীক্ষা। আমার কথা ভেবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিইনি। আমি সত্যিকারের এখানে চাকরী করার কথা ভাবিইনি কোনওদিন। বন্ধুদের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ওদের প্রত্যেকের চাকরী দরকার। বাড়ির পাশে এতবড় কারখানা থাকতে তারা চাকরী পাবে না? এইকথায় দাদার রাগ একটু কমলো কিন্তু তবু বলতে লাগলো, দ্যাখ এতবড় কারখানা আর তার প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার প্রশ্নে পুলিশ প্রশাসনের ওপর চাপ আসবে। আর পার্টিও ছেড়ে কথা বলবে না। আমি দৃঢ়তার সংগে গভীর প্রত্যয় নিয়ে বললাম, আর আমি যে এত পার্টির জন্য খাটলাম তার কোনও মূল্য নেই পার্টির কাছে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যে মিছিল, মিটিং, স্লোগান, বক্তৃতা, নাটক, দেওয়াল লিখন, পোষ্টার লাগানো, পথসভা ইত্যাদির সঙ্গে সক্রিয় যুক্ত ছিলাম তার কোনও মূল্য নেই পার্টির কাছে? এত করার পরেও পার্টির কাছে পরিচিত হ'য়ে উঠতে পারলাম না যখন ক্ষমতায় আমাদের সরকার? আমি তো কোনও অন্যায় কাজ করছি না। শুধু গাড়ি থামিয়ে প্রেসিডেন্টকে দু'টো কথা বলবো। একনাগাড়ে এতসব কথা শোনার পর দাদা একদম শান্ত হ'য়ে বললো, তুই পারবি? পরে ভয়ে পিছিয়ে আসবি নাতো? আমি বললাম তোমার যদি কোনও ব্যক্তিগত অসুবিধা না হয়, তোমার যদি একান্তই কোনও আপত্তি না থাকে তাহ'লে আমার কোনও ভয় বা পিছিয়ে আসার ব্যাপার নেই। একটু চিন্তা ক'রে পরে বললো, দ্যাখ (একজন উর্ধতন নেতার নাম ক'রে বললেন) হয়তো তিনি রেগে যেতে পারেন। তবে উনি যদি তখন বাধা দেন, কিছু বলেন উনার সঙ্গে কোনও ঝগড়ায় যাবি না। আমি বললাম, তুমি একটু উনার ব্যাপারটা দেখে নাও বাকীটা আমি সামলে নেব। আমার ওপর ভরসা রাখতে পারো। কোনও বিশৃঙ্খলা বা গন্ডগোল আমার বা আমাদের দিক থেকে বিন্দুমাত্র হবে না। শান্তভাবেই সব শেষ হবে আমি তোমায় কথা দিলাম। তুমি শুধু বাকীটা সামলে দিও। এইবলে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম ক'রে বললাম, তুমি আমায় আশীর্বাদ করো আমি যেন সফল হ'ই। তিনি খুশী হ'য়ে হেসে চাপা গলায় বললেন, বেস্ট অফ লাক। তারপরে দুজনে হাঁটতে হাঁটতে সবাই যেখানে বসে আছে সেখানে এলাম।

তারপর দাদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম নিজের আড্ডার জায়গায়। সেখানে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা এতক্ষণ কি হ'লো জিজ্ঞেস করলো। আমি তাদের শুধু পরের দিনে কি করণীয় সেটা বুঝিয়ে দিয়ে যে যার বাড়ি চলে এলাম।
( লেখা ১১ই জুন'২০২৩)

আত্মকথন ১০

কিছুক্ষণ হতভম্ব হ'য়ে দাঁড়িয়ে রইলো এলাকার দোর্দন্ডপ্রাতাপ দাদার ডানহাত বিজনেস পার্টনার। তারপর সে পিছন পিছন হন্তদন্ত হ'য়ে এসে আমার হাতটা ধ'রে টান দিল। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। বন্ধুদের বললাম এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তারপরে বললাম, বলো। সে উৎকণ্ঠা মিশ্রিত গলায় কৌতুহল ভরে বললো, কাল সকাল ন'টায় কি করবি? আমি হাসতে হাসতে নির্দ্বিধায় নির্বিকারভাবে বললাম, কাল প্রেসিডেন্টের গাড়ি আটকাবো, ঠিক ন'টায়। ভয় পেয়ে গিয়ে সে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় ক'রে বললো, কোম্পানীর প্রেসিডেন্টের গাড়ি!? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপরে জোরে চিৎকার ক'রে ব'লে উঠলো। তুই পাগল হ'য়ে গিয়েছিস? এই চিৎকারে চারপাশের সবাই তাকিয়ে আছে দেখে গলার স্বর নাবিয়ে ধীর অথচ অশান্ত গলায় বললো, বাপী এতবড় রিস্ক নিস না। বিরাট ক্ষতি হ'য়ে যাবে। পুলিশ-প্রশাসন-পার্টি-নেতা-গুন্ডা এত চাপ সামলাতে পারবি না। প্রচন্ড ঝামেলা হবে। আজ পর্যন্ত কেউ কোম্পানির প্রেসিডেন্টের গাড়ি আটকাতে সাহস করেনি। এই ভুল তুই করিস না।

আজ লিখতে বসে মনে পড়ছে আমার ভালোর জন্যেই সে সাবধান করেছিল। আমাকে ভালোবাসতো সেই দাদা। প্রতিদিন একসঙ্গে পুকুরে দুপুরবেলায় স্নান করতাম। দুধে আলতা ফর্সা, লোহা পেটানো চেহারা ছিল তার। আর হাত দু'টো ছিল অ্যায়সা তাগড়াই মোটা। আজও মনে পড়ে তার খাঁজ কাটা বুকে, হাতে, থাইয়ে হাত বুলিয়ে বলতাম, সারা শরীর জুড়ে ছোট ছোটো পাহাড় আর উপত্যকার বাহার! আর, সে কথা শুনে আমাকে বলতো, তুই তো ছুপা রুস্তম! নিজেকে সবসময় ঢেকে রাখিস। সত্যি কথা বলতে কি আমিও শরীর চর্চা করতাম। ফুলফ্লেজে করতাম। কিন্তু ফুলহাতা জামা ও গেঞ্জি ছাড়া যৌবনে কোনওদিনই কিছু পড়িনি। পায়জামা পাঞ্জাবী ছিল আমার প্রিয় পোশাক। যৌবনের শেষে প্রৌঢ়ত্বে এসে হাফ হাতা জামা ও গেঞ্জি পড়েছি স্ত্রীর কথায়। স্ত্রী অনেকদিন বলতো কোনোদিনই তো হাফহাতা জামা বা গেঞ্জিতে তোমায় দেখলাম না একবার দু'বার পড়লে কি হয়? ভাবলাম কথাটায় আপত্তির কি আছে!? তাই পড়লাম।

যাই হ'ক শীতকালে তেল মেখে আমার বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে বসে রোদ পোয়াতাম আর আখ চিবাতাম দাদা-ভাই মিলে দু'জনে। আস্তে আস্তে জুটে যেত একে একে অনেকে। আখ চিবানো শেষে সবাই স্নান ক'রে যে যার বাড়ির দিকে চলে যেতাম। সেখান থেকে গড়ে উঠেছিল একটা ঘনিষ্ঠতা।

যাই হ'ক, আমি চুপ ক'রে তার সত্য ও ভয় ধরানো সব কথা শুনে শান্ত স্বরে শুধু হালকা হাসি ঠোঁটে মাখিয়ে বলেছিলাম, কাল সকাল ন'টা। ব'লেই মুখ ঘুরিয়ে হাঁটা দিয়েছিলাম। শুনতে পাচ্ছিলাম আমার নাম ধ'রে তার ডাক। পিছন ফিরে আর তাকাইনি। বোধহয় বরাবর মাথা উঁচু ক'রে চলার জোশ আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো।

তারপর নিজের ডেরায় এসে বসলাম। মুড়ি চানাচুড় খেতে খেতে বন্ধুরা বললো, কিরে কাল সকাল ন'টায় কি করবি? আমি বললাম তোরা থাকবি তো আমার সঙ্গে? বুঝলাম ঝামেলার গন্ধ পেয়ে পিছিয়ে যেতে চাইছে। আমি বললাম, কাল সবার একটা চাকরীর ব্যবস্থা করবো। আর সঙ্গে সঙ্গেই সবাই উৎসুক হ'য়ে আনন্দে হৈ হৈ ক'রে উঠে জিজ্ঞেস করলো, কাল কি করতে হবে? আমি তাদের সংক্ষেপে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। আর তখনি রাস্তার ওপার থেকে একজন সাইকেল থেকে নেবেই চীৎকার ক'রে আমার নাম ধ'রে ডাক দিয়ে বললো, বাপী, ----দাদা তোকে ডাকছে। এক্ষুনি চল। তখন সবে আলুর চপে এক কামড় বসিয়েছি, পাশে গরম চা। আমি বললাম তুই যা, আমি যাচ্ছি। ও বললো, না না তুই এক্ষুনি চল। তোকে সঙ্গে নিয়ে যেতে বলেছে। দাদা তোর জন্য অপেক্ষা করছে। এক্ষুনি দেখা করতে বলেছে।

আমি সবাইকে অপেক্ষা করতে ব'লে ওর সঙ্গে চপ খেতে খেতে চললাম হাঁটতে হাঁটতে। ওরও হাতে একটা চপ ধরিয়ে দিলাম। সাইকেলে চড়তে বললো বন্ধু। আমি 'না' বললাম। কারণ প্যান্টে সাইকেলের দাগ লেগে যাবে বলে। বন্ধু বললো, শালা রাজার বেটা। সবসময় শালা স্যুটেড বুটেড থাকতে হবে? আমি হেসে বললাম তুই সাইকেলে চলে যা আমি হেঁটে হেঁটে আসছি। বন্ধু কিছু না ব'লে আমার সঙ্গে হাঁটতে লাগলো। আমি হাসতে হাসতে বললাম, দ্যাখ, বাবার হোটেলে খাই আর শালা এক্কেবারে রাজার বেটার মতো সবসময় ফিটফাট চলাফেরা করি। সোনার চামচ নিয়ে না জন্মালেও রুপোর চামচ নিয়ে জন্মেছি বুঝেছিস। আসলে সবসময় নিজেকে ফিটফাট রাখতে ভালো লাগে বুঝলি। কোনওদিনই এলোমেলো আগোছালো চলা ভালো লাগে না। শরীরচর্চা, খেলাধুলা, অভিনয়, পড়াশুনা, রাজনীতি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু নিয়ে ব্যস্ত রাখি নিজেকে। তুই তো জানিস, দেখিস সব।

ও শুধু বললো, এলাকার দাদা হ'য়ে উঠছিস। আর কিছু না ব'লে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। আমি হাসতে হাসতে বললাম, দাদা না গুন্ডা! তবে ধর্ম্মগুন্ডা। তারপর আর কোনও কথা না বলে আমিও হেঁটে চললাম পাশাপাশি চুপচাপ। ( লেখা ১১ই জুন'২০২৩)

আত্মকথন ৯

 প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যাবেলায় বেড়িয়েছি বাড়ি থেকে আড্ডা মারতে। আমাদের বন্ধুদের ১০-১২ জনের একটা দল ছিল। সন্ধ্যে হ'লেই সবাই একজায়গায় জড়ো হ'য়ে আড্ডা মারতাম। হাঁটতে হাঁটতে কখনো চলে যেতাম গঙ্গার ধারে দলবেঁধে গঙ্গার হাওয়া খেতে। কখনো বা তিন রাস্তার মোড়ের মাথার এক কোণায় বিরাট বটগাছের চাতালে ব'সে দেদার আড্ডা মারতাম। কখনো বিরাট খোলা মাঠে বসে আড্ডা। এমনিভাবেই চলতো আমাদের প্রতিদিনের যৌবনের রুটিন।


একদিন দলবেঁধে হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়িয়েছি একটা দোকানে মুড়ি-চানাচুর কিনবো ব'লে। সঙ্গে আলুর চপ। এমন সময়ে সামনে এসে দাঁড়ালো এলাকার দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদার বিজনেস পার্টনার। এসে দাঁড়িয়েছিলো ভগবানের দূত হ'য়ে। এখন লেখার সময় জীবনের সায়াহ্নে এসে মনে হয় আমার জন্য তা ছিল হয়তো বা যমদূত। এখান থেকেই হয়েছিল সেই বুদ্ধি বিপর্যয় আর গ্রহদোষের সূত্রপাত।

সে এসেই মিষ্টি হেসে কেমন আছি জিজ্ঞেস করলো। তারপরই মুড়ি চানাচুরের ঠোঙা থেকে এক্মুঠো মুড়ি নিয়ে খেতে খেতে গল্প করতে লাগলো। আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর, দাদা-ভাইয়ের মতো। একদিকে এলাকার সেই অটোমোবাইল কারখানায় সে কাজ করে এবং অন্যদিকে দাদার বিজনেস পার্টনার। একদিনও কাজে যায় না, গেলেও ঘুরতে যায়। আর, মাইনের দিন যায়। কখনো কখনো ডিপার্ট্মেন্টের চ্যালা এসে মাইনের খামটা দিয়ে যায়। সবে কিছুদিন হয়েছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে রাজ্যে। আর সেই সময় শুরু হয়েছে সবে প্রোমোটিং বিজনেস। আমি কথা বলতে বলতে হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তাকে আমার কপট অসন্তোষ প্রকাশ ক'রে ফেললাম। সেই অসন্তোষটা হ'লো 'তুমি বাপু উপরেরও খাচ্ছো আবার তলারও কুড়োচ্ছো আর আমি বসে বসে দেখবো আর আঙ্গুল চুষবো? মিটিং করলাম, মিছিল করলাম, স্লোগান তুললাম, বক্তৃতা দিলাম, পোষ্টার লাগালাম, নাটক-অভিনয় ক'রে বেড়ালাম গ্রামে-গ্রামে, জেলায়-জেলায় আমি আর নেপোয় মারে দই? আমাদের কথা একটু ভাবো। থতমত খেয়ে সেই দাদা ব'লে উঠলো, তুই কি চাস? আমি বললাম, আমি একা কিছু চাই না, আমার দলের প্রত্যেকের চাই। তুমি যেখানে চাকরী করো সেখানে আমাদের সবার কিছু একটা ব্যবস্থা ক'রে দাও। দাদা আশ্চর্য হ'য়ে ঘাবড়ে গিয়ে বললো, আমি কি ক'রে ব্যবস্থা করবো বল। তারপরে তার বিজনেস পার্টনার এলাকার দাদার নাম ক'রে বললো, তুই বরং ওকে বল। একটা কিছু ব্যবস্থা হ'য়ে যাবে। তারপরে একটু দূরে আলাদা ক'রে ডেকে নিয়ে বললো, তুই চিন্তা করিস না, তোর হ'য়ে যাবে একটা ভালো ব্যবস্থা। আমি বললাম, না না না, আমি আমার একার কথা বলিনি আর আমি একা কিছুই চাই না আর দরকারও নেই। উদারতার ভঙ্গিতে সহজ সরল ভাবে কথাগুলি ব'লে ফেললাম। এক্কেবারে দাতা কর্ণ ছিলাম। তারপরে হঠাৎ কিছু না ভেবেই ব'লে ফেললাম, কাল সকালে দেখতে পাবে কি করি। সে ঘাবড়ে গিয়ে বললো, কাল কি করবি? আমি বললাম, কাল সকালে দেখতে পাবে; দেখতে পাবে ঠিক ন'টায়। আমি আর কিছু না ব'লে সবাইকে নিয়ে আমাদের আড্ডার জায়গার দিকে হেঁটে চললাম।

আত্মকথন ৮

এখন আমার প্রচুর সময়। সকাল-বিকেল-রাত সবসময় ঘরে। তাড়াহুড়ো নেই কোথাও যাওয়ার। যৌবনের শুরুতেই কর্মহীন, ব্যস্ততাহীন অলস জীবন কারও জীবনের ভিত মজবুত করতে পারে না। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা নিয়ে বড় হচ্ছিলাম। হঠাৎ কর্মস্থলে ছেদ ছুটুন্ত জীবন গাড়িটাকে যেন জোর ক'রে ব্রেক মেরে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হ'লো। ফলে প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেল গাড়িটা আর লাইন চ্যুত হ'লো। তখনও পর্যন্ত কোনও সওয়ারী ছিল না গাড়িতে।
এখন আর প্রতিদিনের মতো ডিউটি যাওয়ার জন্য শিফটিং অনুযায়ী কোনও ব্যস্ততা নেই। অফুরন্ত অলস সময়। একবার ভাবলাম এই অবসরে মাস্টার ডিগ্রীটা করে ফেলি। মনে পড়ে গেল মাস্টার ডিগ্রীর প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় বসার সুযোগ হারাবার কথা।

তখন ১৯৭৭ সাল। সবে বাম্ফ্রন্ট ক্ষমতায় এসেছে। মোটামুটি বিজয় উৎসব, আনন্দ উৎসব কেটে গেছে। এখন নোতুন স্বপ্ন নিয়ে রাজ্য গড়ার সময়। সরকার গঠনের পর চতুর্দিকে পৌরসভা-পঞ্চায়েতে, অফিসে-কাছারিতে, কলে-কারখানায়, স্কুলে-কলেজে সর্বত্র লালের এগিয়ে যাওয়ার মহোৎসব, জয়যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরাও একটু একনাগাড়ে দীর্ঘ কংগ্রেসি শাসনের বিরুদ্ধে জন জাগরণের জন্য মিছিল-মিটিং-স্লোগান-পথসভা-নাটক করার পর রাজ্য জয়ের পরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। সেই অবসরে প্রস্তুতি চলছিল মাস্টার ডিগ্রী পরীক্ষার। আর হঠাৎ তখনি সুর-তাল-ছন্দে ধাক্কা লেগে কেটে গেল। ডিরেইল্ড হ'য়ে গেলাম। লক্ষ্য বিচ্যুত হ'য়ে ছুটে চললাম অন্যদিকে। এখান থেকেই শুরু হ'লো বিপর্যয়। একেই বোধহয় বলে বুদ্ধি বিপর্যয়। আর পেছন পেছন এসে ঘিরে ধরে গ্রহদোষ অর্থাৎ গ্রহণদোষ।
এই বুদ্ধি বিপর্যয় বা গ্রহদোষের কথায় বলবো পরবর্তীতে।
( লেখা ১১ই' জুন'২০২৩)

আত্মকথন ৭

চিঠিটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হ'লো। বিশ্বাস হ'লো না চিঠিটার ভাষা। মনে হ'লো আমি যেন স্বপ্ন দেখছি। কারণ তখনও সেই অল্প বয়সে বুঝে উঠতে পারিনি মানুষের মন-মুখ যে এক নয় সেই নির্ম্মম সত্য কথা। অনেক দেরীতে প্রায় জীবনের শেষ অঙ্কে এসে বুঝেছি সরলতা মানে বেকুবি নয়।

এতদিন সেই যে স্কুল লাইফ ছেড়ে কলেজ জীবনে প্রবেশ ও তারপরে বৃহত্তর বাইরের জগতে যাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছি তারা সবাই রাতারাতি অপরিচিত হ'য়ে গেল দেখে বিশ্বাস হ'লো না যে বাস্তব এত নির্ম্মম! মানতে চাইলো না মন। আবার চিঠিটাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। খাঁচায় বন্দী প্রাণীর ছটফটানির ভয়ঙ্করতা বোধের মধ্যে ধরা দিল। ভিতরে ঝড় ব'য়ে যাচ্ছে কিন্তু উপরে জোর ক'রে নিজেকে ধ'রে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা বুঝতে পারলাম চোখেমুখে ফুটে উঠছে। কি ক'রে আটকাবো তাকে ভাবতে ভাবতে মাথার ভিতরের স্নায়ূ ছিঁড়ে যেতে চাইলো। কি বলবো বাড়িতে? সদ্য সদ্য বাড়িতে বাবার মৃত্যুর রেশ এখনও তাজা হ'য়ে রয়েছে ঘরের চারপাশে। আমি জানি দাদারা সব জেনে যাবে। কিন্তু মাকে জানাবো কি ক'রে? কি ক'রে বলবো যে মা, আমার আর চাকরী নেই? কি ক'রে বলবো, আমি মারামারি করার অপরাধে সাসপেন্ড হয়েছি?

আমি চাকরীতে জয়েন করেছিলাম ৭৭ সালের শেষ দিকে দূর্গাপুজোর ঠিক একমাস আগে। আর সাসপেন্ড হ'য়েছিলাম ৭৯ সালের পুজোর আগেই। আর সাসপেন্ড হওয়ার সাথে সাথেই আমার এলাকার সবাই যারা একই কোম্পানিতে কাজ করতো তারা কথা বলা বন্ধ ক'রে দিল। আমি অচ্ছুৎ হ'য়ে গেলাম। আমি যেন এক সংক্রামক ব্যাধির রুগী! অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে যেমন লেখা থাকে 'শুধুমাত্র সংক্রামক ব্যাধির জন্য' ঠিক তেমনি আমি হ'য়ে গেলাম পাড়ায় ও কারখানায়। যারা কোম্পানিতে চুরি-চামারি-নেশাভাং-মারামারি এবং কোম্পানি অফিসার বা নেতাদের ব্যাক্তিগত রোষের কারণে সাসপেন্ড হ'য়ে যায় তারা পথেঘাটে দেখা হ'লে কথা বলতো, জিজ্ঞেস করতো কিছু সমাধান হ'লো কিনা। সবচেয়ে কষ্ট হয়েছিল যাদের চাকরী আমার ঐ প্রেসিডেন্টকে দেওয়া নামের লিস্টের ভিত্তিতে হয়েছিল তারা কেউ আর যোগাযোগ রাখতো না পারতপক্ষে।

অথচ এদের জন্যই জীবনে অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছিলাম। ঝুঁকি নিয়েছিলাম নিশ্চিত মৃত্যুকে বা নিদেনপক্ষে ভয়ংকর শারীরিক ক্ষয়ক্ষতিকে স্বীকার করেই জোশ-সাহস আর মহৎ এক উদ্দেশ্যকে হাতিয়ার করেই। পরবর্তী আত্মকথনে সেটা বর্ণনা করবো আর সেখানেই একসময়ের এশিয়ার তথা ভারতের একমাত্র স্বয়ং সম্পূর্ণ ২৫ হাজার কর্মচারীর প্রেসিডেন্টের সংগে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার কাহিনী তুলে ধরবো।

যাই হ'ক, এলাকার যারা এমপ্লয়ী ছিল ওই কারখানার তাদের কাছে আমি হ'য়ে গেলাম ভয়ানক অপরাধী। তারা এলাকার দাদাকে নাকি ইউনিয়নের নেতাকে নাকি কোম্পানীর পারসোনাল ডিপার্ট্মেন্টে কর্মরত আমার ঐ একই এলাকায় বসবাসকারী আমার দূরসম্পর্কের মামাকে কা'কে খুশি করতে যে আমাকে বয়কট করেছিল তা ভেবে কূলকিনারা পেতাম না। মোটকথা আমাকে একা ক'রে দেওয়ার একটা চেষ্টা শুরু হ'লো পাড়ায় ও কারখানায়। এটা যে একটা গোপন ষড়যন্ত্র আর সেই ষড়যন্ত্র যে মানসিক চাপ সৃষ্টি ক'রে ক'রে আত্মবিশ্বাস, জোশ, কর্মক্ষমতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা ইত্যাদি একটা মানুষের সমাজে মাথা উঁচু ক'রে বাঁচার গুণাবলী নষ্ট ক'রে নেতা বা দাদাদের ওপর নির্ভরশীল ক'রে তাদের আজ্ঞাবাহ দাসে বা লাঠিতে পরিণত ক'রে স্বাধীন ব্যক্তিত্বকে পঙ্গু ক'রে দেওয়ার নোংরা ষড়যন্ত্র তা বুঝেছিলাম দেরীতে, সময়ের পরতে পরতে। সময় সবসে বড়া বলবান জানি কিন্তু
কারখানায়-পাড়ায় আর ঘরে ঘরে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে
বিশ্বাসদার চাকরী গেছে মারামারি-গুন্ডামীর কারণে।
( লেখা ১১ই জুন' ২০২৩)

আত্মকথন ৬

সেই সময়টা ছিল সবে বাম জমানার সূত্রপাত। ১৯৭৭সাল। সিপিএম রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে ও সরকার গঠন করেছে। সেইসময়ের বাম আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম জড়িয়ে, ছিলাম গণনাট্যের সঙ্গে। মিছিল, মিটিং, স্লোগান, বক্তৃতা সবেতেই ছিলাম অগ্রণী ভুমিকায় সক্রিয়ভাবে। অনেক ঘটনাপ্রবাহ ব'য়ে যাচ্ছে মনের মধ্যে। সেই সূত্রে এলাকার পার্টির সব নেতাদের সঙ্গেই ছিল গভীর ও সুসম্পর্ক। এলাকার সেই দন্ডমুন্ডের কর্তা তিনিও ছিলেন সেই দলের সদস্য। আমার বড়দাও ছিলেন পার্টির আমৃত্যু মেম্বার। এলাকার সেই প্রভাবশালী দাদা আমাকে ক'দিন অপেক্ষা করতে বললেন। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। এমনিভাবে বেশ কয়েকদিন চলে গেল। পনেরো দিনের মধ্যে উত্তর দিতে হবে। কি করবো কিছুই স্থির করতে পারছি না, নিতে পারছি না কোনও সিদ্ধান্ত। কেউ পাশে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলছেনা, আয় আমার কাছে। যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কথা বলেছি, চলে গেছি যার অফিস ঘরে চাকরী পাওয়ার আগে সরাসরি বেশ কয়েকবার, কথা বলেছি একান্তে সাহসের সঙ্গে, দাপটের সঙ্গে সেখানে যেতে গিয়েও কোথায় জানি একটা অদৃশ্য বাধা পাচ্ছি যাতে তাঁর কাছে যেতে না পারি, জানাতে না পারি সমস্যার কথা। ঘুরপাক খাচ্ছি কেবল লাট্টুর মতো।

ক'দিনের মধ্যেই সব ও সবাইকে অপরিচিত মনে হ'তে লাগলো। আমি বুঝতে পারছি সময় চলে যাচ্ছে। জোর ক'রে যে সবাইকে অস্বীকার ক'রে চলে যাবো প্রেসিডেন্টের ঘরে সেখানেও যেন কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলছি ধীরে ধীরে। চিড় ধরছে আত্মবিশ্বাসে। শুধু তাই নয় মনে হ'লো সিকিউরিটিরাও কারও গোপন নির্দেশে যেন তৎপর যাতে প্রেসিডেন্টের ঘরের দিকে যেতে না পারি। নিজের বক্তব্য যে নিজে লিখে জমা দেবো তাও দিতে পারছি না।

ক'দিন পর এলাকার সেই দাদা আমাকে ইউনিয়নের সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা করতে বললো। আর, ইতিমধ্যে ইউনিয়ন থেকেও আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বলা হ'লো জেনারেল সেক্রেটারিকে বিষয়টা জানাতে। গেলাম সেখানে। তাকেও বললাম সত্য যা ঘটেছে। তিনি শুনলেন। কিছু বললেন না। শুধু বিজ্ঞের মতো বললেন, কোম্পানি প্রেমিসেসের ভেতরে মারামারি করেছেন তার জন্য কোম্পানি তার মতো ব্যবস্থা নেবে। আমি বললাম, আমি তো আপনাকে সত্য ঘটনা বললাম। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন, বললেন, ইউনিয়নের তরফ থেকে চিঠি যাবে। আমি বললাম আমাকে পারসোনাল অফিস থেকে বলা হয়েছে উত্তর দিতে। আমি সত্য যা ঘটেছে তাই লিখে জানাই। তিনি একটু বিরক্ত হ'য়ে বললেন, সব যদি অত সহজ হ'তো তাহ'লে ইউনিয়নের আর দরকার হ'তো না। তারপরে আমার থেকে শো-কজের লেটারটা চেয়ে নিয়ে বললেন, আপনি এখন যান, আপনাকে সময়মতো ডেকে নেওয়া হবে।

আমি চুপ ক'রে উনার অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম।

বাইরে বেরিয়ে এই প্রথম চারপাশের দিকে তাকিয়ে মনে হ'লো আমি একা। কেউ নেই কোথাও। যেদিকে তাকাচ্ছি মনে হ'লো সবাই যেন কেমন অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে আর নীরব মজা নিচ্ছে। অফিসে, পাড়ায় সবাই এড়িয়ে চলতে লাগলো। এই প্রথম নিজেকে একা সঙ্গীহীন মনে হ'লো।

এইভাবে কেটে গেল পনেরোদিন। তারপর একদিন পোষ্টম্যান হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেল আর একটা রেজিস্ট্রি চিঠি। খুলে দেখলাম আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। লেখা রয়েছে, কোম্পানির শো-কজের উত্তরে আমাকে সাসপেন্ড না করার কারণ কোম্পানির কাছে গ্রাহ্য না হওয়ায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করা হ'লো। কোম্পানির নিয়ম মতো পরবর্তী প্রক্রিয়া চালু থাকবে।

আমি কর্মহীন ভবঘুরে হ'য়ে গেলাম। ( লেখা ১১ই জুন' ২০২৩)

আত্মকথন ৫

সে সময় আমার এলাকার যিনি দন্ডমুন্ডের কর্তা তিনি আমার বড়দা ও মেজদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং আমাদের ক্লাবের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। আমাদের পরিবারের সঙ্গে ছিল একটা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। উনাকেও আমরা পরিবারের অন্য সদস্যরা পরিবারের একজন সদস্যের মতোন ভাবতাম। এলাকা ও ফ্যাক্টরিতে খুব প্রভাব ছিল। আমাদের বাড়ির ঠিকানা ছিল ক্লাবের ঠিকানা। সন্ধ্যেবেলা তাকেও তার অফিসে গিয়ে সব জানালাম। শুনে চিবিয়ে চিবিয়ে শুধু বললেন, কোম্পানির ভেতরে মারামারি করবি তো সাসপেন্ড হবি না? আমি তাকেও মূল ঘটনাটা বলার চেষ্টা করলাম কিন্তু তিনিও পরে শুনবো ব'লে এড়িয়ে গেলেন ও বিশেষ কাজ আছে, পরে আসিস ব'লে বেরিয়ে গেলেন। আমিও ফেউ ফেউ ক'রে ঘুরে বেড়ানো ভ্যাগাবন্ডের মতো যেন তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।


বুঝলাম এখন কারও সময় নেই আমার কথা শোনার। শুধু মনে পড়ে গেল অনেকগুলি ঘটনা। তার মধ্যে এলাকার পার্টির এই দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদার একদিন আমাকে বলা কথা মনে পড়লো। "বাপি। তুই যে চাকরীর লিস্টটা প্রেসিডেন্টকে দিচ্ছিস সেখানে আমার দু'টো লোকের নাম দিয়ে দিস।" আমি বলেছিলাম, দু'টো কি বলছেন দাদা, আপনি যেমন বলবেন আমি তেমন ক'রে লিস্ট তৈরী করবো। তিনি বললেন, না-রে আমার দু'টো লোক হ'লেই হ'য়ে যাবে। এই চাকরীর লিস্ট তৈরীর ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েকদিন যা কথা হয়েছে তোর সঙ্গে হয়েছে, আমার তো এখানে কোনও হাত ছিল না, আমার কোনও অবদান নেই। তাই তুই তোর লিস্টে আমার দু'টো লোকের নাম দিলেই হবে। তখন তিনি যে দু'টো লোকের নাম বলেছিলেন সেই দু'জন সম্পূর্ণ ফোকটে দাঁও মেরে দিয়েছিল। তার মধ্যে একজন আজ আর নেই, মারা গেছে কিন্তু সেই জন এলাকার সেই দোর্দন্ডপ্রতাপ দাদার সঙ্গে দাদার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ছিল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থেই ছিল। আর একজন ছিল জন্মকৃতঘ্ন। শুধু এলাকার দাদার বন্ধুর ভাই ব'লে সুযোগটা পেয়েছিল। কোনদিনও কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না তার আর চাকরী পাওয়ার পরও একদিনের জন্য যোগাযোগা রাখেনি।


সেদিন দাদার কথাটা ভালো লেগেছিল। সহজ সরল স্বীকারোক্তি। প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারীর অটোমোবাইল কোম্পানির একছত্রাধিপতি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার পরিচয়ের কাহিনীটা অন্য কোনও এক সময় আত্মকথনের ফাঁকে তুলে ধরবো। সেই প্রেসিডেন্টের নির্দেশ মতো আমি এলাকার কয়েকজন বেকার যুবকের একটা লিস্ট তৈরী ক'রে কোম্পানির হেড টাইম কিপারের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। সেটা ছিল সম্পূর্ণ আমার আর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপার। আর সেটা সেই এলাকার দন্ডমুন্ডের কথা জানতো বলেই স্বীকার করেছিল যে চাকরীর লিস্ট তৈরীর ব্যাপারে উনার কোনও কৃতিত্ব নেই। কিন্তু সেই মানুষই যে পরে আমার উন্নয়নের পথের কাটা হ'য়ে দাঁড়াবে তা ভাবতে পারিনি। যেমন পারিনি আমার দূর সম্পর্কের মামার নিষ্ঠুর ভূমিকার কথা। আসলে তখন বয়স ছিল ২৫ আর ছিল সহজ-সরল জীবন। অনেক পরে যখন বুঝেছি তখন অনেক দেরী হ'য়ে গেছে।
( লেখা ১১ই জুন' ২০২৩)

Sunday, June 8, 2025

বিচিত্রা ১৫০

হে বন্ধু! যে যেখানে যাকেই পুজো করো না কেন সব পুজো, সব প্রার্থনা এসে পড়ে দয়াল প্রভুর পায়ে। দয়াল প্রভু আমার রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপভু, রামকৃষ্ণ ও সর্বশেষশ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র। তিনারা সবাই একজনই বারেবারে যুগে যুগে এসেছেন আমাদের বাচা ও বাড়ার পথ দেখাবার জন্য। তারা প্রত্যেকেই এক ও অদ্বিতীয়। হে হিন্দু, হে বৌদ্ধ হে মুসলমান, হে খ্রিস্টান, হে সব ধর্মমতের সব পূজারি আসুন নিজত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে স্ববৈশিষ্ট্য স্বধর্ম বজায় রেখে বাকী সব পরিত্যাগ ক'রে সেই এক ও অদ্বিতীয় জীবন্ত রক্তমাংসের ঈশ্বরকে ভালোবাসি, পুজো করি। রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয়, দারিদ্রতা সমস্ত কিছু থেকে মুক্তি পাবেই পাবে, রক্ষা পাবে।
( লেখা ৮ই জুন' ২০২২)

প্রবি সমাচার ২১

মিষ্টভাষী ও স্পষ্টভাষী।

মিষ্টভাষী আর স্পষ্টভাষীর মধ্যে স্পষ্টতই কোনও বিরোধ নেই। লোকের মধ্যে অনেক ভুল ধারণার মধ্যে একটা ধারণা হ'লো মিষ্টভাষী আর স্পষ্টভাষীর মধ্যে মূলগত চরিত্রের ফারাক আছে। আছে বিরোধ। তাদের ধারণা হ'লো মিষ্টভাষী যে সে চরিত্রগত দিক দিয়ে দূর্বল কিম্বা অসৎ চাটুকার। আর যে স্পষ্টভাষী সে চরিত্রগত দিক দিয়ে সবলের অধিকারী এবং সৎ। বেশীরভাগ মানুষের এই ধারণা নিজের ও সমাজের কাছে ক্ষতিকর। মানুষের ধারণা কোনও কিছুর বিরোধিতা করতে হ'লে কিম্বা প্রতিবাদের ভাষা জোরালো অর্থাৎ জোরে চিৎকার ক'রে বলতে হবে, রূঢ় হ'তে হবে। আর এটাকেই তারা মনে করে স্পষ্টভাষী।

কিন্তু জোরে চিৎকার ক'রে কর্কষ ভাবে কথা বললেই যে তার মধ্যে স্পষ্টতা থাকে তা নয়। আমরা অহরহই দেখতে পায় ঘরে-বাইরে 'চোরের মায়ের বড় গলা' এই প্রবাদের জলজ্যান্ত নিদর্শন। জোর ক'রে চেঁচিয়ে কাউকে দাবিয়ে দিয়ে প্রমাণ করা যায় না যে সে যা বলছে বা বলেছে সেই বলার মধ্যে ধোঁয়াশা নেই, স্পষ্টতা আছে, আছে সততা বা সত্যতা। কিন্তু শরীরে-মনে সাধারণ ভাঙাচোরা মানুষ মনে করে স্পষ্টভাষী মানেই সে সৎ এবং তার কথার মধ্যে সত্যতা সততই বিরাজমান। আর এই সুযোগে নেপোয় মারে দই।

আমরা প্রতিনিয়তই বিশ্বজুড়ে দেখতে পায় জীবনের সব ক্ষেত্রেই অসৎ চাটুকার ধান্দাবাজ মাত্রই স্পষ্টভাষীর ভূমিকায় অবতীর্ণ। কি রাজনীতির ক্ষেত্রে, কি ধর্ম্মের ক্ষেত্রে, কি শিক্ষা ক্ষেত্রে, ক্রীড়া ক্ষেত্রে অন্য্যান্য সব ক্ষেত্রেই এর প্রমাণ আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাই। সবাই সবাইকে স্পষ্ট ভাষায় নিজের ত্রুটি ঢেকে রেখে অভিযোগ ক'রে চলেছে। এ নিয়ে আর বিস্তারিত বলার অবকাশ থাকে না। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যে, রাত সর্বক্ষণ-ই এর ছবি আমরা দেখতে পাই টিভির দৌলতে।

আবার আমরা এর উল্টোটাও দেখতে পাই। যে জোরে বুক ফুলিয়ে কথা বলে তাদের প্রায়শই দেখা যায় যে তারা অন্তরে পরিস্কার খোলামেলা, রেখেঢেকে কিছু বলতে পারে না, অভ্যাস নেই। মুখের ওপর সামনাসামনি যা বলার ব'লে দেয়, এর পরিণাম কি হবে তা ভেবে দেখে না। পরিশেষে এরা দুঃখ কষ্টের শিকার হয়। কিন্তু অন্তরে এরা প্রকৃতই ভালো মানুষ। কিন্তু সমাজের চোরাবালির স্রোতে এরা ভেসে যায়। ছোটোবেলা থেকে পরিবেশগত কারণেই হ'ক বা জন্মগত কারণেই হ'ক এরা এইভাবে কথা বলতে অভ্যস্ত। ফলে চারপাশের জটিল নিষ্ঠুর পরিবেশে তারা পিষ্ট হয়। আর তাই তারা তখন নিজের ভাগ্যের দোহাই দিয়ে থাকে। ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিজের অজান্তেই নিজের মুখ লুকিয়ে এরা বাঁচতে চায়।

আবার অনেকে নিজেকে স্পষ্টভাষী বলতে গর্ব বোধ করে। একটা অহংকার চোখেমুখে ফুটে ওঠে। কিন্তু তারা জানে না এই অহংকার, এই গর্ব মূর্খের অহংকার, মূর্খের গর্ব। দিন শেষে যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে যায় তখন এরা ডিপ্রেশানে ভুগতে ভুগতে কঠিন মানসিক ব্যাধির শিকার হয়। আর সেই পরিবেশে বড় হওয়া পরবর্তী প্রজন্ম উত্তরাধিকার সূত্রে এই দুরারোগ্য কঠিন ব্যাধিকে মহৎ মানসিকতা ব'লে সযত্নে লালন পালন ক'রে ব'য়ে নিয়ে চলে আজীবন মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাধিকে জীবন দর্শন মনে ক'রে।

আর মিষ্টভাষীর ক্ষেত্রে যেটা বলা হচ্ছে যে মিষ্টভাষী মানেই দূর্বল, অসৎ বা চাটুকার সেক্ষেত্রে আমরা দেখি যা তা এক কথায় যদি বলা যায় তাহ'লে বলবো, তাহ'লে ধ'রে নিতে হবে শয়তানের হাসি ভগবানের চেয়েও মিষ্টি! তখন কি বলবো? শয়তান যেহেতু মিষ্টি বেশী তাই মিষ্টভাষী হিসেবে সে তো অসৎ। আর ভগবান মিষ্টি নয়?
নিশ্চয়ই ভগবানের হাসি মিষ্টি! তৃপ্তিদায়ক মিষ্টি! প্রাণ জুড়ানো মিষ্টি! আকাশে বাতাসে নীল দিগন্তে ভাসমান আনন্দের মহাসাগরে নিশ্চিন্তে ভেসে থাকার আধার ভগবানের নির্মল মিষ্টি হাসি!!!!
আর ভগবানের চেয়েও শয়তানের মিষ্টি হাসির মধ্যে আছে একটা কড়া পোড়া মিষ্টির তিতকুটে ভাব। একটু নজর করলেই মিষ্টির তারতম্য ধরা যায়, ধরতেও পারে মানুষ। কিন্তু কোথায় জানি রিপুর টানে বেসামাল মানুষ বৃত্তি প্রবৃত্তির বৃত্তে পড়ে তফাৎ ক'রেও ক'রে উঠতে পারে না প্রকৃত মিষ্টির। তিতকুটে কড়া পোড়া মিষ্টিকেও মিষ্টির সার্টিফিকেট দেয়!

কিন্তু মিষ্টভাষী যে অন্তরে বাহিরে সে প্রকৃতিগতভাবেই মিষ্টি। এ মিষ্টতা তার জন্মজন্মান্ত ধ'রে ব'য়ে যাওয়া মিষ্টতা! এ মিষ্টতা তার রক্তের মধ্যে দিয়ে বংশপরম্পরায় গুণাবলী রূপে ব'য়ে যাওয়া মিষ্টতা!! এ মিষ্টতা তার জন্ম থেকে পরিবেশগতভাবে লব্ধ মিষ্টতা!!! এই মিষ্টতায় নেই কোনও দূর্বলতা, নেই কোনও কপটতা, নেই কোনও অসততা।

আমরা অনেকেই অনেক কথা বলি, বলে ফেলি। বলতে বিবেচনা করি না। ভুল বলার পরেও ভুলকে শুধরে নেবার কোনও আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা থাকে না। ভুল কথা জোর দিয়ে বলি, সগর্বে বলি। ভুল ব'লে তা স্বীকার করি না বা পরবর্তী সময়ে ভুল বলা থেকে সাবধান হ'ই না। স্পষ্টভাষীর নামে সত্য কথা বলতে গিয়ে সংহার এনে ফেলি। সত্য কথা বলার মানুষ আমি আর তাই আমি স্পষ্টভাষী ব'লে বাহবা নিই, অহঙ্কার করি। কিন্তু স্পষ্টভাষীর তকমা লাগিয়ে সত্য কথা বলার পরে সেই সত্য কথা অনুভব করি না।

তাই স্পষ্টভাষী যে সে মিষ্টি করেই স্পষ্টকথা বলতে পারে আবার যে মিষ্টভাষী সে স্পষ্টভাষী হ'তে পারে। এই দুইয়ের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
Living God, Living Supreme Being, Supreme Cause, Full filler The Best, Full Father The greatest phenomenon Of the world SriSriThakur AnukulChandra says, "
BE OUTSPOKEN BUT SWEET. Consider before you speak, but having spoken do not evade. If you have spoken wrong, beware! Do not do wrong. Speak the truth, but don't bring destruction. It is good to speak good, but better to think and fill it.

(স্পষ্টবাদী হও কিন্তু মিষ্টভাষী হও। ব'লতে বিবেচনা কর, কিন্তু ব'লে বিমুখ হ'য়ো না। যদি ভুল ব'লে থাক, সাবধান হও। ভুল ক'রো না। সত্য বল, কিন্তু সংহার এনো না। সৎ কথা বলা ভাল, কিন্তু অনুভব করা আরোও ভালো।)

কত কিছুই যে পরমপিতার থেকে শিখি তার ইয়ত্তা নেই। ( লেখা ৮ই জুন'২০২১)

কবিতাঃ কু ঝিকঝিক

 

লেখা ৮ই জুন'২০১৮

কবিতাঃ ইষ্ট আমার কে?

 


Sunday, June 1, 2025

প্রবন্ধঃ হয় বসুধৈব কুটূম্বকম নতুবা নিশ্চিহ্ন হ'য়ে যাক।

খবরে শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান উপাদেষ্টা ড মহম্মদ ইউনুস পদত্যাগ করতে চাইছেন।

১৯৭১ সালে নিজের দেশের ৩০ লক্ষ নাগরিকের ওপর নারকীয় অত্যাচার ও হত্যা, ৪ লক্ষ মা বোনেদের ওপর পাশবিক যৌন অত্যাচার ও নারকীয় ধর্ষণের বর্বরোচিত ইতিহাস রিসেট বাটন টিপে যে মানুষ মুছে দিতে চায়, যার একটুও হাত কাঁপে না, যে দানবদের পৃষ্টপোষক, যে যৌবনকালে ৭১-এর সালে দেশের রক্তাক্ত সময়ে, মাতৃভূমির ওপর অত্যাচারের দিনে পাশে থাকেনি, বিদেশে আমেরিকায় বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পরিচালনার নামে নিশ্চিন্ত যৌবনকাল উপভোগ করেছে সে করবে জীবনের অন্তিম সময়ে বৃদ্ধ বয়সে সংস্কারের মতন জটিল ও কঠিন কাজ? যে মানুষ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যময় লড়াইয়ের ইতিহাস মুছে দিতে চায়, যে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের অপমান করে, যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করতে বিন্দুমাত্র রেয়াৎ করে না, যে বাংলাদেশ নামক নোতুন রাষ্ট্রের জন্মের শীর্ষ নেতা, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জনক, জাতির পিতা তাঁর মূর্তির ওপর দাঁড়িয়ে জনতার মূত্রত্যাগ করা, হাতুড়ির আঘাতে মূর্তি ভাঙ্গা, মূর্তিকে উপড়ে ফেলে দেওয়া, ভুলুন্ঠিত করা, মূর্তির ভাঙ্গা মাথা নিয়ে জলকেলি করা, তাঁর স্মৃতি সৌধ, তাঁর বাড়ি ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া দেখেও চুপ ক'রে থাকে, উন্মত্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতার মজা উপভোগ করে, যে মানুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের অপমান ও লাঞ্ছনা, জাতীয় সঙ্গীতের অপমান, জাতীয় পতাকা ও সংবিধান পরিবর্তনের হল্লা বাজিতে নীরব থাকে, বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করে না, সরকারী সম্পত্তি ধ্বংসের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর আপত্তি জানায় না, যে মানুষ বাংলাদেশের ওপর ৭১ এর বিভীষিকাময় ভয়াবহ অত্যাচার রিসেট বাটনে মুছে দিয়ে অত্যাচারী দেশ পাকিস্তানের হাতে ডুডু তামাক খায়, যে শিক্ষাব্যবস্থাকে চরম বাজারী ব্যবস্থায় নামিয়ে আনতে পারে, ছাত্রদের হাতে নিরীহ স্মৃতিভ্রষ্ট ছাত্রকে খাবার খাইয়ে হত্যা ও শিক্ষকদের ওপর ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা চূড়ান্ত অপমান, লাঞ্ছনা দেখেও চুপ ক'রে থাকে, নিজে একসময়ের ছাত্র ও শিক্ষক হ'য়ে মুখে 'রা' কাটে না, যে দেশের প্রধান উপদেষ্টা হ'য়ে বিদেশী বিনিয়োগের বাহানায় বিভিন্ন দেশে ছুটে যায় নিজের ক্ষমতা ধ'রে রাখার অভিলাষে ও বিনিয়োগের মরীচিকায় দেশের জনগণকে আচ্ছন্ন ক'রে রাখে, যে নিজের দেশের ওপর বৃহৎ বর্হিশক্তিকে অবাধ বিচরণ করার জন্য সুযোগ ক'রে দিতে চায় নানা উপায়ে, যে মব কালচারের জন্মদাতা, যে একটি উন্মত্ত জনতা বা বিশৃঙ্খল জনতার হাতে পৈশাচিক মৃদু শয়তানী মিষ্টি হাসিতে হাসতে হাসতে তুলে দেয় বিচারের ভার, যার উপস্থিতিতে সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হ'য়ে নিজের হাতে আইন তুলে নেয় এবং যে পিছন থেকে প্ররোচিত ক'রে উন্মত্ত জনতার হাত দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয় বা কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়, যে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতায় বসে গায়ে গায়ে লাগা প্রতিবেশী বৃহৎ শক্তিধর দেশ ভারতকে হুমকি দেয়, ভাঙ্গার চক্রান্ত করে, বন্ধু দেশ ভারতকে শত্রুদেশ হিসেবে চিহ্নিত করে, ভারতের অবদানকে অস্বীকার করে, ৭১ এর ভয়ংকর দেশ ধ্বংস ও দেশের মানুষের, বাঙালি জাতটার অস্তিত্ব মুছে দিতে যারা উন্মত্ত হ'য়ে মারণযজ্ঞে রত ছিল, সেইসময় বিশ্বের কোনও দেশ পাশে ছিল না, আজ যাদের মদতে বাংলাদেশের অন্যায় পট পরিবর্তন ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে তাঁর উপস্থিতিতে, সেই সময় এরা অর্থাৎ এই দেশগুলি কেউ ছিল না পাশে। পাশে ছিল সেদিন ভারত। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা ক'রে বাংলাদেশকে অল আউট সাহায্য করেছিল ভারত নিজের ভয়ংকর বিপদ ও ক্ষয়ক্ষতির নিশ্চিত সম্ভাবনাকে মাথায় নিয়ে সেই দেশের সঙ্গে বেইমানী, নেমকহারমী করতে, সেই দেশের অকৃতজ্ঞ হ'তে, চোখ উল্টে দিতে এবং নিজের দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তাকে ধ্বংস করে দিতে, সেই মানুষ দেশকে ও দেশের মানুষকে বিপদে ফেলে পালিয়ে যেতে চাইছে? নাকি সবটাই তাঁর চিরকালের ধূর্তামির নাটক?

শান্তির নোবেল হাতে দেশের অভ্যন্তরে ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ব্যকে অশান্তির পূজারী ও অশান্তি সৃষ্টিকারী ড ইউনুস নিজের চূড়ান্ত মূর্খামি, শিশুসূলভ কর্মকান্ড, কথাবার্তা, অপদার্থতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতা, রাজনৈতিক ও দেশ শাসনের অনভিজ্ঞতা, দূর্বল, অপরিপক্ষ, অসাড় কূটনীতি ইত্যাদি সমস্ত রকম দগদগে ঘা'কে ঢেকে রেখে, আড়াল ক'রে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অসহযোগীতার সাজানো অভিযোগকে ঢাল ক'রে জনগণের ওপর আস্থা হারিয়ে দেশের জনগ্ণের ওপর মিথ্যে অভিযোগ ও তাদের দোষারোপ ক'রে দেশবাসীকে চরম বিপদে ফেলে পদত্যাগের নামে পালিয়ে যেতে চাইছে? নাকি সবটাই নাটক?

আসলে আস্থা হারিয়েছে নিজের ওপর রাজনীতিতে অজ্ঞ, অনভিজ্ঞ, অপরিপক্ষ, অদূরদর্শী, অযোগ্য, অদক্ষ, বিশ্ব জুড়ে শান্তির পক্ষে কোনও অবদান না রেখেই বৃহৎ শক্তির সুপারিশের ভিত্তিতে শান্তিতে নেবেল পাওয়া অশান্তির পূজারী, অশান্তি সৃষ্টিকারী, পরশ্রীকাতর হিংসায় হিংস্র বৃদ্ধ ড মহম্মদ ইউনুস।

এত কিছুর মূল ছিল বিশ্বের মানচিত্রে ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক দিয়ে, লোকবল, অর্থবল, অস্ত্রশক্তি ও বিশ্বজুড়ে ব্যবসা বাণিজ্যে উত্থান ইত্যাদি সমস্ত দিক দিয়ে ভারতের অগ্রগতিকে ডিস্টার্ব করা, রুখে দেওয়া। বিশ্বজুড়ে বৃহৎ বর্হিশক্তির এক ও একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে বিশ্বে শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশে বাধা দেওয়া।

তাই, ভারতকে ঘরে-বাইরে সবদিক দিয়ে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত করার জন্য ড ইউনুসের মত লোকজনদের দরকার হয়।

এই অবস্থায় বাংলাদেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবী সমাজ তাঁকে নতুন করে ভাবতে বলছেন। কারণ বিশ্বের চোখে তারা নিজেদের ছোটো দেখতে চায় না, দেশের সাধারণ জনগণ হেরে যেতে চায় না। বাংলাদেশের আম জনগণ যারা একদিন কল্পনার ভেলায় চড়ে নিজেদের অজান্তে বৃহৎ বর্হিশক্তির অঙ্গুলি হেলনে প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারতকে এক ও একমাত্র শত্রু চিহ্নিত ক'রে ২০২৪ এর জুলাই-আগস্ট ছদ্ম ছাত্র আন্দোলন, ছদ্ম ছাত্র-নাগরিক যৌথ আন্দোলনকে প্রকৃত জনগণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান, জনগণের প্রকৃত মুক্তির লড়াই, বিল্পব ভেবেছিল বৃহৎ শক্তি দ্বারা প্রেরিত শান্তির নোবেল পুরষ্কার পাওয়া অশান্তির পূজারী ও অশান্তি সৃষ্টিকারী ড ইউনুসের হাত ধ'রে সুন্দর, বলিষ্ঠ, উন্নত বাংলাদেশের তারা আজ হতাশা ও অবসাদে বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত।

বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক এই হেরে যাওয়া দেখতে চায় না, মেনে নিতে পারছে না। এটা সত্যিই একটা উন্নয়নশীল দেশ ও দেশের জনগণের পক্ষে মেনে নেওয়া সুইসাইড করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু দেশের বর্তমান জন্ডিস পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের আজ ভাবার সময় হয়েছে, যে ছদ্ম আন্দোলন ও ছদ্ম আন্দোলনের নেতৃত্বের শুরুই হয়েছিল ছদ্মতার মুখোশে অন্যায়, অনৈতিক ও অবৈধতার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে অন্যায় ভাবে অপসারিত ক'রে তা' তো শুরুই করেছিল বৃহৎ বর্হিরশক্তির সহযোগীতায় ড ইউনুসের মদতে হারা দিয়ে। ড ইউনুস তো জনগণের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন, সে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে বৃহৎ বর্হিশক্তির মদতে সিংহাসন থেকে সরিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে চোরের মত এসে দেশের প্রধান চেয়ারে বসে গেছে। সে তো বৃহৎ শক্তির বিদায়ী প্রধানের হাতের পুতুল ছিল। সে কি ক'রে স্বাধীনভাবে নতুন ক'রে ভাববে? যার হাতে পুতুলের রাশ ছিল তিনি তো এখন নেই, থাকলে না হয় ভাবতে পারতো, ধার করা ভাবনা নিয়ে চলতে পারতো। যে নিজে ল্যাংড়া ও অন্ধ সে তো নিজেই ক্রাচ ছাড়া স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে না, নিজের চোখে দেখতে পায় না, প্রতিমুহূর্তে অন্যের ওপর ভর দিয়ে চলতে ও দেখতে হয়। আর বৃহৎ প্রতিবেশী শক্তিধর দেশ ভারতকে ভেঙে টুকরো টুকরো করতে চায় এইরকম ব্যক্তি নতুন ক'রে কি ভাববে দেশকে চালাবার কথা? যে ক্ষমতার চেয়ারে বসেই প্রতিবেশী বন্ধু শক্তিশালী দেশ ভারতকে শত্রু চিহ্নিত ক'রে একবার বিশ্বের এই বৃহৎ শক্তি আর একবার ঐ বৃহৎ শক্তির দ্বারস্থ হয় নিজের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য, আর প্রতিবেশী দেশকে বৃহৎ বর্হির শক্তির সহায়তায় ভাঙ্গার ভয়ংকর ষড়যন্ত্র করে সে ভাববে নতুন ক'রে? সে জিতবে যুদ্ধ? যে প্রতিবেশী বৃহৎ শক্তিধর দেশ ভারতকে শ্ত্রু বানিয়ে কখনও ১৩০০০ কিলোমিটার, কখনও বা ১৫০০ কিলোমিটার দূরের বন্ধুকে আপন ক'রে নেয় অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তার পক্ষে নতুন ক'রে ভাবা আর আকাশের চাঁদ হাতের মুঠোয় ধরার স্বপ্ন দেখা বেয়াক্কেলি ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়।

যাই হ'ক এইরকম মানুষ ক্ষমতায় থাকলে দেশের ও দশের, বিশ্বের মানুষের পক্ষে অশনি সংকেত। এরকম মানুষ ক্ষমতায় থাকলে হয়তো আমার দেশ ভারতের ক্ষতি হবে বা হ'তে পারে একথা নিশ্চিত, হ্যাঁ, ক্ষতি হবে, নিশ্চয়ই ক্ষতি হবে ভারতের, এতে কোনও দ্বিধা নেই। কিন্তু একথা স্বীকার ক'রে নিয়েও বলতে চাই ভারত অতীতে কোনোদিন কখনও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়নি। এই কৃষ্টি-সংস্কৃতি ভারতের নয়। একদিন ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ এক ছিল, ছিল অখন্ড ভারতবর্ষ। কিন্তু পাকিস্তান-বাংলাদেশ আজ তা' স্বীকার করে না, ভুলে গেছে। তারা ভারতকে শত্রু দেশ হিসেবে বিবেচনা করে বৃহৎ বর্হিশক্তির মদতে। তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ কৃষ্টি-সংস্কৃতি একদিন এক থাকলেও বর্তমানে আমূল পরিবর্তন হয়েছে তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি। ভারত হাজার বছর বর্হিশক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয়েও এবং বৃটিশের দ্বারা তিনটুকরো হওয়ার পরেও আজও ব'য়ে চলেছে আদি অনন্তকাল ধ'রে ব'য়ে চলা পূতপবিত্র কৃষ্টি-সংস্কৃতির ধারা 'বসুধৈব কুটূম্বকম'।

তাই, আমার দেশের যদি ক্ষয়ক্ষতি হয়, আমার দেশকে টুকরো করার, দেশকে ভাঙনের কারণ হয়, ভারতকে ভাঙতে বিশ্বের বৃহৎ শক্তির ইন্সট্রুমেন্ট হয় বাংলাদেশ, তাহ'লে ভারত নিজেকে রক্ষা করতে ভুল করবে না। বাংলাদেশ নিজে নিশ্চিহ্ন হ'য়ে যাবে এ কথা যেন ভুলে না যায় প্রতিবেশী বন্ধু দেশ, ড ইউনুসের বাংলাদেশ।

কথায় আছে, চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে প্রকৃত বন্ধুকে চেনার শক্তি অর্জন করুক ভারত ও বাংলাদেশ, উভয় দেশ, সঙ্গে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও প্রতিটি দেশের জনগণ। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হ'য়ে উঠুক বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও দেশের জনগণ। ভারতের দর্শন 'বসুধৈব কুটুম্বকম' প্রতিষ্ঠিত হ'ক। নতুবা সব দেশের হাজার হাজার সব পারমাণবিক বোমা একে অপরের ওপর নিক্ষেপ ক'রে মহাশূন্যের বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হ'য়ে যাক এই পৃথিবী নামক গ্রহ।

তবে ঈশ্বর, আল্লা, গড ব'লে যদি কেউ থেকে থাকেন, সর্বদর্শী, সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান ব'লে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহ'লে তাঁর বিচারে, তাঁর বিধানে কর্মফল ভোগ অনিবার্য। শয়তানকে তার কর্মফল ভোগ করতেই হবে আর তা' ভোগ করতে হবে এই জীবনেই। তাঁর সামগ্রিক সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে যারা যারা তৎপর হয়েছেন, তাঁর সঙ্গে বেইমানী, নেমকহারামী করেছেন, অকৃতজ্ঞ হয়েছেন সীমাহীন তাঁর দয়া পাওয়া সত্বেও, মহাপ্রলয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি তার নিখুঁত বিচার করবেন ও তাঁর সৃষ্টিকে রক্ষা করবেন।
( লেখা ২৩শে মে' ২০২৫)

প্রবন্ধঃ গাঁজার দেশ গাজার অন্তিম দশা।

এটাই ব্রিটিশদের সার্থকতা যে তারা অখন্ড ভারতকে টুকরো ক'রে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে লড়াই লাগিয়ে ঘৃণার বীজ বপন ক'রে দিয়ে গেছে যা' আবহমান কাল ধ'রে চলবে। আর শেষ ক'রে দিয়ে গেছে পাঞ্জাব আর বাংলার ভবিষ্যৎ। একদিনের অখন্ড বাংলা ব্রিটিশদের বিষাক্ত বিষে দু'ভাগ হ'য়ে গেছে। আজ দুই বাংলা ও বাঙালী হিন্দু মুসলমান ব্রিটিশদের বিভাজনের রঙে রাঙিয়ে গিয়ে পরস্পরের চরম শত্রু।
ভারতে পাঞ্জাব আর বাংলা আজ সবচেয়ে ঘায়ে ঘায়ে ঢেকে গেছে। দুই বাংলা একদিন এক ছিল। এক ছিল হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক। ছিল এক ভাষা, এক কৃষ্টি, এক সংস্কৃতি। কিন্তু আজ বাঙালি আর এক ভাষা, এক কৃষ্টি, এক সংস্কৃতি বহন করে না। আজ আমূল বদলে গেছে দুই বাংলার ভাষা, দুই বাংলার কৃষ্টি, দুই বাংলার সংস্কৃতি। একেবারে বায়োলজিক্যালি পরিবর্তন হ'য়ে গেছে। এখন আর বাঙালি শত চেষ্টা করলেও এক হ'তে পারবে না, শত চেষ্টা, হাজার চেষ্টা করলেও দুই বাংলা আর কোনোদিন এক অখন্ড বাংলা হবে না।
আজ দুই বাংলার মানুষ দুই বাংলার মানুষকে ঘৃণা করে, ঘৃণা করে অদ্ভুত এক বাংলা ভাষায়। আর এই ঘৃণার বিষ ইঞ্জেক্ট হয়েছে বৃটিশের হাতে। দেশভাগের পরে পরে পশ্চিমবাংলার হিন্দু ঘটি বাঙালি আর পূর্ববাংলা থেকে আগত হিন্দু বাঙ্গাল বাঙালি এই দুই বাংলার হিন্দু বাঙ্গালীর মধ্যে ছিল লড়াই, ঘৃণা। এখনও হিন্দু বাঙ্গাল বাঙালিকে শুনতে হয় পশ্চিমবঙ্গে দেশ ভাগের ফলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য হিন্দু ঘটি বাঙালির কাছে পরদেশী বলে। পশ্চিমবঙ্গের ঘটি বাঙালি আর পূর্ব বাংলা থেকে আগত বাঙ্গাল বাঙালি, এই দুই হিন্দু বাঙালি একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে গিয়ে প্রতিমুহুর্তে হয়েছে তর্ক বিতর্ক, সংঘাত। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন রয়েছে হিন্দু মুসলিম বাঙালি সমস্যা।
পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ঘটি বাঙালি ও পূর্ববংগ থেকে আগত মুসলমান বাঙ্গাল বাঙালি পরস্পরের মধ্যে সমস্যা কতটা প্রকট তা' আমি জানি না, জানা নেই। আর এখন নোতুন সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হ'য়ে উঠেছে ও উঠছে দুই বাংলার হিন্দু মুসলমান বাঙালির বাংলা ভাষা। এ বাংলার ও পূর্ববাংলার উভয় বাংলার হিন্দু মুসলমান উভয় বাঙ্গালীর বাংলা ভাষার মধ্যে আছে তফাৎ। বর্তমানে মুসলমান বাঙালির অনেক বাংলা কথা আমি বাঙালি, হিন্দু বাঙালি বাঙালি হয়েও বুঝতে পারি না। সেখানে দুই বাংলা এক হয়ে হবে এক বাংলা রাষ্ট্র? হিন্দু মুসলমান পরস্পরের বিশ্বাস যেখানে একেবারে খতম হ'য়ে গেছে সেখানে দুই বাংলা এক হ'য়ে হবে বাংলা রাষ্ট্র!? তখনি কুট্টিদের মত বলতে ইচ্ছে করে, "একটূ আস্তে কন দাদা, ঘোড়ায় শুনুলে হাসবো।'
তার ওপর আবার কেউ কেউ বালখিল্য স্বপ্ন দেখে দুই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা কিংবা সেভেন সিস্টার্স নিয়ে বৃহৎ বাংলার! শালা, দুই বাংলার পাগলা গারদ থেকে সব পাগলগুলো একসঙ্গে পাগলাগারদ ভেঙে বেড়িয়ে পড়েছে হাঠেমাঠে, পথেঘাটে, খোলা ময়দানে একসঙ্গে আর শুরু ক'রে দিয়েছে লম্ফ দিয়ে ঝম্প মারা পাগলামি।
একে তো দুই বাংলার বাঙ্গালিতে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক অর্থাৎ পরস্পর বিরুদ্ধ স্বভাবযুক্ত বা শত্রুভাবাপন্ন, তার ওপর বালখিল্য দুই কিম্ভূতকিমাকার বাঙালী, সঙ্গে অরুনাচলি, অসমিয়া, মেঘালয়ি, মণিপুরি, মিজো, নাগা ও ত্রিপুরি বিভিন্ন ভাষাভাষী নিয়ে এক অখন্ড বৃহৎ বাংলা বা অখন্ড (?) দেশ গঠনের গাঁজাখুরি গল্প গাঁজার তীব্র নেশা চড়ে গেলেই হয়। ভুলে যাচ্ছে গাঁজার দেশ গাজার অন্তিম দশা। তাহ'লে বিভিন্ন ভাষাভাষী দেশ ভারত কি দোষ করেছিল? তাই, সেভেন সিস্টার্স নিয়ে অখন্ড বাংলা বা অখন্ড (?) দেশের স্বপ্ন পাগলা----- স্বপ্ন, ইউটোপিয়া।
( লেখা ২২শে মে' ২০২৫)

প্রবন্ধঃ কোন পথে যাবেন?

আমার প্রিয় সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন,
সামনে দু'টো পথ, দু'দিকে গিয়েছে। কোন পথে যাবেন?

জানতে হ'লে একটু কষ্ট ক'রে ধৈর্য্য ধ'রে পড়ুন, পড়ার অনুরোধ রইলো।
জীবনে টেনশান? জীবনে সমস্যা? জীবনে অভাব-অনটন? জীবনে ব্যর্থতা? জীবনে হতাশা-অবসাদ? জীবনে চারদিকে অন্ধকার দেখছেন? রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয় আর দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত? কি করবেন বুঝতে পারছেন না? সমস্যা সমাধানের জন্য বাবাজী, মাতাজী, জ্যোতিষীর দ্বারস্থ হয়েছেন? বিপদতারিণীর পুজো ক'রে হাতে লাল সুতো বেঁধে বিপদ থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন? সন্তোষীমাতার পুজো ক'রে মাকে সন্তুষ্ট ক'রে রোগ, শোক ইত্যাদি থেকে উদ্ধার পেতে চাইছেন? শনি সত্যনারায়ণ পুজো ক'রে শনির প্রকোপ থেকে মুক্তি এবং নারায়ণের হাত ধ'রে বাঁচার পথ খুঁজছেন? হাতে, গলায়, কোমরে তাবিজ মাদুলি বেঁধে গ্রহদের উৎপাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন? মুশকিল আসান করো অর্থাৎ কঠিন, সমস্যা বা বিপদ আসান করো ওগো বাবাজী মাতাজী ব'লে মুশকিল থেকে ত্রাণ পেতে চাইছেন? হে রাম, দাও আরাম ব'লে কান্নাকাটি করছেন? হাতে দশ আঙ্গুলে দশ রকম লাল, নীল, সবুজ পাথরের আংটি ধারণ ক'রে সমস্ত গ্রহদের শান্ত করতে চাইছেন? কব্জিতে, বাহু ও উর্ধ্ব বাহুতে, গলায়, কোমরে লাল, কালো সুতো বেঁধে, তাবিজ, মাদুলি, গাছের শেকড় বাকর, শুকনো ডালপালা ঝুলিয়ে আর সারা শরীরে সিন্দুর চন্দন লেপ্টে বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি পাওয়ার পথে সফল ও সার্থক হ'তে চাইছেন?

এত কিছু করার পরেও প্রাপ্তির ঘর শূন্য! এত কিছু করার পরেও টেনশান মুক্ত হ'তে পারছেন না, সমস্যা সমাধান করতে পারছেন না, অভাব-অনটন দূর করতে পারছেন না, ব্যর্থতাকে সফলতায় টার্ন করাতে পারছেন না, হতাশা অবসাদ থেকে মুক্তি পাননি, উল্টে ক্রমশ হতাশা ও অবসাদ গেড়ে বসছে মনে, অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আসার কোনও আলোকবিন্দু দেখতে পাচ্ছেন না, রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা ক্রমশঃ অক্টোপাশের মত আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলছে, হাতে, গলায়, কোমরে তাবিজ, মাদুলি, শেকড় বাকর বেঁধেও গ্রহদের উৎপাত থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। রাতে ঘুমোতে পারছেন না, ঘুমের মধ্যে উল্টোপাল্টা, অর্থহীন, বীভৎস, কুৎসিত ও ভয়ের স্বপ্ন দেখে হে দয়াল, বাঁচাও, বাঁচাও ব'লে হঠাৎ চেঁচিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসছেন বিছানায়।

আবার, অর্থ, মান, যশের অধিকারী হ'য়েও জীবনে আনন্দ নেই, মনে শান্তি নেই, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের বেসিক প্রয়োজনগুলি দারুণ ভাবে মেটার পরও রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধি বিপর্যয়, দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাননি, জীবনে সুখ নেই, নিদেন পক্ষে ঘরে নেই সোয়াস্তি। বিপদতারিণীনির পুজো ক'রে কব্জিতে একসঙ্গে অনেকগুলি লাল সুতো বেঁধেও বিপদ থেকে রক্ষা পাননি, সন্তোষীমায়ের পুজো ক'রে আজও জীবনের শেষ দিনেও সন্তোষ পাওয়া গেল না, শনি সত্যনারায়ণ পুজো ক'রে শনির প্রকোপ থেকে মুক্তি এবং সত্য নারায়ণের হাত ধ'রে বাঁচার পথ খুঁজে পাননি শনি ও সত্যনারয়ণের সিন্নি প্রসাদ ভক্তিভরে খেয়েও।

এক কথায় মানসিক নানা অশান্তিতে আপনি জর্জরিত, বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। আর আপনার এই জর্জরিত, বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত অবস্থার জন্যে কেউ দায়ী নয়। দায়ী আপনার ছোটোবেলায় আপনার পিতামাতা আপনার জীবনের ভিত গড়ে না দেবার জন্য। আর বড়বেলায় আপনার জর্জরিত, বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত জীবনের জন্য, ছোটোবেলা থেকে গড়ে ওঠা জীবনকে পরিবর্তন না করার জন্য আপনি নিজেই দায়ী। আপনার স্বভাব দায়ী। আপনার ব্যবহার দায়ী। আপনার কথা বলার ধরণ দায়ী। আপনার শরীরের ভাষা ও মুখের ভাষা দায়ী। আপনার অজ্ঞানতা দায়ী। আপনার কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবন দায়ী। আপনার বৃত্তি-প্রবৃত্তি দায়ী। আপনার নিয়ন্ত্রণহীন ৬টা রিপু দায়ী। আপনার রিপু তাড়িত উচ্ছৃঙ্খল বিশৃঙ্খল জীবন দায়ী। আপনার থট প্রসেস দায়ী। আপনার আদর্শহীন জীবন দায়ী। আপনার বায়োলজিক্যালি ডিফেক্ট জীবন দায়ী। আপনার মাথায় মালিক অর্থাৎ জীবন্ত ঈশ্বর নেই, থাকলেও তাঁতে সম্পূর্ণ সমর্পিত জীবন নয়, শয়তান বসে আছে মাথা জুড়ে। আর, তাই সমস্য্যা জর্জরিত জীবনে ক্ষতবিক্ষত।

তাই আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের বলি, যারা জীবন্ত ঈশ্বরকে জীবনে পেয়েও এইরকম অসহায় যন্ত্রণাকাতর অবস্থার শিকার, তারা নানা কারণে আজ ঠাকুর থেকে দূরে সরে গিয়ে সাক্ষাৎ শয়তানের খপ্পরে পড়ে কষ্ট পাচ্ছেন। কষ্ট পাচ্ছেন কিছু না ক'রে চট জলদি কিছু পাওয়ার আশায়। কষ্ট পাচ্ছেন গুরুভাইদের ব্যবহারে ঠাকুর থেকে সরে গিয়ে, কষ্ট পাচ্ছেন বৃত্তি-প্রবৃত্তির শিকার হ'য়ে, কষ্ট পাচ্ছেন কপট ভক্তির কারণে, কষ্ট পাচ্ছেন ঘরে-বাইরে পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবে এবং আরও নানা কারণে।

আমার প্রিয় গুরুভাইবোনেদের উদ্দেশ্যে বলি, শ্রীশ্রীঠাকুরের হাত ধরুন, তাঁকে বিশ্বাস করুন, তাঁর উপর নির্ভর করুন। আপনি নামময় হ'য়ে থাকুন। তিনি সবসময় আপনার সাথে সাথে থাকবেন। আপনি পথে পা রাখুন। সামনে দু'টো পথ, দু'দিকে গিয়েছে। কোন পথে যাবেন? কোন পথে যাবেন তা' ঠিক করতে পারছেন না? ধন্দে রয়েছেন? ভয় কি?
তিনি তো বলেছেন,
"ভয় কি! বলেছি তো! এমন একজন আছেন যিনি সর্বদাই সন্নিকটে আছেন। তিনি সবসময় আপনাকে রক্ষা করবেন। তাঁকেই বিশ্বাস করুন। তাঁর ওপরে সর্ব্বস্ব দিয়ে নির্ভর করুন, ভয় নাই।"
তাঁর বলা এই কথা বিশ্বাস করুন।

এত সহজ সরল ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুর বলার পরেও ভয়? আপনি দেখতে পান আর না-পান তিনি তো আপনার সামনেই আছেন, আপনার সাথে আছেন, আপনার মাথায় আছেন! তাহ'লে আর চিন্তা কিস বাত কি? ডর কিস বাত কি? ডরো মাত্। শুধু একটাই তুক। সকালে ঘুম থেকে যখনি উঠুন (অতি প্রত্যূষে হ'লে ভালো হয়) ঘুম থেকে উঠেই আগে দয়ালকে আপনার যা সামর্থ্য তাই দিয়ে বাস্তব সেবা দিন অর্থাৎ ইষ্টভৃতি করুন আর তারপর অকপট হৃদয়ে-মনে জীবনে চলার পথে পা রাখুন, পা রাখুন মনে মনে তাঁর দেওয়া বীজ নাম করতে করতে। পথে নামার আগে, অনেক আগে থেকেই নাম করুন, পথে নেমে নাম করুন, নাম করতে করতে আপনি হাঁটতে থাকুন, নাম করুন, ফলের আকাঙ্ক্ষা না ক'রে করতে থাকুন, আবেগ ভরে করতে থাকুন, কোনও দিকে তাকাবেন না, নাম করতে করতে লক্ষ্যের দিকে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যান। ঠিক সময় দয়ালের অদৃশ্য হাত আপনাকে দু'দিকে চলে যাওয়া দু'টো রাস্তার সঠিক রাস্তায় নিয়ে যাবেন। ভয় নেই। আপনি তাঁর হাত ধরেছেন। এবার যেদিকে তাঁর ইচ্ছা তিনি নিয়ে যাক, তা' স্বর্গ হ'ক আর নরক হ'ক, কুছ পরোয়া নেহি। স্বর্গে গেলেও তিনি আছেন, নরকে নিয়ে গেলেও তিনি সঙ্গে আছেন। যদি নরকে নিয়ে যায় দয়াল, নরকও তাঁর আবির্ভাবে স্বর্গ হ'য়ে যাবে। সেই নরককে স্বর্গ বানাতে তিনি আমাকে সাথী হিসেবে চয়েস করেছেন। এই যে তাঁর কাজ করার জন্য আমাকে চয়েস করেছেন দয়াল আমার, এই-ই আমার জীবনে চরম প্রাপ্তি, পরম প্রাপ্তি, জীবনে পরম চরম সার্থকতা। তিনিই স্বর্গ, তিনিই আলো, তিনিই সুখ, তিনিই শান্তি, তিনিই ধ্যান, তিনিই জ্ঞান, তিনিই আরাম, তিনিই আমার জীবনে আলাদিনের প্রদীপ। প্রদীপ ঘষলেই যেমন প্রদীপ থেকে বেরিয়ে আসতো দৈত্য আর আলাদিনের ইচ্ছে পূরণ করতো। ঠিক তেমনি তাঁর ওপর জীবনের সব চাওয়া পাওয়া ছেড়ে দিয়ে অনবরত নাম করতে থাকো, আর নাম করতে করতে তাঁকে বিবশ ক'রে দাও। তিনি বিবশ হ'লে তোমার বাঁচা-বাড়ার সব স্বপ্ন, সপারিপার্শ্বিক সব ইচ্ছা তিনি পূরণ ক'রে দেবেন। শর্ত একটাই তাঁতে সমর্পণ। নিজেকে সঁপে দাও, সম্পূর্ণ সঁপে দাও। তাঁর যা ইচ্ছা তাই হ'ক। তিনি আমার মঙ্গল-অমঙ্গল সব জানেন। আমার জন্য যা সর্বোত্তম তিনি তাই আমাকে দেবেন। তিনিই আমার সংক্ষিপ্ত মনুষ্য জীবনে এবং এই জীবন ছেড়ে চলে যাবার আগে মানুষ হ'য়ে আসার চরম পরম সফলতা। এই সফলতা, এই সঁপে দেওয়ার সফলতা যদি লাভ করতে না পারি তাহ'লে আমার সঙ্গে আর অন্য জীবের তফাৎ কোথায়? কোথায়?? কোথায়??? একবার তো নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন।

আসুন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার আগে তাঁর হাত ধরি, শক্ত ক'রে ধরি, অকপট হৃদয়ে, মনে ধরি। তারপর একে অন্যের হাত ধরি আর দয়ালের কাজে এগিয়ে যাই। তাঁকে পেলে আপনি সব, সব, সব পাবেন যাওয়ার আগে এই জীবনে। নতুবা তাঁকে ধরা আর না-ধরা সমান, সব ব্যর্থ, সব বকোয়াস। জয়গুরু।
( লেখা ৩০শে মে' ২০২৫)