আজ এই বয়স পর্যন্ত সৎসঙ্গীদের প্রায় যার ঘরেই গেছি দেখেছি অদ্ভুত ঠাকুরের আসন। আসনে সিঁদুর চন্দন দিয়ে ল্যাপটানো দুনিয়ার অমূর্ত ভগবানের আর সাধক ও তথাকথিত গুরুদের ছবি। সঙ্গে লালনীল ফুল দিয়ে জবরজং ক'রে সাজানো আসন। সিঁদুর, চন্দন দিয়ে ল্যাপটানো লালনীল ফুল দিয়ে অগোছালো, এলোমেলো ক'রে সাজানো আসন দেখলে ভক্তির বদলে বিরক্তি আসে ও নেগেটিভ ভাবের উদ্রেক হয়। দূর্বল হৃদয় ও মনের মানুষ ভয় পায়। আর এই দুর্বলতা ও ভয়ই হয় ধর্ম ও ঈশ্বর বেওসায়ীদের মোক্ষম অস্ত্র।
আর, এখান থেকেই আমাদের ঠাকুর টেনে বের ক'রে আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সৎসঙ্গীরাই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক সৎসঙ্গীদের মানসিক উন্নতির এবং শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বপ্নপূরণের। আরও পরিষ্কার ক'রে বললে বলতে হয় দ্বিধাহীন কন্ঠে, এই ধরণের সৎসঙ্গীদের সঙ্গে সঙ্গে এর জন্যে দায়ী শ্রীশ্রীঠাকুরের মেসেঞ্জার রূপী ঋত্বিক, যাজক ও অধ্বর্য্যুরা (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে এবং সংখ্যায় তা নগন্য)। কারণ ইনারা নিজেরাই এই মূর্তি বা দেবদেবী পূজা থেকে বেরোতে পারেননি। এদের ঘরেও নানা দেবদেবী ও গুরুদের একসঙ্গে অবস্থান। কেউ কেউ অবশ্য আলাদা আসনের ব্যবস্থাও ক'রে রেখেছেন। এর পক্ষেও এদের মোক্ষম যুক্তি সাজানও আছে এবং তা আছে ঠাকুরের বাণীকে আশ্রয় ক'রেই। এছাড়া এরা অনেকেই ঠাকুরের অনেক কথা মানেন না। উদাহরণ স্বরূপ যেমন, ঠাকুরের নিষেধ আছে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম না করা। কিন্তু এরা ঠাকুরের সামনেই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম নেয়। বেশী উদাহরণ দিয়ে বিষয়কে তিক্ত করতে চাই না। আর বাণীর একটা দু'টো উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারা যাবে মূর্তি পূজোর পক্ষে এদের সওয়াল। আসলে ব্যাপারটা হ'লো নিজের মনকে চোখ ঠারা।
এদের যুক্তির উদাহরণঃ
"পূর্বপুরুষ চেতন ধারা ধর্মে যদি ছাড়তে হয়
জোর গলাতে বলছি আমি নিছক সেটা ধর্ম নয়"
"পূর্বতনে মানে না যারা
জানিস নিছক ম্লেচ্ছ তারা!!" ----এমনি আরো অনেক বাণী আছে যা এদের নিজের বৃত্তি-প্রবৃত্তির লালন-পালনের পক্ষে মোক্ষম জোরালো অস্ত্র। একেবারে সাধারণ সৎসঙ্গীরা যেহেতু এসব বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থ সম্পর্কে অজ্ঞাত তাই তারা এদের দ্বারা বিপথে চালিত হয়। এরা নিজেরাও মরে অন্যকেও মারে।
মূর্তি পূজার পক্ষে সওয়ালকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে অহেতুক ইগোতে নিয়ে নেয় আর ক্ষিপ্ত হ'য়ে যায়। নিজের পয়েন্টে স্ট্রিক্ট থেকে আলোচনায় চনা ঢেলে দিয়ে আঘাত ক'রে বসে। আর সেই কমেন্টে তার পছন্দের লোকেরা তাকে বাহবা দেয় আর আমাকে বিশ্রীভাবে ব্যঙ্গ ও কটুক্তি করতে কমেন্টে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর, পরে সমস্ত আলোচনা ডিলিট ক'রে দেয়, পাঠককে পড়ার সুযোগ দেয় না। পরে আলাদা ক'রে মতামত পোষ্ট করে। তখন ভাবি আমরা সবাই ঠাকুরের কথামতো সত্যিই সোনার সৎসঙ্গী!?
যাই হ'ক এবার আসি আমার দয়াল ঠাকুর মূর্তি পূজো সম্পর্কে কি বলেছেন তাঁর দু'একটা উদাহরণে।
শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "ঋষিদের কেতাবেও মূর্তিপূজার কথা নাই। কোরাণ শরিফ, বাইবেল বা বৌদ্ধ গ্রন্থাদিতেও মূর্তিপূজার কথা নাই। যেখানে ওসব ব্যবস্থা আছে তা' দেবতা বা hero-দের পূজার কথা। ভগবান পূজোর কায়দায় ওসব পুতুল-টুতুল, গরু, মোষ______ওসব নেই বাবা।
আর দেবতা কথার মানেই হ'চ্ছে------যিনি, যে বা যারা মানুষের প্রয়োজনকে পূরণ ক'রে, তা'দের পরিপোষণের স্বার্থ হ'য়ে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞ অর্ঘ্যের অধিকারী হ'য়েছেন। ঐ রকম পূজা, পার্ব্বণ যা'-কিছু হিন্দুদের-----তা' ভগবৎ-অনুগ্রহ-সম্পন্নদেরই। ভগবান পূজার একমাত্র চিহ্নই হ'চ্ছে জ্যান্ত পুতুল ঐ পয়গম্বর, পীর, ঋষি, আদর্শ বা ইষ্ট। এঁর বা এঁদের অনুসরণ না করলে, পূজা না করলে, ভক্তির টানে আনত না হ'লে, পোষণ ও বর্দ্ধনের সেবায় আপ্রাণ না হ'লে,------বিন্যস্ত জ্ঞানের, বিন্যস্ত ভুয়োদর্শনের অধিকারী কিছুতেই হওয়া যাবে না। আর এই দর্শন বিশেষ সূক্ষ্ম, বিশেষ তীক্ষ্ণ না হ'লে খোদাকে উপলব্ধি করা কিছুতেই যাবে না। এ বাবা কঠোর সত্য------সব মালিকের এক জেল্লা-----সবাই ঐ কথায় ব'লেছেন।"------------প্রবি।
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment